দেশ কি আসলেই স্বাধীন হয়েছিলো ? না-স্বাধীনতা হারাচ্ছে ? না-স্বাধীন হচ্ছে ?
লিখেছেন লিখেছেন সিরাজ ইবনে মালিক ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৪:৩৭:৩৭ বিকাল
বাংলাদেশ সাংবিধানিক ভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হলেও বাস্তবে অসাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত । সংবিধানের দোহাই দিয়ে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশকে আজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । জনগণের মতামতের উপেক্ষা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদের মাধ্যমে সংবিধান থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত করে দেশে যে কঠিন সঙ্কটের সৃষ্টি করেছেন, জানিনা আর কতো মায়ের বুক খালি হওয়ার পর আমরা এর থেকে মুক্তি পাব । বিশ্ব মতামতকে অবজ্ঞা করে শুধু ভারতের কথায় নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ,জানিনা কতো পার্সেন্ট সফল হবেন । তবে এর ভিতর দেশের অস্তিত্ব যে বিলীন হয়ে যাবে এতে কারো দ্বিমত আছে বলে আমার মনে হয়না । প্রতিদিনকার ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে হাজার হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়ে রাস্তায় নেমেছে, তার হিশাব কি সম্মানিত নেতা / নেত্রীদের কেউ রাখেন ? দেশের অর্থনীতির যে পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে , একটি মেরুদণ্ডহীন অর্থনীতি দেখতে আর বেশী অপেক্ষা করতে হবেনা । যে কোন রাষ্ট্র যখন অর্থনৈতিক ভাবে মেরুদণ্ডহীন হয়ে যায়, তখনই উক্ত রাষ্ট্র ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায় । বাংলাদেশ কি আসলেই ব্যর্থতার দিকে আগাচ্ছে ?
এমন আজব দেশ পৃথিবীতে আরেকটি আছে কি না সন্দেহ,যে দেশের সরকার জনগণের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকে! সম্পদের পাহাড় তৈরিকারী নেতা নেত্রীরা অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ করতে সক্ষম হয়েছেন । জনগণের সম্পদ ভক্ষণের এ কোন মন্ত্র, গণতন্ত্র শিক্ষা দিলো । আব্রাহাম লিংকন কি এমন গণতন্ত্রের রূপরেখা দিয়েছিলেন ? গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে লুট-পাটের কোন সুযোগ নেই । এ সমস্ত সুযোগ সুবিধা করে দিতে পারে একমাত্র স্বৈরতন্ত্র । স্বৈরতন্ত্রের ও একটা ভদ্রতা আছে ! কিন্তু এ কেমন স্বৈরতন্ত্র , ইতর , অভদ্র ও হিংস্র । অভদ্রতা বা হিংস্রতারও একটা সীমা আছে কিন্তু এ সীমারেখাও অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে , বাংলাদেশের চলমান শাসন ব্যবস্থা । সরকারি দলের নেতাদের হুংকার আর হুমকি দেখলে সন্দেহ হয়, আমরা কোথায় বাস করছি ? মনে হয় যেন,মহাবন আমাজানের কিংবা সুন্দরবনের হিংস্র প্রাণীরা রাজপথে হুংকার দিচ্ছে । এদের অবস্থান এখন নির্লজ্জতার চূড়ান্তে । জানতে বড় ইচ্ছে করে সত্যিই কি এরা মানুষ ?
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দায়িত্ব কর্তব্য ভুলে গিয়ে সরকারের আজ্ঞাবহ দাসে রূপান্তরিত হয়েছে । এখন মানুষ, শুধু পুলিশ, বি জি বি বা র্যাব বলে ডাকে না,প্রত্যেকটির সাথে লীগ যুক্ত করে ,পুলিশ লীগ............লীগ বলে ডাকে । একদিকে সরকার দলীয় নেতা কর্মীরা প্রকাশ্য অস্ত্র নিয়ে ঘোরে বেড়ায়,অন্য দিকে বিরোধীদলীয় নেতা কর্মীদের বাসা-বাড়ি ভেঙ্গে তল্লাশি ও গ্রেফতারের মাধ্যমে নির্যাতন করা হয় । তল্লাশির নামে যে অবস্থা শুরু হয়েছে ভাবতেই অবাক লাগে, আমরা স্বাধীন রাষ্ট্রে বসবাস করছি ? প্রশাসনকে দলীয় সমর্থক/কর্মীর ভূমিকায় দেখেছি, কিন্তু সন্ত্রাসের ভূমিকায় কখনো দেখিনি । জীবনে এই প্রথম এবং সম্ভবত পৃথিবীতে এই প্রথম প্রশাসন সন্ত্রাসের শিকার কোন দেশের জনগণ । সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য যে ভাবেই হোক সে দেশটি হচ্ছে , লাখ শহীদের প্রাণের বিনিময় স্বাধীনকৃত দেশ বাংলাদেশ । দেশ কি আসলেই স্বাধীন হয়েছিলো ? না-স্বাধীনতা হারাচ্ছে ? না-স্বাধীন হচ্ছে ?
জন্মের আগে ঘটে যাওয়া মুক্তি যুদ্ধ দেখিনি, বড়দের কাছ থেকে শুনেছি , হানাদারদের নির্যাতনের বর্ণনা । এ সকল নির্যাতনের একটি কাল্পনিক চিত্র মনের মাঝে অংকিত ছিল । যে কারণে পাকিস্তানীদের প্রতি অনিচ্ছাকৃত ঘৃণা চলে আসতো । কল্পনার চিত্র এখন বাস্তবতার রূপ নিয়েছে । তবে পাক হানাদারদের মাধ্যমে নয় । যৌথবাহিনী নামক এক ভয়ঙ্কর বাহিনীর মাধ্যমে । হানাদারদের হার মানিয়ে ইতিহাসের পাতায় নোতুন করে স্থান করে নিলো বাংলাদেশ যৌথবাহিনী । বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের দিয়ে গঠিত এ বাহিনী , আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী পুলিশ, বি জি বি ও র্যাবের পোশাক পরে অভিযানের নামে হত্যা নির্যাতন এমনকি ধর্ষণ পর্যন্ত নির্দ্বিধায় চালিয়ে যাচ্ছে । ইতিহাসকে কলঙ্কিত করছে এ সকল নরপশুর দল । দলীয় নেতা কর্মী দিয়ে প্রশাসন সাজিয়ে নিজ সুবিধার্থে ব্যাবহার করার নাম যদি হয় গণতন্ত্র তাইলে আমরা নোতুন প্রজন্ম ঘৃণা করি তোদের এই গণতন্ত্র । হানাদার ও যৌথবাহিনীর মধ্যকার পার্থক্য কোথায় ?
গণতন্ত্রে বিরোধীদল বলে একটি কথা আছে । এর অর্থ এই নয়, শুধু জালাও-পুড়াও, ধর-মার । আবার জুলুম নির্যাতনের মোকাবেলায় ধর্য্য ধারণ করে নীরব বসে থাকাও বিরোধীদলের বৈশিষ্ট্য নয় । গঠন তান্ত্রিক সমালোচনা ও জন সাধারণের জন্য নিয়ম তান্ত্রিক আন্দোলন করাই তাদের কাজ । এ ব্যবস্থা এ জন্যই প্রবর্তন করা হয়েছে যাতে ক্ষমতাসীন দল আইনের বাহিরে কোন কাজ করতে না পারে ,স্বৈর তান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতায় টিকতে না পারে । গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত যে কোন দেশের সরকারের আইন বিরোধী কার্যক্রম নির্ভর করে বিরোধীদলের অবস্থানের উপর । বিরোধীদল দুর্বল হলে, সরকার ইচ্ছে করেই সর্বত্র প্রভাব বিস্তার করে, ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য । আর এ ভাবেই একটি দেশ স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের দিকে পা বাড়ায় । সন্দেহ জাগে বাংলাদেশের বেলায়, বিরোধীদলের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে সরকার কি এ নগ্ন পন্থায় অগ্রসর হচ্ছে ? কোথায় আজ বিরোধীদলের নেতা-নেত্রী গন ? জনগণের সাথে রাজপথে নামছেন না কেন ?
আজ বিরোধীদলের ডাকে মার্চ ফর ডেমোক্রেসি বা গণতন্ত্রের জন্য যাত্রা ছিল । সরকার সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাজধানীকে আলাদা করে রেখেছে । তার পরও জনগণ যে যেভাবে পেরেছে ঢাকায় গিয়ে পৌঁছেছে । কিন্তু সরকার, পুলিশ , বি জি বি ও র্যাব দিয়ে রাস্তা ঘাট এমন ভাবে ব্লক করলো যে, সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা মুমূর্ষু রুগী নিয়ে হাসপাতাল যাবারও সুযোগটা দিলো না । বলতে লজ্জা হয় আমরা স্বাধীন বাংলার নাগরিক । তা ছড়া পুলিশি প্রহরায় সরকার সমর্থকদের তাণ্ডবে মানবতা ভূলুণ্ঠিত, প্রকাশ্যে কাঁদে । সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের উপর আক্রমণ করে ইতিহাসকে কলঙ্কিত করলো সরকারীদল । হিংস্রতার চরম শিখরে পৌঁছে গেছে, তারই জানান দিলো আজকের আক্রমণ থেকে । আজকের আক্রমণ কারীদের আক্রমণের দৃশ্য দেখে সন্দেহের মধ্যে পড়ে গেলাম, এদের মানুষ বললে মানুষকে কি বলে ডাকতে হবে ? কারণ মানবতা, মনুষ্যত্ব এদের সাথে নেই থাকতেও পারেনা । জঙ্গলের হিংস্র প্রাণী আর এদের মধ্যকার পার্থক্য শুধু আকার আকৃতিতে! সত্যিই কি এরা মানুষ ?
মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রীর সাহসিকতা দেখে বড় আক্ষেপ লাগলো, ইস! যদি তাঁর দলের অন্যান্য নেতাদের এমন সৎসাহস থাকতো, তাইলে সরকার এ পর্যন্ত আসার সুযোগ হয়তো পেতো না । ধন্যবাদ বিরোধীদলীয় নেত্রী ,জনগণের পক্ষে অবস্থান নেয়ার জন্য, গণতন্ত্র উদ্ধারে রাজপথে নেমে আসার জন্য । আমরা আশা বাদী অতীতের মতো আপোষহীন থেকে গণতন্ত্র উদ্ধারের মাধ্যমে গণতন্ত্রের মুখে তথা সাধারণ মানুষের মুখে হাঁসি ফোটাবেন ।
এ সরকারের পদত্যাগ এখন আর রাজনৈতিক কোন দাবি নয় , এটা সমগ্র বাংলাদেশের সাধারণ জনতার দাবি, বিশ্ববাসীর দাবি । মাননীয় নেত্রী, ভয়ের কোন কারণ নেই, আপনার দলের দু চার নেতা গর্তে আশ্রয় নিলেও গুটা বিশ্ব আপনার সাথে আছে । ( আপাতত ভারতকে মহাসমুদ্রের অতল গহ্বরের কোন রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করুণ ) জনগণ শক্ত অবস্থানে থাকলে ভারত আমাদের কিছুই করতে পারবেনা । গণদাবীকে উপেক্ষা করে কেউ কখনো ক্ষমতায় টিকে থকতে পারেনি পারবেও না । গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের লালনই ক্ষমতাকে স্থায়ী করে দেয় । বাংলাদেশ সরকার কি গণতন্ত্রের লালন করছে ?
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী লম্বা গাছ দেখে শুধু উপরে উঠছেন! একবার কি ভেবেছেন ; জনগণ যখন মই সরিয়ে গাছের গুড়ায় কাটবে, তখন কি হবে উপায় ? যত বেশী উপরে উঠবেন আঘাত তো ততো বেশী পাবেন । একবার ভেবে দেখুন আপনার বাবার পরিণতির দিকে তাকিয়ে , তিনি কিন্তু আপনার পরিমাণ উচ্চতায় উঠতে পারেন নি । অথচ কি নির্মম বিদায় নিতে হয়েছে তাঁকে । যৌথবাহিনী নিয়ে বেশী গর্ব করবেন না, হয়তো এরাই হবে আপনার সমাপ্তি কারী । ভুলে যান কেন রক্ষীবাহিনীর কথা । শক্তি,সামর্থ্য, সুযোগ-সুবিধা কি কম দেয়া হয়েছিলো তাদের ? কিন্তু কি পেরেছে শেষ রক্ষা করতে ? জনগণের সাথে গাদ্দারী করলে, মরার পর জনগণ,ইন্না লিল্লাহ ............ পড়ে না, যা আপনার বাবার বেলায় ঘটেছিলো । ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনি আপনাকেও করবেনা । গণতন্ত্রকে কাঁদাবেন না, গণতন্ত্রের অভিশাপ নেবেন না । গণতন্ত্রের অভিশাপে অভিশপ্তদের পরিণতি হয় অত্যন্ত ভয়াবহ । যে অভিশাপ আওয়ামীলীগের জাতির পিতাকেও রক্ষা দেয় নাই । হাসিনা কি আদৌ অভিশাপ মুক্ত ?
বিষয়: বিবিধ
২৬১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন