বাংলাদেশে নোংরা রাজনীতির খেলা
লিখেছেন লিখেছেন খাইরুল হোসাইন ১৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:১১:২১ রাত
রাজনীতি মানে রাজার নীতি। যেখানে সব সময় মানুষের কল্যাণ ও তাদের মঙ্গলজনক চিন্তা-ভাবনা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক দেশে জনগনের কল্যানের রাজনীতি চর্চা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে আসলে রাজনীতির নামে বা রাজনীতির ছদ্মাবরনে আমরা দেশের সাধারন মানুষ কী দেখছি? রাজনীতকগণ রাজনীতি করবেন, সমাজকর্মীরা সমাজের কল্যাণে কথা বলবেন কাজ করে যাবেন, শিক্ষাবিদরা সমাজের বিভিন্ন স্তরে শিক্ষার প্রচার ও প্রসার কিভাবে সম্ভব সে ব্যাপারে দিক নির্দেশনা প্রদান করবেন, মিডিয়া ও মিডিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট যারা তারা স্বাভাবিকভাবেই জনগণের কল্যানে কথা বলবেন বা কলম ধরবেন, পেশাজীবিরা নিজেদের পেশাকে জনকল্যাণে নিবেদিত করবেন, বিভিন্ন ধর্মের সাথে জড়িত ব্যক্তিত্বরা নিজ নিজ ধর্মের প্রচারণা ও তার উন্নয়নে কাজ করবেন এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ আপন গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেই নিজ দায়িত্ব পালন করবেন এটাই ছিল প্রত্যাশা এবং স্ব স্ব কাজের দাবী।
কিন্তু আমরা বর্তমানে কী প্রত্যক্ষ করছি? এদের কেউ কি নিজেদের গন্ডির মধ্যে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে কাজ করছে বলে কি আমরা মনে করতে পারি? না তা পারি না। কেন? তার কারন হচ্ছে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি বিভাগ বর্তমানে নিজ নিজ পেশা বাদ দিয়ে একটি বিষয়কে নিজেদের পেশা হিসেবে বেঁচে নিয়েছে আর তা হচ্ছে নোংরা রাজনীতি। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন যে কেন রীজনীতিকে নোংরা বলে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে? উত্তরে বলল সত্যিকারের রাজনীতিকে সকলেই সমীহ করে, সম্মানের চোখেই দেখে। পক্ষান্তরে এই রাজনীতি যখন সবখানে ঢুকে পড়ে তখন রাজনীতির আসল লক্ষ্য ব্যাহত হয় ফলে তার ভিন্নরূপ পরিলক্ষিত এবং একে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এক শ্রেণি বা পেশার মানুষ নিজেদের স্বার্থ হাসিলের খেলায় মেতে উঠে। তখন রাজনীতি হয় মিথ্যা, প্রতারণা, ধোকাবাজী, দলবাজি, মাস্তানি ও ভন্ডামির খেলাঘর। বড় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মখ থেকে শুনেছি "রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই" - তাদের ভাষায় রাজনীতির মানে হচ্ছে কথা দিয়ে কথা না রাখা, ওয়াদা করলে তা পালন না করা এবং কথা ও কাজের মধ্যে অমিল বা গরমিল থাকা। যাকে হাদিস শরিফের ভাষায় মুনাফেকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মহানবি বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবি ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন- "মুনাফিকের চিহ্ন হলো তিনটি- যখন তারা কথা বলে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং তাদের কাছে কোন কিছু আমানত রাখা হলে তার খেয়ানত করে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে হাদিস শরিফের আলোকে যদি আমরা আমাদের দেশের সর্বস্তরের রাজনীতিকদের চরিত্র বিশ্লেষণ করি তাহলে তাদেরকে আমরা কোন স্তরের ভাল মানুষ হিসেবে গণ্য করতে পারি, তার মূল্যায়ন আপনাদের উপরেই ছেড়ে দিলাম। বিশেষ করে যে কারণে আমার আজকের লেখা তা হলো অন লাইন পত্রিকা নতুন বার্তা ডট কমে ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবারের সংখ্যায় সাবেক সেনা প্রধান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ ও এরশাদ সাহেবের রাজনীতির কৌশল সম্পর্কে একটি খবর ছাপা হয়েছে, যেখানে তার অপরাজনীতি এবং ইসলাম ও ইসলামী দলগুলো নিয়ে নোংরা রাজনীতির খেলা ফুটে উঠেছে। এ থেকে আমার মনে হয়েছে আসলে কী বাংলাদেশে সত্যিকারের রাজনীতি চর্চার যবনিকাপাত ঘটেছে? নিচে পাঠকদের মূল্যায়নের জন্য পত্রিকার লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলোঃ
ঢাকা: হেফাজতে ইসলাম যাতে বিএনপির দিকে ঝুঁকে না পড়ে সেজন্য সরকার এরশাদকে ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ দিয়েছে। এই খবর দিয়েছেন সাবেক মন্ত্রী, জাতীয় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা। ওই নেতা জানান, সরকার হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে ভীষণ বিব্রত। হেফাজতের দাবি মানা সরকারের পক্ষে অসম্ভব। আবার তারা খেপে যান- এমন আচরণ করাটাও সরকারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ওই নেতা আরো জানান, সরকার ১৮ দলকে বাদ দিয়ে যে নির্বাচনের দিকে ঝুঁকছে তাতে এরশাদকে তাদের দরকার। আর এই নির্বাচনে চরমোনাই পীরসহ কিছু ইসলামী দলকে পেতে এরশাদকে সরকার ব্যবহার করতে চাইছে। আর ওই সময় হেফাজতের লোকেরা যাতে নির্বাচন নিয়ে না ভাবে- সেটি দেখভাল করবেন এরশাদ। ‘নাস্তিক ব্লগারদের বিচারসহ’ ১৩ দফা দাবিতে সম্প্রতি ঢাকামুখী লংমার্চ করেছে হেফাজত। শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে তারা বিশাল সমাবেশও করে। হেফাজতের কর্মসূচিতে এরশাদ সমর্থন তো দিয়েছেনই, সমাবেশে আগতদের জন্য খাবার পানি সরবরাহ করেছেন। আবার সমাবেশমঞ্চে গিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন তার দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমেদ।
এদিকে, প্রথম থেকেই শাহবাগের বিরুদ্ধে ছিলেন এরশাদ। কয়েকদিন আগেও তিনি গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙে দিতেও সরকারকে আহ্বান জানান। জাতীয় পার্টির একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, সরকারের ‘পরামর্শেই’ এরশাদের এ অবস্থান। জাপার ওই নেতা দাবি করেন, হেফাজতের নেতারা মনে করেন, শেখ হাসিনা ইসলামবিরোধী। খালেদা জিয়া ইসলামের পক্ষেও নন, বিপক্ষেও নন। আর এরশাদ ইসলামের পক্ষে। তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, এসবের কারণও আছে। হেফাজত মনে করছে, শেখ হাসিনা শাহবাগকে সমর্থন দিয়ে ‘নাস্তিক ব্লগারদের’ পক্ষ নিয়েছেন। খালেদা জিয়ার ব্যাপারে তাদের ধারণার কারণ হলো, গত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় করেননি। সেসময় ইসলামপন্থি দলগুলোর একটি দাবি ছিল এটি। সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে ‘পজিটিভ ইঙ্গিত’ ছিল। কিন্তু আরবি বিশ্ববিদ্যালয় হয়নি। আর এরশাদের ব্যাপারে ধারণার কারণ হলো, সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করেন। আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের চিন্তাভাবনা
সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট অংশ না নিলে সেক্ষেত্রে ‘তিনটি জোট’ বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে। এক. এরশাদ ও ইসলামী দলগুলো। দুই. মেননের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃত্বাধীন ১০ দলীয় বাম জোট। তিন. সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা।
জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিলেই এরশাদ কওমি মাদ্রাসা ও সুন্নি আলেমদের নিয়ে ‘তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি’ স্লোগানে কয়েক মাসের মধ্যেই বিকল্প জোট গড়বেন। নতুন জোটের সরকারবিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করতেই এরশাদ রাজপথে আছেন। অন্যদিকে, নারী-নেতৃত্ববিরোধী চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি ইসলামি দলেরও এ জোটে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, এরশাদের ন্যায় রাশেদ খান মেননও মাঝে মাঝে সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়ে মাঠ গরম রাখার চেষ্টা করছেন। সরকারবিরোধী নানা ইস্যুতে তিনি ১০ দলীয় জোট করেছেন। আর সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চাও রাজপথে সক্রিয় রয়েছে।
