ইসলামী রাগঃ কিভাবে প্রকাশ করবেন?
লিখেছেন লিখেছেন ডঃ আবুল কালাম আজাদ ১৫ মে, ২০১৪, ০৬:০৬:১৩ সন্ধ্যা
যারা সত্যিকারেই ইসলামকে খাটি জীবন ব্যবস্থা হিসাবে মানেন তারা আল্লাহ, রাসূল (স), ইসলাম বা মুসলমানদের ওপর আক্রমণ হলে বা তাদের কোন ক্ষতি হলে তারা দুঃখিত হন বা তারা রেগেও যান।
এটা স্বাভাবিক।
কিন্তু এই রাগ কিভাবে প্রকাশ করব আমরা?
এ ব্যাপারে অনেক হাদীস আছে (যেগুলোর অনুবাদ দেওয়ার মত সময় এখন আমার হাতে নেই। কারণ, লাঞ্চ ব্রেকে ঘরে বানানো স্যানউইচ দিয়ে লাঞ্চ খাচ্ছি আর লিখছি। যারা আরো বিস্তারিত আরবিতে পড়তে চান তারা এখানে চাপ দিন Click this link )
সেখানে দেখতে পাই যে রাসূলুল্লাহ (স) ছিলেন ইসলামের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী দরদী এবং দ্বীনের ওপর খারাপ কোন কিছু হলে তিনিই সবচেয়ে বেশী আহত হতেন বা রেগে যেতেন।
কিন্তু তিনি কিভাবে তার রাগ প্রকাশ করতেন?
১- তার চেহারা লাল হয়ে যেত।
২- তিনি সাধারণত ব্যক্তিগতভাবে কাউকে আক্রমন করতেন না
৩- কোন খারাপ বা কর্কশ ভাষা ব্যবহার করতেন না।
৪- অন্য মুসলমানের ইমানের ওপর আঘাত করতেন না।
৫- এমন ভাষায় বলতেন যাতে সবাই তার মূল বক্তব্য বুঝে যেতেন এবং সংশোধিত হয়ে যেতেন অথবা বিষয়টা চুকে যেত।
৬- আল্লাহর আদেশে শত্রুদের সাথে যুদ্ধও করেছেন, কিন্তু কখনো তাদেরকে নিয়ে খারাপ কথা বলেন নি বা তাদের সাথে যুদ্ধনীতির বাইরে কোন খারাপ আচরণও করেন নি।
অথচ আমরা অনেকেই ইসলামের কোন সাধারণ বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যেই মতবিরোধ হলে এমনভাবে রেগে যাই এবং তা প্রকাশ করি যেন আমিই কেবল ইসলাম বুঝি এবং শুধু আমার মনেই আল্লাহর ভয় আছে।
আমরা আমাদের ভিন্নমতাবলম্বী মুসলমান ভাই-বোনদের বিরুদ্ধে যে ভাষায় আক্রমন করি রাসূলুল্লাহ (স) নিজের তার অমুসলিম শত্রুদের ব্যাপারেও এমন কঠোর ভাষা ব্যবহার করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না।
এখানে মাত্র দুইটা হাদীস আমি উল্লেখ করতে চাইঃ
একঃ
আবূ সাঈদ খুদরী (রা) বর্ণনা করেছেন যে রাসূলুল্লাহ (স) ছিলেন ঘরের তরুণীর চেয়েও লাজুক। তার কোন জিনিস খারাপ লাগলে আমরা তার চেহারা দেখে বুঝতে পারতাম। ইবনে মাসঊদ যখন তাঁর ব্যাপারে তার কাছে একজনের এমন একটা কথা পৌছে দিলেন যে এই ভাগের ব্যাপারে আল্লাহর সন্তুষ্টি চাওয়া হয়নি। এ মন্তব্যটা রাসূলুল্লাহ (স) কাছে খুবই কঠিন মনে হলো, তার চেহারা পালটে গেল এবং তিনি রেগে গেলেন। কিন্তু তিনি শুধু বললেনঃ মূসাকে এর চেয়েও বেশী কষ্ট দেওয়া হয়েছিলো, কিন্তু তিনি ধৈর্য্য ধরেছিলেন (বুখারী ৬১০২, মুসলিম ১০৬২)
وعن أبي سعيد الخدري قال: ((كان النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم أشدَّ حياءً من العذراءِ في خِدْرها ، فإذا رأى شيئًا يكرهه، عرفناه في وجهه، ولما بلَّغَه ابنُ مسعودٍ قَولَ القائل: هذه قسمةٌ ما أريد بها وجه الله، شقَّ عليه صلى الله عليه وسلم، وتَغيَّر وجهه، وغَضِبَ، ولم يَزِدْ على أنْ قال: قد أوذِيَ موسى بأكثرَ من هذا فصبررواه البخاري (6102)، ومسلم (1062).
দুইঃ
আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে (মুসলিম ২৩৫৬) যে কোন এক ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (স) শিথিলতার অনুমতি দিয়েছিলেন কিন্তু কিছু লোক তা আমলে নেন নি। এ সংবাদ তাঁর কাছে পৌঁছার পর তিনি এমনভাবে রেগে যান যে তার রাগ চেহারায় ফুটে ওঠে। তখন তিনি বললেনঃ এই কওম (জাতি/গোষ্ঠী) এর কি হলো যে আমাকে যে বিষয়ে শিথিলতার অনুমতি দেওয়া হয়েছে তারা সেটা অপছন্দ করেন? আল্লাহর কসম করে বলছি- আল্লাহর ব্যাপারে আমিই তাদের মধ্যে বেশী জ্ঞানী এবং বেশী ভীত।
وعن عائشة رضي الله عنها ((أنَّها قالت: رخَّص رسول الله صلى الله عليه وسلم في أمر، فتنزَّه عنه ناس من النَّاس، فبلغ ذلك النَّبي صلى الله عليه وسلم، فغضب حتَّى بان الغَضَب في وجهه، ثمَّ قال: ما بال أقوام يرغبون عمَّا رخِّص لي فيه، فوالله لأنا أعلمهم بالله وأشدَّهم له خشيةً))
সুন্দর মন ও ভাষায় দ্বিমতকারীদের উত্তর দেওয়াই ইসলামের আসল শিক্ষা। আল্লাহ পাক যেন এই শিক্ষা অনুযায়ী আমাদেরকে চলার তৌফিক দেন। আমীন।
আগের একটা লেখা ছিলোঃ কিয়ামতের ময়দানের লম্বা লাইনে আমি থাকব কোথায়?
বিষয়: বিবিধ
২১৯৯ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শুকরিয়া, ভাই
আপনাকেও আল্লাহ পাক সার্বিক কল্যান দান করুন।
আমি কেন তাসলিমা নাসরিনের জন্য দুয়া করা যাবে না তা আমার লেখায় তুলে ধরেছি, দয়া করে আমার এই লেখাটা দেখুন : "তাসলিমা নাসরিন-সহ সব নাস্তিক, ইসলামবিরোধী-ইসলামবিদ্বেষীদের জন্যে বদ দুয়া করা মুসলিমদের জন্য ওয়াজিব " http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/4509
এই লেখা লেখার কারণ হলো : অসুস্থ তাসলিমা নাসরিনের জন্যে দোয়া করা যাবে? http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/4038/drazad/45011 শিরোনামের লেখা লিখেছেন । সেখানে আমি অনেক মন্তব্য করেছি । সেগুলোর একটা জবাবও দেননি ।
উপরন্তু আপনি আপারর "{মিডিয়ার আরেক কুরুচিঃ 'যৌন জিহাদ' "
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/4038/drazad/27462
লেখায় তিনি যৌন জিহাদের স্বপক্ষে অভিমত ব্যক্ত করে বলেন :
“এই অস্থায়ী বা সাময়িক বিয়ের অনেক নিয়ম কানুন ও বাধা-নিষেধ আছে। এটা শুধু মাত্র একটা যৌন-লেনদেন নয়। “
তার এই লেখায় আমি তাকে প্রশ্ন করেছিলাম :
” ১. সেই নিয়ম-কানুন ও বাধা নিষেধগুলো কি কি ?
২. "এটা শুধু মাত্র একটা যৌন-লেনদেন নয়।" এই কথা দিয়ে আপনি প্রমাণ করলেও এতে যোদ্ধা বা সন্ত্রাসীদের সাথে যৌনতা সংঘঠিত হয় । দয়া করে বলুন : যৌন - লেনদেনের বাহিরের আর কি কি বিষয় এই নিকাহুল মুত'আ-য় আর কি কি বিষয় রয়েছে ? “
আজ পর্যন্ত আমার এসব প্রশ্নের তিনি কোন উত্তর দেননি ।
আশা করি আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবেন ।
আপনি যদি নিজেকে আলেম মনে করেন তাহলে আপনার উচিত হবে :
১. এই লিংকে যেয়ে আমার এই লেখাটা (তাসলিমা নাসরিন-সহ সব নাস্তিক, ইসলামবিরোধী-ইসলামবিদ্বেষীদের জন্যে বদ দুয়া করা মুসলিমদের জন্য ওয়াজিব
) পড়া : http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/45098 ,
২. আমার লেখায় কোন ভুল থাকলে কুরআন ও হাদিসের আলোকে তুলে ধরা ,
৩. আপনার উচিত হবে যদি আমার লেখায় কোন ভুল না থাকে তাহলে আপনার এই লেখাটা প্রত্যাহার করা এবং
৪. আল্লাহর কাছে খাস দিলে তওবা করা ।
আপনার সম্পর্কে আমার আর বিশেষ কিছু বলার নেই ।
আর আপনি তো বিশেষজ্ঞ । আপনি যদি আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর না দেন তাহলে কুরআনের মূলনীতির বিরোধীতা করে কি না ? আপনি কি ইলম গোপন করলেন না ?
কারণ কুরআনেই বলা আছে : وَما أَرسَلنا مِن قَبلِكَ إِلّا رِجالًا نوحى إِلَيهِم ۚ فَسـَٔلوا أَهلَ الذِّكرِ إِن كُنتُم لا تَعلَمونَ
আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে । ( সুরা নহল : ৪৩ )
আপনি বলছেন:"উত্তর দেওয়ার জ্ঞান আমার নেই।"
তাহলে আমার প্রশ্ন : আপনার যে বিষয়ে জ্ঞান নেই বলে দাবি করছেন বা লিখছেন । কিন্তু যারা গভীরভাবে বুঝার চেষ্টা করছেন তাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না । এই ক্ষেত্রে কুরআনে একটা আয়াত আছে তাহলো :
وَلا تَقفُ ما لَيسَ لَكَ بِهِ عِلمٌ ۚ إِنَّ السَّمعَ وَالبَصَرَ وَالفُؤادَ كُلُّ أُولٰئِكَ كانَ عَنهُ مَسـٔولًا
যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে। (সুরা বনী ইসরাইল : ৩৬ )
ধন্যবাদ বিষয়টি আলোকপাত করার জন্য।
মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ যদি কাফির মুশরিকদের ইমানের উপর আঘাত না করেই থাকেন তাহলে তিনি কোন ধর্ম বা জীবন ব্যবস্হা নতুন করে চালু করলেন ?
তিনি কাফির মুশরিকদের ধর্ম ও জীবন ব্যবস্হায় আঘাত দিয়েছেন বলেই তো তার সাথে এত সংঘাত ও সংঘর্ষ হলো । তাকে রক্তাক্ত হতে হলো । অনেকগুলো যুদ্ধ করতে হলো । মক্কা বিজয় করে ৩৬০ টা মুর্তি ভাংতে হলো ।
এসব কাফির মুশরিকদের ইমানে আঘাত দেওয়া নয় কি ?
আর তিনি এসব করেছেন কারণ : هُوَ الَّذى أَرسَلَ رَسولَهُ بِالهُدىٰ وَدينِ الحَقِّ لِيُظهِرَهُ عَلَى الدّينِ كُلِّهِ وَلَو كَرِهَ المُشرِكونَ
তিনি তাঁর রসূলকে পথ নির্দেশ ও সত্যধর্ম নিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে একে সবধর্মের উপর প্রবল করে দেন যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।( সুরা ছফ : ৯ )
আমি যে একজন মহা মূর্খ তার সার্টিফিকেট কিন্তু আমার কাছে আছে। আপনে চাইলে একবার আপনের কাছে শো করতে পারমু।
মন্তব্য করতে লগইন করুন