জাতি বিভক্তিতে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর এতো উল্লাস কেন?

লিখেছেন লিখেছেন ডঃ আবুল কালাম আজাদ ০৫ মার্চ, ২০১৩, ০৭:০৫:০৬ সন্ধ্যা

আপনারা হয়ত অনেকেই পড়েছেন। আব্দুল গাফফার চৌধুরী 'দেশের রাজনৈতিক মেরুকরণ এত দিনে স্পষ্ট হলো' শিরোনামে একটা প্রবন্ধ লিখেছেন।

Click this link

সেখানে প্রথম পাতাতেই তিনি খুব উচু ঢেকুর তুলে বলেছেনঃ ভালো হোক আর মন্দ হোক, দেশে এই রাজনৈতিক পোলারাইজেশনটির (মেরুকরণের) দরকার ছিল। পঁচাত্তরের গ্রেট ন্যাশনাল ট্র্যাজেডির পরই এই রাজনৈতিক মেরুকরণের শুরু। একদিকে স্বাধীনতাযুদ্ধের সমর্থক পক্ষ, অন্যদিকে স্বাধীনতার শত্রুপক্ষ।

কিন্তু আমাদের দেশের অসংখ্য নাগরিক তাঁর এই তত্ত্বে বিশ্বাসী নন এবং পুলকিতও নন। কারণ, এই বিভাজন প্রীতি বাংলাদেশের জন্যে একটা ঐতিহাসিক ভূল। হ্যাঁ, জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলো। কিন্তু তারা জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাইলেও তারা বারবার বলেছে যে তাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিয়েছে। আমি তাদের অনেক বড় নেতাকে বলতে শুনেছিঃ আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধী ছিলাম, কিন্তু বাংলাদেশের বিরোধী কখনই ছিলাম না, এখনো নই।

জনাব গাফফার চৌধুরী এই দুনিয়ার বিভিন্ন জাতির ইতিহাস নিশ্চয়ই আমার চেয়ে ভালো জানেন। কোন যুদ্ধোত্তর বিজয়ী জাতিকে বিভক্তি করে কোন জাতি আজ পর্যন্ত মাথা তুলে দাড়াতে পারে নি।

সাহস নিয়ে সত্য কথা বলতে গেলে আমাকে অনেকেই নব্য রাজাকার বলে গালি দিতে পারেন। যেন বংগবীর বাঘা কাদের সিদ্দিকীকে আজ অনেকেই নব্য রাজাকার বলে গালি দিচ্ছেন। জাতির স্বার্থেই আমাকে আজ কিছু সত্য কথা বলতেই হবে।

জনাব চৌধুরীরা যদি আন্তরিকভাবেই চান আমাদের বাংলাদেশী জাতি এই দুনিয়ায় মাথা তুলে দাড়াক তাহলে তাদেরকে জাতির মেরু করণ বা জাতি বিভক্তির মত মারাত্মক জাতি বিধ্বংসী তত্ত্বকে গভীরভাবে পূর্নবিবেচনা করতে হবে।

আমি ও আমার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনেরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হলেও আমরা মনে করি, জামায়াতের লোকেরা অন্য দেশ থেকে উড়ে আসেন নি বা আকাশ থেকে ভেসে আসেন নি। তারা এই দেশেরই লোক; দূর বা কাছের হোক তারা আমাদেরই পড়শি বা আত্মীয়-স্বজন। এই জাতির বিশাল জনগোষ্ঠীকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করার প্রচেষ্টা মানেই হলো আমাদের এই প্রিয় দেশটাকে চিরকালের জন্যে অশান্ত করে রাখা। আর এই অশান্ত পরিবেশে বৃটেনে আয়েশে থাকা গাফফার চৌধুরীদের কোন ক্ষতি না হলেও জ্বলে পুড়ে মরবে আমাদেরই ছেলে-মেয়েরা ও আপন জনেরা।

যারা মনে করেন সাঈদী-গোলাম আযম-নিজামীকে ফাসি দিলেই জামায়াত শেষ হয়ে যাবে তারা একেবারেই বোকার সাগরে ভাসছেন। বিষয়টা এতো হাল্কা নয়। আমি এদেরকে কাছ থেকে দেখেছি- এরা রাজনীতি করে ইসলামের আদর্শের নামে। এরা তাদের বিশ্বাসে অত্যন্ত গভীর ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমার ক্ষুদ্র অধ্যয়নে বুঝেছি- নাম ও নেতার পরিবর্তন হলেও তাদের কাছে যতদিন কোরান-হাদীস থাকবে ততদিন তাদেরকে কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। তাদেরকে হয়ত কিছু দিন দমিয়ে রাখতে পারবেন, কিন্তু মিশর, তুরস্ক, তিউনিসিয়ার মত তারা আবার জেগে উঠবে সময়ের ব্যবধানে। বংগবন্ধু এই কথা বুঝেছিলেন বলেই তিনি এই বিভাজনে যেতে চান নি।

স বিনয়ে বলব- জাতির মেরুকরন নামক ভয়াবহ তত্ত্ব প্রচার ও প্রসার না করে, লাশের ওপর দাঁড়িয়ে উল্লাস না করে কিভাবে একটা বলিষ্ঠ সুসংহত জাতি গঠন করা যায় সেটা চিন্তা করুন। সংঘাত নয়, কিভাবে দেশে শান্তি আসে এই পরামর্শ দিন। মৃত্যুর পর দেশের মানুষ যেন বলে বাংলাদেশ ত্যাগ করে লন্ডনে বিশাল আরাম আয়েশে থাকার পরও গাফফার চৌধুরী সাহেবরা দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষে কাজ করে গিয়েছেন। এটা হবে আপনার জন্যে অনেক বেশী সম্মানের।

আমার মনে হয় এতোদিনে জামায়াতও বুঝে গিয়েছে যে, এ দেশে ইসলামী আদর্শ নিয়ে রাজিনীতি করতে হলে তাদেরকে আরো মাটি ও মানুষের কাছে আসতে হবে। এ দেশের সাধারণ মানুষের ভাষায় কথা বলতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১৩৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File