তবে বামদলগুলোর জনসমর্থন কম থাকায় ইসলামী দলগুলোর দিকেই সরকারের আগ্রহ বেশি।
এরশাদ মহাজোট ছাড়ছেন না, জাপা সূত্রে জানা গেছে, এরশাদ সরকারবিরোধী বক্তব্য দিলেও সহসাই মহাজোট ছাড়ছেন না। মুখে এরশাদ সরকারবিরোধী বক্তব্য দিলেও তা প্রকৃত অর্থে সরকারবিরোধী নয়। সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়ে কর্মীদের উজ্জীবিত রাখার কৌশল নিয়েছেন এরশাদ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “বিএনপি যদি আগামী নির্বাচনে অংশ না নেয়, সেক্ষেত্রে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার চিন্তা নিয়ে মূলত স্যার (এরশাদ) মাঠে নেমেছেন।” জানা গেছে, মহাজোট সরকারের সোয়া চার বছর জাপা নেতাদের অবম্যূল্যায়ন, ইসলাম ইস্যুতে সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস, সমানুপাতিক মন্ত্রিত্ব না পাওয়া, এরশাদের মামলা প্রত্যাহার না হওয়া, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি না হওয়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং জাপা নেতাদের একাংশ যারা ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি তারাসহ সরকারের নড়বড়ে অবস্থানের কারণে যারা এরশাদকে মহাজোট ছাড়ার চাপ দিচ্ছেন তাদের খুশি রাখতেই এরশাদ এ কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা থেকে মনোনয়ন-বঞ্চিত জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বাধীন একটি অংশ মহাজোট ছাড়ার পক্ষে। আর ময়মনসিংহ সদর আসনে মনোনয়ন-বঞ্চিত হয়ে এদের নেপথ্যে থেকে এরশাদের সহধর্মিনী রওশন এরশাদও মহাজোট ছাড়ার পক্ষে সমর্থন দিচ্ছেন বলে সূত্র জানায়। আর এজন্যই কাজী জাফর আহমেদকে হেফাজতে ইসলামীর মহাসমাবেশে সংহতি জানানোর জন্য পাঠান এরশাদ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার এক নেতা জানান, রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে মহাজোট ক্ষমতা ছাড়ার একদিন আগেও জোট ত্যাগ করবে না জাপা। পার্টি থেকে মহাজোট ত্যাগ করার চাপ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একটি দলে নানা ধরনের মানসিকতার লোক থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতির হিসাবে অনেকে অনেক কথাই বলতে পারেন। তবে চেয়ারম্যান সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চান।” তিনি বলেন, “স্যার এবার এমন কোনো সিদ্বান্ত নেবেন না যে সিদ্বান্তের জন্য পার্টিকে আবার ভাঙনের মুখে পড়তে হয়।” মহাজোট ছাড়ছেন কি না- জানতে চাইলে জাপার মুখপাত্র কাজী ফিরোজ রশিদ নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “জাতীয় পার্টির সব প্রেসিডিয়াম মেম্বার মাননীয় চেয়ারম্যানকে জোট বা সরকারে থাকা না থাকার বিষয়ে সিদ্বান্ত নেয়ার সর্বময় ক্ষমতা দিয়েছেন। তিনি যেটা ভালো মনে করবেন পার্টি ও জগগণের স্বার্থে সেটাই করবেন বলে আমার বিশ্বাস।” শনিবার হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে জাপার সমর্থন সরকারের পরামর্শে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, “৯০ শতাংশ মুসলিম-অধ্যুষিত দেশে সবারই ইচ্ছা থাকে তাদের ভোট নিজেদের দিকে টানা। আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি- কেউ আসুক বা না আসুক, আগামী নির্বাচনে আমরা এককভাবে অংশ নেব। এখানে সরকারের পরামর্শ বা নির্দেশ মুখ্য নয়।”
একজন মুসলমান ও বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার প্রশ্ন হলো তাহলে কি কাঙ্খিত রাজনীতি ও জণকল্যাণমূলক রাজনৈতিক চর্চা বাংলাদেশে সুদূর পরাহত এবং সোনার হরিণে পরিণত হলো? কবে নাগাদ এদেশের রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবীসহ সকল স্তরের মানুষের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে? নাকি দেশ ও জাতি ঐসব হায়েনা ও নোংরা মস্তিষ্কের লোকদের থাবায় চূর্নবিচুর্ন হবে?
বিষয়: বিবিধ
২২৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন