মুসলমানদের বড় দূর্ভাগ্যঃ মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুসলমানরাই ষড়যন্ত্র করেন
লিখেছেন লিখেছেন ডঃ আবুল কালাম আজাদ ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৮:৫৭:২৩ রাত
আমরা মুসলমানরা সব সময়ই আমাদের সমস্যার জন্যে অমুসলিম জাতি ও দেশের দোষ দেই। তারাই নাকি আমাদের সর্বনাশটা করেছে ও করছে। তা হয়ত ঠিক।
কিন্তু আমাদের পতনের জন্যে আমরা কতটুকু দায়ী তা একেবারেই ভুলে যাই।
যেমনঃ
এক মুসলমান আরেক মুসলমানের বিরুদ্ধে (বা একদল আরেক দলের বিরুদ্ধে) যেভাবে ষড়যন্ত্র করেন, তাদেরকে খাটো করেন ও সমস্যায় ফেলে্ন সে কথা তো আমরা ভুলে যাই।
ছোট ছোট মসজিদ, মাদ্রাসা ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে লোকেরা যেভাবে মিথ্যাচার করে, দলাদলি করে ও মারামারি করে এর জন্যেও কি ইহুদী, নাসারা ও হিন্দুরা দায়ী?
আমার চারপাশে তথাকথিত ইসলামী নেতা ও ইসলামের দরদী কিছু লোকদেরকে দেখে তো অবাক হয়ে যাই। কারণ আমাদের মধ্যেই কত মত, কত গ্রুপ।কতো নোংরা রাজনীতিই না আমরা আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদের বিরুদ্ধে করে চলেছি।
রাসূলুল্লাহ (স) পরিস্কারভাবে বলেছেনঃ সেই হলো মুসলমান যার হাত ও জিহবা থেকে আরেক মুসলমান নিরাপদ থাকেন।
আমরা কি এই হাদীস আমাদের মুসলিম সমাজে কাজে লাগাতে পেরেছি? নিজেরা একটু আত্ম-সমালোচনা করতে পারলে আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।
যেখানে আমাদের সময়গুলো ব্যয় হওয়া দরকার আল্লাহ পাকের যিকিরে, ইবাদতে, দাওয়াতী কাজে ও গঠনমূলক ঐক্যভিত্তিক কাজে, সেখানে আমাদের অনেক নেতাদের মূল্যবান সময়গুলো চলে যায় একে অপরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে। এক জন আরেকজনকে ঠকাতে পারলে মনে করি বিশাল বিজয় এনেছি। কিন্তু একটু চিন্তা করা দরকার যে আমার আরেক মুসলমান ভাইয়ের বিরুদ্ধে অহেতুক কাজে বিজয় এনে আল্লাহর কাছে কি উচু মর্যদা পাওয়া যাবে? এতে কি জান্নাতে যাওয়া সহজ হবে?
মুখে মুখে আমরা ইসলামী ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য ও ইসলামের মিষ্টি মিষ্টি কথা বলি। কিন্তু কাজে তো তার প্রমাণ পাওয়া যায় না। এর জন্যেও কি ইসরাঈল, আমেরিকা, বৃটেন আর ভারত দায়ী?
আসল কথা হলো- মুসলমানরা নিজেরা নিজেদের ভাই-বোনদের বিরুদ্ধে কাজ বেশী করেন বলে আল্লাহও সম্ভবত শত্রুদেরকে তাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন, যাতে করে তারা নিজেদের মধ্যে ষড়যন্ত্র বন্ধ করে আল্লাহর ওয়াস্তে এক হয়ে আরো বেশী করে ইসলামের খেদমত করতে পারে।
কিন্তু দুঃখ হলো- আমরা সেই শিক্ষা না নিয়ে আবারো লেগে থাকি আলেম-ওলামা ও আমাদেরই দ্বীনি ভাইদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কাজে।
আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন ও এক হয়ে মিলেমিশে থাকার তৌফিক দান করুন।
=== আগের লেখা ছিলোঃ আমার মৃত্যু বিষয়ক চিঠি পেলাম
বিষয়: রাজনীতি
২৫৬৮ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি নিজে কোনদিন এমন ঘৃণ্যকাজ করি নি। যদি অজানাভাবে তা হয়ে থাকে, আল্লাহ পাকের কাছে ক্ষমা চাই।
পরে মনে হয় না বললেও হতো!
চেষ্টা করতে হবে এ থেকেও বেচে থাকতে।
দোয়া রাখবেন।
মেহনত যতটুকুই হচ্ছে সেটাকেতো নফসানিয়াত গিলে ফেলছে।
কুরআন হাদীসকে বানানো হচ্ছে তলোয়ার তুলে ধরা হচ্ছে প্রতিপক্ষের সামনে। ভিন্নমতের মুসলমানকে কথায় কথায় বেওকুফগুলো কুফর আর শিরকের ট্যাগ দিয়ে দিচ্ছে। অথচ কত আক্রমনাত্মক তাদের ভাষা কোনো দরদ নাই কোনো ভালোবাসা নাই উম্মতের প্রতি। আপনার লিখার দরদগুলো যদি আমরা বুঝতাম তাহলেতো আমরা এরকম হতাম না।
আশাকরি আপনার প্রতিটি বাক্যের দরদ আমাদের হৃদয়ে প্রবেশ করে। আমিন।
অন্যদাশংকর রায় তার প্রশাসক জীবনের আত্মকথায় লিখেছেন রাজশাহির এক জায়গায় তিনি দুটি মসজিদ দেখেন এবং জানতে পারেন একটি চাষিদের মসজিদ এবং একটি তাঁতিদের। তিনি জ্ঞানি ছিলেন বলে এটুকু বুঝেছিলেন মুসলিমদের মধ্যে জাতিভেদ প্রথা নাই এই জাতিভেদ আরোপিত। কিন্তু যে কেউই বিভ্রান্ত হতে পারে এই জন্য। আবুল মনসুর আহমদ তার আত্মজীবনি দুটিতে এবং বিভিন্ন গল্পে তৎকালিন মুসলিম সমাজে হানাফি-মুহাম্মদি বিরোধের যে চিত্র একেছিলেন তা পাকিস্তান আন্দোলন এর ফলে খানিকটা স্তিমিত হয়ে গেলেও এখন আরো বড় আকারে উঠে এসেছে।
এই হাদিসে রাসুলুল্লাহ যদিও বলেন্নি- "সেই হল মুসলমান যার হাত ও জিহবা থেকে সব মানুষ নিরাপদ থাকে"
তারপরও বলছি বিষয়টি সত্যিই মুসলমানদের জন্য দূর্ভাগ্য আজাদ ভাই। আমাদের রাসুলুল্লাহ শুধু বলেই খলাস- কিন্তু এর চর্চা খোদ নবী পরিবারের সদস্য, সদস্যা এবং নবীজীর ঘনিষ্ট সাহাবিদের মাঝেও ছিল না। মুসলমানদের দূর্ভাগ্য বটেই....
.
‘‘হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি, আমাদের গোনাহখাতা মাফ করে দাও এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের বাচাঁও ৷ আলে ইমরান
যার গর্ত সেই খোঁড়ে !
মুসলিম যদি মুসলিমের শত্রুতা না করত তাহলে সাড়া বিশ্বজুড়ে আমাদের এই দুর্গতি হত!
প্রতিনিয়ত আমরাই আমাদের গর্ত খুঁড়ে চলেছি সে অন্ধকার গহ্বরের দিকে গোটা উম্মাহ কে টেনে নিয়ে যাচ্ছি!
আপনি একা নন, আপনার সাথে এই যন্ত্রণা আরও অনেকেই শেয়ার করছে, আমি নিজেও তাদের একজন! ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন