এক ভয়াবহ পরিণতির পথে সোনার বাংলাদেশ এবং ভারতের জন্যে একটা ঐতিহাসিক পরামর্শ।
লিখেছেন লিখেছেন ডঃ আবুল কালাম আজাদ ০৭ মে, ২০১৩, ০৯:৫৩:১৬ রাত
বাংলাদেশের বর্তমান চরম রাজনৈতিক সংকটকে শুধু মাত্র আওয়ামী-বিএনপি বা ইসলামীস্টদের দন্দ্ব হিসাবে দেখলে ভুল হবে। আজকের এই কঠিন অবস্থার সাথে আমাদের পাক-ভারতের দীর্ঘ ইতিহাসের সাথে জড়িত।
ভারতে মুসলিম শাসন, বৃটিশ শাসন, পাকিস্তান সৃষ্টি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে এই সমস্যা জড়িত।
৬ই মে উলামা হত্যাকান্ড কিন্তু কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর সাথে ভারত সহ বহির্শক্তি সহ অনেক গভীর কারণ জড়িত। এটা বাংলাদেশের জন্যে এক ভয়াবহ কালো ভবিষ্যতের সূত্রপাত।
ভারত কোনদিন চায় না বাংলাদেশের মানুষ তাদের ইসলামী পরিচয় নিয়ে মাথা তুলে দাড়াক। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই তারা সুযোগের অপেক্ষায় আছে কিভাবে বাংলাদেশ থেকে ইসলামী শক্তিকে বিনাশ করে দিতে। যারা প্রথম বলি হলো জামায়াতে ইসলামী। যে শক্তি আজ হেফাজতে ইসলাম দেখিয়েছে, তা যদি তারা আগেই দেখাতেন তাহলে জামায়াত না হয়ে তারাই হতেন ভারতের টার্গেট।
এভাবে ইসলামের নাম নিয়ে যারাই মাথাচাড়া দিয়ে উঠবেন, ভারত তাদের মাথাগুড়িয়ে দিবে। কারণ, এই দ্বন্দ্ব আওয়ামী-হেফাজত নয়, এই দ্বন্দ্ব ভারত ও ইসলামের মধ্যে। ভারত আওয়ামী লীগকে কাজে লাগিয়েছে মাত্র। আওয়ামী লীগ যদি দেশ প্রেম দেখিয়ে দেশের মানুষের পক্ষ নিতো তাহলে তারা বিএনপিকে দিয়ে তা করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করত। এটা না হলে তারা তৃতীয় শক্তির সৃষ্টি করতো। বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকেই চায় একটা তৃতীয় শক্তির উদ্ভব হোক। কিন্তু মনে রাখা দরকার, ভারতের স্বার্থ রক্ষা করবে না, এমন কোন শক্তি বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দিবে না কোনদিন ভারত।
আমরা মুসলমানরা বা ইসলামপ্রিয়রা ভারতকে বুঝাতে পারি নি যে, আমরা তাদের জন্যে কোন হুমকি নই। আমরা টুপি মাথায় দিয়ে বেড়ালেও আমরা তাদের সাথে সৎ-প্রতিবেশীত্ব বজায় রাখতে প্রস্তুত। আমি তো মনে করি না যে, বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তানের প্রতি বিশেষভাবে দূর্বল। আমার জানামতে কোন টুপিওয়ালাকে দেখিনি যিনি বাংলাদেশকে আরেকটি পাকিস্তান বানাতে চান। বরং ভাষা ও সংস্কৃতির দিক থেকে আমাদের সাথে ভারতের সম্পর্কই বেশী। এই হেফাজতের ওলামায়ে কেরামের অধিকাংশই ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারী। সে হিসাবে, তারা পাকিস্তানের চেয়ে ভারতের প্রতি বেশী অনুরক্ত। ফলে, বাংলাদেশী ইসলামীস্টদেরকে হুমকি মনে করা ভারতের একটি ভুল বিশ্লেষণ।
এখানে ভারত যে মারাত্মকভুলটা করছে তাহলো- এই সব গোলযোগের মাধ্যমে ভারত নিজেই তাদের স্থায়ী শত্রু তৈরী করছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের অনেকেই স্বাধীনতার জন্যে ব্যাকুল হয়ে আছে। বাংলাদেশের ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামপ্রিয় মানুষদেরকে এভাবে শত্রু বানিয়ে রাখলে তা তাদের নিজেদের স্বাধীনতাকামী মানুষদেরই রসদ যোগাবে।
ভারত আরেকটা মারাত্মক ভুল করছে। তাহলো- তারা মনে করছে আওয়ামী ও বামপন্থী শক্তি ও মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের সমাজ থেকে আস্তে আস্তে ইইসলামকে মিটিয়ে দিবে। তাদের মনে রাখা উচিত- যেখানেই ইসলামের আলো একবার প্রবেশ করেছে সেখানেই ইসলাম চির কাল ঘর পেতেছে, ক্ষনিকের জন্যে চাপা থাকলেও তা আবার লকলকিয়ে উঠেছে। সোভিয়েত ইইউনিয়ন, চীন ও বসনিয়াতে মুসলমানদেরকে কচুকাটা করা হয়েছিলো, তুরস্কেও মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। গত ঈদে ক্রেমলিনে বিশাল ঈদের জামায়াত দেখে খোদ পুতিনেরও মাথা ঘুরে গিয়েছিলো- এতো মুসলিম কোথায় ছিলো?
ভারতকে আমরা বলতে চাই- ওলামা নিধনের মাধ্যমে ইসলাম নিধনের স্বপ্ন সাময়িকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলেও তা হবে ভারতের জন্যে আরেক স্থায়ী বিষফোড়া। এটাকে ভবিষ্যতে সামাল দেওয়া ভারতের জন্যে হবে অনেক কষ্টকর। বরং বাংলাদেশ থেকে ইসলাম বা মুসলমানদেরকে ধ্বংস করতে গেলে মহাভারতই হয়ে যেতে পারে খন্ড-বিখন্ড।
তার চেয়ে বরং ভালো হবে, বাংলাদেশকে বাংলাদেশের মত রেখেই একটা বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসাবে গ্রহন করা। আমরা যারা ইসলাম মানি ও পছন্দ করি আমরা প্রতিবেশীকে নিজেদের আত্মীয়ের মত মনে করি এবং তাদের স্বার্থ রক্ষাকরাকে আমরা ফরজ মনে করি। এভাবে যদি আমরা মিলেমিশে থাকতে পারি তাহলে সবাই চিরকাল সুখী থাকতে পারবো।
ভারতে নিশ্চয় এগুলো বুঝার মতো বুদ্ধিজীবিরা আছেন। তারা যেন এই মারাত্মক বিষয়টাকে শুধুমাত্র যুদ্ধবাজ অদূরদর্শী র' এর হাতে ছেড়ে না দিয়ে দূরদর্শী দেশ হিতৈশীদের মতামতকে মূল্যায়ন করেন।
পুনশ্চঃ
আমার এই লেখায় হয়ত অনেকেই দ্বিমত করতে পারেন। দয়াকরে ফালতু মন্তব্য কেউ করবেন না। গঠনমূলক বিশ্লেষণ, আলোচনা ও সমালোচনা সবসময়ই উপকার করে। আমার ভুল হলে তা শুধরাতে প্রস্তুত আছি।
বিষয়: রাজনীতি
১৯৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন