কোরআনে জুলকার নাইন বলতে কাকে বুঝানো হয়েছে -আলেকজান্ডার,সাইরাস নাকি হিমায়ান সম্রাট

লিখেছেন লিখেছেন তিতুমীর সাফকাত ১১ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৮:১৭:৩৬ রাত

সুরা কাহফ পড়ছেন তো ?

"(আর হে মুহাম্মাদ) এরা তোমার কাছে যুলকারনাইন

সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। এদেরকে বলে দাও, আমি তার সম্বন্ধে কিছু

কথা তোমাদের শুনাচ্ছি।"

(সুরা কাহফঃ ৮৩)

"তারা আপনাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে।

বলুনঃ আমি তোমাদের কাছে তাঁর কিছু অবস্থা বর্ণনা করব। আমি তাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং প্রত্যেক

বিষয়ের কার্যোপকরণ দান করেছিলাম। অতঃপর তিনি এক

কার্যোপকরণ অবলম্বন করলেন।অবশেষে তিনি যখন সুর্যের

অস্তাচলে পৌছলেন; তখন তিনি সুর্যকে এক পঙ্কিল

জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক

সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন।"

সূরা কাহাফ ৮৩-৮৬

জুলকারনাইন (Dhul-Qarnayan) একজন সৎ ও ন্যায়পরায়ণ বাদশা ছিলেন। তিনি এক সুবিশাল রাজ্য স্থাপন করেছিলেন এবং তিনি তার রাজ্যে ন্যায় ও সুবিচারের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। আল্লাহ তাকে রাজ্য বিজয়ের জন্যে সেই যুগে যা কিছু প্রয়োজন ছিল তার সবই দান করেছিলেন। এই বাদশা জুলকারনাইনই পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টিকারী ইয়াজুজ ও মাজুজ সম্প্রদায়কে এক প্রাচীরের মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছেন। এই ইয়াজুজ-মাজুজ কেয়ামতের সময় এই প্রাচীর ভেদ করে বেরিয়ে আসবে।

বিশ্বভ্রমনে বের হয়ে অপরাপর পর্যটক কিম্বা দিগ্বিজয়ীদের ন্যায় কেবল ভ্রমণ এবং বিজয় অভিযানে লিপ্ত থাকেননি, বরং তার এই বিশ্বভ্রমণের রীতিনীতি ও কার্যকলাপ ছিল সম্পূর্ণ আলাদা প্রকৃতির। তিনি যেখানেই গিয়েছেন সেখানকার অধিবাসীদের কাছে সর্বপ্রথম সত্য ও খাঁটি দ্বীন পেশ করেছেন। যারা তা গ্রহণ করেছে তাদের সাথে কোনরূপ যুদ্ধ কিম্বা বিবাদ কখনও হয়নি, বরং মৈত্রী স্থাপন করে সেখান থেকে প্রত্যাবর্তণ করেছেন। জুলকারনাইন তার দিগ্বিজয়ে প্রথমে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন। যাত্রাপথের সকল এলাকা জয় করে একপর্যায়ে এমন একস্থানে পৌঁছেছিলেন যেখানে প্রাকৃতিক কারণে তার অভিযানের গতিরুদ্ধ হয়ে যায়। তিনি সর্বশেষ জনপদে পৌঁছে গিয়েছিলেন অর্থাৎ সামনে আর কোন জনপদ ছিল না। এই পশ্চিম উপকূলটি ছিল কতকগুলো উপসাগরের সমষ্টি। এখানে ছিল পানি আর পানি- যা ছিল পঙ্কিল। জুলকারনাইন যখন এখানে পৌঁছেছিলেন, তখন সন্ধ্যা সমাগত। সূর্য্য অস্ত যাচ্ছিল ঐ পঙ্কিল পানিতে। ঐস্থানে এমন এক সম্প্রদায় বাস করছিল যারা ছিল অবিশ্বাসী। তিনি বাসিন্দাদের কুফরীতে লিপ্ত দেখতে পেয়ে আল্লাহকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহ! এই সম্প্রদায়ের সাথে আমি কিরূপ আচরণ করব?’

আল্লাহ বললেন, ‘হে জুলকারনাইন! তুমি এদেরকে শাস্তি দিতে পার বা এদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পার।’

তিনি বললেন, ‘আমি তাদেরকে ইব্রাহিমের ধর্মের প্রতি আহবান জানাব। আমার আহবানের পরও যারা কুফরীতে লিপ্ত থাকবে তাদেরকে আমি শাস্তি প্রদান করব। আর মৃত্যুর পর তো তারা তোমার কাছেই প্রত্যাবর্তণ করবে এবং তুমি তো তাদের জন্যে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রেখেছ। আর যারা ঈমান আনবে, তাদের প্রতি আমি সৌজন্যমূলক আচরণ করব। আর পরকালে তুমি তো তাদেরকে উত্তম প্রতিদানই দেবে।’ এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ-‘আমি তাকে পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম ও প্রত্যেক বিষযের উপায় ও পথ নির্দেশ করেছিলাম। সে একপথ অবলম্বণ করল। চলতে চলতে সে যখন সূর্য্যের অস্তাচলে পৌঁছিল তখন সে সূর্য্যকে এক পঙ্কিল পানিতে অস্ত যেতে দেখল এবং সে সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেল। আমি বললাম, ‘হে জুলকারনাইন! তুমি এদেরকে শাস্তি দিতে পার বা এদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পার।’

সে বলল, ‘যে কেউ সীমালংঘন করবে আমি তাকে শাস্তি দেব, তারপর তাকে প্রতিপালকের কাছে ফিরিয়ে আনা হবে ও তিনি তাকে কঠিন শাস্তি দেবেন। তবে যে বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে তার জন্যে প্রতিদান হিসেবে আছে কল্যাণ ও তার সাথে ব্যাবহার করার সময় আমি সহজভাবে কথা বলব।’(১৮:৮৪-৮৮)

জুলকারনাইনের দ্বিতীয় সফর ছিল পূর্বাঞ্চলের দিকে। পূর্ব দিকে চলতে চলতে তিনি শেষ পর্যন্ত এমন এক স্থানে পৌঁছেছিলেন, যেখান থেকে মনে হচ্ছিল যে, ঐ এলাকা থেকেই সূর্য্য উদিত হয়। তিনি এই অরুণাচলে দেখতে পেলেন সূর্য্য এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উঠছে যাদের জন্যে সূর্য্যের তাপ থেকে আত্মরক্ষায় আল্লাহ কোন আড়াল সৃষ্টি করেননি। জুলকারনাইন দেখলেন সেখানকার অধিবাসীগণ বর্বর, ফলে তারা পশুর

ন্যায় জীবন-যাপন করছে। তারা জানে না বাসগৃহ নির্মাণ প্রক্রিয়া ফলে তারা পাহাড়ের গর্তে বাস করছে। তারা জানে না পোষাক-পরিচ্ছদের ব্যবহার, ফলে সূর্য্যরে আলোই তাদের পরিধেয়র কাজ করছে। তারা জানে না ফসল উৎপাদন প্রক্রিয়া ফলে দিগন্তে সবুজের চিহ্ন নেই বললেই চলে। সূর্য্য উদিত হলে এ অধিবাসীগণ গর্তে আশ্রয় নেয় এবং সূর্য্যাস্তের পর জীবিকার সন্ধানে গর্ত থেকে বের হয়। জুলকারনাইন এই সম্প্রদায়ের সাথে পশ্চিমাঞ্চলীয় সম্প্রদায়ের মতই আচরণ করেছিলেন। এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ-‘আবার সে একপথ ধরল। চলতে চলতে যখন সে অরুণাচলে পৌঁছিল তখন সে দেখল তা (সূর্য্য)

এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উঠছে যাদের জন্যে সূর্য্যরে তাপ থেকে আত্মরক্ষায় আমি কোন আড়াল সৃষ্টি করিনি। প্রকৃত ঘটনা এই, তার বিবরণ আমি ভাল করেই জানি। (১৮:৮৯-৯১)

মধ্যবর্তী সমতলভূমিতে বাস করছিল। এ সম্প্রদায় ইয়াজুজ মাজুজের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পড়েছিল। তারা দিগিজয়ী সম্রাটের সাক্ষাৎ পেয়ে আশান্বিত হয়ে সমবেত হয়ে এল। কিন্তু তাদের ভাষা জুলকারনাইন বুঝতে পারছিলেন না। আবার তার কথাও তারা একেবারেই বুঝতে পারছিল না। তারা ইঙ্গিতে জুলকারনাইনের কাছে যে আবেদন রাখল তার সারমর্ম হল- ‘হে জুলকারনাইন! ইয়াজুজ ও মাজুজ পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে; আমরা কি তোমাকে কর এই শর্তে দেব যে, তুমি আমাদের ও ওদের মধ্যে এক প্রাচীর গড়ে দেবে?’ তাদের কথার অর্থ বুঝতে পেরে জুলকারনাইন বললেন, ‘আমার প্রতিপালক আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন তাই ভাল। সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর, আমি তোমাদের ও ওদের মাঝখানে এক মজবুত প্রাচীর গড়ে দেব। প্রয়োজনীয় মালের আঞ্জাম তোমরাই দেবে, তবে আমি তোমাদেরকে তার মূল্য পরিশোধ করে দেব।’

তারা বলল, ‘আমরা কি মাল আনব?’

তিনি বললেন, ‘প্রথমে তোমরা আমার কাছে লোহার তাল ও শুকনো কাঠ বা কয়লা নিয়ে এস।’ লোকেরা লোহার তাল, কাঠ ও কয়লা আনল এবং সেগুলিদু‘পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে উঁচু করে সাজিয়ে রাখল। এতে মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা পূর্ণ হয়ে পাহাড়ের সমান হল। অতঃপর তাতে আগুন লাগিয়ে দিলে জুলকারনাইন ঐ আগুনকে আরও প্রজ্জ্বলিত করতে লোকদেরকে বললেন, ‘তোমরা হাপরে দম দিতে থাক।’

যখন লোহা জ্বলন্ত অঙ্গারের মত হল তখন তিনি বললেন, ‘তোমরা গলান তামা নিয়ে এস আমি তা ওর উপর ঢেলে দেব।’ অতঃপর গলিত তামা লোহার উপর ঢেলে দিয়ে এক মজবুত প্রাচীর নির্মাণ করা হল। এরপর ইয়াজুজ ও মাজুজ ঐ প্রতিবন্ধক পার হতে পারল না বা ভেদ করতেও পারল না।

জুলকারনাইন বললেন, ‘এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। যখন আমার

প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হবে তখন তিনি ওকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন, আর আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্য।’ এ সম্প্পর্কিত কোরআনের আয়াতসমূহ-‘আবার সে একপথ ধরল। চলতে চলতে সে যখন পাহাড়ের প্রাচীরের মাঝখানে পৌঁছিল তখন সে সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেল যারা তার কথা একেবারেই বুঝতে পারছিল না। ওরা বলল, ‘হে জুলকারনাইন! ইয়াজুজ ও মাজুজ পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে ; আমরা কি তোমাকে কর এ শর্তে দেব যে, তুমি আমাদের ও ওদের মধ্যে এক প্রাচীর গড়ে দেবে?’

সে বলল, ‘আমার প্রতিপালক আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন তাই ভাল। সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর, আমি তোমাদের ও ওদের মাঝখানে এক মজবুত প্রাচীর গড়ে দেব। তোমরা আমার কাছে লোহার তাল নিয়ে এস।’ তারপর মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা পূর্ণ হয়ে যখন লোহার ঢিপি দু’টো পাহাড়ের সমান হল তখন বলল, ‘তোমরা হাপরে দম দিতে থাক।’

যখন তা আগুনের মত গরম হল তখন সে বলল, ‘তোমরা গলান তামা নিয়ে এস আমি তা ওর ওপর ঢেলে দেব।’

এরপর ইয়াজুজ ও মাজুজ তা পার হতে পারল না বা ভেদ করতেও পারল না।

সে (জুলকারনাইন) বলল, ‘এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হবে তখন তিনি ওকে চূর্ণ- বিচূর্ণ করে দেবেন, আর আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্যি।’ (১৮:৯২-৯৮)

জুলকারনাইন এবং আলেকজান্ডার বিতর্ক ইসলামি পন্ডিতদের মতে কুরআনে উল্লিখিত জুলকারনাইনের

মাধ্যমে ঐতিহাসিক সম্ভাব্য ৩ টি চরিত্র নির্দেশ করা হতে পারে ,

যারা হলেন ;

১-মহামতি আলেকজান্ডার

২-সাইরাস দি গ্রেট

৩-হিমায়ার সাম্রাজ্যের একজন শাসক।

জুলকারনাইনের প্রাচীর এই প্রাচীরটির সঠিক অবস্থান নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। এ সম্পর্কে নানা মতবাদ প্রচলিত। একটি মতবাদ অনুসারে, কুরআনের বর্ননা অনুযায়ী অরুণাচলে, যেখান থেকে সূর্য উদিত হয় সেখানে ইয়াজুজ, মাজুজের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য

দেয়াল তুলে দিয়েছিলেন জুলকারনাইন। আর সে স্থানটি পাহাড়ের

প্রাচীরের মাঝখানে। এই বর্ণনার সাথে মিলে যায় এমন একটি দেয়াল রয়েছে কাসপিয়ান সাগর উপকূলে। ইতিহাসবিদদের দ্বারা স্বীকৃত যে এ

দেয়াল তৈরি করেছিলেন আলেকজান্ডার। যা তৈরি করতে লোহা ও

তামা ব্যবহৃত হয়েছে। সেখানে একটি তোরণ রয়েছে যেটি ‘কাসপিয়ান

গেট’ বা আলেকজান্ডারের গেট নামে পরিচিত। দারিয়াল এবং দারবেন্ত

নামে দুটি শহরে এর ব্যপ্তি। দারিয়াল রাশিয়া এবং জর্জিয়ার

সীমান্তে অবস্থিত। এটিকে বলা হয় কাজবেক পাহাড়ের পূর্ব প্রান্ত। দারবেন্ত রাশিয়ার দক্ষিণে অবস্থিত একটি শহর। কাসপিয়ান সাগরের

দক্ষিণপূর্ব উপকূলে নির্মীত এ দেয়ালটি তোলা হয়েছে দুটি পাহাড়ের

মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানে। এ পাহাড় দুটিকে বলা হয় পৃথিবীর উঠান।

আলেকজান্ডার নির্মীত এ দেয়ালের উচ্চতা ২০ মিটার এবং এটি ৩

মিটার (১০ ফুট) পুরু।

তাফসীরঃ "Zul-qarnain" অর্থ "দুই শিং বিশিষ্ট" অর্থাৎ যে রাজার

দুইটি শিং ছিলো বা এভাবেও বলা হয় যে, দুই যুগের প্রভু।

পাশ্চাত্যে ও প্রাচ্যদেশসমূহ জয় করার কারণে জুল-কারনাইন

খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।

এ জুল-কারনাইন দ্বারা কাকে বুঝানো হয়েছে?

তিনি কোন যুগে কোথায় বাস করতেন?

কুরআনে এমন কোনও তথ্য নাই যার দ্বারা আমরা কোনও সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি। অবশ্য তার কোনও প্রয়োজনও নাই। কারণ কোরাণ শরীফে কাহিনীর অবতারণা করা হয়েছে উপমা হিসেবে , নীতিগর্ভমূলক উপদেশ দানের জন্য। তবে জনপ্রিয় ধারণা হচ্ছে জুল-কারনাইন হচ্ছেন মহান সম্রাট আলেক্সজান্ডার। অথবা অন্য মত অনুসারে তিনি হচ্ছে প্রাগঐতিহাসিক সম্রাট Himyarite।

এখানে যে যুলকারনাইনের কথা বলা হচ্ছে তিনি কে ছিলেন, এ

বিষয়ে প্রাচীন যুগ থেকে নিয়ে আজও পর্যন্ত মতবিরোধ চলে আসছে।

প্রাচীন যুগের মুফাস্সিরগণ সাধারণত যুলকারনাইন বলতে আলেকজাণ্ডারকেই বুঝিয়েছেন। কিন্তু কুরআনে তাঁর

যে গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে, আলেকজাণ্ডারের সাথে তার মিল খুবই কম।

আধুনিক যুগে ঐতিহাসিক তথ্যাবলীর ভিত্তিতে মুফাসসিরগণের অধিকাংশ এ মত পোষণ করেন যে, তিনি ছিলেন ইরানের শাসনকর্তা খুরস তথা খসরু বা সাইরাস। এ মত তুলনামূলকভাবে বেশী যুক্তিগ্রাহ্য। তবুও এখনো পর্যন্ত সঠিক ও নিশ্চিতভাবে কোন ব্যক্তিকে যুলকারনাইন হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারেনি।

কুরআন মজীতে যেভাবে তার কথা আলোচনা করেছে তা থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে চারটি কথা জানতে পারি ......

এক, তার যুলকারনাইন (শাব্দিক অর্থ “দু’ শিংওয়ালা”)

উপাধিটি কমপক্ষে ইহুদীদের মধ্যে, যাদের ইঙ্গিত মক্কার

কাফেররা তার সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লা।। আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করেছিল, নিশ্চয়ই পরিচিত হওয়ার

কথা তাই একথা জানার জন্য আমাদের ইসরাঈলী সাহিত্যের শরণাপন্ন না হয়ে উপায় থাকে না যে, তারা “দু’শিংওয়ালা” হিসেবে কোন্ ব্যক্তি বা রাষ্ট্রকে জানতো?

দুই, এ ব্যক্তির অবশ্যই কোন বড় শাসক ও এমন পর্যায়ের

বিজেতা হওয়ার কথা যার বিজয় অভিযান পূর্ব থেকে পশ্চিমে পরিচালিত হয়েছিল এবং অন্যদিকে উত্তর-দক্ষিণ দিকেও বিস্তৃত হয়েছিল। কুরআন নাযিলের পূর্বে এ ধরনের কৃতিত্বের অধিকারী মাত্র কয়েকজন ব্যক্তির কথাই জানা যায়। তাই অনিবার্যভাবে তাদেরই কারোর মধ্যে আমাদের তার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্য ও বৈশিষ্ট্যও খুঁজে দেখতে হবে।

তিন, তাকে অবশ্যই এমন একজন শাসনকর্তা হতে হবে যিনি নিজের রাজ্যকে ইয়াজুজ মা’জুজের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য কোন পার্বত্য গিরিপথে একটি মজবুত প্রাচীর নির্মাণ করেন। এ বৈশিষ্ট্যটির অনুসন্ধান করার জন্য আমাদের একথাও জানতে হবে যে, ইয়াজুজ মা’জুজ বলতে কোন্ জাতিকে বুঝানো হয়েছে এবং তারপর এও দেখতে হবে যে, তাদের এলাকার সাথে সংশ্লিষ্ট এ ধরনের কোন্ প্রাচীর দুনিয়ায় নির্মাণ করা হয়েছে এবং সেটি কে নির্মাণ করেছে?

চার, তার মধ্যে উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোসহ এ বৈশিষ্ট্যটিও

উপস্থিত থাকা চাই যে, তিনি আল্লাহর প্রতি আনুগত্যশীল ও

ন্যায়পরায়ণ শাসনকর্তা হবেন। কারণ কুরআন এখানে তার এ

বৈশিষ্ট্যটিকেই সবচেয়ে সুস্পষ্ট করেছে।

এর মধ্যে থেকে প্রথম বৈশিষ্ট্যটি সহজেই খুরসের (বা সাইরাস) বেলায়

প্রযোজ্য। কারণ বাইবেলের দানিয়েল পুস্তকে দানিয়েল নবীর

যে স্বপ্নের কথা বর্ণনা করা হয়েছে তাতে তিনি ইরানীদের উত্থানের

পূর্বে মিডিয়া ও পাস্যের যুক্ত সাম্রাজ্যকে একটি দু’শিংওয়ালা মেষের

আকারে দেখেন। ইহুদীদের মধ্যে এ “দু’শিংধারী”র বেশ চর্চা ছিল। কারণ

তার সাথে সংঘাতের ফলেই শেষ পর্যন্ত বেবিলনের সাম্রাজ্য খণ্ড- বিখণ্ড হয়ে যায় এবং বনী ইসরাঈল দাসত্ব শৃংখল থেকে মুক্তি লাভ

করে। দ্বিতীয় চিহ্নটিরও বেশীর ভাগ তার সাথে খাপ খেয়ে যায় কিন্তু

পুরোপুরি নয়। তার বিজয় অভিযান নিঃসন্দেহে পশ্চিমে এশিয়া মাইনর ও

সিরিয়ার সমুদ্রসীমা এবং পূর্বে বখ্তর (বলখ) পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

কিন্তু উত্তরে বা দক্ষিণে তার কোন বড় আকারের অভিযানের সন্ধান

এখনো পর্যন্ত ইতিহাসের পাতায় পাওয়া যায়নি।

অথচ কুরআন সুস্পষ্টভাবে তার তৃতীয় একটি অভিযানের কথা বর্ণনা করছে। তবুও এ ধরনের একটি অভিযান পরিচালিত হওয়া অসম্ভব নয়। কারণ ইতিহাস থেকে দেখা যায়, খুরসের রাজ্য উত্তরে ককেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

তৃতীয় চিহ্নটির ব্যাপারে বলা যায়, একথা প্রায় সুপ্রতিষ্ঠিত

হয়ে গেছে যে, ইয়াজুজ মা’জুজ বলতে রাশিয়া ও উত্তর চীনের এমনসব

উপজাতিদের বুঝানো হয়েছে যারা তাতারী, মঙ্গল, হূন ও সেথিন

নামে পরিচিত এবং প্রাচীন যুগ থেকে সভ্য দেশগুলোর

বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করে আসছিল। তাছাড়া একথাও

জানা গেছে যে, তাদের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য ককেশাসের দক্ষিণাঞ্চলে দরবন্দ ও দারিয়ালের মাঝখানে প্রাচীর নির্মাণ

করা হয়েছিল। কিন্তু খুরসই যে, এ প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন

তা এখনো প্রমাণিত হয়নি। শেষ চিহ্নটি প্রাচীন যুগের একমাত্র খুরসের সাথেই সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। কারণ তার শত্রুরাও তার ন্যায়বিচারের

প্রশংসা করেছে। বাইবেলের ইষ্রা পুস্তক একথার সাক্ষ্য বহন

করে যে, তিনি নিশ্চয়ই একজন আল্লাহভীরু ও আল্লাহর অনুগত

বাদশাহ ছিলেন। তিনি বনী ইসরাঈলকে তাদের আল্লাহর প্রতি আনুগত্য

প্রিয়তার কারণেই বেবিলনের দাসত্বমুক্ত করছিলেন এবং এক ও লা- শরীক আল্লাহর ইবাদাতের জন্য বাইতুল মাকদিসে পুনর্বার

হাইকেলে সুলাইমানী নির্মাণ করার হুকুম দিয়েছিলেন।

কুরআন নাযিলের পূর্বে যতজন বিশ্ববিজেতা অতিক্রান্ত হয়েছেন তাদে মধ্য থেকে একমাত্র খুরসের মধ্যেই যুলকারনাইনের

আলামতগুলো বেশী পরিমাণে পাওয়া যায় কিন্তু

একেবারে নিশ্চয়তা সহকারে তাকেই যুলকারনাইন বলে নির্দিষ্ট করার

জন্য এখনো আরো অনেক সাক্ষ্য প্রমাণের প্রয়োজন রয়েছে। তবুও কুরআনে উপস্থাপিত আলামতগুলো যত বেশী পরিমাণে খুরসের

মধ্যে বিদ্যমান, ততটা আর কোন বিজেতার মধ্যে নয়। ঐতিহাসিক বর্ণনার জন্য এতটুকু বলাই যথেষ্ট যে, খুরস ছিলেন একজন

ইরানী শাসনকর্তা। খৃস্টপূর্ব ৫৪৯ অব্দের কাছাকাছি যুগ থেকে তাঁর

উত্থান শুরু হয়। কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি মিডিয়া (আল জিবাল)

এবং লিডিয়া (এশিয়া মাইনর) রাজ্য জয় করার পর ৫৩৯ খৃস্টপূর্বাদ্বে

বেবিলন জয় করেন। এরপর তার পথে আর কোন রাজশক্তির বাধা ছিল

না। তার বিজয় অভিযান সিন্ধু ও সুগদ (বর্তমান তুর্কিস্তান) থেকে শুরু করে একদিকে মিসর ও লিবিয়া এবং অন্যদিকে থ্রেস ও

ম্যাকডোনিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। আবার উত্তর দিকে তাঁর সাম্রাজ্য

বিস্তার লাভ করে ককেশিয়া ও খাওয়ারিযাম পর্যন্ত।

বলতে গেলে সেকালের সমগ্র সভ্য জগত তাঁর শাসনাধীন ছিল।

বি.দ্র:

----জুলকারনাইন- মহান এই ব্যক্তি সম্পর্কে খুব বেশী তথ্য নেই প্রাচীন ইতিহাস ও ধর্মগ্রন্থ গুলিতে। গুটিকয় ইহুদি পন্ডিত তাকে জানতেন। মুহম্মদ যখন ইসলাম প্রচার শুরু করেন তখন মক্কার কুরাইশরা ভীষণ বিব্রত বোধ করছিল, কারণ তিনি তাদের দেবদেবীগুলিকে অগ্রাহ্য ও অসার প্রতিপন্ন করছিলেন। তখন তারা মুহম্মদ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে কয়েকজন কুরাইশকে মদিনায় ইহুদি পন্ডিতদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তারা তখন মুহম্মদ সত্য নবী কিনা তা পরীক্ষার জন্যে কয়েকটি প্রশ্ন মুহম্মদের নিকট রাখতে বলে। এই প্রশ্নগুলির একটির উত্তরে কোরআন জুলকারনাইন সম্পর্কে কিছু আয়াত নাযিল করে। যতদূর জানা যায় হযরত ইব্রাহিমের সময় ইনি রাজত্ব করেছিলেন। তবে তার রাজ্য শাসন ছিল ভিন্ন প্রকৃতির। তিনি ছিলেন একজন পূণ্যবান ঈমাম। দামেস্কের নিকট বন্দী লুত ও তার পরিবারবর্গকে উদ্ধার শেষে, ফেরার পথে বাদশা জুলকারনাইনের সাথে দেখা করেছিলেন ইব্রাহিম। জুলকারনাইন পূর্বেই ইব্রাহিম সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন। সাক্ষাতে তাই তিনি তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন-'আপনার প্রতি শান্তি ও করুণা বর্ষিত হোক। সকল প্রশংসার অধিকারী তিনি, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা, যিনি শত্রুদেরকে আপনার হাতে তুলে দিয়েছেন।’ পূণ্যবান ব্যক্তিকে উপহার দেবার প্রথা প্রচলিত ছিল। ইব্রাহিম তাই তার সম্পদের এক দশমাংশ তাকে উপহার দেবার প্রতিশ্রুতি দেন।

----মহামতি আলেকজান্ডার (Alexander the great) (জন্ম - জুলাই খ্রিস্টপূর্ব ৩৫৬ , মৃত্যু জুন ১১, খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ )পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সফল সামরিক প্রধান। তিনি তৃতীয় আলেকজান্ডার

বা মেসিডনের রাজা হিসেবেও পরিচিত। তিনি ছিলেন মেসিডোনিয়ার শাসনকর্তা। মেসিডোনিয়া বর্তমান গ্রীসের অন্তর্গত একটি অঞ্চল। তার পিতা ফিলিপ ছিলেন মেসিডোনিয়ার রাজা। তার মৃত্যুর পূর্বে তিনি পরিচিত পৃথিবীর বেশির ভাগ জয় ( টলেমির মানচিত্র অনুযায়ী) করেছিলেন। আলেকজান্ডার তার সামরিক কৌশল

ও পদ্ধতির জন্য বিশ্ব বিখ্যাত। তিনি পারস্যে অভিশপ্ত আলেকজান্ডার নামেও পরিচিত, কারণ তিনি পারস্য সাম্রাজ্য জয় করেন এবং এর রাজধানী পারসেপলিস ধ্বংস করেন। তিনি ফারসি ভাষায় "ইস্কান্দর , মধ্য পশ্চিমা স্থানে যুল-কারনাইন, আরবে আল-ইস্কান্দার আল কাবের", উর্দুতে সিকান্দার-এ-আজম, পস্তুতে স্কান্দর , হিব্রুতে "আলেকজান্ডার মোকদন , আরমেনিয়ানয়ে ট্রে-কারনাইয়া"। তার এজাতীয় কিছু নামের অর্থ "দুই শিং বিশিষ্ট" (যুল-কারনাইন, ট্রে-কারনাইয়া), আবার উর্দু ও

হিন্দিতে সিকান্দার যার অর্থ পারদর্শি" বা অত্যন্ত পারদর্শি।

রাহাত আশরাফ শাওন এর লেখা

বিষয়: বিবিধ

৩৭৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File