আওয়ামী লীগে সভানেত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে সরকারদলীয় সংসদের মামলার খবরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

লিখেছেন লিখেছেন কথার_খই ২২ জুলাই, ২০১৩, ০৭:৫৪:০৯ সন্ধ্যা

আ.লীগে চরম অস্থিরতা, রনি-সালমানকে সংযতের নির্দেশ

সরকার তার মেয়াদ শেষের দিকে যতো এগিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে ততই অস্থিরতা বাড়ছে। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভরাডুবির পর ঘুরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেও অস্বস্তি তাদের পিছু ছাড়ছে না।



সেই অস্বস্তির আগুনে আবার নতুন করে ঘি ঢেলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের সঙ্গে গোলাম মওলা রনি এমপির লড়াই। আর এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে আওয়ামী লীগ নেতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর হালিমের ওপর সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর লোকদের সশস্ত্র হামলা।

গত মাসে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি করেপোরেশন নির্বাচনের চারটিতেই দলীয় মেয়র প্রার্থীদের ভরাডুবিতে বিপর্যয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ। তা কাটিয়ে উঠতে গত ৬ জুলাই অনুষ্ঠেয় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেও কাজে আসেনি। বিরোধী জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অধ্যাপক এমএ মান্নানের কাছে এক লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে হেরে যান আওয়ামী লীগ নেতা আজমত উল্লাহ খান। এতে কেবল গাজীপুরে নয়, হতাশা নামে দেশজুড়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে।

যুক্তরাজ্য ও বেলারুশ সফর সংক্ষিপ্ত করে নির্ধারিত দিনের একদিন আগেই দেশে ফিরে আসেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফিরেই জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। গণভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা করা হয়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী সাহারা খাতুন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে গাজীপুরে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তার পক্ষে হেফাজতে ইসলাম সেই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা ও বিজয়ে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়। বাকি চার সিটি করপোরেশনেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকার পরও হেরে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা হয়।

এছাড়া টিআই প্রতিবেদন সম্পর্কে বলা হয়, টিআই ও টিআইবির প্রতিবেদনের মধ্যে পার্থক্য আছে। টিআই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নাম নেই। অথচ টিআইবি বাংলাদেশ নিয়ে পৃথক প্রতিবেদন দিয়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগেও টিআইবি এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। তখন আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময় ছিল।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামীগ লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছিলেন, রাজনৈতিক দল, পুলিশ ও বিচার বিভাগকে কলঙ্ক দেয়ার জন্যই টিআইবি প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। যারা বিদেশের টাকায় গবেষণা করে দেশকে খাটো করে, তাদের নীতি-নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

এদিকে, সিটি নির্বাচনে বিজয়ীদের প্রথমে স্বাগত জানিয়ে গণতন্ত্র বিজয়ী হয়েছে বলে প্রথমে বিবৃতি দিলেও পরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পাঁচ সিটি করপোরেশনে দুর্নীতিবাজরা নির্বাচিত হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতিবাজরাই যদি জিতে আসে তাহলে কার জন্য এত উন্নতি করেছি?’

বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলেও এ নিয়ে সমালোচনায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আগে যে বিদ্যুৎ ছিল তা রেখে বাড়তি কেন্দ্র বন্ধ করে দিলে বোঝা যাবে কিছু করেছি কিনা। রোজার পরে এটি প্র্যাকটিস করতে হবে। এটি ঘোষণা দিয়েই করা হবে।'

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের একটা ক্যান্ডিডেটের বিরুদ্ধে তো কেউ কোনো দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে পারেনি। যারা দুর্নীতি করেনি, যারা ক্লিন ইমেজের, তারা জিততে পারেনি।' চোর ধরে জনগণের কাছে আওয়ামী লীগ অপরাধী হয়ে গেছে বলেও আক্ষেপ করেন প্রধানমন্ত্রী।

সিটি নির্বাচনের এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য দলকে প্রস্তুত করতে এখন নানা কৌশল অবলম্বন করছে আওয়ামী লীগ। সভাপতিমণ্ডলী, কার্যনির্বাহী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদসহ সবার পরামর্শে দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

আর এরই মধ্যে গত শনিবার ইনডিপেনডেন্ট টিভি চ্যানেলের দুই সংবাদকর্মীকে পিটিয়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেন পটুয়াখালী-৩ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। এ ঘটনায় ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সহকারী ব্যবস্থাপক ইউনুছ আলী বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গোলাম মাওলাসহ অজ্ঞাতনামা ২০ জনের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন।

এদিকে, ওইদিন রাতেই গোলাম মওলা রনি টিভি চ্যানেলটির অন্যতম মালিক ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি, অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পাল্টা মামলা করেছেন। দুটো মামলাই হয়েছে শাহবাগ থানায়। একটির নম্বর ৪১, অন্যটির ৪২।

আওয়ামী লীগে সভানেত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে সরকারদলীয় সংসদের মামলার খবরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মারধরের শিকার দুই সংবাদকর্মী হলেন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অপরাধবিষয়ক অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান ‘তালাশ’-এর প্রতিবেদক ইমতিয়াজ মোমিন ও ভিডিও চিত্রগ্রাহক মহসীন মুকুল। গুরুতর আহত মহসীন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

এসব অভিযোগ ও মামলা নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি কোনো পক্ষেই নেই। সব অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা অনুসারে ব্যবস্থা নেবেন তিনি।

তবে, এই ঘটনা নিয়ে দলের মধ্যে তোলপাড় চলছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। নতুন করে দলের ইমেজ সংকট তৈরি করায় নেতা সালমান এফ রহমান ও গোলাম মাওলা রনির বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে দলের আরেক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসূফ হোসেন হুমায়ুন আরটিএনএন- কে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এসব ঘটনায় বিব্রত। এটা দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার নজরে এসেছে। তিনি এ বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘দুই নেতার এই দ্বন্দ্ব ব্যক্তিগত। এটা কোনো জাতীয় ইস্যু না। তবে এতে যাতে দলে প্রভাব না পড়ে সেদিকে নেত্রী সজাগ রয়েছেন।’

এদিকে, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘গোলাম মওলা রনি দলের কোনো পর্যায়ের নেতা নন। শুধুমাত্র একজন সংসদ সদস্য। সংসদ চাইলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে।’

তবে আগামী কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

Click this link

বিষয়: বিবিধ

১৫০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File