প্রশ্নঃ শাশুড়ীকে নাকি মা ডাকা যাবে না, ডাকলে বউ তালাক হয়ে যাবে?
লিখেছেন লিখেছেন ডঃ আবুল কালাম আজাদ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০২:১২:৩৮ দুপুর
প্রশ্নঃ
আমি এক শায়খের আলোচনায় শুনলাম যে নিজের শাশুড়ীকে ‘মা’ বা ‘আম্মা’ বলে ডাকা জায়েয নেই। এতে নাকি নিজের স্ত্রী বা স্বামী হারাম হয়ে যায়। অথচ আমরা তো সব সময় মা বা আম্মা বলে ডাকি। এতে কি আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে?
উত্তরঃ
একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন। এই বিষয়টা একটু গভীরভাবে বুঝার দরকার আছে। শরিয়তের নামে কোন বিষয় হালাল বা হারাম বা জায়েয ও নাজায়েয বলতে গেলে পরিস্কার দলীল-প্রমাণ থাকা দরকার। যিনি শাশুড়ীকে আম্মা বা মা ডাকা জায়েয নেই এবং ডাকলে স্ত্রী বা স্বামী তালাক হয়ে যাবে তার বক্তব্য আমি শুনিনি এবং আপনিও তিনি কি যুক্তি দিয়েছেন তা বলেন নি। তাঁর আলোচনাটা আমি শুনলে বুঝতে পারতাম কোন দলীলের ওপর ভিত্তি করে তিনি এই ফতোয়া দিয়েছেন।
আমার মনে হচ্ছে তিনি সৌদি আরব থেকে প্রকাশিত একটা ফতোয়ার ওপর ভিত্তি করে এমন ফতোয়াটা দিয়েছেন। আমি সেই ফতোয়াটা পড়েছি। সেখানে মুফতি সাহেব বলেছেন যে শাশুড়ীকে মা বলে ডাকা উচিত নয়। কারণ এতে তিনি নিজের মা হিসাবে বিবেচিত হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। সেখানে স্বামী বা স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে এমন কথা মুফতি সাহেব বলেন নি। সৌদি মুফতি এই মত দিয়েছেন একটা হাদীসের ওপর ভিত্তিকরে। সুনানে আবি দাঊদে বর্ণিত আছে যে এক লোক তার স্ত্রীকে বলেন- এই যে আমার ছোট বোন। তখন তা শুনে রাসূলুল্লাহ (স) বললেন- হেই, সে তোমার ছোট বোন? তিনি এটা পছন্দ করেন নি।
এই একটা হাদীসের ওপর ভিত্তি করে সৌদি মুফতি বলেছেন- শাশুড়ীকে মা বললে বৌকে বোন বলার আশংকা হয়ে যায়, তাই শাশুড়ীকে মা বলা ঠিক না।
আমার কাছে এই ফতোয়াটা খুবই দূর্বল মনে হয়েছে। হাদীসের সাথে এর সম্পর্ক অনেক দূরে। উলামায়ে কেরাম সবাই জানেন যে কেউ যদি নিজের বউকেই মা বলে ডাকে এবং সে এ দ্বারা সম্মান করা বুঝায় তবুও তার কিছুই হবে না।
অথচ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে রাসূলুল্লাহ (স) তাঁর চাচী- আলী (রা) মাকে ‘মা’ বলে ডেকেছেন। তার নাম ছিলো ফাতিমা বিনতে আসাদ বিন হাশিম। ফাতিমা যখন মারা যান তখন রাসূলুল্লাহ (স) তার ঘরে এসে তাঁর মাথার কাছে বসেন এবং বলেন ও আম্মা আল্লাহ আপনার ওপর রহম করুন। আমার মায়ের পর আপনিই আমার মা ছিলেন। আপনি ক্ষুধার্ত থেকেও আমাকে পেট ভরে খাওয়াছেন, আপনি নিজে কাপড় না পরেও আমাকে কাপড় পরিয়েছেন, নিজেকে না দিয়ে আপনি আমাকে ভালো খাবার খাওয়ায়েছেন, আপনি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখেরাত চেয়েছিলেন (দার আস-সাহাবাহ, ইমাম শাওকানী ৪৬৯। হাদীসটাকে সহীহ বলেছেন ইবনে হিব্বান ও হাকেম)।
لمَّا تُوفِّيتْ فاطِمةُ بنتُ أسدِ بنِ هاشمٍ أمُّ عليٍّ دخلَ عليها رسولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ فجلسَ عندَ رأسِها فقالَ رحِمَك اللَّهُ يا أمِّي كنتِ أمِّي بعدَ أمِّي تجوعينَ وتُشبِعينَني وتَعرَينَ وتُكسينني وتمنعينَ نفسَك طيِّبَها وتطعمينَني تريدينَ بذلِك وجهَ اللَّهِ والدَّارَ الآخرةَ وذكرَ غُسلَها وأنَّ النَّبيَّ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ صبَّ الماءَ الَّذي فيهِ الكافورُ عليها بيدِه وخلعَ قميصَه فألبسَها إيَّاهُ وفي هذا الحديثِ أنَّهُ لمَّا حفرَ قبرَها وبلغوا اللَّحدَ حفرَه رسولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ بيدِه وأخرجَ ترابَه بيدِه فلمَّا فرغَ دخلَ رسولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ فاضطجعَ فيهِ ثمَّ قالَ اللَّهُ الَّذي يُحيي ويميتُ وَهوَ حيٌّ لا يموتُ اللَّهمَّ اغفِر لأمِّي فاطمةَ بنتِ أسدٍ ولقِّنها حجَّتَها ووسِّع عليها مُدخلَها بحقِّ نبيِّكَ والأنبياءِ الَّذينَ من قبلي فإنَّكَ أرحمُ الرَّاحمينَ وَكبَّرَ عليها أربعًا وأدخلوها اللَّحدَ هوَ والعبَّاسُ وأبو بَكرٍ الصِّدِّيقُ
الراوي : أنس بن مالك | المحدث : الشوكاني | المصدر : در السحابة
الصفحة أو الرقم: 469 | خلاصة حكم المحدث : رجال إسناده ثقات غير روح بن صلاح وقد وثقه ابن حبان والحاكم
দেখুন, এখানে পরিস্কারভাবে নিজের চাচীকে রাসূলুল্লাহ (স) মায়ের পর নিজের মা বলে ডেকেছেন। ফলে, এ দ্বারা পরিস্কারভাবে বুঝা যায় যে – নিজের মা ছাড়াও অন্য মহিলাকে ‘মা’ বলার ব্যাপারে শরিয়তে কোন অসুবিধা নেই। বরং এটা রাসূলুল্লাহ (স) এর সুন্নাত যে যদি কোন মহিলা আপনার জীবনে মায়ের ভূমিকা পালন করেন তার স্বীকৃতি হিসাবে আপনি তাকে ‘মা’ বলেই ডাকবেন বা ডাকতে পারবেন।
আমাদের সমাজে শাশুড়ী মেয়ের জামাইকে নিজের ছেলের মত যত্ন করেন ও আদর করেন। অনেকেই আদর করে মেয়ের জামাইকে আব্বু বলে ডাকেন। তার প্রতিদানে জামাই শাশুড়ীকে আম্মা বলে ডাকাটাই স্বাভাবিক। এতে নিজের বউ তালাক হবে না বলে আগের সৌদি মুফতি নিজেও তার ফতোয়াতে বলেছেন। অথচ এটাকে আরো এক ধাপ বাড়িয়ে বউ তালাক হয়ে যাবে বা যেতে পারে বলা খুবই হাস্যকর।
শাশুড়ীকে মা ডাকলে শরিয়তে কোন অসুবিধা নেই, এটা বরং আরো ভালো সামাজিকতা ও ভালোবাসা বৃদ্ধির প্রমাণ। এবং এতে নিজের স্ত্রীকে বোন ভেবে তালাক হওয়ারও কোন সম্ভাবনা নেই। আশাকরি এখন বিষয়টা পরিস্কার হয়েছে।
বিষয়: সাহিত্য
১৯৪৩৩ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঐ ফতোয়াবাজ মুফতীর অবস্থাও আমার কাছে এই গল্পের মত মনে হয়।
ধন্যবাদ আপনাকে
বেশ গ্রহণযোগ্য উত্তর।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন