লন্ডনের সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় ডঃ আবুল কালাম আজাদের প্রশ্নোত্তরের পাতা (পর্ব ১৮৭-১৮৯ )

লিখেছেন লিখেছেন ডঃ আবুল কালাম আজাদ ১৫ এপ্রিল, ২০১৫, ০১:০৬:১৫ দুপুর

(লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত Click this link)

প্রশ্নঃ

নিজের পিতা ছাড়া আর অন্য কাউকে বাবা ডাকার ব্যাপারে ইসলামের বিধান কি?


উত্তরঃ

সুন্দর একটা প্রশ্ন করেছেন। শ্রদ্ধার সাথে বা স্নেহের সাথে অন্য কাউকে বাবা ডাকা নিষেধ নয়। কিন্তু নিজের নামের সাথে নিজের আপন বাবা ছাড়া অন্য কারো নাম জুড়ে দেওয়া যাবে না। এটা হাদীসে নিষেধ আছে। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন যদি কেউ তার পিতা ছাড়া অন্যের দিকে সম্পর্কিত (নেসবাত) করে সে অভিশপ্ত হবে।

প্রশ্নঃ

শুকরিয়া সেজদা কি এবং তার নিয়ম জানতে চাই। বিনা অজুতে কি এই সেজদা দেওয়া যায়?


উত্তরঃ

যখন কোন খুশীর খবর আসে তখন একবার সেজদা দেওয়াটা মুস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ (স) নিজেও সাজদাতুশ শোকর বা শুকরিয়া সেজদা দিয়েছেন বলে প্রমাণ আছে। হযরত বারা বি আযেব থেকে বর্ণিত আছে- রাসূলুল্লাহ (স) আলী (রা) ইয়েমেন্র হামদান গোত্রের কাছে পাঠিয়েছিলেন। সেখান থেকে আলী (রা) রাসুলুল্লাহ (স) কে একটা চিঠি লিখে জানান যে হামদান গোত্র ইসলাম গ্রহন করেছেন রাসূলুল্লাহ (স) এই চিঠি পেয়ে সেজদায় পড়েন। সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে বলেন আস-সালামু আলা হামদান, আস-সালামু আলা হামদান (হামদানের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। এই হাদীস দ্বারা প্রমাণ হয় যে রাসুলূল্লাহ (স) এবং তার সাহাবায়ে কেরাম কোন সুসংবাদ এলে আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করে সেজদা দিতেন।

আরো দেখুন সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস বর্ণিত আবু দাউদের একটি হাদীসে (হাদীস নং ২৭৭৫)।

সেজদায় গিয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও তাসবীহ করতে হয়। বিনা অজুতে কোন সেজদা করা যায় না। তাই, ভালো সংবাদ পেয়ে সালাতুশ শোকর বা সেজদাতুশ শোকর করতে হলে অজু করে নিতে হবে।

এটা করলে আল্লাহ পাক খুশী হয়ে যান এবং এর অসিলায় তিনি আরো নেয়ামত দান করেন।

আমরা অনেকেই ভালো সংবাদ পেয়ে আল্লাহকে ভুলে যাই। যারা নেয়ামত পেয়ে আল্লাহকে ভুলে যান তাদের জন্যে এই নেয়ামত আবার নেকমাত বা শাস্তির কারণও হয়ে যেতে পারে।

এরপর সাদাক্বাহ করার কথাও হাদীসে আছে। নিজের ধন্যবাদের কথাটা আল্লাহ তায়ালাকে বিভিন্নভাবেই বলাটাই হলো একজন আল্লাহ প্রিয় বান্দার পরিচয়।

আমাদের বাচ্চাদেরকেও এই সুন্দর গুণটা শেখানো উচিত। তাদের যখন অর্জন ও সুসংবাদ আসে তখন তাদেরকে এ ভাবে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে শেখানো দরকার। তা না হলে তারা গর্বিত হয়ে যেতে পারে।

প্রশ্নঃ

ইসলামী বিভিন্ন দল আছে। আমরা সাধারণ মুসলমানরা বিভিক্ত। সবাই বলেন তাদের দলে আসতে। তাদের দলই নাকি সবচেয়ে খাটি ও ভালো। এই অবস্থায় আমাদের করণীয় কি? আমরা যদি কোন দলের অন্তর্ভুক্ত না হই তাহলে কি জাহান্নামে যাবো? একবোন আমাদেরকে বলেন সংগঠন করা নাকি ফরজ। এবং আমাদের তাদের সংগঠনে যাওয়ার জন্যে বলেন। তিনি অন্য সংগঠনগুলোরও খুব সমালোচনা করেন। যেটা আমি নিজেও পছন্দ করি না। আপনার কাছে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাই।


উত্তরঃ

আসলে এই সমস্যাটা আমাদের মুসলিম উম্মতকে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে, বোন। এতে আপনি কেন, আমি আবুল কালাম আজাদ নিজেও সমস্যায় আছি। কারণ আমি তো দেখি সব দলেই কিছু ভালো দিক আছে এবং কিছু সমস্যা আছে। একটা দলের মধ্যেই সব কিছুই ভালো এমন বলাটা বাস্তব বিরোধী। আসলে, দেখতে হবে কারা কোরান ও সহীহ হাদীস মোতাবেক চলেন। কাদের মধ্যে সহীহ আকীদা ও ইমানের চর্চা আছে। কাদের মধ্যে সত্যিকারভাবেই তাকওয়ার চর্চা আছে, আছে আল্লাহ পাকের সাথে গভীর সম্পর্ক করার পদ্ধতি। মুসলমানরা জামায়াত বদ্ধ হয়ে থাকাটা ফরজ। যেখানেই ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থ আছে সেখানেই আমাদেরকে থাকতে হবে, কাজ করতে হবে। নিজে একটা দলের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে অন্য দল ও দলের লোকদেরকে দূরে সরিয়ে রাখা জায়েয নেই। যারা যতটুকু ভালো করছেন তাদের সেই ভালো টুকুর স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। তাদের যদি কোন ভুল আপনার চোখে পড়ে সেটা খুব আদবের সাথে সম্মানের সাথে সংশোধন করে দিতে হবে। নিজেরা কাদা ছোড়াছুড়ি করে কোন দিন ইসলামের কোন উপকার হয়নি। বরং সংগঠনের নামে এভাবেই ইসলামী জামায়াত বা সংগবদ্ধতা ধ্বংস হয়েছে। আমাদেরকে এ থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

আপনার যে দলটা ভালো লাগে তাদের সাথে মিলে ইসলামের কাজ করতে থাকুন। তবে, অন্ধ হয়ে কাউকে অনুসরণ করা যাবে না। যদি আপনার দলের মধ্যে এমন কিছু চর্চা হয় যা কোরান-হাদীসের পরিপন্থী তখন তার বিপক্ষে কথা বলাই হলো ইসলামের দাবী। যারা আপনার দল করেন না, তাদের সাথেও খারাপ ব্যবহার করা যাবে না।

বিষয়: বিবিধ

১৫৫৬ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

315062
১৫ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০১:৪৯
ডঃ আবুল কালাম আজাদ লিখেছেন : আপনাদের মতামত ও গঠনমূলক সমালোচনা আমাকে ও পাঠকদেরকে সাহায্য করবে ইনশাআল্লাহ।
315064
১৫ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০২:০৩
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৫ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০৩:০৫
256145
ডঃ আবুল কালাম আজাদ লিখেছেন : Happy Happy
315068
১৫ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০২:২৫
না বলা কথা লিখেছেন : পিলাচ
১৫ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০৩:০৫
256146
ডঃ আবুল কালাম আজাদ লিখেছেন : Happy Happy
315081
১৫ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০২:৪৮
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : ইরবায বিন সারিয়া (রাঃ)হতে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ)বলেন, আর আমার পর তোমাদের কেউ জীবিত থাকলে সে বহূ(ইসলামে)মতভেদ দেখতে পাবে। তখন আমার সুন্নাত এবং হেদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত অনুসরণ করা হবে তোমাদের অপরিহার্য কর্তব্য।এই সুন্নতকে খুব মজবুত করে দাঁত দিয়ে চেপে ধরবে। আর দ্বীনে নতুন উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকবে। কেননা, (দ্বীনে)প্রত্যেক নব উদ্ভাবিত জিনিসই হচ্ছে বিদ'আত। আর প্রত্যেক বিদ'আতই ভ্রষ্টতা। (আহমাদ, আবু দাউদ ৪৬০৭,তীরমীজি ২৮১৫, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ১৬৫)
১৫ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০৩:১৭
256149
ডঃ আবুল কালাম আজাদ লিখেছেন : রাসূল (সাঃ)বলেন, আর আমার পর তোমাদের কেউ জীবিত থাকলে সে বহূ(ইসলামে)মতভেদ দেখতে পাবে। তখন আমার সুন্নাত এবং হেদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত অনুসরণ করা হবে তোমাদের অপরিহার্য কর্তব্য।এই সুন্নতকে খুব মজবুত করে দাঁত দিয়ে চেপে ধরবে।
315118
১৫ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫৬
মায়াবন বিহারিণী হরিণী লিখেছেন : প্রসঙ্গ এবং উত্তর-

নিজের পিতা ছাড়া আর অন্য কাউকে বাবা ডাকার ব্যাপারে ইসলামের বিধান কি?

উত্তরঃ
সুন্দর একটা প্রশ্ন করেছেন। শ্রদ্ধার সাথে বা স্নেহের সাথে অন্য কাউকে বাবা ডাকা নিষেধ নয়।

আমার প্রশ্ন- শ্রদ্ধা ও স্নেহের সাথে পুত্র/কন্যা'র আদরে লালন পালন এবং বড় হওয়া কোন মেয়েকে অথবা ছেলের স্ত্রীকে বাবা নামক ঐ ব্যক্তি কি বিয়ে করতে পারবে??

উত্তর দিন?
১৫ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:১৮
256219
ডঃ আবুল কালাম আজাদ লিখেছেন : আপনি তো আমার চেয়ে বড় মুফতি !!
১৫ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১১:৩৫
256249
মায়াবন বিহারিণী হরিণী লিখেছেন : না ভাই আমি মুফতি নই। ইসলামের দৃষ্টিতে হাফ-হিউম্যান নারী মাত্র।
১৬ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০২:১০
256295
ডঃ আবুল কালাম আজাদ লিখেছেন : এই যে ইসলামের নামে একটা বিরাট ফতোয়া দিয়ে দিলেন। আমি তো ইসলামে এটা কোথাও পাইনি।
315123
১৫ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৮:০৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৫ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:১৮
256218
ডঃ আবুল কালাম আজাদ লিখেছেন : Happy Happy
315205
১৬ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০১:৪৩
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম,
বাবা ডাকার ব্যাপারে ইয়াতীম এর ক্ষেত্রে কি হবে? কোনো বাবা যদি নিজের পরিচয় দিয়ে ইয়াতীম সন্তানদের লালন পালন করেন এবং সম্পত্তির ভাগ দিতে চান এক্ষেত্রে ইসলামের শিক্ষা কি একটু বিস্তারিত বলবেন। ধন্যবাদ স্যার আপনাকে.
১৬ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০২:০৯
256294
ডঃ আবুল কালাম আজাদ লিখেছেন : বাবা ডাকতে পারবেন। সম্পত্তির অয়ারিসী ভাগ পাবেন না। তবে, মোট সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ দিতে পারবেন অসিয়ত বা উইল করে।
১৬ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৪:০৫
256301
মায়াবন বিহারিণী হরিণী লিখেছেন : সরি, একটু ইন্টারাপ করছি,

বাবা ইছ্ছে করলে পুত্র/কন্যা তুল্য ঐ এতিম বালিকা অথবা বালকের স্ত্রীকে নিকাহ করে নবীজীর সুন্নত কামাতে পারেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File