ইহুদী ধর্মে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)

লিখেছেন লিখেছেন তিতুমীর সাফকাত ০২ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৬:০৮:১৬ সন্ধ্যা

তৌরাত (বাইবেলের পুরাতন নিয়ম) যাকে হীব্রু ভাষায় 'মেউদ দেউদ' এবং 'ভাববাদী' বলে সম্বেধন করেছে তিনি হলেন সত্যের আত্মা, কলি যুগের মহাত্মা মুহাম্মদ (সাঃ)।

সেই সত্যের আত্মার আগমন সম্পর্কে বাইবেলের পুরাতন নিয়মের দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১৫-১৯ বলা হয়েছেঃ

"১৫তোমর ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার মধ্য হইতে, তোমার ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে, তোমার জন্য আমার সদৃশ এক ভাববাদী উত্‍পন্ন করিবেন, তাঁহারই কথায় তোমরা কর্ণপাত করিবে। ১৬কেননা হোরেবে সমাজের দিবসে তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিকটে এই প্রার্থনাই ত করিয়াছিলে, যথা, আমি যেন আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর পুনর্বার শুনিতে ও এই মহাগি্ন আর দেখিতে না পাই, পাছে আমি মারা পড়ি। ১৭তখন সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, উহারা ভালই বলিয়াছে। ১৮আমি উহাদের জন্য উহাদের ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে তোমার সদৃশ এক ভাববাদী উত্‍পন্ন করিব, ও তাঁহার মুখে আমার বাক্য দিব; আর আমি তাঁহাকে মুখে যাহা যাহা আজ্ঞা করিব, তাহা তিনি উহাদিগকে বলিবেন। ১৯আর আমার নামে তিনি আমার যে সকল বাক্য বলিবেন, তাহাতে যে কেহ কর্ণপাত না করিবে, তাহার কাছে আমি প্রতিশোধ লইব।" ষুত্রঃ বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাইবেলের পুরাতন নিয়মের দ্বিতীয় বিবরণ ১৮: ১৫-১৯

[-] আমি উহাদের জন্য উহাদের ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে তোমার সদৃশ এক ভাববাদী উত্‍পন্ন করিব- এখানে তোমার সদৃশ্য ভাববাদী বলতে ইহুদীরা মুসার সদৃশ্য একজন নবীর কথা বলেছেন। এখানে মুসার সদৃশ্য কোন নবীর কথা বলা হয়েছে - এ পশ্নের জবাবে সত্যবিমুখ ইহুদীরা বরাবরই বলে এসেছেন যীশু মসীহের (ঈসা) কথা। আদৌও মসীহ (ঈসা) হযরত মুসা (আঃ) এর মত ছিলেন না। খ্রীষ্টানদের মতে ঈসা (আঃ) একজন ঈশ্বর, কিন্তু মুসা (আঃ) কোন ঈশ্বর নন। বাইবেল মতে মসীহ দুনিয়ার পাপের জন্য মৃতু্যবরণ করেছিলেন কিন্তু হযরত মুসা (আঃ) কে তেমনটি করতে হয়নি। বাইবেল মতে ঈসা (আঃ) তিনদিনের জন্য জাহান্নামে গিয়েছিলেন। বাইবেলের পুরাতন সংস্করণে (তৌরাত) মুসা (আঃ) সম্পর্কে এমন একটি বাক্যও নাই। তাছাড়া হযরত মুসা (আঃ) তাঁর পিতা-মাতার স্বাভাবিক দৈহিক মিলনে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন, বাইবেলের যীশু খ্রীষ্ট তাঁর পিতার অবর্তমানে কোনরুপ শরীরি মিলন ছাড়াই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। এ সম্পর্কে বাইবেল মথি লিখিত সুসমাচারের প্রথম অধ্যায়ের ১৮ নং শ্লোকে বলছেঃ "যীশু খ্রীষ্টের জন্ম এইরুপে হইয়াছিল। তাঁহার মাতা মরিয়ম যোষেফের প্রতি বাগদত্তা হইলে তাঁহাদের সহবাসের পূর্বে জানা গেল, তাঁহার গর্ব হইয়াছে- পবিত্র আত্মা হইতে।" এ সম্পর্কে লূক ১ : ৩৪-৩৫ এ বলা আছেঃ "ইহা কিরুপে হইবে? আমি ত পুরুষকে জানি না। দূত উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, পবিত্র আত্মা তোমার উপরে আসিবেন, এবং পরাত্‍পরের শক্তি তোমার উপরে ছায়া করিবে;" হযরত মুসা (আঃ) বিয়ে করেছিলেন, সন্তান উৎপাদন করেছিলেন; কিন্তু মসীহ (ঈসা আঃ) অবিবাহিত (চিরকুমার) ছিলেন। আবার বাইবেল মতে যীশু খ্রীষ্টের মৃতু্যর পর তাঁকে পৃথিবীতে কবরস্থ করা হয়নি; ইহুদী মতে তিনি স্বর্গে অবস্থান করছেন। অপরদিকে হযরত মুসা (আঃ) এবং হযরত মুহাম্মদ (স) এর মৃত্যুর পর তাঁদেরকে এই পৃথিবীতেই সমাধিস্থ করা হয়েছিল। সুতরাং এখানে মুসা (আঃ) এর মতো যে ভাববাদীর কথা বলা হচ্ছে তিনি মুহাম্মদ (স) ভিন্ন অন্য কেহ নন। হযরত মুসা (আঃ) এর সাথে সর্ব বিষয়ে মুহাম্মদ (স) এর মিল পাওয়া যায়। যেমন, মুসা (আঃ) এবং হযরত মুহাম্মদ (স) এর জন্ম তাঁদের পিতা-মাতার দৈহিক মিলন থেকে, উভয়েই বিবাহিত ছিলেন এবং বিবাহ পরবর্তী জীবনে সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন, উভয়েই রাসূল এবং রাজা (রাজ্য পরিচালনা এবং জাতির উপর আইন প্রয়োগের ক্ষমতা অর্থে, যা ঈসা মসীহের ছিল না; বরং তিনি নিজেই রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন রোমান রাজ্যপ্রধান পনটিয়াস পিলেট কর্তৃক। ঈসা মসীহ যে রাজা ছিলেন না যে সম্পর্কে যোহন লিখিত সুসমাচরের ১৮:৩৬ তে বর্ণিত আছেঃ "আমার রাজ্য এ জগতের নয়; যদি আমার রাজ্য এ জগতের হইত, তবে আমার অনুচরেরা প্রাণপণ করিত, যেন আমি যিহূদীদের সমর্পিত না হই; কিন্তু আমার রাজ্য ত এখানকার নয়।") ছিলেন। সুতরাং এখানে 'তোমার (মুসা আঃ এর) সদৃশ্য বলতে মুহাম্মদ (স) কেই বুঝানো হয়েছে; ঈসা মসীহকে নয়। এই মহান ভাববাদী যে মুহাম্মদ (স) তার সুস্পষ্ট প্রমাণ বাইবেলের যিশাইয় এর ২৯নং অধ্যায়ের ১২নং গতে বলা হয়েছেঃ "আবার যে লেখা পড়া জানে না, তাহাকে যদি সে তাহা দিয়া বলে, অনুগ্রহ করিয়া ইহা পাঠ কর, আমি তোমার ইবাদত করি। তবে সে উত্তর করিবে আমি লেখা পড়া জানি না।" হযরত মুহাম্মদ (স) এর বয়স যখন ৪০ বছরে উত্তীর্ণ হল তখন তিনি কাবার অদূরে (প্রায় তিন মাইল উত্তরে) হেরা নামক পাহাড়ের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। ধ্যানমগ্ন অবস্থায় প্রধান ফেরেস্তা জীব্রাঈল (আঃ) হযরত মুহাম্মদ (স) কে বললেন 'ইকরা' অর্থাত্‍ 'পড়'। মুহাম্মদ (স) ভয় পেয়ে বলে উঠলেন 'আমি তো পড়তে জানি না।'

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যে হেরা (যার বর্তমান নাম জাবালে নূর অর্থাত্‍ আলোর পাহাড়) পর্বতে আসিবেন সে সম্পর্কে বাইবেলের পুরাতন সংস্করণের (ওল্ড টেষ্টামেন্ট) দ্বিতীয় বিবরণে উল্লেখ আছেঃ

"সদা প্রভু সীনয় হইতে আসিলেন, সেয়ীর হইতে তাহাদের প্রতি উদয় হইলেন, পারন পর্বত হইতে আপন তেজ প্রকাশ করিলেন।" সূত্রঃ দ্বিতীয় বিবরণ ৩৩ : ২

সীনয় = এখানে, 'সীনয়' বলতে সিনাই অবস্থিত তুর পর্বতের কথা বলা হয়েছে। এই তুর পর্বতেই হযরত মূসা (আঃ) নবুয়্যত প্রাপ্ত হন।

সেয়ীর ='সেয়ীর' পর্বতে হযরত ঈসা (আঃ) নবুয়্যত প্রাপ্ত হন।

পারন ='পারন' বলতে হেরা (আরবীতে) পর্বতকে বোঝানো হয়েছে। আর এই মহমান্বিত পর্বতে হযরত মুহাম্মদ সাঃ নবুয়্যত প্রাপ্ত হন।

বিস্তারিত

বিষয়: বিবিধ

১৬১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File