ঈদ মোবারকঃ কিভাবে ঈদ পালন করা উচিত?
লিখেছেন লিখেছেন ডঃ আবুল কালাম আজাদ ২৮ জুলাই, ২০১৪, ০১:১০:৫৮ রাত
আমাদের ঈদটা হলো তাকওয়া অর্জনের অনুষ্ঠান, এটা কোন ফুটবল বা অন্য কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়। ঈদ শুধু একটি আনন্দের অনুষ্ঠানই নয়, এটি একটি ‘ইবাদত’ও। কারণ রমজানে আমার গুনাহ ক্ষমা পেয়েছি কি-না, আমার মনে আল্লাহর ভয় জেগেছে কি-না, আল্লাহ পাকের সাথে আমার সম্পর্ক গভীর হয়েছে কি-না তার প্রমাণ হলো কিভাবে আমরা আমাদের ঈদটা পালন করছি এবং কিভাবে আমাদের আনন্দ প্রকাশ করছি তার মাধ্যমে।
যদি কেউ ঈদের আনন্দ এমন কোন উপায়ে প্রকাশ করেন যাতে আল্লাহ পাক খুশী না হয়ে অখুশী হন, তাহলে বুঝতে হবে তার তিরিশ দিনে সিয়াম পালন অনেকটাই বৃথা বা অনর্থক হয়েছে।
তাহলে ঈদের উদযাপনটা কেমন হতে হবে সেটা একটু জেনে নেই বা আবার ঝালায় করে নেই।
১- ঈদের রাতেও ইবাদতের কাজে কাটানো- নামায, তাসবীহ-তাহলীল-তাকবিরের মাধ্যমে। যদিও অনেকেই বলেছেন হাদীসের এক বর্ণনাকারী দূর্বল, তবুও এই হাদীসের দ্বারা ঈদের আগের রাতের আমল সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। আবু উমামাহ আল-বাহেলী থেকে বর্নিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন এ আল্লাহকে পাওয়ার জন্যে যিনি দুই ঈদের রাতকে জাগিয়ে রাখেন তার অন্তর কোনদিন মরে যাবে না যখন অন্য অন্তরগুলো মরে যাবে (ইবনে মাজা)। তার মানে হলো- যদি কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (স) দেখানো পথ অনুযায়ী ঈদ পালন না করেন তাদের অন্তরটাই মরে যায় বা যাবে। এজন্যে, আমাদের উচিত হবে ঈদের রাতে ফালতু সময় নষ্ট না করে আল্লাহর যিকিরে-ফিকিরে কাটানো উচিত।
২- যাদের রোজা-কিয়াম-তিলাওয়াত আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে ঈদের রাতে তাদের মনটা একটু খারাপ থাকে। কারণ তাদের মনে এই ভয় থাকে যে, রমজানের এই মহান মাসটা চলে গেল, এই মাসে যেভাবে আমল করার কথা ছিলো তা হয়ত হয়নি। এই মাস চলে গেল, জীবনে আর এই মাস আসবে কি-না তার কোন গ্যারান্টি নেই। সেই বেদনায় অনেকের মন থাকে ভরাক্রান্ত। আর যাদের রোজা কবুল হয়নি, তারা মনে করে রমজান মাসে তারা যেন একটা বন্দীখানায় আটক ছিলো, এখন তারা সেই বন্দী খানা থেকে মুক্ত হয়েছে। তাই তারা অবিবেচকের মত নাচানাচি করে আনন্দফুর্তি করে। রমজানকে যারা বন্দীখানার মত মনে করে তাদের চেয়ে দূর্ভাগ্যবান আর কেউ নেই।
৩- ফজরের নামায মসজিদে গিয়ে জামায়াত সহ আদায় করা, বিশেষকরে পুরুষরা। আর মহিলারাও যেন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে খুব যত্ন সহকারে ফজরের নামায আদায় করে নেন। রান্না-বান্না ও ঘর গোছানোর জন্যে যেন তাড়াহুড়ো করে নামায সেরে দৌড়ে পালিয়ে না যান। নামাযের পর শান্তিমত বসে তাসবীহ তাহলীল করে তাকবীর পড়ে নিজের জন্যে দোয়া করতে হবে। ঈদের দিনে নিজের আত্মীয়-স্বজন যারা কবরে শুয়ে আছেন, অন্যান্য যারা মৃত হয়ে গিয়েছেন তাদের জন্যে দোয়া করতে হবে। আমরা দুনিয়াতে ঈদের দিনে যেমন আনন্দ করছি, আমাদের প্রিয়জনেরা যারা কবরে শুয়ে আছেন, আমাদের চোখের পানি ও আন্তরিক দোয়ার বরকতে তারাও যেন কবরে শান্তি পান ও আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।
ঈদের দিনে কবর যিয়ারত করার কোন বিশেষত্ব নেই। তবে, যাদের কবর যিয়ারত করতে যাবেন তাদের জন্যে বেশী বেশী করে দোয়া করাটাই বেশী উপকারী।
৪- এবার ঈদের নামাযের জন্যে প্রস্তুতি নিতে হবে। পরিবারের সবাই মিলে ঈদ্গাহে যাওয়াটা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (স) এর সময় যে সমস্ত মহিলারা নামাযের উপযুক্ত ছিলেন না তারাও ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে ঈদগাহে চলে যেতেন। তারা নিজেরা ইস্তেগফার ও তাকবীর পড়তেন।
৫- ঈদের নামাযে যাওয়ার আগেই ফিতরা আদায় করে নিতে হবে। মসজিদে ফিতরা কালেকশান হয়। সেখানে দিয়ে দিতে পারেন। আমার জানা মতে মসজিদ কর্তৃপক্ষ আপনাদের ফিতরার টাকা মসজিদে খরচ না করে গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দেন।
৬- ঈদুল ফিতরের আগে কিছু খেয়ে ঈদের নামায পড়তে যাওয়াই সুন্নাত।
৭- ঈদের ময়দানে বা মসজিদে যাওয়ার সময় তাকবির পড়তে পড়তে যেতে হবে। এটাই সুন্নাত। আপনারা যারা এই লেখাটা পড়ছেন তারা বাসার অন্যান্যদের সাথে এটা শেয়ার করবেন এবং তাদেরকে শিখিয়ে দিবেন। ঈদের তাকবীর বিভিন্নভাবে পড়া যায়। তবে, ওমর (রা) ও ইবনে মাসঊদ (রা) থেকে এভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহ ইল্লাল্লাহু, ও আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ও লিল্লাহিল হামদ।
পুরুষরা এই তাকবীর জোরে পড়তে পারেন। তবে, মহিলারা নিচু স্বরে পড়তে হবে।
৮- ঈদের নামাযের পর ঈদের খুতবা শোনা ওয়াজিব। মাসজিদে বা ঈদগাহে গিয়ে কেউ যেন খুতবা না শুনে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন। তবে, যদি কারো চাকুরী থাকে অথবা অন্য কোন জরুরী কাজ থাকে তাহলে তিনি হয়ত নামায পড়েই চলে আসতে পারেন।
৯- ঈদের নামাযের পর অন্যদের ঘরে যাওয়া এবং নিজেদের ঘরে অন্যদেরকে মেহমানদারী করা সুন্নাত। ঈদের দিনে রোজা রাখা হারাম। তবে, আমরা যেন অতিরিক্ত না খাই বা খাবার অপচয় না করি। ঈদের ইবাদত পালন করতে গিয়ে খাবার অপচয়ের মত হারাম ও শয়তানী কাজ করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। যারা রোজার মাসে আল্লাহর ভয় অর্জন করেছেন তারা যেন কোনভাবেই কোন খাবার অবহেলা করে অপচয় না করেন।
১০- ঈদের দিনে সাহবায়ে কেরাম একে অপরকে বলতেন- তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ও মিনকুম (আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের থেকে কবুল কবুল করুন)।
১১- ঈদের নামায পড়ে ঘরে ফিরে রাসূলুল্লাহ (স) দুই রাকায়াত নফল নামায আদায় করতেন (ইবনে মাজা)।
১২- শাওয়াল মাসের দুই তারিখ থেকে শুরু করে একেবারে ২৯ তারিখ পর্যন্ত যে কোন দিনে ছয়টি রোজা রাখা সুন্নাত। অনেকেই দুই তারিখ থেকেই এই রোজা রাখা শুরু করেন। এটা জায়েয আছে, কিন্তু এতে করে মেহমানদারীর একটু সমস্যা হয়ে যেতে পারে।
বিষয়: বিবিধ
২২১০ বার পঠিত, ৪৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমার মনে হয় ২০ বছর আগেও ঈদের দিনের প্রধান কাজই ছিল যতটুক সম্ভব সকল আত্মিয়র বাসায় যাওয়া এবং নিজেদের বাসায়ও তাদের আপ্যায়ন করা। কিন্তু এখন কেমন যেন সেই মানবিক ঈদ নষ্ট হয়ে যান্ত্রিক হয়ে গিয়েছে।
আমরা যেন ঈদের প্রকৃত রূপ ফিরিয়ে আনতে পারি।
অনেক ধন্যবাদ।
এদুটি পয়েন্ট (৯ ও ১২) খুবই গুরুত্বপূর্ণ!
সবার বাসার কেউ না কেউ সবার বাসায় যাওয়া, খাওয়া ও খাওয়ানো, কোনমতেই অপচয় না করা এবং ঈদের পরবর্তী ২/৩দিন সাওয়ালের রোযা না রাখা- আমাদের পরিবার, নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীদের মাঝে এখনো চালু আছে- যদিও আগের মত সুসংহত নয়!!
রমযান-আলোচনাঃ ঈদের দিনের সুন্নাহ
তাক্বব্বালাল্লহু মিন্না ওয়া মিনকুম
ভাল থাকার জন্য যে মানষিক সস্থিবোধ থাকা দরকার তা ফিলিস্তিনের নারী শিশুদের উপর অভিসপ্ত ইয়াহুদীদের গনহত্যার বিভৎস চিত্র দেখে মনদিল আর ভাল নেই!
ভাল থাকার জন্য যে মানষিক সস্থিবোধ থাকা দরকার তা ফিলিস্তিনের নারী শিশুদের উপর অভিসপ্ত ইয়াহুদীদের গনহত্যার বিভৎস চিত্র দেখে মনদিল আর ভাল নেই!
ﺗﻘﺒﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻨﺎ ﻭ ﻣﻨﻜﻢ
সব্বাইকে ঈদ মুবারক।
আপনার ঈদ বোনাসের নতুন টাকায় আমার ঈদের দাওয়াত রইলো স্যার। জাজাকাল্লাহু খাইরান।
রাসুল (সা) ঈদগাহে জাবার আগে খুশবু লাগাতেন
রাসুল (সা) ঈদগাহে এক রাস্তাদিয়ে জেতন অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরতেন
জাজাকাল্লাহু খায়রান শায়খ।
তবে যইফ হাদিস না দিলেই ভালো হতো মনে হয়। কারনটা তো আপনি জানেন।
কল্যাণ আছে বলে জানেন,
তাহলে তোমাদের
থেকে যা নেয়া হয়েছে, তার
চেয়ে উত্তম কিছু দেবেন
এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন, আর
আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম
দয়ালু।‘ (আনফাল : ৭০)
কেউ আমাকে দাওয়াত দিক,আর আমার ঘর খোলা সবার জন্যে।
দারুন লাগল ,দারুন লেখা। জাজাকাল্লাহ
অনেক ধন্যবাদ।
সবাই আছেন, কিন্তু হযরত উমর (রা) ঈদ্গাহে উপস্থিত নেই ।
সবাই চিন্তিত । ভাবলো, তিনি হয়তো অসুস্থ হয়ে গিয়েছেন ।
খোঁজখবর নেয়ার জন্য একজনকে তাঁর বাসায় পাঠানো হলো ।
তিনি হযরত উমর (রা) এর বাসায় গেলেন ।
গিয়ে দেখলেন, উমর (রা) অঝোর ধারায় কান্না কাটি করছেন ।
তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, "আজ এই ঈদের দিনে, খুশীর দিনে আপনি এভাবে কাঁদছেন কেন ?"
উমর (রা) উত্তর দিলেন, "ঈদ তো তাদের জন্য, যারা রমাদান মাসে ঈবাদাত করে আল্লাহর নিকট থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছে । এই উমর এখনো যে নিশ্চিত হতে পারেনি, আল্লাহ রব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে তিনি ক্ষমা পেয়েছেন কিনা" ।
সুবহানাল্লাহ !!!
আশারায়ে মোবাশশারার সদস্য হওয়ার পরেও উমরের (রা) এর অনুভূতি ঠিক এমনটিই ছিল ।
রমাদান মাস শেষ হওয়ার পথে । হয়তো আগামীকাল ঈদ । সবাই ঈদের আনন্দে আত্মহারা ।
কিন্তু আমরা কি হযরত উমরের (রা) এর মতো আমাদের গুনাহ মাফের বিষয়ে একবারও ভেবেছি, আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করেছি ???
যদি না করি, তবে সত্যিকার অর্থেই এই ঈদ আমাদের জন্য নয় !!!
আল্লাহ যেন আমাদেরকে ওই ফেল-কারীদের দলে না ফেলেন।
সবাই আছেন, কিন্তু হযরত উমর (রা) ঈদ্গাহে উপস্থিত নেই ।
সবাই চিন্তিত । ভাবলো, তিনি হয়তো অসুস্থ হয়ে গিয়েছেন ।
খোঁজখবর নেয়ার জন্য একজনকে তাঁর বাসায় পাঠানো হলো ।
তিনি হযরত উমর (রা) এর বাসায় গেলেন ।
গিয়ে দেখলেন, উমর (রা) অঝোর ধারায় কান্না কাটি করছেন ।
তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, "আজ এই ঈদের দিনে, খুশীর দিনে আপনি এভাবে কাঁদছেন কেন ?"
উমর (রা) উত্তর দিলেন, "ঈদ তো তাদের জন্য, যারা রমাদান মাসে ঈবাদাত করে আল্লাহর নিকট থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছে । এই উমর এখনো যে নিশ্চিত হতে পারেনি, আল্লাহ রব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে তিনি ক্ষমা পেয়েছেন কিনা" ।
সুবহানাল্লাহ !!!
আশারায়ে মোবাশশারার সদস্য হওয়ার পরেও উমরের (রা) এর অনুভূতি ঠিক এমনটিই ছিল ।
রমাদান মাস শেষ হওয়ার পথে । হয়তো আগামীকাল ঈদ । সবাই ঈদের আনন্দে আত্মহারা ।
কিন্তু আমরা কি হযরত উমরের (রা) এর মতো আমাদের গুনাহ মাফের বিষয়ে একবারও ভেবেছি, আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করেছি ???
যদি না করি, তবে সত্যিকার অর্থেই এই ঈদ আমাদের জন্য নয় !!! (ফেসবুক থেকে নেয়া)
ঈদ মোবারক।
-আমিন
ঈদ মোবারক
মন্তব্য করতে লগইন করুন