পাঁচ-দশ বছরের নিষ্পাপ স্কুল শিশু বহনকারি বাস খাগড়াছড়ির গভীর খাদে ফেলে আল্লাহ কার ও কিসের ঈমান টেস্ট করেন?

লিখেছেন লিখেছেন ডঃ আবুল কালাম আজাদ ১৮ নভেম্বর, ২০১৩, ০৩:৪৮:৩১ দুপুর

আমার আগের লেখার আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখে যদি বিপদে পড়তে হয় তাহলে আল্লাহকে বন্ধু বানিয়ে লাভটা কি ওপর একজন মন্তব্য করেছেন অনেকটা এভাবেঃ

পাঁচ-দশ বছরের নিষ্পাপ স্কুল শিশু বহনকারি বাস খাগড়াছড়ির গভীর খাদে ফেলে আল্লাহ কার ও কিসের ঈমান টেস্ট করেন?

আমি প্রশ্ন কর্তাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। কারণ তাঁর মনে এমন প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে এবং তিনি সাহস করে তা আমাদেরকে বলেছেন।

তিনি যদি সত্য বুঝার জন্যে এই প্রশ্ন করে থাকেন তাহলে তার উত্তর দেওয়া সহজ। আর যদি আমাদের মত বিশ্বাসীদেরকে আক্রমন করা বা ঠকানোর জন্যে এই প্রশ্ন করে থাকেন তাহলে তাকে বুঝানো আমাদের জন্যে কঠিন। তবে, একজন নিরপেক্ষ চিন্তার মানুষ হিসাবে আমি এই প্রশ্নটাকে এভাবে বিশ্লেষণ করিঃ

১- একজন কৃষক যদি তার ক্ষেতে বীজ বুনে কিছু চারা গাছ মেরে ফেলেন তাহলে সেখানে আমার আপত্তি থাকার কথা নয়। কারণ এটা তার ক্ষেত, তিনিই লাগিয়েছেন এবং কি কারণে তিনি তা তুলে ফেলেছেন সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। এখানে আমার নাক গলিয়ে কৃষককে বোকা বলা মনে হয় নিজেরই বোকামি।

২- যে চারাগাছ গুলো মেরে ফেলা হলো তারা কোন অভিযোগ করেছেন কি-না সেটাও তো দেখার বিষয়। যে চারাগাছ গুলোকে আগেই মেরে ফেলা হলো- তারা তো বলতে পারে যে, একদিন তো আমাদেরকে মেরেই ফেলা হবে, তা চারা অবস্থায় মারা যাওয়াতে খারাপ কিছু হয়নি। চারা যদি কৃষকের প্রতি খুশী থাকে তাহলে চারার প্রতি দরদ দেখিয়ে আমি কৃষকের সাথে ঝগড়া করার কোন দরকার আছে?

৩- যে শিশুগুলোকে ড্রাইভার অসেচতভাবে ড্রাইভ করে খাদে ফেলে দিলেন তাকে দোষ না দিয়ে আল্লাহকে দোষটা দেওয়া কতটুকু সুবিচার হবে?

৪- আল্লাহ তো কোথাও বলেন নি যে এই দুনিয়ায় কোন শিশু জন্ম নিলে তারা বুড়া হওয়ার আগে কেউই মরবে না।

৫- যে শিশুটা মারা গেলে সে নিষ্পাপ। তাই সে জান্নাতে যাবে। সে বেচে থাকলে তার জন্যে জান্নাতে যাওয়া হয়ত সহজ হতো না। তাহলে এটা আপাতত তাদের জন্যে বিপদ হলেও তা তাদের এক নিরাপদ ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দিয়ে দিলো। তারা বেচে থাকলে যদি প্রশ্নকারীর মত একজন অবিশ্বাসী হয়ে যেত তাহলে তার জান্নাতে যাওয়ার কি উপায় ছিলো?

৬- যে পিতা-মাতার সন্তানেরা এই মহাবিপদের যন্ত্রণা পেয়েছেন তারা যদি আল্লাহকে বকাঝকা না করে পরম ধৈর্য্য ধরতে পারেন, তাহলে এই বিপদের মাধ্যমেই পিতা-মাতা ও সন্তানেরা একই সাথে জান্নাতে যাওয়ার সমূহ সুযোগ পাবেন। তাই, এই বিপদ আসলে জান্নাতে যাওয়ারই একটা সিড়ি মাত্র। জান্নাতে যেতে হলে অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়। এটা ত্যাগের একটা উদাহরণ মাত্র।

৭- যদি কেউ আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাদের সাহায্য করার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়ে নেন। যখন বাচ্চাগুলোকে ঐ গাড়িতে চড়া হয়, তখন কি চালক বা পিতা-মাতা আল্লাহ পাকের ওপর নিজেদেরকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন? প্রশ্ন কর্তা তাদেরকে সেই প্রশ্ন না করে আগে আল্লাহকে প্রশ্ন করে বসেছেন।

৮- আপনার ঘরে কেন চোর ঢুকলো তার উত্তর আমি আবুল কালাম আজাদ দিতে পারবো যদি আপনি আমাকে আপনার দারোয়ান নিযুক্ত করে থাকেন। এখন দেখতে হবে, বাড়ি থেকে বের হবার আগে পিতা-মাতা, বাচ্চারা বা ড্রাইভার নিজেদেরকে হেফাজতের জন্যে সফরের দোয়াগুলো পড়ে আল্লাহ পাকের ওপর দায়িত্ব দিয়েছিলেন কি-না? আল্লাহ পাককে দায়িত্ব দিলে তিনি তা অবহেলা করেন না। তিনি নিজ উদ্যোগে দায়িত্ব নিতে পারেন, তবে সব সময় নেন না। আমাদেরকে বলেছেন তাকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্যে (তাওয়াক্কুল)।

৯- আপনারাই তো বলেন যে এই দুনিয়া তৈরী হয়েছে একটা দূর্ঘটনার মাধ্যমে- বিগ ব্যাংগ। এই গাড়ি দূর্ঘটনার পেছনেও হয়ত আল্লাহর এক মহা পরিকল্পণা কাজ করেছে যা আমাদের জানা নেই। এ জন্যে আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে।

১০-আপনি নিজে কি করেন তারই সব খবর রাখতে পারেন না, আর আল্লাহ কি করেন তার খবর নিতেই আপনি ব্যস্ত!! আগে নিজকে জানুন, নিজের কাজের সঠিক জবাব তৈরী করুন তারপর আল্লাহ কাজের উত্তর খুজুন।

আল্লাহ আমাদেরকে হেদায়েত দান করুন। আমীন।

বিষয়: সাহিত্য

১৭৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File