মাছ পচে মাথায়, দেশ পচে নেতায়
লিখেছেন লিখেছেন কথার_খই ২৪ আগস্ট, ২০১৩, ১২:৪৪:৫৪ রাত
মাছ পচে মাথায়, দেশ পচে নেতায়
চুল তত্ত্ব। এক চুলও নড়বেন না ক্ষমতাসীন নেত্রী। চুল শুধু উড়েই যাবে না; অস্তিত্বই থাকবে না আন্দোলনের বাতাসে। বিরোধী দলীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর কথার বিপরীতে যে কথা বলেছেন। চুল নিয়ে অত্যন্ত পরিচিত যে চুলোচুলি। চলতি ভাষায় চুলাচুলি। নেহায়েত বিষয়টি নারীঘটিত।
কাকতলীয় বিষয় হলো সরকার প্রধান এবং বিরোধী প্রধান, দু’জনই নারী। মাঝখানে এসে জায়গা করে নিয়েছেন সংসদ অভিভাবক স্পিকারও এখন নারী। চুলোচুলির শিরোনামে সংসদে যাওয়ার বিষয়টিও বার বার আলোচিত হচ্ছে।
দেশের রাজনীতিতে বা রাজনৈতিক আলোচনায় যে বিষয়টি শিরোনাম, তাহলো- চুল। এর আগে ছিল তেঁতুল। তার আগে ছিল সাপ। সাপুড়ে। সাপুড়েরও কার্টুন আঁকা হয়েছিল পত্রিকায়। চুলেরও কার্টুন ছাপা হয়েছে দুই নেত্রীকে শিরোনাম করে। বহুল ব্যবহৃত চুলের সাবান শ্যাম্পুর কথাও বলা হয়েছে কার্টুনে। কার্টুনটির দৃশ্যমান ভাষা হলো শ্যাম্পুর নাম খালেদা শ্যাম্পু। মাথায় মাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরোধী নেত্রী খালেদা চুল পরিপাটি করে আয়নায় চেহারা দেখছেন।
অনেকবার বলেছি, আমরা আজব এক রাজনৈতিক দেশে বাস করছি। গত সাড়ে চার বছর বিরোধী দল যা-ই করেছে, সরকার বলেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে বিরোধীরা তৎপর। প্রতিপক্ষ বলেছে, বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই, গ্যাস নেই, দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া, সীমান্তে গুলি, ছাত্রাবাসে সন্ত্রাস, মন্ত্রীদের দুর্নীতি, যে কথাই তারা বলেছে, যে কথা নিয়েই মিছিল-মিটিং বা হরতাল করেছে, সরকার বলেছে, সব ঠিক আছে; যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতেই বিরোধীরা এমন করছে।
বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ নেই কেন? সরকার বলেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে চায়। সীমান্তে গুলি কেন? সরকার বলেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে চায়। প্রচলিত গরুর রচনার মতো সব কথাতেই যুদ্ধাপরাধীদের রচনা আওড়ানোর পর রাজনীতি এসে গেল কালোবিড়ালে। সুরঞ্জিতের টাকার বস্তার কাহিনী কালো বিড়ালের শিরোনামে সব রাজনৈতিক টেবিলে চুলছেরা বিশ্লেষণ হলো। বিড়ালপ্রেমিকরা এটা মজা করেই শুনেছেন এবং দেখেছেন। তখন এটাকে বলা যেত, বিড়াল তত্ত্ব। হঠাৎ করে আলোচনা চলে গেল হলমার্কে। আবার গেল ডেসটিনিতে। আগে ছিল শেয়ার মার্কেট নিয়ে। তিরিশ লক্ষ পরিবারকে পথে বসিয়ে রঙ্গরস করলেন, সরকার এবং তার অর্থমন্ত্রী। ‘বোগাস, ‘ফালতু’, ‘রাবিস’- অর্থমন্ত্রীর বদৌলতে এই শব্দগুলোও একসময় রাজনীতির পরিভাষা হিসেবে টেবিলে টেবিলে আলোচিত হয়েছে।
একবার আলোচনায় এসে গেল, ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং গ্রামীণ ব্যাংক। গ্রামে গ্রামে ছড়ানোর চেষ্টা করা হলো, ড. ইউনুসের গ্রামীণ ব্যাংক দর্শন দুর্নীতিতে ভরা। সেই দুনিয়া কাঁপানো দশ দিনের মতো, জেগেছে তরুণ প্রজন্ম নামে একজন তরুণ চিকিৎসক কতিপয় ব্লগারদের সহায়তায় জড়ো হয়ে গেল শাহবাগ চত্বরে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্কয়ারে বানরীয় অনুকরণের মতো তারা শুরু করলেন অবস্থান আন্দোলন। পূজা-পার্বন, মোমবাতির মেলা, স্লোগান আর নারীনৃত্যের উদোম প্রতিযোগিতা। চারিদিকে পুলিশবেষ্টিত একটি ব্যস্ত সড়কে তাদের অবস্থান চলল তিন মাস। এই মঞ্চে আসার জন্য আন্তরিক ইচ্ছা এবং অন্তর ছটফটানির তথ্য সমৃদ্ধ আলোচনা শুনলাম জাতীয় সংসদে। তাদের খাওয়া-দাওয়া দেওয়ার পরোক্ষ ব্যবস্থাপনায় ছিল সরকার এবং তার রাজনৈতিক দল। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার সুলভ ব্যবস্থা করেছিল ভ্রাম্যমাণ টয়লেট দিয়ে সরকারের সিটি কর্পোরেশন।
এই অবস্থানের মূল দাবি ছিল, জামাতনেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই। এই সমাবেশের কতিপয় ব্লগার যখন আল্লাহ ও রাসূলকে নিয়ে অসম্মানজনক ব্লগিং কার্যক্রম শুরু করল, আস্তে আস্তে সেই শাহবাগের সভাই হয়ে গেল নাস্তিকদের জমায়েত। ধর্মপ্রাণ আস্তিকরা কমতে শুরু করল ব্যাপকহারে। দুর্বৃত্তের সন্ত্রাসী আক্রমণে একজন নাস্তিক ব্লগার নিহত হলো। প্রধানমন্ত্রী নাস্তিককেও শহীদী মর্যাদায় উন্নীত করল। শাহবাগীদের জাগরণকে প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে সম্বোধন করলেন।
আজব এক দেশ। আজব নেতানেত্রী। ফুটবল খেলায় জিতলে এটি বিজয়দিবস হয়ে যায়। ক্রিকেট খেলায় পাকিস্তানকে হারাতে পারলে এই দেশের কতিপয় রাজনীতিকরা দ্বিতীয় বিজয়দিবস পালন করে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং বিজয় দিবস-এর মর্মবাণী, এর ত্যাগী দর্শনের দাড়ি-কমা পর্যন্ত এই মূর্খরা জানে না। সেই তারাই আবার শুরু করেছে ‘চুল তত্ত্বের রাজনীতি’।
বাস্তবতা হলো, গণতন্ত্র মানতে হলে আলোচনা করতে হবে এবং প্রধানমন্ত্রীকে তার বক্তব্য থেকে সরে আসতে হবে। সেটা চুল পরিমাণ নাকি নদী পরিমাণ, নাকি সাগরের জলোচ্ছ্বাসের সমান- এটা সময় এলেই বোঝা যাবে।
অর্থহীন বিতর্ক, বিশেষ করে চুল আর লোম নিয়ে- বিষয়টি ভালো লাগে না। দেশের মানুষ এটা ভালো চোখে নেয় না। বিগত সাড়ে চার বছর রাজনীতি, সংসদ এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে এতোসব নষ্ট শব্দের সঙ্গে দেশের মানুষ পরিচিত হয়েছে, যা দেখে সুস্থ-সচেতন কেউই নিশ্চুপ থাকতে পারে না।
টক শো’তে অংশগ্রহণকারীদেরকে বলা হয়েছে, মধ্যরাতের সিঁধেল চোর। আসলে আমরা কি ভালো হবো না? আমরা কি বড় বড় মানুষের কাছ থেকে একেবারেই বড় বড় ভালো কথা শুনব না? আমরা কি একজন অনুকরণীয় মানুষ বা নেতা পাবো না?
আমরা পেতে চাই। আশা করছি পাবো। নেতারা যা-ই করুন, আল্লাহ আমাদেরকে হতাশ করবেন না। কথায় আছে, মাছ পচে মাথায়, দেশ পচে নেতায়। আমরা দেশের মানুষ। আমাদেরকে না পচানোর জন্য নেতানেত্রীদের অনুরোধ জানাচ্ছি।
Click this link
বিষয়: বিবিধ
১৮৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন