নিক আব্দুল আযীযঃ অমুসলিমদেরও প্রিয় ইসলামী নেতা
লিখেছেন লিখেছেন ডঃ আবুল কালাম আজাদ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৩:১৮:২৪ রাত
রাসূলুল্লাহ (স) এর অনেক জীবন শত্রুও গোপনে গোপনে তাকে পছন্দ করতেন ও প্রশংসা করতেন। কিন্তু আজকের অনেক ইসলামী দলের ডাক-সাইটের নেতাদেরকে তাদের নিজের দলের নেতা-কর্মীরাও তেমন পছন্দ করেন না, এবং সাধারণ মুসলমানরা তাদের পছন্দ করেন না। আর অমুসলমানরা তো সব জন বিচ্ছিন্ন ইসলামী নেতাদের পছন্দ করা তো অনেক দূরের ব্যাপার।
যদি এই যুগে এমন একজন ইসলামী নেতা খুঁজে পেতে চান যাকে তার নিজের দলের নেতা-কর্মীরা প্রাণের চেয়ে ভালোবাসেন, সাধারণ মুসলমানরাও ভালোবাসেন এবং অমুসলিমরাও ভালোবাসেন তাহলে মালয়েশিয়ার কেলানতনের ২৩ বছরের মুখ্যমন্ত্রী মরহুম নিক আব্দুল আযীযের নামটা আগে নিতে হবে।
তিনি ছিলেন একজন দেওবন্দী মাওলানা ও আল-আযহারের গ্রাজুয়েট স্কলার। দীর্ঘ দুই যুগ ধরে পাগড়ী পরা একজন মাওলানাকে এক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করে রাখা একেবারেই কোন সাধারণ ব্যাপার নয়।
অমুসলিমরাও কিভাবে একজন মাওলানাকে তাদের নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী করেছিলেন?
তিনি কিভাবে, কি দিয়ে মানুষের মন জয় করেছিলেন? অনেকগুলো কারণ আছে।
তার মধ্যে অন্যতম ছিলো তার নিজের উদার ব্যক্তিত্ব ও জনমুখী ইসলাম। তিনি ইসলামকে জনমুখী ও জন কল্যানকর করে তুলেছিলেন। ইসলাম যে জন-মানুষেরই জন্যে, শুধু নামায-রোযা ও চোরের হাত-কাটার জন্যে নয় সে কথা তিনি ২৩ বছরের শাসনে প্রমাণিত করেছেন।
আমাদের ইসলামকে অনেক মুসলমানরাও ভয় করেন। কিন্তু নিক আযীযের ইসলামকে অমুসলিমরাও পছন্দ করেছেন। তিনি মালয়েশিয়ার ইসলামকে দেওবন্দী ছোয়াঁ লাগিয়ে মিশরীয় ইসলামের সুগন্ধে এক নতুন বাস্তব নমুনা উপস্থাপনা করেছিলেন। তিনি নিজকে সাধারণ হিসাবে উপস্থাপন করে ইসলামকে সাধারণের কাছে, একেবারে তাদের প্রাণের কাছে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি ইসলামের 'কাছে টানার' নীতি দিয়ে মানূষকে টেনেছিলেন, দূরে সরিয়ে দেওয়ার কোন নীতিকে প্রশ্রয় দেন নি। তিনি সকল মুসলমানদেরকে এবং অমুসলিম নাগরিকদেরকে যথাযথ সম্মান দিয়ে তাদেরকে সাথে নিয়ে কাজ করেছেন, দলীয়প্রীতিকে কোন রকম প্রশ্রয় না দিয়ে।
ইসলামী রাজনীতিতে মানবতারও যে অনেক ওজন ও মূল্য আছে, ২৩ বছরের শাসন দিয়ে তিনি সে কথা প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
এই যুগেও তিনি প্রমাণ করতে পেরেছিলেন যে কোরআন ও রাসূলুল্লাহ (স) শুধু মুসলমানদের জন্যই নন, বরং এই বিশ্বের জন্যেও এক মহান কল্যান ও আশীর্বাদ। তিনি বুঝাতে পেরেছিলেন যে ইসলাম ভয়ংকর কিছু নয়, ইসলাম এক পরম শান্তি ও ন্যায়ের ধর্ম।
পুনশ্চঃ
রাজনীতি প্রচারের জন্যে নয়, এক জন সফল জননেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর তাড়না নিয়েই আমার এই ক্ষুদ্র লেখা।
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১৩৫৬ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
'সাধারন' সবসময়ই 'অসাধারন'। তা সে ব্যাক্তিমানুষ হোক কিংবা ব্যাক্তিত্ব কিংবা অন্য কিছু। আমাদের দৃষ্টিভংগীর দুর্বৃত্তায়নের জন্য আজ আমরা কৃত্রিম চোখে কিংবা তৃতীয় মানুষের চোখে বিশ্ব দেখি বলে অসাধারন বিষয়াবলীকে আর দেখতে পারিনা।
আমাদের দূর্ভাগ্য আমরা সাধ্যের মধ্যে থাকা 'সাধারন' বিষয়বলীকে অবজ্ঞা করে কষ্ট করে কৃত্রিমভাবে 'অসাধারন'কে আয়ত্ব করার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দিক যাতে নিজেকে আরো বেশী মাটির কাছাকাছি নামিয়ে আনতে পারি।
আল্লাহ নিক আব্দুল আযীয কে বেহেস্থ দিন এবং আমাদেরকে ওনার জীবন ও কাজ হতে শিক্ষা নেবার তৌফিক দিন - এই কামনা করছি।
ম্মূল্যবান মন্তব্যের জন্যে শুকরিয়া
কিন্তু আজকেও নাইজেরিয়া, ডেনমার্ক, পাকিস্তান এবং ইয়েমেনে ইসলামিষ্ট শান্তিবাদীদের বোমা, গুলিতে সর্বমোট ১০৬ জন মানুষের প্রান কেড়ে নিয়েছে।
তিনি দেওবন্দি বা মিসরি বা মালয়শিয় কোন ইসলাম ই অনুসরন করেননি। তিনি মদিনার অনুকরনে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চেয়েছেন বলে এক সাক্ষাতকারে পরেছিলাম।
যে শিক্ষণীয় বিষয়টি আপনার লিখায় প্রাঞ্জলভাবে ফুটে উঠেছে। বারাকাল্লাহু ফিক।
কিন্তু আজকের অনেক ইসলামী দলের ডাক-সাইটের নেতাদেরকে তাদের নিজের দলের নেতা-কর্মীরাও তেমন পছন্দ করেন না, এবং সাধারণ মুসলমানরা তাদের পছন্দ করেন না। আর অমুসলমানরা তো সব জন বিচ্ছিন্ন ইসলামী নেতাদের পছন্দ করা তো অনেক দূরের ব্যাপার।
বড় খাটি কথা। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন