৭২টি মুসলিম দল বিশ্বাস করে- আপনি দোযখে যাবেন।
লিখেছেন লিখেছেন ডঃ আবুল কালাম আজাদ ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৫:১৯:৪০ সকাল
এটা কিভাবে?
সেটাই একটু খুলে বলি।
হাদীস শরীফে আছেঃ
« تَفَرَّقَتْ الْيَهُودُ عَلَى إِحْدَى وَسَبْعِينَ أَوْ اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً. وَالنَّصَارَى مِثْلَ ذَلِكَ. وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً».
أخرج الترمذي (2640) وأبو داود (4596) وابن ماجه (3991) كل منهم في السنن له،
এই হাদীসের অর্থ হলোঃ ইহুদীরা ৭১ বা ৭২ গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। খৃষ্টানরাও এমন হয়েছে। আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩ গ্রুপে"।
এই হাদীসের অন্য আরো অনেকগুলো বর্ণনা আছে। কোথাও বলা হয়েছে যে, এই ৭৩ গ্রুপের সব গ্রুপই দোযখে যাবে, একটা মাত্র গ্রুপ ছাড়া, তারা হলো 'জামায়াত' বা সত্য পন্থী (অধিকাংশের) দল। কোথাও বলা হয়েছে সেই গ্রুপ হলো তারাই যারা রাসূলুল্লাহ (স) ও তার পরিবার বর্গ যে পথে চলেছেন সে পথে চলে।
এই হাদীসটি ও তার ব্যাখ্যা নিয়েই মনে হয় ৭৩ ফের্কার চেয়ে বেশী ফের্কা হয়ে গিয়েছে। মুসলিম উম্মাহ আজ ৭৩ ফের্কার চেয়েও বেশী দলে বিভক্ত।
আপনি যদি কোন দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকেন তাহলে মনে করতে হবে যে, বাকী ৭২ দলের লোক মনে করেন যে আপনি ও আপনার দল যাবে দোযখে। তার মানে মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশ দলই আপনার জাহান্নামে যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত। আপনি হয়ত মনে করেন শুধু আপনার দলই বেহেশতে যাবে, বাকীদলগুলো সব যাবে জাহান্নামে।
আমার মন্তব্যঃ
আসলে এই হাদীসের মর্ম কি তাই? এই হাদীস কি শিক্ষা দেয় যে একটা ইসলামী দল আরেকটা ইসলামী দলকে কাফির ফতোয়া দিয়ে তাদেরকে জাহান্নামের টিকেট লাগিয়ে দিবে?
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয়- এই হাদীস আমাদেরকে বিভক্ত করার জন্যে আসে নি। এই হাদীস এসেছে একথা বলার জন্যে যে, প্রতিটা কথা, কাজে ও ইবাদতে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (স) বলা ও দেখানো পথে চলতে হবে। যদি ভুল করে কেউ সুন্নাত থেকে সরে যায়, রাসূলুল্লাহ (স) তাদেরকে 'আমার উম্মত' বলেছেন। তার মানে হলোঃ তারাও মুসলমান। তাদের হয়ত ভুল থাকতে পারে। তাই বলে তাদেরকে কাফির বলার মত উপসংহারে যাওয়ার জন্যে এই হাদীস বলে নাই। আর আপনার দল ছাড়া বাকীরা জাহান্নামে যাবে এটা অবধারিত নয়। এটা একটা হুমকি। আল্লাহ পাক হয়ত তাদেরকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। এ ছাড়া জান্নাতে লোকজন যাবে ব্যক্তি হিসাবে, দল হিসাবে নয়। নির্দিষ্ট কোন দলের নেতা বা কর্মী হওয়া মানেই জান্নাতের গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না। এর জন্যে ব্যক্তিগত কিছু মৌলিকগুণও থাকতে হবে। যেমন সাহাবায়ে কেরাম সবাই ছিলেন রাসূলুল্লাহ (স) এর দলের। তারপরও শুধু সাহাবী হওয়ার কারণে বা রাসূলুল্লাহ (স) এর দলের হওয়ার কারণে সবাইকে তিনি জান্নাতে যাওয়ার গ্যারান্টি দেননি। মাত্র হাতে গোনা কয়েকজনকে তিনি জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন, তাদের ব্যক্তিগত যোগ্যতার কারণে। ফলে, কোন ভালো ইসলামী দলের সদস্য হওয়ার কারণেই নিজকে জান্নাতী ভেবে অন্যকে জাহান্নামী ভাববার কোন সুযোগ নেই। যারাই এই ধরণের চিন্তা করেছেন তারাই নিজেদেরকে অহংকারী করে ফেলে নিজেদের অগোচরেই জান্নাত থেকে দূরে সরিয়ে ফেলেছেন।
যদি অন্য কোন মুসলিম দলের কাজ-কর্ম ও আকীদা বিশ্বাস আপনার ভালো না লাগে বা তাদেরকে ভ্রান্ত বলে মনে হয় তাহলে দেখতে হবে যে তারা প্রকাশ্য কুফুরী বা শির্কে লিপ্ত কি-না। যদি থাকে তাহলে তাদেরকে ফতোয়া দিয়ে কাফির বলে জাহান্নামের অধিবাসী আখ্যা না দিয়ে তাদেরকে সম্মানের সাথে সংশোধন করার চেষ্টা করতে হবে। তাদের হেদায়েতের জন্যে দোয়া করতে হবে। তাদের জন্যে আল্লাহ পাকের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। মনে রাখতে হবে যে জান্নাতগুলো এতো বড় হবে যে আপনি একা একা থাকতে ভালো লাগবে না। আপনার নিজের মজা ও আনন্দের জন্যে জান্নাতে অনেক লোকের দরকার।
তাই আমি বিশ্বাস করি, এই উম্মতের অধিকাংশ লোকই -আগে হোক পরে হোক- এক সময় জান্নাতে যাবেন। আল্লাহর কাছে কামনা করি, আপনি, আমি- আমরা সবাই যেন হতে পারি সেই বিশাল জান্নাতের বিশেষ অধিবাসী। আমীন। ডঃ ইয়াসির কাজীর এই আলোচনাটা শুনলে আরো পরিস্কার হবেঃ
আগের লেখা ছিলোঃ মুসলমানদের বড় দূর্ভাগ্যঃ মুসলমানরাই মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে
বিষয়: সাহিত্য
২২৯৩ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ডঃ ইয়াসির যেভাবে বুঝাতে চেয়েছেন অর্থাৎ ৭৩ অর্থ আসলে ৭৩ নয় বরং অনেক বেশী বুঝাতে চেয়েছেন রাসুল (সাঃ), এই ব্যাখ্যার সাথে আমি আসলে কোনভাবেই একমত নই। কারন এখানে হাদিসে সংখ্যাকে স্পষ্ট করা হয়েছে অর্থাৎ ৭১, ৭২, ৭৩ বেশী সংখ্যককে বুঝাবার জন্য এভাবে বলার কথা নয়। আমরা অনেক সময় বলি হাজার বার ক্ষমা চাইলেও ক্ষমা নেই বা সত্তর বার ক্ষমা চাইলেও ক্ষমা নেই ইত্যাদি এগুলি রুপক অর্থে কিন্তু যেখানে ৭১, ৭২, ৭৩ যেখানে উল্লেখ করা হচ্ছে সেখানে এটার রুপক অর্থ করার কোন অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি না।
আল্লাহই ভালো জানেন।
জাজাকাল্লাহ।
পোষ্টটি পড়ে অনেক জ্ঞান অর্জিত হলো।
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করুন।
স্যারের এলেমকে আল্লাহ আরো বৃদ্ধি করে দিন।
স্যারকে আল্লাহ জান্নাতি হিসেবে কবুল করে নিন। আমিন
আপনার আলোচনার সারাংশ করলে আমার মতে হবে “কোরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে রসুল (সা) ও সাহাবা (রা) যে ভাবে নিজের জীবনকে গড়েছেন সেভাবেই আমাদেরকেও নিজের জীবন কে গড়তে হবে । তাহলেই আমরা আলজামাআত এর অংশী হব”
সাহাবা(রা)(নাম স্বরন হচ্ছেনা) সেই উক্তিও কিন্তু খুবই গুরুত্ব পূর্ন যে, “সত্যর পথে তুমি যাদি একাই হও তবুও তুমি আলজামাআতের একজন”
তাই এখানে কোন দল নয় কোরআন ও সহিহ হাদিসের অনুসারীরাই আলজামাআত, সে যে দলেরেই হোক।
তবে যারা কোরআন ও সহিহ হাদিসের অনুসারী তাওহীদ বাদী তাদেরকে উৎসাহ দিতে হবে।
আর যারা ভুল করছে তাদেরকে ধরিয়ে দিতে হবে তাদের ভুল বাকিটা আল্লাহর হাতে থাকবে তাদের শোধরানোর দায়িত্ব।
আল্লাহ আমাদেরকে আলজামাআতের অংশী হবার তাওফিক দিন আমিন।
বাকিটা আল্লাহু আ’লাম।
তবে, সার কথা হলোঃ নিজকে ও নিজের দলকেই একমাত্র খাটি দল দাবী করে অন্যকে হেয় করার কারণেই আমাদের উম্মতের আজ এতো দুর্ভোগ। এ জন্যে, আমাদেরকে এই মনোভাব থেকে বের হয়ে এসে আরো সহনশীল হতে হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন