গতকালকের পোষ্টে ছবি ছিলো প্রশ্ন হিসাবে গাজীপুরবাসির জন্য!!! গাজীপুরবাসির কাছে উত্তর পেয়েগেছি...... ধন্যবাদ গাজীপুরবাসিকে.....

লিখেছেন লিখেছেন কথার_খই ০৭ জুলাই, ২০১৩, ০১:৪৭:৪৯ রাত

দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণরায় : লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে ১৮ দল সমর্থিত অধ্যাপক এম এ মান্নান জয়ী

বহুল আলোচিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও জনগণ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে স্পষ্ট ভাষায় রায় দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের ‘দুর্গ’খ্যাত গাজীপুরের নির্বাচনেও দলটির সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানের ভরাডুবি ঘটেছে। নির্বাচনে এক লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নান।

গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে দেশবাসীর মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ছিল। আগামী সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ এ নির্বাচনে জয়-পরাজয় জাতীয় নির্বাচনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে বলে একমত সবাই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের অপশাসন তথা বিরোধী দলের ওপর বর্বরতা ও গণহত্যা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি, গণমাধ্যম দলন, ইসলামপন্থী অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ওপর গণহত্যা, দেশ শাসনে চরম ব্যর্থতা, ভারত তোষণ, ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থানসহ নানা কারণে আওয়ামী লীগের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে জনগণ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয়ের মাধ্যমে এর প্রমাণ মিলেছে।

চার সিটিতে ধরাশায়ী হওয়ার পর গাজীপুরে জয়ী হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ মরিয়া হয়ে ওঠে। তবে চার সিটির ধারাবাহিকতায় গাজীপুরেও জনগণ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতাসীন দল জয়ের জন্য নানা অনৈতিক ও বেআইনি পন্থা অবলম্বন না করলে তারা অকল্পনীয় ব্যবধানে পরাজিত হতো। কূটকৌশলের কারণে ভোটের ব্যবধান অনেকটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে আওয়ামী লীগ।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে লড়াই হিসেবেই মূল্যায়ন করেছেন। দল দুটির নেতারাও একে নিজেদের জনপ্রিয়তার মাপকাঠি হিসেবে প্রচার করেছেন। এতে এ নির্বাচনে কার্যত আওয়ামী লীগেরই ভরাডুবি ঘটেছে।

রাত বারোটায় আওয়ামী লীগ সমর্থক টিভি চ্যানেল আরটিভি জানায়, মোট ৩৯২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৩০২টিতে টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে বিএনপি নেতা অধ্যাপক মান্নান ২,৩৮,১২৬ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা আজমত উল্লাহ খান দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১,৪১,১২৩ ভোট। আওয়ামী লীগ সমর্থক টিভি চ্যানেল

সময়টিভি জানায়, ২০৩টি কেন্দ্রে অধ্যাপক মান্নান ২,০৩,১২৭ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। আজমত উল্লাহ খান পেয়েছেন ১,২৫,৩৯৪ ভোট। বাংলাভিশন জানায়, ৩২০টি কেন্দ্রে অধ্যাপক মান্নান ২,৫৫,৩২১ ভোট এবং আজমত উল্লাহ খান ১,৫২,৩২০ ভোট পেয়েছেন।

তবে অনলাইন সংবাদপত্র শীর্ষনিউজ জানায়, ৩৯২টি কেন্দ্রে অধ্যাপক মান্নান পেয়েছেন ৪,৬৮,০০০ ভোট। আজমত উল্লাহ পেয়েছেন ৩,০০,০১২ ভোট। বিএনপি সূত্রকে উদ্ধৃত করে আমাদের রিপোর্টাররাও একই ধরনের তথ্য জানিয়েছেন। তবে এই ফলাফল নির্বাচন কমিশন ঘোষিত নয়। নির্বাচন কমিশনের বরাত দিয়ে সরকার নিয়ন্ত্রিত বিটিভি জানায়, ১১২টি কেন্দ্রে অধ্যাপক মান্নান পেয়েছেন ৯৯,৬২৭ ভোট। আজমত উল্লাহ পেয়েছেন ৭০,৮৩৩ ভোট।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চার সিটিতে আওয়ামী লীগের অকল্পনীয় পরাজয়ের পর গাজীপুরেও দলটির এ ভরাডুবি প্রত্যাশিতই ছিল। সম্প্রতি দেশি-বিদেশি একাধিক প্রতিষ্ঠানের জনমত জরিপে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের জনসমর্থন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

হাইভোল্টেজের নির্বাচন হলেও গাজীপুরে ভোটার উপস্থিতি ছিল প্রত্যাশার চেয়ে কম। অনেক কেন্দ্রে দুপুর থেকেই ছিল ফাঁকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোটারদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের আতঙ্ক সৃষ্টি, যে কোনো মূল্যে আজমতকে জয়ী করার ঘোষণায় অনেক ভোটারই ভোটকেন্দ্রে আসেননি। এছাড়া ভোটগ্রহণের মন্থর গতি এবং দীর্ঘ লাইনের কারণে ভোট কম পড়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও জানিয়েছেন, গাজীপুরে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। তবে বাংলাদেশের অন্যান্য নির্বাচনে এর চেয়ে বেশি ভোট পড়ে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চার সিটি নির্বাচনেও ভোট পড়ে ৭০ শতাংশের বেশি।

গাজীপুরে আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয়ে দেশের সংসদ নির্বাচনের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিরোধী দলের দলের কাছে ক্ষমতাসীন দলের পরাজয়ের ব্যবধান অকল্পনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। বর্তমান সরকারে অধীনে অনুষ্ঠিত দেশের ৯টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল মাত্র একটিতে জয়ী হতে পেরেছে—রংপুর সিটিতে। প্রধান বিরোধী দল ওই নির্বাচন বর্জন করে। অন্যদিকে বিএনপি সরাসরি ছয়টিতে জয়ী হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লা সিটিতে বিএনপি নেতা মেয়র হিসেবে জয়ী হয়েছেন। এতে চট্টগ্রামসহ দেশের সাতটি সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণ এখন বিএনপি নেতাদের হাতে।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিনা হায়াত্ আইভীর কাছে শোচনীয় পরাজয় হয় আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম ওসমানের। ওই নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শেষ মুহূর্তে নির্বাচন বর্জন করে আইভীকে সমর্থন দেন। অন্যদিকে শোচনীয় পরাজয়ের ভয়ে সরকার ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিচ্ছে না বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

নিজেদের দুর্গ বলে প্রচার করে গাজীপুর সিটিতে জয়ী হতে আওয়ামী লীগ সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনকে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার, কালো টাকার ছড়াছড়ি, অধ্যাপক মান্নানের বিরুদ্ধে অনৈতিক ও প্রশাসনিক অপপ্রচার এবং পেশিশক্তির প্রয়োগসহ নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে নিতে এমন কোনো পন্থা ছিল না, যা আওয়ামী লীগ প্রয়োগ করেনি। নির্বাচনের দিনও অন্তত ১৩টি কেন্দ্র দখলসহ অর্ধশত কেন্দ্রে জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

যেমন ভাদুন উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে দায়িত্বরত এসআই আবুল বাশারের বিরুদ্ধে ব্যালট পেপারে সিল মারার অভিযোগা পাওয়া গেছে। তিনি ওই কেন্দ্রের ৭ নম্বর বুথে গিয়ে এমনটি করেছেন বলে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। গাছা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গতকাল ভোটারদের লাইনে বেশ কয়েকজন বালককে দেখা যায়। তাদের বয়স ১৪ বছরের বেশি হবে না। তা সত্ত্বেও তারা ভোট দিয়েছে। নির্বাচনের শেষ বেলায় ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানের বাড়ির পাশের খান আইডিয়াল স্কুল কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে সিল মারার অভিযোগ উঠেছে।

সরকার ও বিরোধী দল সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বাকযুদ্ধ, এমনকি হাতাহাতিও হয়েছে। কয়েকটি কেন্দ্রে এম এ মান্নানের টেলিভিশন প্রতীকের পোলিং এজেন্টকে বের করে দেয়া হয়। বেশ কিছু কেন্দ্রে থেমে থেমে কারচুপি হয়। জাহিদ আহসান রাসেল এমপির প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় তার নিজ এলাকায় ছিল অভিনব কারচুপি স্টাইল।

শালনা কাকুরা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল পৌনে এগারোটার দিকে র্যাব সদস্যরা লাঠিচার্জ করে ভোটারদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনায় ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। অনেকে ভোট না দিয়ে ফিরে যান। কেন্দ্রটি অধ্যাপক মান্নানের ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত। এছাড়া বেশকিছু কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মী, পুলিশ, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার—সবাই দিনভর ভোট কারচুপির চেষ্টায় ছিলেন।

দেশের সর্বশেষ ঘোষিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে গতকাল সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয় এবং চলে ৪টা পর্যন্ত। তবে আওয়ামী লীগের কৌশল হিসেবে ভোটগ্রহণের হার ছিল খুবই মন্থর। কোনো কোনো কেন্দ্রে সকাল ৮টায় লাইনে দাঁড়িয়ে বেলা ২টায়ও ভোট দিতে পারেননি ভোটাররা।

গত ১৬ জানুয়ারি গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। ৩২৯ দশমিক ৯০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ সিটি করপোরেশনে ১৯টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড ও ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে। এতে ভোটার ছিলেন ১০ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৮ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ২৭ হাজার ৭৭৭ জন ও নারী ভোটার ৪ লাখ ৯৯ হাজার ১৬১ জন,

Click this link

বিষয়: বিবিধ

১২১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File