চুরি হয়ে গিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

লিখেছেন লিখেছেন ডঃ আবুল কালাম আজাদ ১৭ মার্চ, ২০১৩, ০৫:৫২:২৭ সকাল

হয়ত অনেকেই আমার মত লোকের কাছ থেকে এ জাতীয় প্রশ্ন আশা করেন না। ইংল্যান্ডে এডুকেশানে ডক্টরেট করা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছ থেকে আসলেই এমন একটা প্রশ্ন আশা করা যায় না।

কিন্তু তারপরও ঐতিহাসিক কারণেই এই প্রশ্নটা করতে মন চাইছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি খুব ছোট ছিলাম; স্কুলে যাওয়া শুরু করিনি। আমার এক চাচা- ফজলুর রহমান সেনাবাহিনীতে চাকুরি করতেন। তিনি পাকিস্তানী সেনা বাহিনী ছেড়ে যশোরে মুক্তিযুদ্ধে নেমে পড়েন। সেই সূত্রে আমাদের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা আসতেন ও থাকতেন। কিন্তু ঠিক কেন যে এই 'গোলমাল' বা যুদ্ধ হচ্ছে তা তখন বুঝতাম না।

পরে একটু বড় হয়ে জেনেছি- পাকিস্তানীরা আমাদেরকে শোষন করে, আমাদেরকে মূল্যায়ন করে না, আমাদের ওপর অত্যাচার করে তাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই ছিল শোষন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়ে নিজেদের মত করে একটা জাতি ও দেশ গড়ার চেতনা।

কিন্তু এখন যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক ও বাহক বলে চেচামেচি করেন তাদের কথা শুনলে এবং তাদের চরিত্র ও আচার-আচরণ দেখলে তো ভিন্ন রকমের গন্ধ পাওয়া যায়।

যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে আজ আমাদেরকে জাগিয়ে তুলছেন তাদের কাছ থেকে তো আমরা শিখছি নিজের দেশের মানুষদেরকেই ঘৃণা করতে, নিজের দেশের ছেলে-মেয়েদের তাজা রক্তে নিজেদের হাত রাঙাতে, এবং নিজের ধর্মকে চরম অবজ্ঞা করতে।

এভাবে কি মুক্তিযুদ্ধের আসল চেতনাকে হাইজ্যাক করে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অপমান করা হচ্ছে না?

কবি মনিরুজ্জামানের ছোট ভাই শহীদ আসাদুজ্জামানের সাথে যুক্ত হয়ে মুক্তি যুদ্ধ করেছিলেন আমার চাচা ফজলুর রহমান। তারা যশোরের মনিরামপুরের চিনাটোলায় পাক সেনাদের/ রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে নিহত হন। চাচার বিকৃত লাশের সেই ভয়াবহ রূপটা এখনো আমার চোখে ভাসে। কিন্তু আমার চাচা তো ডুগী-তবলা বাজানো নাস্তিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন মাদ্রাসা পড়া এক মৌলভী। তিনি লাউড়ী মাদ্রাসায় পড়তেন। খুব ভালো ছাত্র ছিলেন। এরপর তিনি সেনাবাহিনীতে চাকুরী পান। আমার দাদাও ছিলেন একজন মুত্তাক্বী-পরহেজগার মৌলভী মানুষ। আমার তো মনে হয় না, দেশ, দেশের মানুষ ও আমাদের ধর্মের বিরোধিতা করার চেতনা নিয়ে তারা সেদিনে তাদের সেই পবিত্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

অথচ যারা সে সময়ে নিজেদের জীবন বাচানোর জন্যে কোথাও পালিয়ে গিয়েছিলেন বা চুপ করে ছিলেন তারা আজ দেশ গড়ার কাজ না করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জন্যে কত মায়া-কান্না করছেন। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই তাকে রাজাকারের সনদ দিয়ে দিচ্ছেন। এদের এই ঘৃণ্যবৃত্তি থেকে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নায়ক মেজর জলিল যেমন রেহাই পান নি। আজ বাঘা কাদেরকেও তারা নব্য রাজাকার বানিয়ে ছাড়ছেন।

অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে এখন বাংলাদেশে যা হচ্ছে তা কি আসল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা নয়?

আমার মত লাখো লাখো মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানদের তাই প্রশ্নঃ

হে দেশের মহারথীরা!! আপনারা একটু সততা নিয়ে বুকে হাত দিয়ে বলুন- ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি ছিল আর আপনারা এই চেতনার নাম ব্যবহার করে কি সব শুরু করছেন? আপনারা এখন যা করছেন তাতে কি আমার চাচার মত লাখো শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে? এটা কি আপনারা বুঝতে পারছেন না যে আপনারা এখন দেশটাকে আরেকটা গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে চলেছেন। দেশের আরেকটি গৃহযুদ্ধের জন্যেই কি এই সোনার দেশের লাখ লাখ লোক মরেছিলেন?

===== আগের লেখাটা ছিলঃ

মুসলমানদের নতুন ফ্যাশনঃ ইসলামকে নিয়ে হাসি-তামাশা করা আস্তিকেরা কি করছি?

Click this link

বিষয়: বিবিধ

১৩৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File