মিশরঃ রাজনৈতিক ইসলাম কি ব্যর্থ?

লিখেছেন লিখেছেন ডঃ আবুল কালাম আজাদ ০৪ জুলাই, ২০১৩, ০৭:৪৮:১১ সন্ধ্যা

মিশরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ড ডঃ মুহাম্মাদ মুরসীর পতন হলো গতকাল ৩রা জুলাই ২০১৩।

নিঃসন্দেহে এটা মুসলিম ইতিহাসের একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তাই, এ নিয়ে মুসলিম-অমুসলিম সকলেই অনেক কথা বলছেন এবং বহু বছর ধরে এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা হতে থাকবে।

আমি ইতোমধ্যেই দেখেছি যে অনেকেই রাজনৈতিক ইসলাম নিয়ে নানা ধরণের মন্তব্য করা শুরু করেছেন যার অনেক গুলোই কেবল আবেগদুষ্টু, গভীর চিন্তাপুষ্ট নয়।

ইসলাম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করা আর পানি থেকে মাছকে আলাদা করা একই কথা। ভাবতে অবাক লাগে, এখনো কেউ কেউ প্রশ্ন করেন রাসূলুল্লাহ (স) রাজনীতি করেছেন কি-না? যারা তাঁর জীবনী সম্পর্কে সামান্য জ্ঞানও রাখেন তারা জানেন যে তিনি ছিলেন মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী, যদিও তিনি নিজকে রাজা, প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পরিচয় দেন নি। তিনি এক নতুন ধারার রাজনীতি চালু করেন যা ছিলো নাগরিক কেন্দ্রিক, আল্লাহ প্রদত্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ।

অনেকেই ইসলামী রাজনীতিকে ধর্ম ব্যবসার সাথে তুলনা করেন যা অত্যন্ত নিম্নমানের সস্তা রাজনৈতিক মানসিকতার পরিচয় বহন করে।

ইসলামে অবশ্যই রাজনীতি আছে, তবে তা স্বার্থবাদী ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতি থেকে আলাদা।

এই রাজনীতির কিছু মৌলিক আদর্শ ও নীতিমালা আছে যার প্রায়োগিক দিকগুলো স্থান, কাল ও পাত্রের চাহিদা ও রুচি অনুযায়ী ডিজাইন করা যায়।

মিশরে ইখওয়ানুল মুসলিমীন জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে। আসার পর তারা চল্লিশ বছরের পুরানো অনেক জঞ্জাল সরানোর কাজে হাত দিতে গিয়ে নানান সমস্যার সম্মনুখীন হন। তারা দূরদর্শীতার চেয়ে আবেগকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন। অনেক কিছুই খুব তাড়াতাড়ি করতে চেয়েছিলেন। ফলে, তাদেরকে এক বছরের মাথায় চলে যেতে হলো যদিও তাদের বেশ কিছু অবদান ইতোমধ্যেই সাধারণ জনগণ উপভোগ করেছেন।

এটাকে যদি বলা হয় যে ইসলামে রাজনীতি নেই, কিংবা রাজনৈতিক ইসলাম ব্যর্থ তাহলে সেটা হবে একটা ভুল বিশ্লেষণ। কারণ রাজিনীতি হলো এমন একটা গেইম যেখানে একটু ভুল পথে চললেই পা পিছলে যায়। এটা হলো কিছু সিদ্ধান্তের পরাজয়, অবশ্যই ইসলামের পরাজয় নয়। রাজনীতিতে জয় পরাজয় একটা মানবিক ধারা। এটা আল্লাহ পাক সূরা আলে ইমরানে (আয়াতঃ ১৪০) বলেছেনঃ

إِن يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِّثْلُهُ وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّـهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَيَتَّخِذَ مِنكُمْ شُهَدَاءَ وَاللَّـهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ ﴿آل عمران: ١٤٠﴾

তুরস্কে ইসলামী প্রধান্মন্ত্রী নাজমুদ্দীন আরবেকানকে সেনাবাহিনী নামিয়ে দেয়। কিন্তু এর চার বছর পর তারা আবার ঘুরে দাঁড়ান। মিশরের এখন যা হহয়েছে তার জন্যে মুরসীর নেতৃত্বকে দায়ী করা যায়। কিন্তু ইসলামী রাজনীতি অচল বা অনৈসলামিক তা বলা নিছক ভুল ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ (স) নিজে ও তারা খলিফারা রাজনীতি করেছেন। এবং দেশ ও জনগণের, এমনকি অমুসলিম নাগরিকদের সার্বিক কল্যান নিশ্চিত করেছেন। যদি কেউ গণহারে বলেন যে রাজনৈতিক ইসলাম ব্যর্থ, তাহলে তিনি রাসূলুল্লাহ (স) ও প্রিয় খলিফা ও সাহাবীদেরকেই অপবাদ দেন।

========= আগের লেখা ছিলোঃ মৃত পুকুরের তাজা ইলিশ

বিষয়: রাজনীতি

২২১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File