আগামী দশম সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় এলে একুশ শতকের উপযোগী 'নতুন ধারার' আধুনিক সরকার গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে বিশ্বের উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর আদলে দেশের সংসদীয় ব্যবস্থাকে সংস্কার করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
লিখেছেন লিখেছেন কথার_খই ২১ জুলাই, ২০১৩, ০৩:৩৬:০৩ রাত
আগামী দশম সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় এলে একুশ শতকের উপযোগী 'নতুন ধারার' আধুনিক সরকার গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিএনপি।
এ লক্ষ্যে বিশ্বের উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর আদলে দেশের সংসদীয় ব্যবস্থাকে সংস্কার করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। বিশেষ করে 'দ্বিকক্ষ'বিশিষ্ট জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। দেশের খ্যাতিমান আইনজীবী, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, চিকিৎসক, সাংবাদিক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার শীর্ষস্থানীয় জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের নিয়ে সংসদের 'উচ্চ কক্ষ' গঠন করতে চায় তারা। 'জ্ঞানভিত্তিক' দেশ গড়ার লক্ষ্যে 'সৎ ও মেধাবী' লোকদের কাজে লাগাতেই মূলত এ পরিকল্পনা করছে দলটি। একই সঙ্গে প্রতিহিংসার রাজনীতি না করা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণসহ ব্যাপক সংস্কারমূলক কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী দল। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক নেতার সঙ্গে আলাপ করে আগামীতে নতুন ধারার সরকারের 'রূপরেখা' তৈরি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ইফতার মাহফিলে আগামী দিনে ক্ষমতায় এলে 'নতুন ধারার সরকার' গঠনের প্রথম ঘোষণা দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার এ ঘোষণা সারাদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। অবশ্য বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্যের পরের দিনই শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে নতুন ধারার দুর্নীতি করবেন খালেদা জিয়া। এ প্রেক্ষাপটে বিরোধীদলীয় নেতার নতুন ধারার সরকার গঠনের ইঙ্গিত সম্পর্কে খোঁজখবর নিলে বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করে দলের নতুন ধারার সরকারের 'রূপরেখা' সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন সমকালকে।
সূত্র জানিয়েছে, নতুন ধারার সরকার গঠনের বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভেতরে ভেতরে কাজ করছে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসনসহ নীতিনির্ধারক নেতারা এ ব্যাপারে ব্যাপক 'হোমওয়ার্ক' করেছেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মেধাবী শীর্ষস্থানীয় অনেকের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা। বিশ্বের উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে সরকার, সংসদ ও দল পরিচালনার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য-উৎপাত্ত সংগ্রহ করেছে দলটি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সমকালকে বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে নতুন ধারার সরকার গঠনের ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্য শুধু কথার কথা নয়, বাস্তব ও সত্যি। প্রধানমন্ত্রী না বুঝেই একটি রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন। পাঁচ সিটির মতো জনগণ বিএনপিকে দেশ পরিচালনার সুযোগ দিলেই খালেদা জিয়া দেশবাসীকে নতুন ধারার সরকার উপহার দেবেন। তবে এ মুহূর্তে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলার সময় আসেনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সমকালকে বলেন, বর্তমান সরকার দুর্নীতি, দুঃশাসন ও নির্যাতনের যে রাজনীতি করছে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে তা করবে না। প্রতিহিংসার রাজনীতির পরিবর্তে দুর্নীতিমুক্ত সুশাসন কায়েম করবে। মহাজোট সরকারের মতো বিএনপি প্রশাসনে দলীয়করণ করবে না। মেধাকে প্রাধান্য দেবেন এবং সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়বেন_ এটাকে বিএনপি চেয়ারপারসন নতুন ধারার রাজনীতির কথা বলেছেন।
সংসদীয় ব্যবস্থার সংস্কার, মেধাবীদের নিয়ে উচ্চকক্ষ :সূত্র জানায়, ক্ষমতায় এলে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের অনেক উন্নত গণতান্ত্রিক দেশের মতো
সংসদে 'উচ্চকক্ষ' প্রতিষ্ঠা করবে দলটি। দেশের খ্যাতিমান আইনজীবী, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, চিকিৎসক, সাংবাদিক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার শীর্ষস্থানীয় মেধাবী ব্যক্তিদের নিয়ে এ 'উচ্চকক্ষ' গঠন করতে চায় তারা।
সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজে ও দলীয় নেতারা এ ব্যাপারে পৃথকভাবে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন, বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিকসহ খ্যাতিমান ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।
এছাড়া হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারা, ড. কামালের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডির মতো দলের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে বিএনপি। জাসদ (রব) দীর্ঘদিন থেকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের দাবি জানিয়ে আসছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের অনেক দেশেই দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা রয়েছে। রাষ্ট্রপতি বা সরকার নানা প্রক্রিয়ায় নিজ নিজ দেশের জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিদের সংসদের উচ্চকক্ষের সদস্য নির্বাচিত করেন। ভারতে উচ্চকক্ষকে রাজ্যসভা ও নিম্নকক্ষকে লোকসভা, যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চকক্ষকে সিনেট ও নিম্নকক্ষকে কংগ্রেস, যুক্তরাজ্যে উচ্চকক্ষকে হাউস অব লর্ডস এবং নিম্নকক্ষকে হাউস অব রিপ্রেজেন্ট বলে থাকে। সংসদের নিম্নকক্ষ আইন প্রণয়ন করলে উচ্চকক্ষ তা অনুমোদন করে। আবার যেকোনো আইন ফেরতও পাঠায় এবং নানা সুপারিশও করে থাকে উচ্চকক্ষ।
প্রশাসনিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ : ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণ করতে চায় বিএনপি। আগামীতে স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের মধ্যে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করবে বিএনপি। সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চায় তারা। একইসঙ্গে বিচার ব্যবস্থা, পুলিশ, স্থানীয় সরকারসহ প্রশাসনের সর্বস্তরে দলীয়করণ না করে মেধার মূল্যায়ন করতে চায়। অতীতমুখী না হয়ে সম্মুখ প্রসারিত হতে চাইবে দলটি।
প্রতিহিংসার রাজনীতি নয় : ক্ষমতায় এলে কোনোমতেই প্রতিহিংসার রাজনীতি করবে না বিএনপি। 'অতীত ভুলে' সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাইবে তারা। বিশেষ করে ওয়ান-ইলেভেনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ঘটনায় কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার কৌশল নিয়েছে দলটি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানসহ দলের বিপুল সংখ্যক নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় কারাবরণ ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে। এমনকি বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে দলের শীর্ষ নেতাসহ অন্য নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিশোধ না নিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশে সহাবস্থানের রাজনীতি করবে তারা।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান : ক্ষমতায় এলে দুর্নীতির বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নেবে বিএনপি। বিগত আমলে হাওয়া ভবনসহ দলের অনেক মন্ত্রী-এমপি ও নেতার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও আগামীতে এ অপবাদ শুনতে রাজি নন দলটির হাইকমান্ড। দুর্নীতির ব্যাপারে 'জিরো টলারেন্স' বলে জানিয়েছেন নেতারা। তাদের মতে, বর্তমান সরকারের আমলে পদ্মা সেতু, হলমার্ক, শেয়ারবাজারসহ বড় বড় দুর্নীতির কারণে জনগণ তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলই তার প্রমাণ। তাই বিএনপি সুশাসন নিশ্চিত করতে জোর প্রচেষ্টা চালাবে। কোনো অবস্থায় মন্ত্রী-এমপি ও নেতাকর্মীকে দুর্নীতিতে আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেশ কয়েকবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা বিএনপি।
বিএনপির নতুন ধারার সরকার ভাবনা প্রসঙ্গে একাধিক বিশিষ্টজন সমকালকে বলেছেন, নির্বাচনের আগে ভালো ভালো কথা, ভালো প্রস্তাবে কেউই কার্পণ্য করে না। ক্ষমতায় গেলে অবলীলায় সব ভুলে গিয়ে নষ্ট রাজনীতির ধারাই অনুসরণ করেন। তারা বলেন, দেশবাসী চায় দেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দলের সত্যি সত্যি মনের পরিবর্তন হোক। Click this link
বিষয়: বিবিধ
১০৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন