হাই সিকিউরিটি কারাগারে বিদ্রোহের আশঙ্কা
লিখেছেন লিখেছেন রাশেদুল কবির ১৪ জুলাই, ২০১৩, ০৭:৫১:৫৩ সকাল
নানা অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠছেন কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের বন্দীরা। অনিয়মের প্রতিবাদে মাঝেমধ্যেই করছেন 'হাঙ্গার স্ট্রাইক'। সব জেনেও না জানার ভান করছেন কারা কর্তৃপক্ষ। এভাবে চলতে থাকলে কারাগারে বড় বিদ্রোহের ঘটনা ঘটতে পারে। গোয়েন্দারা বলছেন, কারাবন্দী জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী, হিযবুত তাহ্রীর সদস্য, জঙ্গি ও শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসীরা সাধারণ বন্দীদের উসকে দিয়ে ঘটাতে পারে এ ধরনের ঘটনা। এসব খবরের সত্যতা মিলেছে সাম্প্রতিক সময়ে কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হওয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কাশিমপুর কারাগারে বন্দীদের নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করছে কারা-কর্তৃপক্ষ। কোনো অনিয়মের প্রতিবাদ করলেই বন্দীদের নিয়ে যাওয়া হয় কারাভ্যন্তরের গাজী টাওয়ারের নিচতলায় 'পানিশপেন্ট সেলে'। অন্ধকারাচ্ছন্ন, অপরিষ্কার, দুর্গন্ধযুক্ত ও মশার অভয়ারণ্য ওই পানিশমেন্ট সেলে দিনের পর দিন রাখা হয় বন্দীদের। তবে দু-তিন হাজার টাকা দিলে বন্দীকে পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয় আগের সেলে। এদিকে জামিনে মুক্ত এবং আদালতে হাজিরা দিতে আসা বন্দীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাথর ও কাঁকরের জন্য ভাত মুখে দেওয়া যায় না কাশিমপুর কারাগারে। একজন বন্দীর জন্য প্রতি বেলায় ২৯১.৬০ গ্রাম চাল বরাদ্দের কথা থাকলেও কার্যত মিলছে এক-তৃতীয়াংশ। একজন বন্দীর জন্য এক বেলা খাবারে ১৪৫.৬০ গ্রাম ডাল বরাদ্দ। কিন্তু ডাল দেখে মনে হয় হাতধোয়া পানি। কারা সূত্র জানায়, বিশেষ করে ২৫ মে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দী রজব আলীর আত্দহত্যার ঘটনার পর থেকে বন্দীরা নড়েচড়ে বসেন। টানা তিন দিন 'হাঙ্গার স্ট্রাইক' করেন 'হিমেল' ও 'তমাল' সেলের বন্দীরা। ওই সময় চারজন বন্দী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
অভিযোগ রয়েছে, 'তমাল' সেলের বন্দী ছিলেন রজব আলী। ফাঁসির আসামির জন্য বরাদ্দ প্রতিদিন আটটি সিগারেট চাইতে গিয়েই জেলার দিদারুল আলমের রোষানলে পড়েন তিনি। এর শাস্তি হিসেবে রংপুর জেলার হতদরিদ্র রজব আলীকে স্থানান্তর করা হয় 'পানিশমেন্ট সেলে'। তখন ওই সেলে প্রায় ২৫ জনের মতো বন্দী ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি ছাড়া অন্য সবাই টাকার বিনিময়ে পুরনো সেলে ফেরত চলে যান। ওই সেলে টানা প্রায় এক মাস থাকার পর গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্দহত্যা করেন রজব আলী। ওই ঘটনা নিয়ে কারাভ্যন্তরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বন্দীরা। পরে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদে বন্দীরা 'হাঙ্গার স্ট্রাইক' (না খেয়ে অনশন) করেন। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও মানসম্মত খাবার না পাওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার 'শৈবাল' সেলের দ্বিতীয় তলায় ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী ভারতীয় নাগরিক অনুপ চেটিয়া ও লক্ষ্মীপ্রসাদ টানা দেড় দিন 'হাঙ্গার স্ট্রাইক' করেন। পরে কারা কর্তৃপক্ষ বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে অনশন ভাঙায় তাদের। অভিযোগ রয়েছে, হাই সিকিউরিটি কারাগারে জেলার দিদারুল আলমের নেতৃত্বে ডেপুটি জেলার আতিক, কারারক্ষী মোস্তাফিজ, মহিদুলের সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট নানাভাবে বন্দীদের নির্যাতন করে আসছেন। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্য ওই সিন্ডিকেটকে তাদের চাহিদামতো টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন বন্দীরা।নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, গত দুই মাসে নিরীহ দরিদ্র বন্দীরা হাঙ্গার স্ট্রাইক করছেন অন্তত চার দফা। কেবল বন্দীরা নন, সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিভিন্ন সময় উচ্চপর্যায়ে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরও সিন্ডিকেটের সদস্যরা থেকে যাচ্ছেন বহাল তবিয়তে। তিনি বলেন, এ ছাড়া ওই কারাগারে সুইডেন আসলাম, লম্বু সেলিম, তাজ, মুফতি হান্নানের মতো দুর্ধর্ষ বন্দীরা রয়েছেন। একই সঙ্গে রয়েছেন হিযবুত তাহ্রীর ও জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে তারা চেষ্টা করতেই পারেন।
জামিনপ্রাপ্ত বন্দীরা অভিযোগ করেন, কাশিমপুর কারাগারে নানাভাবে বন্দীদের নির্যাতন করে আসছে জেলার দিদারুল আলমের নেতৃত্বে গঠিত সিন্ডিকেট। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্য ওই সিন্ডিকেটকে তাদের চাহিদামতো টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন বন্দীরা।
বন্দীরা বলেন, কোনো আসামি জামিন পেয়ে গেলে তার কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে থাকেন সিন্ডিকেট সদস্যরা। না দিলে বিভিন্ন পেন্ডিং মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তুলে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কারা উপমহাপরিদর্শক গোলাম হায়দার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এসব বিষয় সম্পর্কে তিনি অবহিত নন। পুরোপুরি জানার পর মন্তব্য করা যাবে বলে জানান তিনি। এর আগে হাই সিকিউরিটি কারগারের সিনিয়র জেল সুপার আবদুর রাজ্জাকের মুঠোফোনে কয়েক দফা ফোন করলেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।
উৎসঃ বাংলাদেশ প্রতিদি
বিষয়: বিবিধ
১৬৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন