সমকামীতা ও উভয়গামীতার সমর্থনে ডা: দীপু মনি অবাধ যৌনাচারের পক্ষে বাংলাদেশ!
লিখেছেন লিখেছেন কথার_খই ১২ জুন, ২০১৩, ০৪:১১:১৩ রাত
আবু সাঈদ:২৯ এপ্রিল ২০১৩ জেনেভায় অনুষ্ঠিত ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমণি লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল ও ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের (সংক্ষেপে এলজিবিটি) অধিকার সংরণের স্বীকৃতিদানের কথা বলেছেন।
সাংবিধানিকভাবে তাদের সমঅধিকার ও স্বাধীনতা থাকার কথাও বলেন তিনি। ৩০ মে ২০১৩ বিডি নিউজ২৪.কম এ প্রকাশিত রেইনার এবার্ট (যুক্তরাষ্ট্রের রাইস ইউনিভার্সিটির দর্শনের ছাত্র, বাংলাদেশ লিবারাল ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং অক্সফোর্ড সেন্টার ফর অ্যানিমেল ইথিক্স-এর এসোসিয়েট ফেলো।) এর ‘সমকামিতা:ধারণা বনাম বাস্তবতা শিরোনামে’ একটি লেখা প্রকাশীত হয় যেখানে উপরোক্ত তথ্য প্রদান করা হয়।সেখানে আরো উল্লেখ করা হয় ‘কয়েক মাস আগে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বন্ধু ওয়েলফেয়ার সোসাইটির(এই সংগঠনটি সমকামীদের অধিকার রক্ষায় ও কাজ করে) একটি অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেন যে, জাতীয় আইন কমিশনের সহায়তায় তার কমিশন একটি আইনের খসড়া তৈরির কাজ করছে যেটি ব্যক্তির যৌনজীবনের কারণে তার প্রতি বৈষম্য নিষিদ্ধ করবে।’
কিন্তু সরকারের তরফ থেকে এ বিষয়ে কোন তথ্য বা ব্যখ্যা প্রদান করা হয়নি।ইদানিং সোস্যাল মিডিয়ায় এনিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।তবু সরকার নির্বিকার।তথ্য জানার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেছ মানুষ।এদেশের অনেক সচেতন মানুষই এখন তাদের মত প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে সোস্যাল মিডিয়াকে বেছে নিয়েছে।তাই সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকাশীত কোন বিষয়কে এড়িয়ে যওয়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে বিভোর সরকারের জন্য কল্যানকর হবেনা।
১৭ই জুন ২০১১, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে উভয়কামী-সহ সকল সমকামী নারী ও পুরুষের সমানাধিকার অনুমোদন করে এক বিশেষ অধিবেশনে ঘোষণা করা হয়েছে, 'যৌন-অবস্থানের কারণে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে বৈষম্য বা সহিংস আচরণ করা যাবে না।' আন্তর্জাতীকভাবে এই দিনেই সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।সেদিন পাকিস্তান, সৌদি আরব, কাতারের মতো ইসলামি-দেশগুলোর সাথে সাথে বাংলাদেশও তা কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিল।কিন্তু মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে ক্ষমতার মেয়াদের শেষ প্রান্তে সরকারের নীতি-নৈতিকতায় এমন কি পরিবর্তন সাধিত হলো যে ৯০শতাংশ মুসলমানের দেশের মানুষের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের তোয়াক্কা না করে পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে সমকামীতার মত একটি স্পর্শকাতর ও বিতর্কিত বিষয়কে সমর্থন দিয়ে আসতে হলো।
পৃথিবীর অনেক দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও সমকামিতা বা সমলিঙ্গীয় মিলন আইনে নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন কি তা যদি দু’জন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির পূর্ণ সম্মতিতে হয় তবুও। বাংলাদেশ দন্ড বিধির ৩৭৭ ধারা সমকামিতাকে প্রকৃতির বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক অপরাধ হিসেবে গন্য করছে। উক্ত ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে,যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাছাকৃতভাবে কোন পুরুষ,নারী বা জন্তুর সহিত,প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সহবাস করে সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডে বা যেকোন বর্ণনার কারাদন্ডে –যার মেয়াদ দশ বছর পর্যন্ত হতে পারে-দন্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হবে।
মানবাধিকার ইস্যুতে ২৯ এপ্রিল১৩ সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক সহ বেশ কিছু মানবাধিকার সং¯’ার প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ থেকে জেনেভায় গিয়েছিলেন। শুনানিতে যুক্তরাজ্য ও উত্তর আয়ারল্যান্ড থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বিলোপ করে সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য না করার কোনো পরিকল্পনা বাংলাদেশ সরকারের আছে কি?বাংলাদেশের পক্ষ হতে কি জবাব দেয়া হয়েছিল তা জানা না গেলেও সাংবিধানিকভাবে সমকামীদের অধিকারের কথা স্বীকার করে অসাটাকে দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বিলোপ করার পূর্বাভাস বলেই ধরে নেয়া যায়।
এছাড়া রেইনার এবার্ট তার সেই নিবন্ধে স্বীকার করেন বাংলাদেশে সমকামী পুরষের অধিকার আন্দোলনটি গত কযেক বছরে অনেক এগিয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই স্বীকৃতিকে তিনি সামান্য হলেও উল্লেখযোগ্য কিছু বিজয় অর্জিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ লিবারেল ফোরাম ও বয়েস অব বাংলাদেশের মতো কিছু সংগঠন সমকামীদের অধিকার আদায়ের পথে যে ঘাটতি রয়েছে তা পূরণে কাজ করছে এবং জনগণকে সচেতন করতে শিামূলক প্রচারাভিযান শুরু করেছে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশ লিবারেল ফোরাম, বয়েস অব বাংলাদশে,সমকামভীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সহ আরো বেশ কিছু গ্রুপ বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় বেশ জোরেসোরেই তাদের প্রচারনা,সদস্য সংগ্রহ ও সংগঠিত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
সমকামী সমর্থক ও তাদের কল্যানে কর্মরত কিছু সংগঠন এবং সরকারের নির্লিপ্ততায় ও পরোক্ষ ছত্রছায়ায় সমকামীতার জাল যে অনেকদুর এগিয়েছে তা ডেইলি ষ্টার এ জানুয়ারী ২০১০ এ প্রকাশীত আইসিডিডিআরবি নামক একটি সংস্থার দেয়া বিজ্ঞাপনটি পড়লেই স্পস্ট হয়ে যায়। বিজ্ঞাপনটিতে বাংলাদেশে সমকামীদের স্বাস্থসেবা ও আইনী সহায়তা প্রদানের নিমিত্তে এনজিও নিয়োগের কথা বলা হয় । জানা যায় যে, এই প্রজেক্টের সমুদয় অর্থ গ্লোবাল ফান্ড নামক সংস্থা বাংলাদেশ সরকারকে দান করেছে। প্রজেক্টের ১৫০ কোটি টাকা আইসিডিডিআরবির পরিকল্পনা মতে সমকামীদের যৌনকর্মের সরঞ্জাম ক্রয়, সমকামীদের জন্য ৬৫টি ড্রপ ইন সেন্টার নির্মান ও আইনগত সহায়তা প্রদানের জন্য বরাদ্দ করা হয়।।
এই বিজ্ঞাপনটি প্রকাশের কয়েকমাস পর গবেষণামূলক উ”চতর শিাপ্রতিষ্ঠান মারকাযুদ্ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া ঢাকা-এর মুখপত্র মাসিক আল কাউসার তাদের জুন ২০১০ সংখ্যায় উক্ত বিজ্ঞাপনের কথা উল্লেখপূর্বক প্রধানমন্ত্রিকে একটি খোলা চিঠি প্রদান করে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।
সমকামীতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হওয়া সত্বেও এর পক্ষে প্রকাশ্য প্রচারনা,সংগঠন,দেশী-বিদেশী সংস্থাগুলোর কার্যক্রমের সাথে সরকারের সমপৃক্ততা,জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান এর বক্তব্য ও সর্বোপরি পররাষ্ট্রমন্ত্রির মন্তব্যের মাধ্যমে সমকামীতার পক্ষে বর্তমান সরকারের অবস্থানকে পরিস্কার করেছে বলেই মনে করছেন অনেকে।
অন্তর্জাতীক সংস্থা বা জাতিসংঘের আনুকুল্য পাবার আশায় ছোট দেশগুলো অনেক সময়ই বিভিন্ন অধিকারের নামে তাদের চাপিয়ে দেয়া সনদে সই করে আশির্বাদপুষ্ট হয় সত্য তবে সেসব দেশ ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলে তাদের জাতিসত্বা,স্বকীয়তা,নিজস্ব সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ।কিন্তু মনে রাখা উচিত জাতিসংঘ মানেই অন্যান্য দেশ ও জাতীর সমাজ ব্যবস্থায় নিজেকে বিলীন করে দেয়া নয়।
আমাদের দেশের ৯০% মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ সমকামীতাকে সমর্থন করাতো দুরে থাক,একে ঘৃনার চোখেই দেখে থাকে। ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের কথা বাদ দিলেও চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও সমকামীতা সমর্থনযোগ্য নয়,যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সমকামীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯০ সালে শুধু মানসিক রোগের তালিকা থেকে সমকামীতাকে বাদ দিয়েছে।উইকি সহ প্রায় সকল মেডিকেল জার্নাল ও সাইটেগুলোতেই সমকামীতাকে অনুৎসাহিত করা হয়েছে।১৯৮১ সালে মূলত সমকামীদের মাধ্যমে এইড্স এর সূত্রপাত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এজন্য বিশেষজ্ঞগণ সমকামিতাকে এইড্স উৎপত্তি ও সংক্রমনের প্রধান কারণ হিসাবে চিহিত করেছে। এইচআইভি ও এইড্স সংক্রমনে মহিলাদের চেয়ে সমকামীরাই অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে স্বীকার করা হয়।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থা সমকামীতাকে গ্রহন করতে প্রস্তুত নয়।বিদেশে বা আন্তর্জাতীক কোন সংস্থায় সকল দেশের প্রতিনিধিরা নিজ দেশের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধেরই প্রতিফলন ঘটান।কিš‘ আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাদের বা কোন সমাজের দাবীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসলেন?এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।আয়্যারল্যান্ড বা আমেরিকায় দির্ঘ্য আন্দোলনের ফলশ্রুতিতেই সমকামীতাকে গ্রহন ও বৈধতা দেয়া হয়।কিন্তু আমাদের দেশে এমন কিছু ঘটেছে কিনা তা পররাষ্ট্রমন্ত্রীই বলতে পারবেন।আমাদের জানা নেই। আর দাবী উঠলেই তা কোনরুপ বিবেচনা ছাড়াই গ্রহন করতে হবে তাও কি ঠিক? সমকামীতাকে বৈধতা দিলে আর বাকী থাকবে কি? পরকিয়া?ইচ্ছেছমত যে কারো সাথে যৌন সম্পর্ক করার অধিকার? এরপর কিসের বৈধতার দাবি করা হবে? এমন প্রশ্নও করেছেন অনেকে। রেইনার এবার্ট এর প্রবন্ধটি পড়ে একজন পাঠক মন্তব্য করেছেন এভাবে, "এরপর আর কীসের বৈধতার দাবী করা হবে? বাকি থাকল incest sex বা পারিবারিক যৌনতা যা এক কথায় পরিবাবের সকল সদস্যদের মধ্যে অবাধ যৌন সম্পর্ককে বুঝায় দ্বিতীয়ত, পশুদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক। পৃথিবীর অনেক দেশে এরূপ যৌনতা দেখা যায়। বারবার দাবি করে অযথা সময় নষ্ট না করে একেবারে সব দাবি পেশ করুন। আপনাদের দাবির সপে অনেক নামিদামি গবেষকের সার্টিফিকেট পাবেন, কোনো অসুবিধা হবে না।"
সমকামীতা(homosexual)ও উভয়কামীতা(bisexual)অবাধ যৌনতারই পরিচায়ক।আর এই অবাধ ও বিকৃত যৌনাচারের পক্ষেই সাফাই গেয়ে আসলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী!তাহলেকি আমরা ধরে নিতে পারি বাংলাদেশ অবাধ যৌনতার পক্ষে? এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি পরিস্কার করার প্রয়োজন রয়েছে।আশা করি সরকারের পক্ষ তেকে অচিরেই ব্যখ্যা প্রদান করা হবে।নইলে জনগন নিরবতা সম্মতির লক্ষন বলেই ধরে নেবে।
Click this link
বিষয়: বিবিধ
৩৮৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন