নাম নিয়ে যত বিড়ম্বনা
লিখেছেন লিখেছেন তিতুমীর সাফকাত ২০ মে, ২০১৪, ১১:৫১:৩৫ রাত
ক্লাস ফাইভে থাকতে আমার এক বন্ধু তার বাবার পকেট থেকে বেশ বড় অংকের টাকা চুরি করে বিখ্যাত হয়ে যায়। অবশ্য সে চুরি করেছিল বেশ মহৎ উদ্দেশ্যে, আরেক বন্ধুকে সাইকেল কিনে দেবার জন্য। যাই হোক সে ধরা পড়ে এবং তার সদ্য অর্জিত খ্যাতি সেলেব্রেট করতে আমরা তাকে "চোরাইয়া" উপাধিতে ভূষিত করলাম। কাল পরিক্রমায় "চোরাইয়া" উচ্চারণের সুবিধার্থে চুরাইয়া অতঃপর "সুরাইয়া" হয়ে যায়। এবং সবাই তাকে "সুরাইয়া" নামেই ডাকত। সেও খুব একটা মাইন্ড করত বলে মনে পড়েনা। আর করলেও কি।
তার সাথে আবার আমার অনেক খাতির ছিল। আমরা একসাথে মারামারি করতাম,ক্রিকেট ফুটবল এইসব খেলতাম, আগুন টাগুণ লাগানর প্ল্যান পরিকল্পনা করতাম। দিনের একটা বড় সময় ব্যয় হত তার সাথে ফোনে কথা বলাতে।
একদিন আমার আম্মা আমাকে ডেকে চোখ গরম করে বলল, "আচ্ছা তুই যে সারাদিন এই মেয়েটির সাথে কথা বল মেয়েটি কে?
আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম, কোন মেয়ে?
আমার মা বলল, ওই যে সুরাইয়া নামের মেয়েটি।
আমি আরেকবার আকাশ থেকে পড়লাম।
--
এর কিছু বছর পর, আমাদের ক্লাসে নতুন একজন ছাত্রী আসে। সে আকারে বেশ ছোটখাট ছিল। দুষ্টু ছেলেরা তার নাম দেয় লিলিপুট। এই লিলিপুট সময়ের পরিক্রমায় সংক্ষিপ্ত রূপে হয়ে যায় "লিলি"।
সে মেয়ে একসময় জানতে পারে তাকে সবাই লিলি ডাকে। সে মাইন্ডতো করেইনি, বরং বেশ সাদরেই তার নতুন নাম গ্রহণ করে। একপর্যায়ে তার আসল নাম কি সবাই ভুলে যায়। শুধু ক্লাসমেটরাই নয়, পুরো স্কুলের সবাই, টিচার থেকে বুয়া দারোয়ান, তাকে লিলি নামেই সম্বোধন করত। এমন কি তার বাসাতে ফোন করেও আমরা বলতাম আনটি লিলি কে একটু ফোনটা দিবেন। আনটিও বলত "লিলি তোমার ফোন..."
--
আমার ভাগ্নের বয়স তখন দুই কি তিন বছর। সারাদিন শ্রেক (shrek) দেখত। শ্রেকের একটা ক্যারেক্টার ছিল ডাংকি। যা ছিল তারা ফেভারিট। একবার আমরা চিটাগং যাচ্ছিলাম। সে চেয়ারের ফাঁক দিয়ে পেছনের সিটের এক ভদ্রলোকের সাথে দুষ্টুমি করছিল। ভদ্রলোক একপর্যায়ে জিজ্ঞেস করলেন বাবূ তোমার নাম কি?
ভাগ্নে একটু চিন্তা ভাবনা করে উত্তর দিল ডাংকি। সে "নাম কি" র সাথে ডাংকি রাইম করে ফেলেছিল।
পুরো যাত্রাপথ ভদ্রলোক হোহো করে হেসে কুটোপুটি খেয়েছেন আর একটু পরপর এইযে বাবু ডাংকি বলে আমার ভাগ্নের সাথে বাৎচিত করেছেন।
---
আমার ছোট বোন যখন প্লেগ্রুপে পড়ে তখন তার একজন "ফ্রেন্ড" হয়। একদিন সে আমাকে রিপোর্ট করল যে তার একজন ফ্রেন্ড আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কি নাম তোমার ফ্রেন্ডের? সে বলল "মাদারজয়"। আমি তো পুরো অবাক, মাদারজয় আবার কারো নাম হয় নাকি। না আপু তুমি ভুল করছ বোধহয় তোমার চকলেট কিন্ডারজয় এর সাথে গুলিয়ে ফেলছ, মাদার জয় কারো নাম না। কিন্তু সে কোনভাবেই মানবেনা, তার ফ্রেন্ডের নাম মাদারজয় ই, নো মিসটেক। যাইহোক, পরে ওর টিচারের কাছে খোজ করে জানলাম ওই মেয়ের নাম আসলে মাধুর্য। কেন যে মানুষ পোলাপাইনের এমন দাঁতভাঙ্গা নাম রাখে। (#আবু মুয়াজ)
(ঘটনাগুলো ঈষৎ পরিবর্তন করে বলা)
---
এইবার আমার নিজের কথায় আসি । ছোটবেলায় নিক নেম ছিলো দীপ্ত । এই দীপ্ত যে কবে দেবতা হয়ে গেছে সহজে টের পাই নাই । দীপ্ত>দেপ্তা>দেবতা । ইয়ামেন ছিলো ঐটা থেকে নাম চেঞ্জ হাতিম হয়ে গেলো । তাও ভালো ছিলো কলেজে আসার পর প্রথমে ছিলাম মনজুর । আমাদের সাথে এক মেয়ে পড়তো নাম মঞ্জুরি । একদিন কোন এক কুক্ষণে কলেজের ভিতর রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আমার পিছন পিছন বেচারি আসছিলো । তারও পিছন পিছন কিছু দুষ্টু প্রকৃতির ফ্রেন্ড আসছিলো । ওইগুলা তখন আমাকে ডাক দেয় "মঞ্জুইরি" আমিও পিছনে তাকাই মেয়েটাও তাকায় । মেয়ে আবার একটু সাহসি ছিলো তাই গিয়ে জিজ্ঞেস করে "ভাই ডাকছেন ?"
-আরেহ না তোমারে না তোমার পিছনেরটারে ডাকছি, মঞ্জুররে চিনো না ?
এরপর মেয়েটা কিছু না বলেই চলে গেলো আর আমারে অজান্তেই বাঁশ দিয়া গেলো । এরপরে আর কেউ আমারে মনজুর ডাকতো না মঞ্জুরি ডাকতো । আহা বেচারী যদি খালি জানতো ! তারপর ঠিক করলাম আর না, এখন এক দফা এক দাবি আমার নাম সাফকাত । লেকিন ইধার মে ভি প্রবলেম হ্যায় । কতিপয় কুচক্রি ফ্রেন্ড সাফকাত>সাপকাত>সাপ বানিয়ে ফেললো কেউ কেউ আবার অতি উতসাহী হয়ে স্নেকও ডাকতো । সাপ নামে বেশ পরিচিত ছিলাম । ইদানিং আবার রুমমেট বন্ধু Mamun Shah সাপুরিয়া ডাকে
বিষয়: বিবিধ
১৯৪৮ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন