রাত্রি

লিখেছেন লিখেছেন তিতুমীর সাফকাত ১৯ মার্চ, ২০১৩, ১২:২৩:৩০ রাত

আমাদের এক মিউচুয়াল বান্ধবীর গায়েহলুদে তার মেহেদীরাঙা হাত দেখে রাত্রি বলল

-এই ইয়ামিন দেখিস আমার বিয়ের দিন আমি সারা বডিতে মেহেদী দিব

(এমনিতেই ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি লম্বা এই ধবল রোগী বলে কিনা সারা বডিতে মেহেদী দিবে)

-বল কি!দেশে তো মেহেদীর আকাল পরে যাবে!

-ধুর!(বলেই গট গট করে হেটে চলে গেল আমার সামনে থেকে)

আমি একটু নিরবতা পেয়ে হিসেব করতে লাগলাম এই সাদাকুমারীর সারা বডিতে মেহেদী দিতে কত প্যাকেট শাহজাদী(নাকি এলিট কিংবা লিজান, যেটা সস্তা সেটাই ভাল)মেহেদী লাগবে।পা থেকে শুরু করে সবে হাঁটু পর্যন্ত হিসেব করেছি এর পর আর উঠব কিনা ভাবছিলাম এমনসময় দুধকুমারীর নাচতে নাচতে আগমন।

-এই শালা কি করিস , ( দুইদিনের পরিচয়েই শালা!ভালই )এইখানেই বসে থাকবি নাকি মিথিলার(যার বিয়ে)গায়ে হলুদ টলুদ লাগাবি।

-তোমরা দাও না আমাকে আবার টানাটানি কেন।(আমি কেন জানি অন্যের গায়ে হলুদ মাখানোর এই রীতিটা পছন্দ করি না, তাই এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করি, অনুষ্ঠানেও আসতাম না রাত্রি আসবে বলে ওর মা মানে আমাদের প্রতিবেশী আন্টি জোর করে আমাকে পাঠিয়েছে ওর বডিগর্ড হিসেবে, একেই বলে কপাল !)

-বাহ বাহ।যোগী সাজিছ না,মিথিলার সাথে টৈ টৈ করে ঘুরাঘুরি করার সময় লজ্জা কোথার ছিল, আয় আমার সাথে মিথিলা তকে খুজতেছে।

(মিথিলাকে নিয়ে জীবনে একবারইবাইকে চড়ছিলাম, তাও আবার হরতালে রাস্তায় কিছু ছিল না তাই বেচারীকে নিয়ে পার্কে যেতে হয়েছিল যেখানে ওর লাভার ওয়েট করতেছিল, আর শালার ভাগ্য দেখ , অই দিনই সব পুলাপাইন পার্কে হাজির, আমার বাইকে ওকে দেখে গরু (গাইগরুও আছে)গুলা উল্টাপাল্টা ভেবে বসে এর খেশারত হিসেবে আমার তত্‍কালিন হবু জিএফ কে প্রপোজ করতে পারি নাই আর আজ এই মেয়ের গায়ে হলুদ মাখাতে হবে সুখি দাম্পত্য জীবনের জন্য!হাউ সেলুকাস)

-চুপ ওই একদিনই গেছিলাম গিয়া শিক্ষা হইছে।রাবন নেয় সীতারে প্রাণ যায় গড়ুরের ।

-যেটাই হউক আয় আমার সাথে।

গেলাম, মেহেদী লাগালাম, এলাম । এরপর সারাটা পথ রাত্রির প্যান প্যানানি। বিউটি পার্লারের মেয়েটা সাজাতে জানে না, পাউডার কম দিয়েছে, কাজল ঠিক মত হয় নাই, এই হয়েছে সেই হয়েছে, অসহ্য॥ মেয়েগুলা এত্ত কথা বলে কেন।৩০ মিনিটের বাইক যাত্রা আমার কাছে ৩০ ঘন্টা মনে হয়েছে।এই প্যান প্যানকুমারীকে যে বিয়ে করবে তার কপালে দুঃখ আছে।

এর দুইদিন পর বিয়ে।আবার এই যন্ত্রনাকে নিয়ে যাওয়া আসা।আন্টি এসে আম্মুকে ভালমত ধরেছে যাতে আমি নিয়ে যাইআম্মুর মুখের উপর বলে দিয়েছি আমি এই যন্ত্রণা নিয়ে যেতে পারব না, ব্যাস ।

কয়েকঘন্টা পর যন্ত্রণা স্বয়ং প্রকট হল আমার রুমে।চোখ দুইটা যেন একটু ফোলা ফোলা(কেঁদেছে নাকি? কি জানি বাবা)তবে গাল দুইটা কাঁদার কারণেই বোধহয় হালকা লাল (একেই বোধহয় দুধে আলতা বলে)।মেয়েটা যে এত্ত সুন্দর আগে খেয়াল করি নি তো !!

-আপনার সমস্যা কি?( তুই থেকে আপনিতে উন্নতি হল,নাকি অবনতি)

-এইতো সামান্য সর্দি কাশি আর মাথাব্যাথা,সেরে যাবে সমস্যা নেই ।(:পি জুক করলাম

মেয়ে দেখি এইবার রাগতেছে,গালটা আরো লাল দেখাইতেছে এইটারে কি কমু,দুধে ডবল অলতা।যাই হোক টিউবলাইটের আলোয় একটা রাগত পরী লাগতেছে।

-ঠাট্টা করছেন না? করতে থাকুন, সবাই আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করে, আমাকে কেউ পছন্দ করে না, কথা হয়ত বেশি বলি আর একটু বোকা সোকা মানুষ এজন্য আমাকে আপনিও অপছন্দ করেন, নিজেকে ভাবেন কি? টম ক্রুজ? নাকি ব্র্যাড পিট ? (বলে কি মেয়ে, এত রেগে একদম ফায়ার হয়ে গেছে, রাগে নাকের ডগা টকটকে লাল তার উপর আবার এটা ফুলছে, আমার হঠাত্‍ হাসি পেয়ে গেল, খুক করে হেসে ফেললাম, এতে যেন আগুনে আবার পেট্রোল পরল) আপনি হাসছেন! আমাকে কার্টুন মনে হয়। তাতো হবেই, আপনার কি দোষ নিজের পরিবারই যেখানে আমাকে পছন্দ করে না এখানে আপনি কে। (এইবার একটু নরম হল গলাটা) মিথিলার বিয়েতে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু আম্মু কখনোই আমাকে একা দিবে না, আপনাকে আমার চেয়েও বেশি বিশ্বাস করে তাই আপনার সাথে যেতে বলেছিল , আপনি রাজি না হওয়াতে ভেবেছে আমি কিছু একটা করেছি এরজন্য আপনার মত সোনার চাক্কা ছেলে যেতে চায় না ।(এই রে আবার গরম হয়ে গেল)

আমি আপনার কি ক্ষতি করেছিলাম যে আপনি আমাকে আম্মুর বকা খাওয়ালেন ।যান এই মুখ আর কখনো দেখবেন না ॥

বলেই গট গট করে বেরিয়ে গেল । ও যাবার পাঁচ মিনিট পর শুনি ওদের বাসা থেকে চিতকার আর কান্নার আওয়াজ আসছে । আন্টি দৌড়ে এসে বললেন " বাবা রাত্রিটা হঠাত মাথা ঘুরিয়ে পরে গেল ,জ্ঞান আসছে না ,ওকে হাসপাতালে নিতে হবে ঘরেতো পুরুষ মানুষ কেউ নাই (আংকেল মারা গেছেন ওরা ২ বোন আর মা একসাথে থাকে , বড় একভাই দেশের বাইরে চাকরি করে ) একটা এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা কর , প্লীজ ।" আমি আর দাড়ালাম না হাসপাতালে ফোন দিলাম আর ওকে নিয়ে এম্বুলেন্সে উঠলাম , সারাটা পথ ওর ঠান্ডা নরম সাদা হাতটা ধরে বসে ছিলাম । অবাক হয়েছিলাম আমার চোখে পানি আসায় । আজ আমার জন্য ওর এই অবস্থা ওর যদি কিছু হয়ে যায় আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারব না। হাসপাতালে নেওয়ার পর জ্ঞান এল , ডাক্তার বললেন হঠাত্‍ প্রেশার লো হয়ে যাওয়ায় এমন হয়েছে , দুইদিন বেডরেস্টে থাকলে ঠিক হয়ে যাবে । (থ্যাংস গড কিছু হয় নাই ) বাসায় আসার সময় সি.এন.জি তে আমি ও আর আন্টি আসছিলাম , ও বসেছে মাঝখানে আন্টির কাঁধে মাথা রেখে চোখ বুজে রয়েছে (ঘুমে হতে পারে)।ওর একটা হাত আমার হাতে ছিল আন্টি খেয়াল করেন নি উনি ওকে নিয়ে ব্যাস্ত ।ওর হাতটা আমি আলতো করে দুইহাতে ধরে বসে রইলাম বুঝলাম এই মেয়েটাকে আমি ভালবাসি ভীষণ ভালবাসি, আর ওকে কষ্ট দেব না, কখনো না ।ভাবতে ভাবতে চোখ থেকে একফোঁটা পানি কোলের উপর ওর হাতে এসে পড়ল (আমার খেয়াল ছিল না পরে ও বলেছিল, সত্য কিনা কে জানে যা মিথ্যে বলতে পারে)।হঠাত্‍ ও সোজা হয়ে বসল , আমিও ভয় পেয়ে হাত ছেড়ে দিলাম ।আন্টি একটু ছাড়া পেয়ে হেলান দিয়ে চোখবুজে হেলান দিয়ে বসে থাকলেন (বোধহয় ঘুমিয়ে গেছেন) । কিছুক্ষণ পর রাত্রি হঠাত্‍ আমার কাঁধে মাথা রেখে হাতটা ধরল।

-কাঁদছিলে নাকি (তুমিতে প্রবেশ)

আমার তখনো কান্না আসছিল তাই মাথা নাড়িয়ে বললাম "না"বলে স্বর্দি টানলাম টেনেই বুঝলাম ধরা পরে গেছি।ও ফিক করে হেসে ফেলল ।ইশ মানুষের হাসি এত সুন্দর হয়।গিয়েই প্রপোজ করে ফেলব ॥এর পরের ঘটনা অতি সাধারণ, প্রপোজ করলাম একসেপ্ট হল । এরপর চলছে -

বিষয়: সাহিত্য

১৫৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File