বিবেকের কথা শোন একটিবার!!!
লিখেছেন লিখেছেন ান্নি চৌধুরী ০৪ মার্চ, ২০১৩, ০৫:২৮:৫১ বিকাল
আমি সত্যি ই ভীষন লজ্জিত আজ বিবেকের কাছে। গোটা জাতির কাছে। আমি ঘৃনা আর অপমানে টুকরো টুকরো হই ভেবে যে তোরা ও মানুষ!
ছি! তোদের দেখে মানুষ নিজেকে মানুষ ভাবতে লজ্জা পাবে...
ঐ ইউনিফর্ম গায়ে দিলেই কী তোদের মাঝ থেকে মনুষ্যত্ববোধ সাথে সাথেই উবে যায়?
তোরাইতো জনগণের বন্ধু বলে পরিচয় দিস। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার তাগিদে নাকি অস্ত্র ধরিস। সহিংসতা নির্মূলে এগিয়ে আসিস! অথচ এখন তোরাই সেই সন্ত্রাসীদের চেয়েও ভয়ংকর হয়ে উঠেছিস? যাদের অত্যাচারে নিরীহ জনগণ তোদের কাছে সাহায্য চাইতে যায়, সেই তোরাই অত্যাচারী হয়ে উঠলি? জনগণের রক্ষক না হয়ে ভক্ষক হয়ে উঠলি? ভালো করে একবার চেয়ে দেখেছিস ঐ মৃত মানুষগুলোর দিকে! যাদের বুকের পাঁজর ঝাঁঝরা হয়েছে তোদের গুলিতে! মরণ ব্যথার মাঝেও তারা তোদের কলুষিত মুখে থুথু ছিটিয়ে গেছে।
ভালো করে দেখ। তোর মুখেও রক্তের দাগ। সারা শরীর জূড়ে ঘাতকের গন্ধ। খুনীর বিষাক্ত গন্ধ তোদের ঐ ইউনিফর্মটার ভিতরে আর বাইরে। এই বিদঘুটে গন্ধ নিয়ে কীভাবে বাসায় যাস? সন্তান কে বুকে নিয়ে আদর করিস? পবিত্র মায়ের মুখের দিকে তাকাস? নিজেকে কারো সন্তান ভাবতে, নিষ্পাপ সন্তানের পিতা ভাবতে তোর একটুও বুক কাঁপেনা? একটু আগেইতো তুই অন্য মায়ের বুক খালি করে এলি। সন্তানের বাবা ডাক চিরতরে মুছে দিলি। কতো টাকা দিলে তুই/তোরা পারবি সহ্য করতে যদি কেউ তোর সামনে তোর সন্তান কে গুলি করে নির্মম ভাবে মেরে ফেলে? নাকি টাকার কাছে এসব কিছুই না তোর কাছে!
সামান্য টাকার কারণে তুই নিজে পারবি তোর সন্তান কে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে? তোর মা প্রতিবাদ করলে তাকেও ধরনী থেকে মুছে দিতে? নাকি ওদের নির্দেশে অবলীলায় তা করতেও তোর হাত কাঁপবেনা!
রাজনৈতিক সহিংসতা থাকবে, মতভেদ চলবে। পক্ষ বিপক্ষের মাঝে নোংরা কথার বুলি ছোড়া ছূড়ি বংলাদেশের ইতিহাসে পুরোনো নয়। কিন্তু তুই কেন এত সহিংস হয়ে উঠবি? নির্বিচারে এতগুলো তাজা প্রাণ হরণ করবি? তোর মা নিশ্চয় স্বপ্নে বুক বাধেন এখনো। তোরা সাহসী হবি। সৎ এবং নিষ্ঠাবান হবি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবি। অত্যাচারীরা পালাবার পথ পাবেনা তোদের দেখে। আর তোরা? সেই অত্যাচারীদের কে নিয়েই মরণ নেশায় মেতে উঠেছিস? তবে মিছেমিছি আদর্শ সন্তানের স্বপ্ন দেখেছিল এই অভাগীনি মা?
তুইতো দেখেছিস তোর মা জায়নামাজে বসে মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করতে। তোদের মঙ্গল চাইতে। ধার্মিক মাতার সন্তান তোরা অনেকেই। ধর্মকে নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলছে তাদের জন্য তোর চোখে এতটুকু ঘৃনা নেই? বরং সেই ধর্মদ্রোহীদের সাথেই হাত মিলিয়েছিস তোরা? আর এভাবে কতো হিংস্র হবি তোরা? বাংলাদেশের ষোলো কোটি জনগণ সবাই কী রাজনীতি করে বেড়ায়? কেন তোদের হাতে পাখির মতো গুলিবিদ্ধ হয়ে ছটফট করবে নিরীহ জনগণ? গণহত্যার দায়ে কোনোদিনই কী বিচারের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবেনা তোদেরকে?
সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি। জনতা ততটা নিষ্ঠুর হয়ে যায়নি তোদের উপর, এখনো ক্ষমা চাইতে পারিস। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারিস। আবার পরিণত হতে পারিস জনগনের বন্ধুতে। হাজারো মায়ের আর্তনাদ একটিবার শোন! চোখ মেলে দেখ, সেই সব সন্তান হারা মায়ের সারিতে তোর মাও এসে দাড়িয়েছে। অশ্রু সজল চোখে হাহাকার করছে। খোকা, কোনো মায়ের বুক আর এভাবে ভেঙ্গে দিসনা। সেই হাহাকার যে ভয়ানক অভিসম্পাত হয়ে তোর চারপাশে ঘুরছে।
আমাকে গালমন্দ করছিস!
আমিতো মানবতার কথা বলছি। আমি ন্যায় এবং সততার কথা বলছি। আমি কোটি বাঙ্গালীর হৃদয়ের মাঝে জ্বলতে থাকা নিরব প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি বলছি। আমাকে থামাবি কী করে? গুলি দেখিয়ে থামাবি? পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার ভয় দেখাবি? নাকি রাজপথের ঐ অসহায় মানুষগুলোকে যেভাবে খুন করিস ওভাবে খুন করবি? যতো খুন করবি ততোই তো তোদের প্রতি ঘৃনা আরো বাড়বে। সেই খুনী আত্মাগুলোই সাঁড়াশির মতো চেপে ধরবে তোদের ঐ বুক, গলা। তোদের পৃথিবী খুবই সংকীর্ন হয়ে আসছে। অথচ তোরা দেখতেই পাচ্ছিসনা! পাবিইবা কী করে, সেই কবেই তোরা অন্ধ হয়ে গেছিস। ইউনিফর্ম এর আড়ালে তোদের শরীরটা জন্তুর মতো খসখসে হয়ে গেছে। তোদের এখন আর কেউ পুলিশ ভাবেনা। ভাবে সরকারের এলসেশিয়ান। আসলেইতো তাই। পালিত কুকুরের মতোই সরকারের আদেশ পালন করছিস। যেখানে সেখানে নাক ডুবিয়ে ঘ্রান নিচ্ছিস মানুষ মারার জন্য।
তোরাতো সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানব নয়। সেই বনজঙ্গলে লতা পাতা খেয়ে বেঁচে থাকা আদি প্রানী নয়। তবে কী করে সভ্যতার আদিলগ্নের মানুষ গুলোর চেয়েও অসভ্য? নাকি গভীর কোনো জঙ্গলের গুহা থেকে তোদের নিয়ে এসেছে মানুষ মারার প্রয়োজনে? আমি খুব কঠিন করে বলছি? নাতো! জনগণের এই আহাজারী আর ধিক্কারতো তোর ইউনিফর্ম ভেদ করে তোর বিবেকে এতটুকু কড়া নাড়েনা! তাহলে এ যে কঠিন কথা বুঝবি কী করে? হিংস্রতা দিয়েই বিচার করে বুঝে নিবি তবে?
এইতো সেদিন একজন মা বললো যে তোদের দেখলে হিংস্র জানোয়ারের প্রতিও মমতা জমে। তাদের চেয়েও নিম্নস্থরের বলে প্রকাশ করতে চাস নিজেকে? কখনো কী একবার ও ইচ্ছে করেনা মানুষ হতে! ভালো সন্তান হতে! ভালো পিতা কিংবা ভাই হতে? মেনে নিচ্ছি, বাংলাদেশে কর্ম সংস্থানের সুযোগ খুবই কম। শিক্ষিত অশিক্ষিত হাজারো বেকার পথে পথে ঘুরছে। উচ্চ শিক্ষার সনদপত্র দেখিয়েও কোনো কাজ মেলেনা এখানে। অবশ্য নেতাদের সাথে উঠাবসা থাকলে অন্য কথা। সেখানে সনদের দরকার হয়না। তোদের মাঝে এমন কেউ আছে যাদের হয়তো অনেক চেষ্টার পরও ভালো কোনো চাকুরী জুটেনি। আবার এমনও কেউ আছে যারা হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। তবুও সামর্থ্যের মধ্যে যেভাবে বেঁচে থাকা যায় সেই স্বপ্ন আকড়ে ধরেই তোরা এ পথে এসেছিস। তাতে যদি দরিদ্র পিতা মাতার কষ্ট এতটুকু ঘুচে! অথচ নিজের সেই স্বপ্ন, পিতা মাতার চোখে ভবিষ্যতের উজ্জ্বল মৃদু আলোটুকুর অজান্তেই বলিদান করছিস? ভাবতে পারিস তোকে সন্তান বলতে তোর মা লজ্জায় আচলে মুখ ঢাকে! আজ তোর বাবা বিধাতার কাছে প্রার্থনা করে এমন সন্তান যেন কারো না হয়!
কদিন পর তো তোকে বাবা পরিচয় দিতে ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে নেবে ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশুগুলো। ভিডিও ফুটেজ এ যখন কোনো শিশু দেখবে তার বাবা অকারণে লোক ধরে বেধড়ক পিটাচ্ছে। শরীরে গুলি ঠেকিয়ে মানুষ মারছে, রক্তের নেশায় পাগল হয়ে একের পর এক কেড়ে নিচ্ছে তাজা প্রাণ। তখন পরিনতি টা কী হবে ভাবতে পারিস? কতোদিন আর এই পুলিশ হয়ে থাকবি তোরা? কতোদিন এই ইউনিফর্ম থাকবে শরীরটাতে? যেদিন এ পোশাক খুলে যাবে সেদিন তো তুই শুধু মাত্র একজন নিরীহ জনগণ। আর সেদিন সেই পোশাক ধারী হয়ে তোর সন্তানও তার গুলিতে তোর বুক ঝাঁঝরা করে দেবেনাতো! সন্মুখের ভয়াবহ চিত্র তোদের চোখের সামনে ঘুরপাক খাচ্ছে। বুঝার চেষ্টা কর। ভাবার চেষ্টা কর। অনুধাবন কর। তোদের জীবন নিয়ে, আবেগ নিয়ে, শক্তি নিয়ে, সাহস নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে সরকার এবং তার দল। তারাই একসময় তোদের কোনঠাসা করে দেবে। আজ জনগণের কাছে, কাল তোর কাছে, তোর পরিবারের কাছে সবার কাছে ভিলেন হিসেবে প্রকাশ করাতে চায় তোদের। বিচ্ছিন্ন করাতে চায়। স্বার্থের কারণে তোদের দিয়ে তোদের প্রিয়জনকে হত্যা করার নির্দেশ দিতে কার্পন্য করবেনা ওরা। শুধু তোদের নয়, সব তরুন প্রজন্মের স্বপ্ন, আখাংকা, শক্তিকে অপব্যবহার করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ওরা। এভাবে ধ্বংস লীলায় ভাসিয়ে দিসনা নিজেদের। গণহত্যার সারিতে যদি তুই প্রিয় কারো রক্তাত্ত লাশ দেখিস তাহলে সহ্য করতে পারবি? তোদের গুলিতে নিহত শিশুগুলোর সারিতে যদি তোর প্রাণপ্রিয় সন্তান হয় মেনে নিতে পারবি? নৃশংস ভাবে কাওকে হত্যা করার আগে একবার প্রিয় মুখগুলোর কথা ভাবিস। যাদের কিছু হলে পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে উঠে। মনে আনতে চেষ্টা করিস তুই এদের মাঝে তোর বিবেক, তো্র প্রিয়মানুষগুলুকে হত্যা করছিসনাতো!
তোরা একটিবার জাগ্রত হ। সেই নারীর দোহাই দিয়ে বলবো, যে তোদের গর্ভে ধারণ করেছে। যাকে মা বলে ডাকতে না পারলে তোর ব্যথা কোনোভাবে উপশম হয়না। সেই সন্তানের দোহাই দিয়ে বলছি, যার আগমনে তোর পৃথিবী পরিপূর্ন হয়ে উঠেছিল। যাদের ঘিরেই তুই আগামীর গল্প বুনিস। সেই প্রিয়মানুষগুলোর দোহাই দিয়ে বলবো যাদের সান্ন্যিধ্য ছাড়া তোর জীবন অর্থহীন। বন্ধ কর এই নারকীয় মানুষ হত্যা। যদি বাধ্য করা হয়, তাহলে ছুড়ে ফেল ঐ অভিশপ্ত ইউনিফর্ম। প্রতিবাদী হতে না পারিস, জাগ্রত জনতার কাতারে এসে শামিল হ। কোনো দল নয়। সহিংসতা নয়। আমার দেশ, এখানে স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকা আমাদের অধিকার। ধর্ম নিয়ে, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে যারা, এবং এর মদদদাতা সরকারের ঘৃন্য সকল নাটক বন্ধ করতে সোচ্চার হই সকলেই।
বিষয়: রাজনীতি
১৬৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন