বাংলাদেশের গণতন্ত্র, না সরকারীতন্ত্র ?
লিখেছেন লিখেছেন স্ফিয়াহ ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৯:৩৫:৪৪ রাত
গণতন্ত্র গণতন্ত্র গণতন্ত্র...... আমরা মুখে বলি গণতন্ত্র, আর বাস্তবে রূপ দেই সরকারীতন্ত্র। আপনারা রাজনীতিবিদরা বাংলাদেশে যে গণতন্ত্র শিখিয়েছেন তা হলো জনগণের ইচ্ছা বা কথা স্বাধীনভাবে ব্যক্ত করা। তাহলে রাজপথে মিছিল অনুমতি না-ই দিলাম; কিন্তু মিটিং করা, অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করা দল-মত নির্বিশেষে কি পারছে? একাংশ অবশ্যই তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কেউ অনুমতি নিয়ে মিটিং করতে পারছে না, আর কারও অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হয় নাÑ এটা কোন্ গণতন্ত্র। যেহেতু রায় দিবে জনগণ, তাহলে প্রতিটি দলের কথোপথন, মিটিং না শুনে কিভাবে বুঝবে, কারা ন্যায়ের পথে আছে, যুক্তিসঙ্গত কথা বলছে আর কারাই বা অন্যায় করছে, যুল্ম করছে, গণতন্ত্র ভঙ্গ করছে। আপনারা তো রাজনীতি নিয়ে অর্থাৎ দলের স্বার্থোদ্ধার নিয়ে সর্বদা ব্যস্ত থাকেন, কিন্তু সাধারণ মানুষ তো বিশেষ বিশেষ বিষয়ে মাথা নাড়া দিয়ে ওঠে। এমতাবস্থায় ন্যায়-অন্যায়ের বিভাজন করার ক্ষমতা জনগণ হারিয়ে ফেলে। সবকিছুর স্বার্থ হাসিল করেন আপনারা, আর প্রাণ দিতে হয় সাধারণ জনগণেরÑ এটা কি গণতন্ত্র?
শাহ্বাগ চত্বরে যে যুবকেরা বিশেষ দাবীতে একত্রিত হয়েছে আপনারা তাদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রহরা রেখেছেন, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা দিয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে সরকারী সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন। এর বিপরীতে যারা আছেন তারা নিজেদের কথা জনসমুক্ষে ব্যক্ত করার কোন অধিকার পাচ্ছেন না, তাদের জন্য কোন প্রহরার প্রয়োজন হয় না, ক্যামেরারও দরকার পড়ে না। এ বিষয়গুলো কিছুটা ছাড় দিলে আজকে বাংলাদেশে এত অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা দেখা দিত না। এখন প্রশ্ন হলো- সে যুবকদের দাবী যদি প্রকৃতপক্ষে জনগণের দাবী হতো, তাহলে তাদের নিরাপত্তার কোনো প্রয়োজন হতো না। কারণ তাদের কথা তো জনগণেরই কথা, কাজেই জনগণই তার প্রতিবাদে সচেষ্ট হবে। কেননা ৫২’র ভাষা আন্দোলনের সময় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে যে ছাত্র-যুবকেরা মাঠে নেমেছিল তাদের কি কোনো নিরাপত্তা ছিল? তারা দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন করেছিল, তাদের কি এখন অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে? মোটেই না। এরই মধ্যে একদল হরতাল ডেকেছে, আরেকদল তার প্রতিরোধের জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। তাহলে আমরা এখন কোন্ গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, তাকি বুঝতে বাকি আছে?
অতএব প্রতিটি জিনিসের জয়-পরাজয়, এপিঠ-ওপিঠ আছে। কেউ স্থায়ী নয়। তাই সরকারের এমন কোন কাজ করা ঠিক হবে না, যাতে করে পরবর্তীতে তার খেসারত দিতে হয়। আমরা কি স্বাধীনতা চেয়েছিলাম শেখ মুজিবর রহমান, জিয়াউর রহমান-এর হত্যাযজ্ঞের জন্য? কক্ষনোই নয়। ভারতবাসীই কি বুঝে ছিল ইন্দিরা গান্ধির হত্যাকাণ্ডের কথা এবং স্বাধীনতার অনেক পরে পাকিস্তানীরাই কি বুঝতে পেরেছিল বেনজির ভুট্টোর কথা। তাই আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মতো হাসি-খুশীভাবে ক্ষমতা গ্রহণ ও হস্তান্তরের কথা বিবেচনায় রাখা দরকার। যেহেতু জনগণের রায়ের মাধ্যমে সরকার গঠন হয়, আর মানুষ সবসময় উন্নয়নের চেয়ে ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়গুলো বেশি মনে রাখে। তাই জনগণের ক্ষতি হয়ে গেলে পরে বুঝলে তো আর হবে না। এভাবেই দেশ দ্বিখণ্ড থেকে ত্রিখণ্ডে রূপ নেয়। বাংলাদেশ অভ্যূদয় হওয়ার উদ্দেশ্যই আমরা ভুলে যাই। চাকুরীজীবি যখন ব্যবসা করে ফলপ্রসু লাভ করতে বিফল হয়, তখন কিন্তু পুনরায় চাকুরীতে ফিরে যাওয়া সম্মানজনক মনে করে। তাই জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান করায় অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি সুদৃষ্টি রাখা দরকার যাতে সঠিক ইতিহাস জেনে দুর্নীতি-দু®কৃতির ঊর্ধ্বে থেকে আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে বদ্ধপরিকর হয়।
বিষয়: রাজনীতি
৯৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন