মোমের পুতুল (বিদেশী কাহিনী অবলম্বনে)
লিখেছেন লিখেছেন তিতুমীর সাফকাত ২০ নভেম্বর, ২০১৩, ০৬:৪৯:০৪ সন্ধ্যা
(1)
রাজু জুতো পালিশ করে কমলাপুর স্টেশনে ৷ পাশের ঝুপড়ি তে এসেছিল তের বছর আগে তখন সে মোটে ৪ ৷ শীলা খালা তাকে নিজের কাছে রেখে দেয় ৷ বাবা মাকে তার আবছা মনে পরে , কিভাবে সাগর থেকে হারিয়ে সে ঢাকায় চলে এসেছিল সে মনে করতে পারে না ৷রাজু চুরি করা শেখেনি ৷ সে নেশা ভান করেনা ৷ তার বয়েসী সব ছেলেরা একটু আধটু নেশা করে ৷ কিন্তু শীলা খালা শিখিয়েছে তাকে " তুই কোনো দিন অসৎ হবি না ৷ মেহনত কর একদিন রাজা হবি ৷ " শীলা ও এসেছিল ময়মনসিং থেকে অনেক বছর আগে ৷ অল্প বয়েসে স্বামী তাকে ফেলে অন্য মেয়েমানুষ ধরে নেই তাই পেটের টানে চলে আসে ঢাকায় ৷ এক চিলতে ঝুপরিতেই তার সুখ ৷ রেলের সাফ সাফইয়ের কাজ করে ২০ বছর ধরে ৷ মাইনে ৮০০ টাকা হলেও সাহেবদের ফাই ফরমাস খেতে মিলে যায় ১৫০০ টাকা আর তাতেই সংসার চালায় সে ৷ রাজু কে নিজের ছেলের মতই মানুষ করেছে ৷ রাজুর জন্য চিন্তা নেই তার ৷ সকালে আর বিকেলে জুতো পালিশ করলেও স্কুলে যায় ১১ ক্লাসে পড়ে ৷
-" এই ভাই এদিকে আয়!"
রাজু দৌড়ে আসে ৷ বলার আগেই পায়ে হাথ দিয়ে দেয় ৷ এত দিনে মানুষের মুখ দেখা ছেড়ে দিয়েছে , ডাকলেই জুতোর দিকে ছুটে যায় ৷ এই মানুষ গুলোর মুখের দিকে দেখতে ইচ্ছে করে না ৷ রাজু স্কুলে প্রথম হয় ৷ গত ১১ বছরের সব স্কলারশিপ সে পেয়েছে কিন্তু কাওকে জাহির করে নাম কিনতে চায় না ৷ আর জুতো পালিশ করা সে কিছুতেই ছোট কাজ মনে করে না ৷ স্যার বলেছেন সব কাজ সমান ৷ হয়তঃ সম্ভ্রান্ত রক্ত আছে বলেই রাজু আজ রাজু ৷ তার সমবয়েসী বাচ্চারা রাজুর এত কিছু না জানলেও শীলার গর্ব ৷ আরেকটু কষ্ট করলে রাজু হয়ত পড়াটা চালিয়ে যেতে পারবে ৷
-" কত নিবি ? "
ভদ্রলোক জুতো তুলে দেয় রাজুর জুতোর পালিশের মোচাতে৷
-" ৫ টাকা "৷
বলে ঘসতে শুরু করে ৷ আগে সার্ফের জল দিয়ে একটু ঘসে চামড়ার ময়লা ধুতে হয় , তার পর ক্রিম আর তার পর পালিশ ৷
-" আচ্ছা বাবা বলত ব্যাটারি কে আবিস্কারকরেছে ?"
পাশে দাড়িয়ে থাকা বছর ১৫ এর মেয়েটা জিজ্ঞাসা করে ৷ মোমের পুতুলের থেকেও সুন্দর দেখতে ৷ বড়লোকের মেয়ে ভালো খায় ভালো পড়ে ৷
বাবা বলল " সে কি আর মনে আছে ?"
রাজু না চাইলেও মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল
-" ভল্ট ১৭৯৯ সালে " ৷
ভদ্রলোক থতমত খেয়ে বললেন
-" কাজ কর মন দিয়ে যত আজে বাজে কথা !"
না বাবা ওহ ঠিকই বলেছে আলেক্জান্দের ভল্ট ৷
-" তুই কিরে জানলি রে হতচ্ছারা ইস্কুলে যাস নাকি !"
লোকটি রেগে প্রশ্ন করে ৷
-" হ্যান যাই ৷ "
মোমের পুতুল জিজ্ঞাসা করে
-" আচ্ছা তুমি সব জানো ?"
জুতো ঘসতে ঘসতে মাথা নাড়ে রাজু !
-" ব্লাড ব্যান্ক ? -Dr. Charles Richard Drew থার্মোমিটার? Gabriel Fahrenheit পেপসি কোলা? Caleb Bradham 1898.”
আসে পাশের দু একটা লোক অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ৷
মোমের পুতুল জিজ্ঞাসা করে কি করে জানো এতকিছু ? আমি তো মনে রাখতে পারি না ! রাজুর জুতো পালিশ হয়ে যায় ৷
ভদ্র লোক রাজুর মাথায় হাত দিয়ে বলেন
-" কোথায় থাকা হয় ?"
--" জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ের পরিবর্তে ৬ ঘন্টা দেরিতে ছাড়বে ৷ আবহাওয়া জনিত দুর্বিপাকের দরুন জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এখুনি ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না ৷ "
এখানেই অনেক জুতো পালিশ হবে ৷ বসে বসে লোকে করবে টা কি ৷
-" স্যার আপনারা সিলেট যাচ্ছেন ?"
মোমের পুতুলের বাবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে রাজু ৷
-" হ্যান আমরা সিলেট যাচ্ছি, তোর নাম কি ?"
৫ টাকার জায়গায় ১০ টাকা দিতে চান ভদ্রলোক ৷ রাজু ৫ টাকা ফিরত দিতে চায় ভদ্রলোক বলেন রেখে দাও ৷ রাজু ৫ টাকা লোকটির হাথে গুঁজে বলে
-" যতটুকু দরকার সেটার জন্যই জুতো পালিশ করি এটা আমার জীবিকা নয় ৷ আর দান আমি নি না কারোর থেকে ৷”
এই টুকু ছোট ছেলের মুখে অমন কথা সুনে ভদ্রলোক কি বলবেন খুঁজে পেলেন না ৷
-" রাজু কিছু খাবি ?"
মোমের পুতুলের মা জিজ্ঞাসা করে ! রাজুর মায়া হয় ৷ তার শীলা খালার কথা মনে পড়ে যায় ৷
-“খাব " ৷
-“আরে ওহ রাজুয়া কহন ঘুমত ফিরত বা , তোর জন্য আমার টেনসন হচ্ছে , ছেলেটা গেল কোথায় ?"
শীলা খালা চলে আসে মোমের পুতুলের পরিবারের কাছে ৷ খেতে দেখে রেগে ওঠে
-" সাহেব অরে মাফ করি দেন , হয়ত ভুখা ছিল তাই খাবার চেয়েছে, অরে রাজু তরে কি আমি কম খেতে দি লাকি রে ? তুই খালার ইজ্জত মিইত্তে মে মিলিয়ে দিলি ৷ "
শীলা খালাকে মোমের পুতুলের মা বাবা বুঝিয়ে বলতেই শান্ত হয় ৷
-“ আরে শয়তান সাহেব অনেক বলেছি কিন্তু এটাই অর ভালো লাগে , ওহ রোজ স্কুলে যায় স্কুলে এক নম্বর ছেল আছে বাবু !"
সেদিন রাজু অনেক সময় মোমের পুতুলের সাথে গল্প করে ৷রাজুর মনে থাকে না মোমের পুতুলের নাম কিন্তু রাজু মোমের পুতুল কে ভুলতে পারে নি ৷ মোমের পুতুল ট্রেন ছাড়ার সময় কেঁদে ফেলেছিল ৷ ওটাই তাদের শেষ দেখা ৷ সময় বয়ে যায় চোখের নিমেষে বদলে যায় সব ৷ শীলা খালাও বয়সের ভারে দুমড়ে পড়েছে ৷ রাজু এখন অনেক অনেক বড় ৷
(2)
রাজু বার বার না বললেও বিদিশা রাজুর ঘরে চলে আসে ৷ বিদিশা CA করছে , রাজু এবার IAS দিয়েছে হয়ত পেয়েও যাবে ৷ পরার জন্যই ঝুপড়ি ছেড়ে দিতে হয়েছে রাজুকে ৷ ফ্ল্যাটে থাকে সে ৷ জুতো পালিশ তাকে করতে হয় না ৷ রাজু এখন টিউসন করে চুটিয়ে ৷ মাস গেলে অনেক টাকাই আসে হাথে ৷ শীলা খালা রোজ সকালে এসে রান্না করে দিয়ে যায় ৷ কিন্তু ঝুপড়ি ছেড়ে আসতে মন চায় না শীলার ৷ বিদিশা সুন্দরী যুবতী বাড়িওলার মেয়ে ৷
বিদিশার দুরন্ত শরীর ৷ চাইলেই বিদিশা কে বিছানায় নিয়ে ফেলতে পারে রাজু ৷ কিন্তু সে তা চায় না । হটাথ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বিদিশা ৷
-" তোকে কত বার বলেছি আসবি না আমার কাছে বলেছি তো তোকে আমি ভালোবাসি না !" রাজু ঝাঝিয়ে ওঠে ৷
খালার শরীর ভালো নেই ৷ খালা কে নিয়ে ভালো হাসপাতালে গেছে রাজু ৷ রাজু ঘর খোলা রাখে ৷ অর ঘরে আসতেহলে বিদিশাদের ঘর দিঙ্গিয়েই আসতে হবে ৷ বিদিশা এসে ঘরের টুকি তাকি সাজিয়ে দিতে থাকে ৷ রাজুর ঘরে বই বেশি বাকি জিনিস নেই বললেইচলে ৷ দু একটা বই নাড়তে নাড়তে চোখে পড়ে মোমের পুতুল ৷ আরো দু ছাড়তে বই দেখে বুঝে যায় মোমের পুতুলের কিছু বিশেষত্ব আছে ৷ নাহলে সব বই খাতার প্রথম পাতায় মোমের পুতুল লেখা কেন থাকবে ৷ রাজু আসলেই জিজ্ঞাসা করবে বিদিশা৷
-" কি বুঝলেন ডাক্তার ?"
সুন্দরী ডাক্তারকে দেখে জিজ্ঞাসা করে রাজু ৷ নম্র ভাবে শীলা খালার দিকেতাকিয়ে বলে ।
-“ চিন্তা করলে চলবে না ৷ ব্লাড প্রেসার একটু বেশি ৷ তিন দিনের অসুধ দিচ্ছি তার পর আরেকবার আসুন আশা করি কাজ হবে ওষুধে ৷”
ইসরাত জাহান উষা MBBS ৷ নাম টা দেখে ভালো লাগলো রাজুর ৷
" আচ্ছা পেসেন্ট এর নাম কি পুরো নাম?"
শীলা খালা তার পুরো নাম ভুলে গেছে শীলা লিখেই এতদিন মাইনে তুলত ৷
-" শীলা বেগম "
বলে ওঠে রাজু ৷ আর রোগীর নামের পাশে আপনার নাম লিখে রাখছি আপনার ৷ দরকার হলে আপনার দেওয়া নাম্বারেই যোগাযোগ করব ৷ রাজিব আহমেদ ৷ রাজুর নাম রাজিব টা শীলা ভুলতেই বসেছিল ৷ তার কাছে রাজু রাজুই ৷ কিন্তু পানি খাওয়ার বোতলে নাম খোদাই করা না থাকলে জানায় হত না রাজুর নাম ৷
রাজু পড়িয়ে রাত্রে ঘরে ফিরে আসে ৷ কাল IAS এর পরীক্ষার ফল বেরোবে ৷
খালার শরীর আরো খারাপের মধ্যে যাচ্ছে ৷ তিন দিন ওষুধ খেয়েও খালার শরীরের অবস্তার উন্নতি লক্ষ্য করা গেল না ৷ রাজু IAS এ পাস করতে পারে নি ৷ কিন্তু তাতে রাজু ভেঙ্গে পরে নি ৷ সে MSC পাশ করেছে ভালো ভাবেই ৷ সেটাও তার উপরি পাওনা ৷ কোনদিন কেউ ভাবতেই পারে না একটা জুতা পালিশ করা সুইপার এর ঘরে মানুষ ছেলে ফিসিক্স এ MSC করতে পারে ৷ খালা বোঝে না IAS কত বড় পরীক্ষা , এই প্রথম রাজুকে ফেল করতে দেখে তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল ৷ বুকের ব্যথাটা বেড়েছে ৷ আজ ডাক্তারের কাছে যেতে হবে ৷ বিদিশা রাজুর পাশে দাঁড়ালেও বিদিশা কে বড্ড এক ঘেয়ে লাগে ৷ আর রাজু বিদিশা কে নিজের ভবঘুরে জীবনের সাথে মিলিয়ে নিতে পারে না ৷ শান্তিনিকেতন এর থলেতে ম্যান হান্ট বইটা ঢুকিয়ে নিল , সময় লাগলে বই টা হসপিটালে বসেই শেষ করবে ৷ রাজু দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তার নিজের পথে ৷ খালাকে হসপিটালে রেজিস্ট্রেসন করাতেই একজন নার্স বলল
-" চলুন ডাক্তার ডাকচ্ছে " ৷
খালাকে ঘরে ঢুকিয়ে ডাক্তার সব দেখে বললেন
-" একটা ECG আর হার্ট এরঅবস্তা বুঝতে এনজিও করতে হবে ৷ এনজিও পরে করলেও হবে কিন্তু আজ ECG একটা করা দরকার ৷ "
ডাক্তার এরনরম কথা গুলো হয়ে মোহিত হয়ে যায় রাজু ৷ নর্মদার পবিত্র জলের মত ঝরে পড়ছে কথা গুলো । হাথের বই হাথেই থেকে যায় হা করে তাকিয়ে থাকে ৷
-" হ্যান করুন !"
আমি বরং বাইরে বসি ! হয়ে গেলে জানাবেন ৷ রাজু জানে না কি করতে হবে ৷ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নার্স বলল
-" কাউন্টার এ ১২০ টাকা জমা দিয়ে রসিদ করিয়ে নিন ৷ আমরা পেসেন্ট কে নিয়ে যাচ্ছি ৷ খালা চলে যেতেই উষা বলে উঠলেন
-" খুব গল্পের বই পড়েন মনে হয় , স্বপ্ন দেখতে ভালো লাগে বুঝি ?"
হাথের বইটা লুকাতে গিয়েও পারে না রাজু ৷ হাথ থেকে বইটার পাতা উল্টে বলেন
- " বইটা খুজছিলাম জানেন , আপনার পড়াহলে দেবেন তো আমায় জেমস এর বই আমার ভালো লাগে ৷ "
রাজু হাবা গোবার মত বলে ওঠে
-" নিন না নিন পরে দিয়ে দেবেন !"
রাজু শুন্য মনে বসে থাকে , তুষের আগুনের মত জ্বলছে তার ব্যর্থতার ফলক ৷ সামনের বার জান লড়িয়ে দেবে ! খালা ক্লান্ত হয়ে আসে কাছে ৷ ডাক্তার রাজুকে ডাকে
-" মাইনর স্ট্রোকে কাহিল হয়ে পড়েছেন , এনজিও করতে হবে , কোনো টেনসন দেওয়া চলবে না আর রোগীকে একা রাখবেন না ৷ ওষুধ বুঝিয়ে বললেন , লাল ট্যাবলেট টা তখনি দেবেন যদি মুখ দেখে বোঝেন যে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ৷ "
শীলা খালা বাঁচেন নি ৷ ৭ দিনের দিন হার্ট ফেল করেই মারা যান ৷ রাজুর আর পিছুটান নেই ৷ উষা খবর পেলেও তার ব্যস্ততার জন্য রাজুকে সমবেদনা জানানো হয় নি ৷ দিন রাত বইয়ের মধ্যেই ডুবে আছে রাজু ৷ বিদিশা আসা অনেক অনেক কমিয়ে দিয়েছে ৷ ঘৃনা নিয়ে মানুষ ভালো বসতে পারে না বিদিশাও তার ব্যতিক্রম নয় ৷ সকালের বিদিশা দের বাড়ির ফোনে উষার ফোন রাজুর জীবনে যেন একটু রং এনে দিল ৷
-" আচ্ছা আপনার বই টা ফেরত দেওয়ার ছিল , আজ সন্ধ্যায় কি করছেন , চাও খাওয়া যাবে আর আর আপনার স্টক দেখা যাবে , কি বলেন !"
রাজু আল্লাদে আটখানা হয়ে বলে
-" আমার আর স্টক কোথায় তবে কি পছন্দআপনার ?"
-" নেলসন ডি মিল্লে আছে ?" উষা জিজ্ঞাসা করে !
-" নাইট ফল বলছেন কি ? আছে !"
-" পাওলিনি , রোলিং এসব পাব আপনার কাছে ???" উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞাসা করে উষা !
-“অদ্ভূত মানুষ মশাই আপনি আমি ৬ টায় যাব !"
-" আচ্ছা কোথায় দাঁড়াতে হবে ?" রাজু জিজ্ঞাসা করে ৷ উষা বলে
-" আপনি মেডিকেলের মোড়ে আসুন না ওখান থেকে নিয়ে যাবেন খন ৷ "
রাজু কথা বাড়ায় না
-" ঠিক আছে !"
কথা শেষ হয়ে যায় ৷ বিদিশার বাকাহাঁসি এড়িয়ে যায় রাজু ৷
রাজু অস্থির হয়ে যায় মনে মনে ৷একটা ডাক্তার মেয়ে রূপসী সুন্দরী তার বেকার জীবনে আসছে নিছক বইয়ের লোভে ! আশা রাখে না মনে ৷ সন্ধ্যে বেলা দুজনে এসে ঘরেঢোকে ৷ বিদিশা উষা কে দেখলেও কথা বলে না ৷ বিদিশা রাগে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় বন্ধুর বাড়ি ৷ উষা রাজুর ঘর দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় ৷ দু থাক ভর্তি MSC এর বই তার উপর দু আলমারি ভর্তি উপন্যাস ৷ মেঝেতে ডাই করা সাইন্স মাগাজিন ৷
-" ইম্প্র্রেসিভ হ্যান ?"
রাজু কিছু বলে না ৷ উষা আরাম করে রাজুর চিয়ারে বসে মজা করে বলে
-" কি চা খাওয়াবেন না !"
রাজু লজ্জা পেয়ে বলে
-" আমার তো কেউ নেই , আমার চা খেয়ে কি পোষাবে? বরণ কফি বানাই একটু !"
রান্না ঘরে গ্যাস জালিয়ে কফি বানায় ৷ আগেই বৃটানিয়ার কেক রেখে ছিল , একটা প্লেটে বাড়িয়ে দেয় ৷ রাজু সাহস করে প্রশ্ন করে
-" আপনি বিয়ে করেন নি ?
উষা খিল খিল করে হেঁসে প্রশ্ন করে
-" কেন আমাকে অবিবাহিতা মনে হয় !"
রাজুর মুখটা মলিন হয়ে যায় ৷ উষাপরিস্থিতি সামলে জবাব দেন "
-আরে বাবা লাস্ট ইয়ারেই তো ইন্টার্ন শেষ করলাম ৷ অপোলো ভালো অফফার দিলকলকাতা চলে আসলাম !"
রাজু মুখে হাথ দিয়ে বলল
-" আমি ভাবলাম আপনি ঢাকার মেয়ে !"
কফি খেয়ে উষা বললেন
-" আপনি সুন্দর রান্নাও করেন বুঝি ? আজ খাওয়াবেন নাকি রাতে ?"
রাজু বলে
-" কাজ চালাবার মত , লজ্জা দেবেন না আমার রান্না আপনার মুখেও উঠবে না " ৷
আচ্ছা কি বই পছন্দ দেখে নিন , আপনিতো অনেক দূর যাবেন রাত হয়ে যাবে!"
রাজু মিথ্যে আশা রাখে না উষা ডাক্তার তার উজ্জল ভবিষ্যত ৷ ভাবতে ভাবতে উষা প্রশ্ন করে
-" বাই দা ওয়ে , আপনি কি করেন ? আমার তো জিজ্ঞাসায় করা হয় নি !"
রাজু রাক ঢাক না করেই বলে দেয়
-" চাকরি খুজি, আর বাচ্ছা দের পড়িয়ে দু চার পয়সা হয় আরকি !"
-“আরে বাবা আপনার স্ট্রিম কি ?"
রাজু চাপা গলায় বলে
-" সাইন্স !"
-" আচ্ছা চলুন তো আমার খিদে পেয়েছে , আসুন দুজনে রান্না করে এখানেই খাই , হোটেল এ খেতে আমার রুচি হয় না !"
এবার রাজু অপ্রস্তুতে পরে যায় ৷ ডিম আর আলু পেয়াজ রসুন ছাড়া তারঘরে খাওয়ার মত কিছুই নেই ৷
-" আরে না না তাই কখনো হয় , বরণ চলুন একটা ভালো খাবার জায়গা আছে সেখানেই যাই " ৷
দুজনেই বেরিয়ে পরে মুঘলস এ খেলে ৫০০ টাকার নিচে পকেট কাটবে না ৷ তবুও টাকা পকেটে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ৷ ঢাকার রাস্তা একটু ফাঁকা ফাঁকা ৷ দুজনে হাটতে হাটতে যাচ্ছিল হোটেলের দিকে ৷
সন্ধ্যের সময় ফুর ফুর করে হওয়া দিচ্ছে ৷ দুজনের কাধেঁ কাঁধ ঠেকে যাচ্ছে কথা বলতে বলতে ৷ রাজুর উষাকে ভালো লেগেছে ৷ কিন্তু উষা কি রাজুর অতীত মেনে নেবে ? আর উষা যদি মেনে নেই তাহলেও উষার পরিবার? মিথ্যে সপ্নের জাল বোনে না রাজু৷ দু বই উঠিয়ে ছিল উষা , বই দুটো ধরিয়ে দেয় রাজুর হাথে ৷ পৃথিবীর ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র জীবিত দুটি অস্তিত্বের ভাবের আদান প্রদান কি হয় না হয় মহানগরীর ম্লান রাস্তার আলোতে তাবোঝা যায় না ৷ খাওয়া দাওয়া করতে করতে দুজনের ঘনিষ্টতা বারে বই কমে না ৷ উষা অজান্তেই রাজুর হাতে হাথ দিয়ে দেয় ৷ রাজু সে হাথ আকড়ে রাখবে জীবন ভর সে সাধ্যকোথায় ৷ উষার আজ বাড়ি যেতে ইচ্ছা করে না ৷ হয়ত নতুন মুক্তিরস্বাদ , তাই পাখিদের মত বাধা বন্ধন হীন অজানা জায়গায় উড়ে যেতে চায় ৷
উষাকে দেখে রাজু হারিয়ে যায় ৷ হাথ ধরেই বলে বসে
-" চলো আমার বাড়িযাই , গল্প করব রাত ভোর যাবে ?"
উষা মাথা নাড়ায় ৷ ঘরে এসে রাজু বিছানা পরিষ্কার করে নতুন বিছানাপাতে নতুন বেড কভার দিয়ে ৷ চারিদিক একটু সাজিয়ে নেয় ৷ উষা বসে তাকিয়ে থাকে রাজুর দিকে ৷ উষা কে প্রাণ পন পেতে চায় রাজু ৷ হাটু গেড়ে উষার সামনে বসে বলে
-" অনেক টা পথ যে চলতে হবে এখনো ?" উষা লজ্জায় ঘাড় ঘুরিয়ে রাখে ৷ ঢিপ ঢিপ বুকে উষার চিবুক টেনে রাজু চোখে চোখ মেলায় ৷ উষা চোখ বন্ধ করে আসতে আসতে রাজুর ঠোটের দিকে নিজের ঠোট নিয়ে যায় ৷
রাজু গোধুলির লাল অস্কাশের মত মনের আবির মেঘে উষা কে নিজের বুকেটেনে নেয় ৷ উত্তপ্ত শরীরে দুটো আত্মা মিশে যায় ৷ আর ভয় নেই রাজুর আজ সে একা না ৷ উষার বুকে মাথা রেখে ঝর ঝর করে কাঁদতে থাকে নির্ঝর একাকিত্বের বিভিষীখা কে ৷উষা রাজুকে জড়িয়ে কানের পাশে ফিসফিস করে বলে
-" জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ৬ ঘন্টা দেরিতে ছাড়বে " ৷
(বিদেশী গল্প অবলম্বনে)
গত বছরে হিন্দি একটা ব্লগে পরেছিলাম, সামান্য পরিবর্তন করে দিলাম, আমার প্রথম অনুবাদ সামান্য ভুলচুক থাকতে পারে!
বিষয়: সাহিত্য
১৪৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন