মুসলিম ঘরের ছেলে মেয়েরা কেন নাস্তিক বা ইসলাম বিরোধী হচ্ছে?
লিখেছেন লিখেছেন ডঃ আবুল কালাম আজাদ ০৯ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:৪৪:৩১ রাত
অনেকেরই আজ প্রশ্নঃ মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ বাংলাদেশের মুসলিম ঘরের ছেলে-মেয়েরা আজ কেন নাস্তিক বা ইসলাম বিরোধী হয়ে যাচ্ছেন?
আমাদেরকে এর সঠিক কারণ খুঁজতে হবে। শুধু আবেগ দিয়ে বা অন্যকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আসুন একটু গভীরভাবে চিন্তা করি এবং আত্ম-সমালোচনা করি।
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয়ঃ
১- আমরা মুখে বলি বাংলাদেশের শতকরা ৮৫ ভাগ মুসলমান। কিন্তু জরিপ করলে দেখা যাবে এদের খুব অল্প সংখ্যকই ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো জানেন বা ভালো করে বুঝেন;
২- ইসলামের মূল প্রাণ কোরানুল কারীম, যার ধ্বনি শুনে ও মর্ম বুঝে কোটি কোটি মানুষ মুসলমান হয়েছিলেন, সেই মুসলিম ঘরে জন্ম নেওয়া ছেলে-মেয়েরা কোরানের মধ্যে কি আছে তা জানেন না।
৩- তাদেরকে এই অর্থ জানানোর জন্যে ব্যাপক কোন ব্যবস্থা জাতীয়ভাবে করা হয়নি। শাপলা চত্বরে লাখো লাখো টুপি মাথায় দেয়া লোকেরা সমাবেশ করলেও কোরানের অর্থ না জানা লোকের সংখ্যা কিন্তু কোটি কোটি।
৪- যারা কোরানের অর্থ জানেন, তারা নিজেদের দায়িত্বে এই অর্থগুলো অন্যকে শিখানোর ব্যাপারে চরমভাবে গাফলতি করেন। চাকুরির বাইরে কোরান প্রচারের কাজ কত জন করি আমরা?
৫- অনেক ইসলামী বুদ্ধিজীবি আছেন, আছেন ইসলামী অন্দোলনের বিশাল বিশাল নেতা, যারা অনুবাদ না দেখে কোরানের আয়াতের অর্থ বলতে পারেন না। শুধু তাই নয়, গর্ব করে প্রায়ই বলেন- ভাই আরবি জানি না!! তাই, তারা কোরানের চেয়ে অন্য বইয়ের ওপর বেশী নির্ভর করেন। ফলে, ইসলামী জ্ঞানের ক্ষেত্রে তাদের অনেক দূরত্ব থেকেই যায়।
৬- যারা ইসলাম মানেন, বুঝেন বা পালন করেন, এই ছেলে-মেয়েরা সে সব লোকের কাছাকাছি আসতে পারেন নি। অথবা এই ছেলে-মেয়েরা যাদেরকে ইসলামের প্রতিনিধি বলে জানেন, তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত কোন ভালো ইমেজ নেই।
৭- কিছু নিচুমনের লোক অর্থলিপ্সায় পড়ে অন্য দেশের টাকা খেয়ে মিডিয়া খুলে লাগাতর ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে যাচ্ছেন। নাটক-সিনেমায় যত খারাপ চরিত্র আছে সেগুলোর অভিনেতাদের মুখে দাড়ি লাগিয়ে মাথায় টুপি পরিয়ে দেয়া হয়। ভাবখানা এমন যে হুজুররা হলেন যত বাজে কাজের মূল। অথচ ফেরেশতাতুল্য অনেক হুজুর আছেন যাদের কথা আমরা জানতেও পারি না।
৮- ইসলামকে তুলে ধরার জন্যে ভালো মিডিয়া ও পত্র-পত্রিকা বা বই পত্র নেই। বাজারে বইয়ের সয়লাব, কিন্তু মান সম্পন্ন রুচিশীল ইসলামী বইয়ের বড় অভাব। সংস্কৃতির মাধ্যমে গণ মানুষের মন মগজ গঠিত হয়। কিন্তু সাংস্কৃতিক অংগনে ইসলামের উপস্থিতি একেবারেই কম। মান সম্পন্ন ইসলামী গান-কবিতা, নাটক নেই। আমরা দৈনিক মিছিল-মিটিং করে হাসতে হাসতে রাস্তা-ঘাটে কোটি কোটি ঢেলে দিচ্ছি, কিন্তু মিডিয়ার জন্যে এক হাজার টাকা বাজেট করতে ইসলামী নেতাদের কলিজা ছিড়ে যায়।
৯- বাংলাদেশে ইসলামকে বাংগালীয়ানায় না এনে এটাকে ভিনদেশী কায়দায় বিকশিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। মাওলানারা বয়ানে বেশী উচ্চারণ করেন আরবি-ফার্সি ও উর্দু শব্দ, ভাষা ও কবিতা যা আমাদের সাধারণ লোকেরা বুঝেন না।
১০- ইসলামকে এই ছেলে-মেয়েরা যেমন জানেন না বা ইসলামের আসল রূপ ও সৌন্দর্য্য দেখার সৌভাগ্য তাদের হয়নি, ঠিক আমরা যারা ইসলাম জানি, বুঝি, মানি ও ভালোবাসি, তারাও আমাদের দায়িত্ব বা ফরজ মনে করে তাদের কাছে নিয়ে যাইনি। বিশাল অংকের টাকার চুক্তি করে যারা ওয়াজ করে বেড়ান সেই জাতির ছেলে-মেয়েরা এখনো যে নিজেদের মুসলমান নামটা বজায় রেখেছেন সেটাও তো অনেক!!
বিষয়: রাজনীতি
২৬৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন