উপমহাদেশের ইসলামিক রাজনৈতিক আন্দোলন (বিংশ শতাব্দি) ০২
লিখেছেন লিখেছেন তিতুমীর সাফকাত ১৯ অক্টোবর, ২০১৩, ০৮:২১:২১ রাত
( ২ )
পাকিস্তান আমলে এ অঞ্চলে ইসলামী দলগুলোর ভূমিকা
বৃটিশদের কারসাজি এবং মুসলিম লীগের অপরিনামদর্শী তৎপরতার দরুন ভারত বিভক্তির পর পূর্ব-পাকিস্তান নামক অঞ্চলটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় দিক থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন ও অরক্ষিত হয়ে পড়ে। একই রাষ্ট্রভূক্ত দুই অংশের দূরত্ব হয়ে যায় প্রায় ১৯৩২ কিলোমিটার। মাঝখানে থেকে যায় শত্রু রাষ্ট্র ভারত। ভৌগলিকভাবে শুধুমাত্র দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর ছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের বাকী তিন দিকই রয়ে যায় ভারতের বেষ্টনীতে। রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের অধীনতা, অর্থনৈতিকভাবে শাসকদের বিমাতাসুলভ আচরণ, রাষ্ট্রের মূল নেতৃত্বের সাথে ভাষা ও সংস্কৃতিগত বৈপরিত্য ইত্যাদি সমস্যা ছাড়াও তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের ইসলামী নেতৃবৃন্দের জন্য আরো অনেক সংকট দেখা দেয়। প্রথমত, ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার আশায় পাকিস্তান সৃষ্টির যুক্তি কোনভাবেই তাদের অনুকূলে যায়নি। কারণ শাসকরা প্রথম দিন থেকেই বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে পাকিস্তানকে একটি সেক্যুলার রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যেতে শুরু করে। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি ইসলামী দলেরই মূল নেতৃত্ব ও কেন্দ্র পড়ে যায় পশ্চিম-পাকিস্তানে। ফলে তাদের কর্ম চেতনায় বড় ধরণের ছন্দপতন ঘটে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, পাকিস্তান সৃষ্টির সময় এ অঞ্চলে মুসলিম লীগই ছিল প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল। আরও যে কয়টি দল তখন ইসলামী দল হিসাবে পরিচিতি লাভ করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, জামায়াতে ইসলামী এবং নিখিল ভারত জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম যা পরবর্তীতে নেজামে ইসলাম পার্টি নামে পুণঃর্গঠিত হয়। তাছাড়া পরবর্তীতে খেলাফতে রব্বানী নামের একটি দলও এখানে বেশ তৎপর ছিল। বর্তমানে অবশ্য এর অস্তিত্ব বিদ্যমান নেই।
পাকিস্তান সৃষ্টির প্রথম থেকেই পশ্চিম-পাকিস্তানী নেতারা পূর্ব-পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে এ বৈষম্যের ছাপ ছিল সুস্পষ্ট। দিনে দিনে পুঞ্জীভূত এ বৈষম্যের ফলে পূর্ব পাকিস্তানে গড়ে ওঠে কতগুলো বড় বড় আন্দোলন। এগুলোর মধ্যে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ এর ছাত্র আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ এর মুক্তিসংগ্রাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব আন্দোলনের সময় পাকিস্তানপন্থী ইসলামী দলগুলোর নেতিবাচক আচরণে গণমানুষের অধিকার আদায়ে ইসলামের ভূমিকা নিয়ে জনমনে তৈরী হয় বিভ্রান্তিকর আবহ। এই প্রসঙ্গে আমি ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৯ এর অভ্যুত্থান পর্যন্ত তৎপর কয়েকটি ইসলামী দলের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করব।
দলগুলো হচ্ছে
১. মুসলিম লীগ
২. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম
৩. নেজামে ইসলাম পার্টি
৪. জামায়াতে ইসলামী
১. মুসলিম লীগ
১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় মুসলিম লীগ। প্রধানতঃ ইংরেজ শাসকদের অনুগ্রহ ভাজন উপমহাদেশীয় তথাকথিত প্রগতিশীল মুসলিম নেতৃবৃন্দের সেই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন নবাব ভিকারুলমূলক। সভায় নবাব সলিমুল্লাহর প্রস্তাব অনুসারে সর্বসম্মতিক্রমে এই দলটির নাম রাখা হয় 'নিখিল ভারত মুসলিম লীগ'। ভারতবর্ষে মুসলমানদের নিয়ে ইংরেজদের নীল-নকশা বাস্তবায়নের সহযোগী শক্তি হিসাবেই এ দলটি কাজ শুরু করে। বাহ্যত ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেও এ দলের প্রধান ভূমিকা ছিল জাতীয়তাবাদ ও আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে বিচ্ছিন্নতাবাদের চেতনাকে সংগঠিত করা।
কংগ্রেসের মত মুসলিম লীগেরও প্রতিষ্ঠাকালীন অন্যতম ঘোষিত লক্ষ্য ছিল ইংরেজ শাসকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করা। নওয়াব সলিমুল্লাহ নিজে ছিলেন ইংরেজদের সাথে সহযোগিতার পক্ষপাতী। মুসলিম লীগের অন্যান্য নেতারাও দাবী-দাওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন নিবেদন জানানোর বাইরে নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রামের কথা চিন্তা করেননি। ১৯০৬ সালের যে সম্মেলনে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়, তাতে যোগদানের জন্য আমন্ত্রিত হয়েও সে আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ব্যারিষ্টার মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তাঁর বক্তব্য ছিল কংগ্রেসের বাইরে নতুন আরেকটি সংগঠন সৃষ্টি করা হলে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে অনৈক্য বাড়বে। তাঁকে বলা হত হিন্দ-মুসলমান মিলনের অগ্রদূত। পরে অবশ্য ব্যারিষ্টার জিন্নাহ কংগ্রেস ছেড়ে মুসলিম লীগে যোগ দেন। শুধু তাই নয়, একজন ইসমাঈলী শীয়া হওয়া সত্ত্বেও তিনি মুসলিম লীগের সভাপতির পদ লাভ করেন এবং তার সভাপতিত্বেই মুসলিম লীগ পাকিস্তান সৃষ্টির আন্দোলন করে।
বৃটিশ শাসনের শেষের দিকে পাকিস্তান সৃষ্টির প্রস্তাবকে সর্বস্তরের মুসলিমদের নিকট গ্রহণযোগ্য করার জন্য এই দলের তৎকালীন নেতারা বক্তৃতা-বিবৃতি ও প্রচার-পত্রের সাহায্যে ইসলামের বিজয়কে পাকিস্তান কায়েমের লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেন। 'পাকিস্তানের লক্ষ্য কি, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ'- এ ধরণের শ্লোগান তারা জনসম্মুখে তুলে ধরেন। তদানিন্তন প্রাদেশিক মুসলিম লীগের পক্ষে প্রচার সম্পাদক আবুল মনসুর আহমদ স্বাক্ষরিত একটি প্রচারপত্রে 'হুকুমতে ইলাহিয়া' প্রতিষ্ঠাকে পাকিস্তান কায়েমের উদ্দেশ্য বলে ঘোষণা করা হয়। এভাবে তারা মানুষকে বুঝায় যে, পাকিস্তান কায়েম হলেই ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হবে।
কিন্তু দেশ ভাগের মাধ্যমে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম লীগ ক্ষমতাসীন হয়ে ইসলাম কয়েমের ধারে কাছেও হাঁটেনি। ক্ষমতা রক্ষা করাই হয়ে যায় তাদের একমাত্র আদর্শ। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ইসলামী রাষ্ট্রের শ্লোগানে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন পাকিস্তানের প্রথম কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাই গঠিত হয় হিন্দু ও কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের মন্ত্রীদের সমন্বয়ে।
ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের কান্ড দেখে দলটির স্বাধীনচেতা লোকেরা বেজায় ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হয়ে উঠে। অনেকেই নবাব-জমিদারদের মুসলিম লীগ ছেড়ে একটি 'জনগণের মুসলিম লীগ' গঠনে উদ্যোগী হয়। সে অনুসারে আসাম থেকে আগত মুসলিম লীগ নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও টাঙ্গাইলের জনাব শামসুল হককে যথাক্রমে সভাপতি ও সেক্রেটারী করে ১৯৪৯ সনের ২৪ জুন 'আওয়ামী মুসলিম লীগ' নামে নতুন আরেকটি দল গঠন করা হয়। পরবর্তীকালে হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী এই দলের সাথে সম্পৃক্ত হন এবং তার অনুসারী শেখ মুজিবুর রহমান নিযুক্ত হন এর অন্যতম জয়েন্ট সেক্রেটারী। মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগিশ, এডভোকেট আতাউর রহমান খান প্রমুখ ব্যক্তিত্বও এই দলের সাথে সম্পৃক্ত হন। এ দলটির মাধ্যমেই তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে অঞ্চল-ভিত্তিক রাজনীতির এক নতুন ধারা সূচিত হয়। কিন্তু এর দ্বারা ইসলামের তো কোন উপকার হয়ইনি বরং এক সময় দলটির নাম থেকে 'মুসলিম' শব্দটিকেই উচ্ছেদ করে (১৯৫৫সালে) সম্পূর্ণ সেক্যুলার আওয়ামী লীগের জন্ম হয়। এভাবেই মুসলিম লীগ সৃষ্টির মাধ্যমে মুসলমানদেরকে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেতনা থেকে বিরত রাখা হয়। ইংরেজ শাসনের পূর্বে ভারতবর্ষে মুসলমানদের আটশ' বছর শাসন করার সুদীর্ঘ ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও হিন্দুদের হাতে ভবিষ্যতে মুসলমানদের স্বার্থ ভুলুন্ঠিত হওয়ার কাল্পনিক ভয় দেখিয়ে উম্মাহ্র মধ্যে জন্ম দেয়া হয় সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের এক কূটিল চিন্তা। হুকুমতে ইলাহিয়ার নামে মনোমুগ্ধকর শ্লোগানের আবরণে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয় বিশাল মুসলিম শক্তিকে। এদের ভুল রাজনীতি চর্চার পরিণতিস্বরূপ গোটা পরিস্থিতিই চলে যায় সেক্যুলারদের হাতের মুঠোয়।
অবশ্য ইসলামের নামে প্রতারণার দায়ে মুসলিম লীগও এ ভূখন্ডে জনগণের প্রচন্ড ক্ষোভের মুখে পড়ে। এতো জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসার মাত্র সাত বছরের মাথায় তারা একেবারে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক নির্বাচনে ৩০৯টি আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ মাত্র ৯টি আসনে নির্বাচিত হয়। এতে মুসলিম লীগ শুধু ক্ষমতাচ্যুতই হয়নি বরং পূব-পাকিস্তানের রাজনৈতিক মঞ্চ থেকেই উৎখাত হয়ে যায়।
২. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম
এটি মূলতঃ ভারতবর্ষকে বৃটিশ শাসনের কবল থেকে মুক্ত করার সংগ্রামে লিপ্ত বিপ্লবী উলামাদের একটি দল ছিল। যারা ছিলেন শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.) এর ভাবশিষ্য। জেহাদে আযাদী নামে দীর্ঘ সংগ্রামের শেষের দিকে ১৯১৯ সালে এই দলটি সাংগঠনিক রূপ লাভ করে। প্রথমে এর নামকরণ করা হয় 'জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ'। শায়খুলহিন্দ মাওলানা মাহমূদুল হাসান দেওবন্দীকে এই দলের সদর বা প্রধান নিযুক্ত করা হলেও তিনি তখন মাল্টা দ্বীপে বৃটিশদের হাতে বন্দী থাকায় মুফতী কেফায়েতুল্লাহকে ভারপ্রাপ্ত সদর ঘোষণা করে এর কার্যক্রম শুরু করা হয়। ইংরেজ শাসনের শেষপ্রান্তে এসে জমিয়ত নেতৃবৃন্দ বৃটিশ খেদাও আন্দোলনের পাশাপাশি মুসলমান ও ইসলামের স্বার্থে ভারতকে অখন্ড রাখার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। দেশভাগ হয়ে যাওয়ার পর এ অঞ্চলে জমিয়তের রাজনৈতিক তৎপরতা অনেকাংশে হ্রাস পায়। পশ্চিম-পাকিস্তানের তুলনায় তখন পূর্ব-পাকিস্তানে জমিয়তের শক্ত কোন সাংগঠনিক অবস্থানও ছিলনা। দলের প্রধান সারির নেতারা হয় ভারতের নাহয় পশ্চিম-পাকিস্তানের বাসিন্দা ছিলেন। এর পাশাপাশি আরো দুটি কারণে জমিয়ত এখানে দুর্বল ছিল। এক, বৃটিশ শাসন অবসানের পর এই উপমহাদেশে পুর্ণাঙ্গ ইসলাম বা খিলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তাদের কোন পরিকল্পিত কর্মসূচী ছিলনা। দুই, এই অঞ্চলে মুসলিম লীগের প্রাধান্য থাকার কারণে সাধারণভাবে জনমত গড়ে উঠেছিল ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান হওয়ার পক্ষে। ফলে পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধী শক্তি হিসাবে জমিয়তের জনসম্পৃক্ততাও ছিল কম। পূর্ব-পাকিস্তানে এই দলটি অনেকটা সিলেটেই সীমাবদ্ধ থাকে। এর আরেকটি সীমাবদ্ধতা হলো এ দলটি শুধুমাত্র উলামা ও মাদরাসা ছাত্র-নির্ভর। জনসম্পৃক্ততা না থাকায় '৪৭ পরবর্তী সময়ে পূর্ব-পাকিস্তানে জমিয়ত কেবল কিছু ধর্মীয় ইস্যুতে মিটিং-মিছিল ছাড়া সার্বিক রাজনীতি ও জাতীয় ইস্যুতে প্রভাব ফেলার মত কোন ভুমিকাই পালন করতে পারেনি।
৩. নেজামে ইসলাম পার্টি
১৯৪৫ সালের ২৮ ও ২৯ অক্টোবর কলিকাতার মুহাম্মদ আলী পার্কে মুসলিম লীগের প্রত্যক্ষ সমর্থনে একটি উলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন থেকে প্রতিষ্ঠিত হয় 'নিখিল ভারত জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম' নামে একটি নতুন সংগঠন। এই নতুন জমিয়ত পাকিস্তান প্রশ্নে মুসলিম লীগের পক্ষ নেয়। কিন্তু দেশভাগের পর মুসলীম লীগ নেতৃবৃন্দের ওয়াদা ভঙ্গের ফলে নবগঠিত পাকিস্তানে 'নেজামে ইসলাম' তথা ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়া সুদূর পরাহত দেখে তারা নিরাশ হয়ে পড়েন। এক প্রকার প্রতারিত হয়েই ১৯৫২ সালে নিখিল ভারত জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নেতৃবৃন্দ মুসলিম লীগের সঙ্গ ত্যাগ করে 'নেজামে ইসলাম পাটি' নামে পৃথক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই লক্ষ্যে '৫২ সালের ১৮, ১৯ ও ২০ মার্চ বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার হযরত নগরে দলটির কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অধিবেশনেই মাওলানা আতহার আলী (রহ.) কে সভাপতি, মাওলানা সৈয়দ মুসলেহ উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক এবং মাওলানা আশরাফ আলী ধর্মন্ডলীকে সহকারী সম্পাদক নির্বাচিত করে 'নেজামে ইসলাম পার্টি'র কার্যক্রম শুরু হয়। যে কোন মূল্যে পাকিস্তানে নেজামে ইসলাম তথা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে এই পার্টির প্রধান লক্ষ্য হিসেবে স্থির করা হয়। এই একটি মাত্র কথার আকর্ষণ এবং মুসলিম লীগের তুলনায় এই দলের নেতৃতে বড় বড় উলামা থাকায় অল্পদিনেই নেজামে ইসলাম পার্টি একটি শক্তিশালী বৃহৎ দলে পরিণত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে প্রচলিত ধারায় রাজনীতি করা এবং সেক্যুলার রাজনীতির সহযোগী শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হওয়ায় এই দল নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। এর প্রতিষ্ঠাতা নেতাগণ যথেষ্ঠ যোগ্য এবং ক্ষমতা সম্পন্ন আলিম হওয়া সত্বেও পশ্চিমা ধারার গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে কুরআন-সুন্নাহ বিহীন সংবিধান দ্বারা পরিচালিত সরকারে অংশ নিয়েছেন। অথচ এমনটি না করে গোটা পশ্চিমা ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবার মত জনসমর্থন এক সময় তাদের ছিল। কিন্তু এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি তারা পরিহার করেছেন। যার ধারাবাহিকতায় বর্তমানে এটি একটি নামে মাত্র দলে পরিণত হয়েছে।
যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচিত সরকারে নেজামে ইসলামের অংশ গ্রহণ
পশ্চিমা ধারার গণতান্ত্রিক নির্বাচন নেজামে ইসলাম বা ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি না হওয়া সত্ত্বেও ১৯৫৪ সালে নেজামে ইসলাম পার্টি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়। শুধু তাই নয়, এই নির্বাচনে তাদের এককালের পৃষ্ঠপোষক ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে পরাজিত করার লক্ষ্যে অপরাপর বিরোধী দলগুলোর সমন্বয়ে একটি যুক্তফ্রন্টও গঠন করা হয়। এই ফ্রন্টে নেজামে ইসলাম পার্টি ছাড়া আরও যে সব দল ছিল সেগুলো হলো আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ ও কৃষক শ্রমিক পার্টি। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রতীক ছিল 'নৌকা'। যা বর্তমানে আওয়ামী লীগের পরিচয় চিহ্নে পরিণত হয়েছে। ফ্রন্টের পক্ষ থেকে ২১-দফা দাবি সম্বলিত একটি নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করা হয়। এর ভূমিকায় শুধু বলা হয়: 'কুরআন ও সুন্নাহ-বিরোধী কোন আইন প্রণয়ন করা হবে না।' ব্যাস এই নেতিবাচক কথাটুকু ছাড়া পুরো ইশতেহারে ইসলামের সপক্ষে কোন ইতিবাচক বক্তব্য ছিল না। এতেই প্রমাণ হয়ে যায় যে এই নির্বাচন নেজামে ইসলাম কায়েমের নির্বাচন ছিলনা। তবু নির্বাচন পরবর্তী কুরআন-সুন্নাহ বিহীন সংবিধান দ্বারা পরিচালিত সরকারে নেজামে ইসলাম পার্টি অংশ নেয় এবং মন্ত্রিত্ব লাভের সুবাদে গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারনী ভূমিকা পালন করে। জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে দলটির ৩৬ জন নেতা নির্বাচিত হন। জাতীয় পরিষদে সংসদীয় দলের নেতা ছিলেন দলীয় সভাপতি মাওলানা আতহার আলী (রহ.)। এডভোকেট মৌলভী ফরিদ ছিলেন কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রী। প্রাদেশিক পরিষদের স্পীকার ছিলেন আব্দুল ওহাব খান। এছাড়া আইন, ভূমি ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ও ছিল নেজামে ইসলাম পার্টির মন্ত্রীদের দায়িত্বে। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী মুহাম্মদ আলী পরবর্তীতে নেজামে ইসলাম পার্টিতে যোগ দিলে তাকে দলের সভাপতি নিযুক্ত করা হয়।
যুক্তফ্রন্টের সরকার ছিল খুবই ক্ষণস্থায়ী, দুর্বল এবং অন্তর্কলহে জর্জরিত। মাত্র ৫৭ দিনের মাথায় এসে ১৯৫৪ সালের ৩০ মে এই সরকারের মন্ত্রীসভাকে বরখাস্ত করা হয়। এ ধরণের জোট ও সরকারে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে নেজামে ইসলাম পার্টি তাদের মূল দাবী তো পূরণ করতে পারেইনি বরং এর পর থেকে তারা দ্রুত জনগণের আস্থা হারাতে শুরু করে। তবুও পরবর্তীতে ইসলামী দলগুলোর জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করা এবং সেক্যুলার সংবিধান দ্বারা পরিচালিত সরকারে অংশ নেওয়ার জন্য এসব ঘটনাবলী দলীল হয়ে দেখা দেয়।
৪. জামায়াতে ইসলামী
এ দলটি গঠন করা হয় ১৯৪১ সালের ২৫ আগষ্ট। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন পাঞ্জাবের অধিবাসী আল্লামা আবুল আলা মওদুদী (রঃ), এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের জায়গায় ইসলামী হুকুমত বা আল্লাহ্'র আইনের কথা থাকলেও জামায়াতে ইসলামী তাদের ইতিহাসে কখনও ইসলামের একমাত্র শাসন ব্যবস্থা খিলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেনি। বিরোধীরা অভিযোগ করেন, তারা খিলাফতের দাবীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে বিভিন্নভাবে। তাদের বই-পত্রে শিয়াদের মতো করে খোলাফায়ে রাশেদীন এবং পরবর্তী খলীফাদের অনেকের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর সমালোচনা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, খিলাফত আন্দোলনকে নিরুৎসাহিত করার জন্য খিলাফত শাসন ব্যবস্থা নিয়েও তারা অনেক ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ ও কটাক্ষ করেছে এবং এখনও করছে। যদিও তা সত্য নয় । জামায়াতে ইসলামীর মতে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা এমন এক পর্যায়ে আছে যে এখন খিলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন অপরিণামদর্শিতা ছাড়া কিছুই না। কারন শুধু শুধু খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করে একজন নামে মুসলিমকে খলিফা বানালে খিলাফাতের মরযাদা থাকবে না। তাছাড়া খলিফা হওয়ার মত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যাক্তিকেই খলিফা হতে হবে যিনি একাধারে রাষ্ট্রীয় নেতা এবং ধর্মীয় নেতা হবেন। তাদের দাবী সে রকম মহামানব এইযুগে পাওয়া কষ্টকর। তাই আগে ইসলামি পরিবেশ কায়েম করতে হবে তারপর খিলাফাতের জন্য দেশ ও জাতিকে প্রস্তুত করতে হবে, তারপর খিলাফাত কায়েম করতে হবে নইলে ইসলামের প্রান খিলাফাত এর পুনরায় পতন ঘটবে এবং জনসাধারন (খিলাফাতের ব্যাপারে) ভুল ধারনা পাবে।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের আগে পূর্ব পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামী'র কোন সংগঠন ছিলনা। শুধু তাই নয় মাওলানা মওদুদীর পুস্তিকাদি উর্দূ ভাষায় লিখিত হওয়ায় এ অঞ্চলে তখন জামায়াতে ইসলামীর কোন পরিচিতিই ছিল না। আইডিএল ও ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবদুর রহীমই প্রথম ব্যক্তি, যিনি জামায়াতে যোগদান করে এই অঞ্চলে দলটির ভিত্তি স্থাপনে সক্রিয়ভাবে উদ্যোগ নেন। তার প্রচেষ্টায় ১৯৪৬ সনে এই ভূখন্ডে জামায়াতের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর তিনি জীবনের যাবতীয় শক্তি একত্রিত করে জামায়াতকে এ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত করেন। অবশ্য এক পর্যায়ে তিনি জামায়াতের সাথে তার সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
রাজনৈতিক দল হিসাবে জামায়াত প্রথম থেকেই অন্যান্য ইসলামী দলের তুলনায় একটি মজবুত সংগঠন। কিন্তু ইসলামী চিন্তা ও কর্ম পদ্ধতির দিক থেকে এর কোন স্থায়ী অবস্থান তৈরী হয়নি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপলাভের স্বার্থে এ পর্যন্ত জামায়াত মোট তেরবার গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করেছে। সর্বশেষ অক্টোবর ২০০৮ এ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন শর্ত রক্ষা করতে গিয়ে গঠনতন্ত্র থেকে তারা اقيمواالدين এবং 'আল্লাহু আকবার' খঁচিত মনোগ্রামটি প্রত্যাহার করে। শুধু তাই নয়, যে শ্লোগান দিয়ে এদেশের বহু তরুণকে তারা জীবন দিতে উৎসাহিত করেছিল, সেই 'আল্লাহর আইন চাই' কথাটিও নিবন্ধন লাভের জন্য তাদের গঠনতন্ত্র থেকে বাদ দেয়া হয়।
১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা সারা পাকিস্তানে সামরিক আইন জারী করেন। এর মাত্র ২০ দিন পর সেনাপতি আইউব খান অস্ত্রের মুখে ইস্কান্দার মির্জাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে নিজে প্রেসিডেন্টের পদটি দখল করে নেন। শুরু হয় কঠোর দমন নীতি। দেশ জুড়ে নেমে আসে রাজনৈতিক নিস্তব্ধতা। ১৯৬২ সালের ১মার্চ আইউব খান আরেকটি নতুন সংবিধান জারী করে কয়েক মাসের মধ্যে সামরিক আইন তুলে নেয়। নতুন সংবিধানে দেশকে 'ইসলামী প্রজাতন্ত্র' বলা হলেও কুরআন-সুন্নাহ মুতাবেক আইন রচনার কোন অঙ্গীকার তাতে ছিলনা। ফলে দেশ জুড়ে ইসলামী সংবিধানের দাবীতে আইউব বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু জামায়াত এই আন্দোলনের পরিবর্তে 'গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের' নামে এক উদ্ভট আন্দোলন শুরু করে। এমনকি, এই ক্ষেত্রে সোহ্রাওয়ার্দীসহ দেশের ধর্মবিমুখ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও দলগুলোর সাথেও ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তোলে। এটিই ছিল জামায়াতের পক্ষ থেকে 'গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের' প্রথম আন্দোলন এবং এভাবেই 'গণতন্ত্র উদ্ধার' করা জামায়াতের প্রধান কাজ হয়ে দেখা দেয়।
১৯৬২ সনে ডিক্টেটর আইয়ুব খান নতুন সংবিধানের মাধ্যমে 'মৌলিক গণতন্ত্র' (Basic Democracy) নামে দেশে এক আজব 'গণতান্ত্রিক' পদ্ধতি চালু করে। এর অধীনে ১৯৬৪ সনের সেপ্টেম্বর মাসে দেশে একটা প্রহসনের নির্বাচন ডাকা হয়। ইসলামী দল্গুলোসহ অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো আইয়ুবের পাতা এই ফাঁদে সহজেই পা দেয়। শুধু তাই নয় এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম, আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি প্রভৃতি দলের সমন্বয়ে সম্মিলিত বিরোধী দল COP নামে একটি মোর্চা গঠন করে। এই মোর্চা থেকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ'র বোন ফাতেমা জিন্নাহকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে আইয়ুবের বিরুদ্ধে বিরোধী দলসমূহের একমাত্র প্রার্থীরূপে মনোনয়ন দেয়া হয়। উপমহাদেশে নারী নেতৃত্বের প্রতি এই প্রথমবারের মতো জামায়াতসহ কয়েকটি ইসলামী দলের সমর্থন ইসলামী রাজনীতিকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এই ঐতিহাসিক ভুলটিকেই বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক ইসলামী দল নারী নেতৃত্বের অধীনে নির্বাচনী জোট ও সরকারে অংশ গ্রহণের দলীল হিসাবে ব্যাবহার করে থাকে। যদিও ইসলামে নারী নেতৃত্বের কোন অবকাশ নেই। সেদিনের সেই হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলে ইসলামীদলগুলোর ইসলামী আন্দোলন যে কি তা মানুষের কাছে বিভ্রান্তিকর হয়ে উঠে। তাই ১৯৬৫ সনের পাতানো নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহ'র চরম পরাজয় ঘটে।
এই পর্যায়ে এসে জামায়াত নতুন রূপ ধারণ করে। পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট' (PDM) নামে পুনরায় একটি জোট গঠন করে। জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এবার আট-দফা দাবির ভিত্তিতে নতুন করে আইয়ুবের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। কিন্তু ১৯৬৭ সালে যখন ৬ দফার ভিত্তিতে আইয়ুবের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে প্রচন্ড গণআন্দোলন শুরু হয়, তখন জামায়াত ৫ দফার নামে আরেকটি আন্দোলন শুরু করে যা প্রকারান্তরে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনকে ব্যহত করার চেষ্টা করে। এর ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের জালিম শাসকদের অনুকুলে চলে যায় তাদের অবস্থান। এটিই ছিল জামায়াতের জন্যে একটি গুরুতর রাজনৈতিক বিপর্যয়। এ থেকেই জামায়াত জনস্বার্থ বিরোধী একটি বিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ বিষয়টিকে আরো সুস্পষ্ট করে তোলে।
১৯৭০ সনে জামায়াত ও অন্যান্য ইসলামী দল যৌথভাবে সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদন্দ্বীতা করে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে একেবারে শূন্যের কোটায় নেমে আসে। এমনকি পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশে) দলটির অস্তিত্ব পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে যায়।
১৯৭১ সনে স্বাধীনতা আন্দোলন চলাকালে জামায়াত নেতাদের ভুমিকার দরুণ এ অঞ্চলে জামায়াতে ইসলামীর যে ক্ষতি হয়েছে তা আজও পূরণ করা সম্ভব হয়নি, সে সুযোগে কিছু নাম স্বরবস্য দল ইসলামকে ব্যবহার করে বিভক্তি তৈরী করতে সক্ষম হয়, তারই ধারাবাহিকতায় আজ বাংলাদেশে এতগুলো ইসলামি দল। জামায়াত যদিও এখনো দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী দল তারপরেও ৭১ এর ভুমিকা আর এর পরবর্তী অপপ্রচারের দরুন এখনো বড় কোন শক্তিতে পরিনত হতে পারে নি। ১৯৯১ সালে নির্বাচনের পর বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে জামায়াত বেগম খালেদা জিয়াকে সমর্থন দেয়। এরপর ১৯৯৫ সালে আরেক মহিলা নেত্রী আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে ঐক্য গড়ে তাদেরই সমর্থনে গড়া খালেদা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। এভাবেই বরাবর অস্বচ্ছ ও ভুল পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করেছে যে, মুখে হেকমতের কথা বললেও রাজনৈতিক সুবিধার জন্য এত করেও কোন কিছুই তারা করতে পারে নি, কারনটা হয়তো ইসলাম আর গনতত্রকে একসাথে করে চলার চেষ্টা অথবা ইসলামী আইন তাদের কাছে মূখ্য ছিল না।
এখানে একটি তথ্য উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ১৯৬৪ সনের ৬ জানুয়ারী জামায়াতকে নিষিদ্ধ দল হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এর আগে ১৯৫৭ সালে জামায়াত প্রথম বারের মত ভাঙ্গনের সন্মুখীন হয়। দলের অভ্যন্তরে এক তীব্র আদর্শিক সংকট মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ফলে মওলানা মওদূদী পদত্যাগ করেন। পরে অবশ্য তাকে পদে ফিরতে হয়। তবে ঐ সময় অনেকেই জামায়াত ছেড়ে চলে যায়।
আগামীদিন তৃতীয় পর্ব পাবেন ইনশাআল্লাহ
উপমহাদেশের ইসলামিক রাজনৈতিক আন্দোলন (বিংশ শতাব্দি) ০১
(ইহা একটি গবেষণা মুলক পোস্ট, অনেকের লেখা পড়ার পর সম্পাদিত তাই লেখার কিয়দংশ কারো কারো লেখার সাথে মিলে যেতে পারে)
বিষয়: রাজনীতি
২০৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন