জাতির কঠিন বিপদে কি করবে মুমিনেরা?

লিখেছেন লিখেছেন ডঃ আবুল কালাম আজাদ ০৪ মার্চ, ২০১৩, ১২:৫৮:০৩ দুপুর

জাতির কঠিন বিপদে কি করবে মুমিনেরা?

বাংলাদেশ এখন এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে নিপতিত হয়েছে। এই পরিস্থিতি হঠাৎ করে আসে নি। অনেক পুরানো ইতিহাসের পচা শামুকের আগুন জ্বলে ওঠেছে আবার। এই আগুনের পেছনে কাজ করছে বিদেশী শক্তির সরাসরি হাত, তেমনি কিছু রাজনীতিকের ভুল। এখন অনেকের মুখেই শুনছি- বাংলাদেশকে নিয়ে অত্যন্ত সুদূর প্রসারী পরিকল্পণা নিয়েই কাজ চলছে। এর টার্গেট হচ্ছে বাংলাদেশে ইসলাম ও শান্তিপ্রিয় মুসলিম জনতা। এ বিষয়ে আমি অতি সংক্ষেপে কয়েকটা খুব সাদামাটা অতি পরিচিত কিছু মৌলিক কথা বলতে চাই। এই তপ্ত পরিবেশে প্রচন্ড ক্রোধের মাথায় এই বিষয়গুলো একটু স্থির মস্তিষ্কে অনুধাবন করার অনুরোধ করব। এটাকে যেন কেউ কিছুটা সুফিয়ানা বলে উড়িয়ে না দেন, দয়া করে। (লেখা সংক্ষিপ্ত করার জন্যে রেফারেন্স উল্লেখ করিনি। তবে, যা বলেছি তা সবই কোরআন ও সহীহ হাদীস থেকে নেওয়া)।

১- যারাই আল্লাহ ও তার বিধান নিয়ে কথা বলেছেন ও কাজ করেছেন তারা সবাই বিপক্ষদের কাছ থেকে অন্যায় ও জুলুমের শিকার হয়েছেন। নবী ও রাসূলদেরকে হত্যা করা হয়েছে বা আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে। এটাই হলো সত্য-মিথ্যার চিরন্তন দ্বন্দ। সুতরাং, এটা বাংলাদেশে নতুন হলেও ইসলামের জন্যে কোন নতুন বিষয় নয়। যেখানেই মূসা সেখানেই ফেরআউন!!

২- সকল অবস্থায় আমাদের জন্যে আমাদের অতি প্রিয় হাবীব রাসূলুল্লাহ (স) ছিলেন উত্তম আদর্শ। তিনি ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম অনেক বেশী কঠিন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তাঁরা এই বিপদ কিভাবে মোকাবিলা করেছিলেন তা আমাদেরকে জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং যথাযথভাবে মানতে হবে।

৩- ইসলামী কাজে আবেগের চেয়ে বিবেকই কাজ করে বেশী। তাই মহাবিপদেও রাসূলুল্লাহ (স) থাকতেন খুবই স্থির ও প্রশান্ত। যে কারণে মহা বিপদের সময়েও যত কাজ করেছেন এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা ঐতিহাসিকভাবেই সঠিক প্রমাণিত হয়েছে এবং তাঁর কোন কাজের জন্যেই কারো কাছে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হয়নি বা প্রায়াশ্চিত্ত করতে হয়নি।

৪- যারা আল্লাহ পাকের জন্যে কাজ করেন তারা সর্ববস্থায় আল্লাহ পাকের প্রতি গভীর আস্থা রেখেই তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন। যে কারণে দেখা যায় যে সাহাবায়ে কেরাম কাফিরদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে থেকেও একটা ওয়াক্ত নামায কাযা করেন নি, এমনকি রাতের তাহাজ্জুদও তারা বাদ দেন নি। নামাযে দাঁড়িয়ে গেলে তাদের মনের যাবতীয় কষ্ট-যাতনা দূর হয়ে যেত। যে কোন সমস্যাতেই রাসূলুল্লাহ (স) নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন। তিনি একা একা নামায পড়তেন এবং অন্যদেরকেও সালাতুল হাযাত নামায পড়তে বলতেন। সর্বাবস্থায় নামায মুমিনের চোখের মণি।

৫- রাসূলুল্লাহ (স) জুলুমের উত্তর দিয়েছেন ইন্সাফ দিয়ে। তিনি যুদ্ধ করেছেন কাফিরদের বিরুদ্ধে। কিন্তু কাউকেই কোন দিন গালি দেন নি, কারো ওপর কোন ধরণের অন্যায় আচরণ করেন নি। কোন সাধারণ নাগরিকের ওপর কোনদিন কোন প্রকার ভোগান্তি তৈরী করেন নি। মনে রাখতে হবে, আজ যারা ইসলামের চরম শত্রু, এরাই বা এদের বংশধরের কেউ হয়ত একদিন হবেন ইসলামের মহান খাদেম।

৬- বিপদের সময় ধৈর্য ধরা ফরজ। যারা আল্লাহকে ভয় করেন ও ধৈর্য ধরেন আল্লাহ পাক তাদেরকে চুড়ান্ত বিজয় দিয়ে থাকেন। মিশরে জামাল আব্দুন নাসের, হোসনী মোবারক ইসলামী নেতা-কর্মীদেরকে কয়েক যুগ ধরে মারাত্মকভাবে নির্যাতিত করেছিল- নিজেদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্যে। কিন্তু সবার পরিণাম হয়েছে ধিক্কার ও অপমানে।

৭- এই ধৈর্যের অর্থ এই নয় যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যাবে না বা সব সময় চুপচাপ ঘরে বসে থাকতে হবে। এর মানে হলো অন্যের জুলুম ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করত গিয়ে আমরা যেন নিজেরাই অন্যায় ও গর্হিত কাজে জড়িয়ে না পড়ি। আমাদের প্রতিবাদে এমন যেন কেউ ক্ষতিগ্রস্থ না হন যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি অন্যায় করেন নি।

৮- ইসলাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স) কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা দলের নয়। তাই, যারাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ (স) কে ভালোবাসেন তাদের সবাইকে সাথে নিয়ে ইসলামের শত্রুদের মোকাবিলা করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (স) মুনাফেকদেরও সাথে নিয়ে যুদ্ধ করতে গিয়েছেন।

দুঃখ হয়- যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স) কে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে গালি দিয়ে কবর দেয়া হচ্ছে, তখনো কিছু মুসলিম এমন আচরণ করছেন যে তারা অমুক দলের আল্লাহকে গালি দিচ্ছেন, তাদের আল্লাহ নিরাপদ আছেন। তাই তারা নির্বিকার হয়ে বসে আছে মসজিদে বা ঘরে।

৯- মনে রাখতে হবে- যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ (স) কে অপমান করেছেন তারা কেউই চীরকালের জন্যে সফল হতে পারেন নি।

১০- অবশেষে আল্লাহ, তাঁর রাসূল (স) ও তাঁর প্রিয় বান্দারাই বিজয়ী হয়েছেন। যারা তাদের সাথে শত্রুতা করেছেন এবং জুলুম নির্যাতন করেছেন তারা হয়েছেন অপমানিত, নিগৃহিত ও নিঃশেষ।

হে মুমিনেরা, তোমরা অবশ্যই বিজয়ী হবে- যদি সত্যিকার ভাবে আল্লাহ ভীতু ধৈর্যশীল প্রিয় বান্দা হয়ে থাকতে পারো।

বিষয়: বিবিধ

১৩৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File