জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ বা ইসলামী আন্দোলন ফরজ ০২
লিখেছেন লিখেছেন তিতুমীর সাফকাত ১৮ নভেম্বর, ২০১৩, ১১:১৮:৫৭ সকাল
জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ বা ইসলামী আন্দোলন ফরজ 01
রাসুলের পরিচয়ঃ
আল্লাহ আদেশ নিষেধ মানতে হবে তা মানুষকে শিখানোর জন্য আল্লাহ তা’আলা কতৃক নিযুক্ত একমাত্র শিক্ষক। আল্লাহর উপর ঈমান আনার সাথে সাথে নবী রাসুলগনের উপরও ঈমান আনতে হবে। রাসুলের পরিচয়, দায়িত্ব ও মর্যাদা প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক কোরআন শরীফে ঘোষনা করেছেন:
যেমন আমি পাঠিয়েছি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য একজন রাসুল, যিনি তোমাদের নিকট আমার বানীসমূহ পাঠ করবেন এবং তোমাদের পবিত্র করবেন; আর তোমাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও তাঁর তত্বজ্ঞান এবং শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা কখনো তোমরা আগে জানতে না। সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না। (সুরা আল বাক্বারা: ১৫১-১৫২)
হে মুমিনগন! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর রাসলের সা: আনুগত্য কর এবং নিজেদের কর্ম বিনষ্ঠ করো না । (সুরা মুহাম্মদঃ ৩৩)
হে মুহাম্মদ ঘোষনা করে দাও, ওহে মানব জাতি, আমি তোমাদের সকলের প্রতি আল্লাহর রাসূল। (সুরা আল আরাফঃ ১৫৮)
হে মুহাম্মদ! আমি তোমাকে সমগ্র মানব জাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে পাঠিয়েছি। (সুরা আল সাবাঃ ২৮)
ঈমানের ভিত্তিতে জীবন যাপনের পথে যত প্রকার বাধা হতে পারে তার সবগুলোকে এক কথায় ত্বগুত বলে। ত্বগুত কে অস্বীকার করা অমান্য করা ঈমানের প্রথম শর্ত। আর সবচেয়ে বড় ত্বগুত হচ্ছে রাষ্টীয় ও সামাজিক আইন যে গুলো আল্লাহর নির্দেশের বিরোধী। পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ বলেছেন-
দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। নি:সন্দেহে হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে এখন যারা গোমরাহকারী ত্বাগুত দেরকে মানবেনা এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল যা ভাংগবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন। (সুরা আল বাক্বারাহ: ২৫৬)
ইমানদারের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হচ্ছে ত্বগুত কে এতদুর দুর্বল ও দমন করা যেন ঈমানের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে- রাসুল স: এর ও এটা প্রধান দায়িত্ব ছিলো।
তিঁনিই তার রাসুলকে পথ নির্দেশ ও সত্যধর্ম দিয়ে প্রেরণ করেছেন। যাতে একে সব ধর্মের উপড় প্রবল করে দেন যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। (সুরা আছছফ্:৯)
ত্বগুতের বিরুদ্ধে একা লড়াই করা যায়না, দলবদ্ধ চেষ্টা করতে হয়। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেছেন-
আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন যারা তার পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর। (সুরা আছছফ্:৪)
আর তোমাদের কি হলো যে তোমরা আল্লাহর রাহে লড়াই করছনা দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে যারা বলে হে আমাদের পালনকর্তা আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিস্কৃতি দানকর; এখানকার অধীবাসিরা যে অত্যাচারী, আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারন করে দাও। যারা ঈমানদার তারা যে জেহাদ করে আল্লাহর রাহেই। পান্তরে যারা কাফের তারা লড়াই করে শয়তানের পক্ষে সুতরাং তোমরা জেহাদ করতে থাক শয়তানের পক্ষালম্বন কারীদের বিরুদ্ধে (দেখবে) শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল। (সুরা আন্-নিসা: ৭৫-৭৬)
তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। (সুরা আল ইমরান: ১১০)
সকল ত্বগুতের বিরুদ্ধে একই সাথে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে, কিন্তু ক্ষেত্র পৃথক পৃথক। যে যেখানে বিচরণ করবে সে সেখানকার ত্বগুতের বিরুদ্ধে লড়বে। সকল বোঝা একত্রে বহন করতে হবেনা। সবাই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ও বিচরণ ক্ষেত্রে ত্বগুতের বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারলেই সর্বত্রই ত্বগুত পরাজিত হবে। আর সর্বক্ষেত্রে ত্বগুতকে পরাজিত করতে পারলেই ইসলাম কায়েম হবে। লড়াইয়ের জন্য যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আর অস্ত্রে সুসজ্জিত হতে হবে। সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে কোরআন, হাদীসের জ্ঞান, আর পোশাকের রং হবে আল্লাহর রং (পোশাক অর্থ আচরণ)। সবচেয়ে বড় যুদ্ধ-কৌশল হচ্ছে তাক্বওয়া। তাক্বওয়ার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে খোদাভীতি, পরহেযগারী, বিরত থাকা, আত্নশুদ্ধি। আর শরীয়াতের পরিভাষায়, আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে তাঁর বিধি বিধান মেনে চলার নাম তাক্বওয়া। তাক্বওয়া বা খোদাভীতি সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল-কোরয়ানে আল্লাহ বলেছেন-
নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিক সম্মানিত যিনি তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক খোদাভীরু। নি:সন্দেহে আল্লাহ সব কিছু জানেন এবং সব বিষয়ে অবহিত। (সুরা-হুজরাত: ১৩)
প্রকৃত মুমিনদের বৈশিষ্টের মধ্যে রয়েছে: আল্লাহর স্বরনে তাদের দিল কেপে উঠে, তাদের সামনে আল্লাহর বানী উচ্চারিত হলে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। তারা আল্লাহর উপড় আস্থাশীল ও নির্ভরশীল হয়ে থাকে, নামাজ কায়েম করে এবং আল্লাহ প্রদত্ত রিযিক থেকে ব্যয় করে। বস্তুত: এরাই হচ্ছে সত্যিকারের মুমিন তাদের জন্য আল্লাহর নিকট খুবই উচ্চ মর্যাদা রয়েছে, আরো রয়েছে অপরাধের ক্ষমা ও অতিউত্তম রিযিক। (সুরা আনফাল: ২-৪)
মুমিন নারী ও পুরুষের আরো বৈশিষ্ট এইযে, তারা পরস্পরের বন্ধু সাহায্যকারী। তারা একে অপরকে যাবতীয় ভাল কাজের নির্দেশ দেয়। অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, নামাজ কায়েম করে, যাকাত পরিশোধ করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনগত্য করে। উহারা এমন লোক যাদের প্রতি আল্লাহর রহমত অবশ্যই নাজিল হবে। (সুরা আত-তওবা: ৭১)
হে ঈমানদার লোকেরা। আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেক ব্যক্তি যেন লক্ষ্য করে যে সে আগামী দিনের জন্য কি সামগ্রীর ব্যবস্থা করে রেখেছে। আল্লাহকেই ভয় করতে থাক, আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাদের সে সব আমল সম্পর্কে অবহিত যা তোমরা কর। (সুরা হাশর: ১৮)
হে ঈমানদারগন, আল্লাহকে ভয় কর, তাকে যেরুপে ভয় করা উচিৎ। তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সুরা আলে ইমরান: ১০২)
ঈমানের শর্ত পূরণ করার জন্য অন্তরে বিশ্বাস ও মুখে ঘোষনায় কোন বাধা নেই, কিন্তু কাজে প্রমানের ক্ষেত্রে বাধা থাকার কারনে এই শর্ত পূরণ করা যাচ্ছেনা, তাই ঈমান ও পূর্নতা অর্জন করতে পারছেনা। ঈমানের শর্ত পূর্ন না হলে তা ঈমানরুপে আল্লাহর কাছে স্বীকৃতি পাবার আশা করা যায়না যদি চেষ্টা ও মরনপন লড়াই করা না হয়। তাই ঈমানের পথে বাধা দুর করতে সংগবদ্ধ ভাবে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আর লড়াই করতে হলে অবশ্যই একটি সংগঠন থাকা প্রয়োজন। সংগঠন শব্দের সাধারণ অর্থ সংঘবদ্ধ করণ। এর বিশেষ অর্থ দলবদ্ধ বা সংঘবদ্ধ জীবন। সংঘঠনের আরবী প্রতিশব্দ তানযীম আল্লাহর জমীনে বাতিল ও খোদাদ্রহী মতাদর্শ উৎখাত করে তথায় ইসলামী জীবনাদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য যে সংগঠন প্রানান্তকর প্রচেষ্টা চালায় তাকে ইসলামী সংগঠন বলে।
পবিত্র কোরআনে সংগঠন সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন-
তোমাদের মধ্যে এমন একদল লোক অবশ্যই থাকতে হবে, যারা মানব জাতিকে কল্ল্যানের পথে আহবান জানাবে, সৎকাজের আদেশ দেবে অসৎ কাজে বাধা দেবে, তারাই হল সফলকাম। (সুরা আলে ইমরান: ১০৪)
আর সেই ব্যক্তির কথা অপেক্ষা অধিক ভাল কথা আর কার হতে পারে? যে আল্লাহর দিকে ডাকে, নেক আমল করে এবং বলে আমি মুসলমান। (সুরা হা-মীম সিজদা: ৩৩)
তোমরা সেই সব লোকদের মত হয়োনা যারা বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং স্পষ্ট ও প্রকাশ্য নির্দেশ পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত রয়েছে, তাদের জন্যে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। (আলে ইমরান-১০৫)
হযরত হারিসুল আশয়ারী রা: হতে বর্ণিত, নবী করীম সা: ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি (১) জামায়াত বদ্ধ হবে, (২) নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে, (৩) তার আদেশ মেনে চলবে, (৪) আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করবে, (৫) আর আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, যে ব্যক্তি ইসলামী সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘত দূরে সরে গেল, সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলল, তবে সে যদি সংগঠনে প্রত্যাবর্তণ করে তো স্বতন্ত্র কথা। আর যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের নিয়ম নীতির দিকে (লোকদের) আহবান জানায় সে জাহান্নামী। যদিও সে রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করে। (তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ)
হযরত আবু হোরায়রা রা: হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল সা: কে এ কথা বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য কে অস্বীকার করত: জামায়াত পরিত্যাগ করল এবং সেই অবস্থায়-ই মারা গেল, সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। (মুসলিম)
রসূলুল্লা সা: অরো বলেছেন,
জামায়াতের প্রতি আল্লাহর রহমতের হাত প্রসারিত থাকে। যে জামায়াত ছাড়া একা চলে, সেতো একাকি দোযখের পথেই ধাবিত হয়। (তিরমিযী)
(লেখাটা আমার নয় কালেক্টেড । কোথা থেকে সংগ্রহ করে রেখেছিলাম ভুলে গেছি । )
বিষয়: বিবিধ
২৯৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন