এলিজাবেথদেরকে গালি দিবেন না, দয়া করে। দেখুন রাসূলুল্লাহ (স) এমন সব লোকদের সাথে কি করতেন।

লিখেছেন লিখেছেন ডঃ আবুল কালাম আজাদ ২৭ মার্চ, ২০১৩, ০৪:৫০:২৫ রাত

আমি প্রায় বছর খানেক হলো বাংলা ব্লগে এসেছি। আসার পর এলিজাবেথ সহ আরো কিছু ব্লগারদেরকে পেয়েছি যারা সব সময় ইসলাম ও মুসলমানদেরকে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন।

তাদের কথায় কিছু যুক্তি হয়ত থাকে। মাঝে মাঝে কিছু বাস্তবতাও থাকে। আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে বেশ কিছু ব্লগার তাদের ব্যাপারে বেশ কিছু নসিহতও দিয়েছেন। আমার লেখাও তারা পড়েন এবং মন্তব্য করেন। আমিও সময় পেলে তাদের লেখা পড়ি। অবশ্য, তাদের মন্তব্য মাঝে মাঝে এতো তীব্র হয় যা অনেকেই হজম করতে পারেন না।

আমরা যারা পশ্চিমা দেশে লেখাপড়া করেছি এবং বসবাস করি তারা প্রতিনিয়ত ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন রকমের অভিযোগ ও বিরূপ আচরণ শুনে থাকি। কিন্তু এরা সাধারণত আমাদের দেশের লোকদের মত নগ্ন ও অভদ্র ভাষায় আক্রমণ করেন না। তাদের উপস্থাপনাগুলো থাকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও মার্জিত। এজন্য এদের সাথে বিতর্ক করে মজা পাওয়া যায়। এরা যদি দেখে তারা যুক্তিতে দুর্বল, সেটা অনেকেই মেনে নিতে প্রস্তুত থাকে। কারণ যারা ইসলামের শিক্ষা পান নি, ইসলামের প্রকৃত রূপ দেখেন নি, ভালো মুসলমানদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পান নি, তাদের তো প্রশ্ন থাকবেই। তাদেরকে অবশ্যই বিতর্ক করার সুযোগ দিতে হবে। তাদেরকে বুঝার সুযোগ দিতে হবে।

রাসূলুল্লাহ (স) অত্যন্ত বুদ্ধিমান শিক্ষিত চাচা আবূ সুফিয়ানের মত মানুষ ইসলাম বুঝতে নিয়েছিলেন ২১ বছর, যার আশেপাশে ছিলেন শ্রেষ্ঠ মানুষগুলো। আবু সুফিয়ান রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে যা ব্যবহার করতেন, আমাদের এলিজাবেথ কিন্তু আমাদের সাথে ততটা খারাপ ব্যবহার করেন না। অন্তত আমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেন না।

আমর ইবনুল আ'স থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ তাওরাতে তাঁর সম্পর্কে কিছু বিবরণ দেয়া আছে যার কিছু কোরানে আছে। যেমনঃ তিনি কর্কশ ও কঠোর মনের নন, তিনি বাজারে গিয়ে হৈ-হুল্লোড় করেন না, তিনি খারাপ দিয়ে খারাপের উত্তর করেন না বরং তিনি ক্ষমা ও মার্জনা করে দেন।

وعن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنه قال :

( وَاللَّهِ إِنَّهُ لَمَوْصُوفٌ فِي التَّوْرَاةِ بِبَعْضِ صِفَتِهِ فِي الْقُرْآنِ...لَيْسَ بِفَظٍّ ، وَلَا غَلِيظٍ ، وَلَا سَخَّابٍ فِي الْأَسْوَاقِ ، وَلَا يَدْفَعُ بِالسَّيِّئَةِ السَّيِّئَةَ ، وَلَكِنْ يَعْفُو وَيَغْفِرُ )

رواه البخاري (2125)

এ ধরণের অনেক হাদীস আছে। কিন্তু আরো একটা হাদীস খুব প্রাসংগিক। আবূ হুরায়রা (র) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (স)কে বলা হলো- ইয়া রাসূলাল্লাহ, মুশরিকদের জন্য বদ দোয়া করুন। তিনি বললেনঃ আমাকে বদ দোয়াকারী হিসাবে পাঠানো হয় নি, আমাকে পাঠানো হয়েছে করুণা হিসাবে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ :

( قِيلَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ! ادْعُ عَلَى الْمُشْرِكِينَ ؟ قَالَ : إِنِّي لَمْ أُبْعَثْ لَعَّانًا ، وَإِنَّمَا بُعِثْتُ رَحْمَةً )

رواه مسلم (2599)

আমরা যারা ইসলামকে ভালোবাসি তারা ইসলামকে হয়ত অন্যদের কাছে সুন্দর করে তুলে ধরতে পারি নি। আমাদের কথা, কাজ ও চরিত্র হয়ত তাদেরকে আকৃষ্ট করে নি। তারা আমাদের প্রতি আকৃষ্ট হন না কেন বা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হন না কেন? এই প্রশ্ন না করে আসুন প্রশ্নটা ঘুরিয়ে বলিঃ আমরা তাদেরকে আকৃষ্ট করতে পারি না কেন? আমাদের ইসলাম তাদেরকে কেন আকৃষ্ট করছে না?

তারাও তো মানুষ। তাদের বুদ্ধি আছে, শিক্ষা-দিক্ষা আছে। তাদেরও স্বাদ-আহলাদ আছে, জীবনে চাওয়া পাওয়া আছে।

আমাদেরকে বুঝতে হবে, তাদের জীবনে এমন কি চাওয়া পাওয়া আছে বা প্রশ্ন আছে যার উত্তর বা সমাধান ইসলামে নেই। তারা যা চান, তার সন্ধান যদি আমরা ইসলামে দিতে পারি তাহলে তারা অবশ্যই ইসলামের পরম সুন্দর ছায়াতলে এগিয়ে আসবেন।

আমরাও তো মানুষ। আমরা ইসলাম পালন করে বা ইসলামী জীবন নিয়ে এতো সুখী ও গর্বিত হলেও তারা এই সুন্দরের সন্ধান পান নি কেন?

পশ্চিমাতে হাজার হাজার শিক্ষিত লোকেরা মুসলমান হচ্ছেন, তারা কোন বিচারে নিজেদেরকে নতুন করে আবিস্কার করছেন, আর আমাদের এলিজাবেথরা কেন এখনো ইসলামের বিরোধিতাকে তাদের জীবনের মিশন হিসাবে নিয়েছেন। আমরা ইসলামের পক্ষে না যত বলছি, তারা ইসলামের বিপক্ষে তার চেয়ে অনেক বেশী কাজ করছেন।

আমরা ইসলাম করে যা পেতে চাই, তারা ইসলামের বিরোধিতা করে তাই পেতে চান। কিন্তু কেন?

তাহলে আমরা কি বোকামী ও ভুলের মধ্যে আছি? না কি অন্যরা এখনো অন্ধকারে আছেন?

তাদেরকে মন খুলে প্রশ্ন করতে দিন। তাদের প্রশ্নগুলো বুঝার চেষ্টা করুন। প্রশ্নের মূল্য ও ওজন বুঝে সে ভাবে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। আমাদের কাজ হলো সুন্দরের চর্চা করা। মনে রাখতে হবে অসুন্দর দিয়ে সুন্দরের বিজয় আসে না।

আসলে এই জাতীয় লোকদের সাথে বিতর্কে যাওয়ার জন্যে বিশেষজ্ঞ লোক দরকার। সকল ডাক্তার যেমন সকল রোগী দেখা উচিত নয়, ঠিক তেমনি আমরা সবাইও এলিজাবেথদের সালে আলোচনায় নামা ঠিক হবে না। যারা ইসলাম ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে অভিজ্ঞ তারাই এ জাতীয় আলোচনার উপযুক্ত।

===============্ আগের লেখা ছিলঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সকল বাংলাদেশীর, শুধু কোন দল বা ব্যক্তির নয়। তাই তা নিয়ে গর্ব করার অধিকার সকলের সমান Click this link

বিষয়: বিবিধ

৩০৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File