সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা ও আমাদের তরুন সমাজ

লিখেছেন লিখেছেন তিতুমীর সাফকাত ০৮ অক্টোবর, ২০১৩, ০৮:৪৬:৫১ রাত

একটি দেশের ভাবিষ্যত হলো সে দেশের তরুন সমাজ। এ ভবিষ্যৎকে নষ্ট করার অপকৌশল হচ্ছে অপসংস্কৃতিকে উৎসাহিত করে বাস্তবে তা প্রোয়োগ করা।আমাদের সমাজের তরুন-তরুনীদের উপর অপসংস্কৃতির কু-প্রভাব অতি গভীর ও ব্যাপক। তারা আজ সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতি অনুশীলনে মেতে উঠেছে। সিনমার কাহিনী, নাচ, গান, পোষাক-আশাক ইত্যাদি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এমন উদ্ভটভাবে সন্নিবেশিত হয়ে থাকে। জনসাধারণ অতি সহজেই আমোদ-আহলাদের উপকরণ খুজে পায়। তরুণ-তরুণীরা সিনেমার উদ্ভট অবাস্তব জীবনকেই অনেক সময় বাস্তব জীবন বলে ভুল করে এবং সিনেমা জগতের কায়দা-কানুন, রীতি-নীতি অন্ধভাবে অনুকরণ করতে গিয়ে কৃতিমতা ও অপসংস্কৃতির স্বীকার হয়। আজ তরুণ সমাজ নিজস্ব জীবন দশর্নকে বাদ দিয়ে পাশ্চত্যের জীবন আচরণের যা বাহ্যিক কালিক-স্থানিক তাকেই অবলম্বন করছে। সংস্কৃতি বলতে বুঝায় সুন্দরের সাধনা। সংস্কৃতি চর্চার ভেতর দিয়ে মানুষের মন সুন্দর হয় হিংসা বিদ্বেষ নাশ হয়, প্রেম ও সৌন্দর্য জীবনকে মহিমান্বিত করে। কিন্তু অপসংস্কৃতি যা আমাদের চেতনাকে দীপ্ত করে না ঐতিহ্যকে মহিমা দেয় না, আচরণকে শালীনাত দেয় না তাই আজ আমাদের তরুণ সমাজের মজ্জার ভেতর আধুনিকতা নাম ধারণ করে ঢুকে গেছে। ফলে তরুণ সমাজ হচ্ছে বিপথগামী।

তরুণরা অপসংস্কৃতিতে আকৃষ্ট হচ্ছে। তার কারণ এতে চমক আছে উত্তেজনা আছে আর আছে ক্ষণিক আনন্দ। এর একটা মোহ আছে। তরুণরা চঞ্চল। তারা চায় নতুন কিছু করতে, নতুনের সাথে চলতে। এ চলতে গিয়ে, নতুন কিছু করতে গিয়ে তারা যে এগিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের পথে তা তারা বুঝতে পারছে না, তাদের ধ্বংস তারা দেখতে পাচ্ছে না।

আমাদের সমাজে বতমানে যে অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে তার মূলে রয়েছে অবাধ দূর্ণীতি। দূর্ণীতি যে সমাজে আসন গেড়ে বসে, সে সমাজে সংস্কৃতি টিকে থাকে না। তাই সংস্কৃতি স্থান দখল করে নিয়েছে অপসংস্কৃতি। সত্য ও সুন্দরকে ত্যাগ করে তরুণ সমাজ তাই আজ উগ্র জীবন-যাপনে উৎসাহিত হয়ে উঠেছে এবং চরম অবক্ষয়ের মাঝে জীবনবোধ খুজে বেড়াচ্ছে। টেলিভিশন, সিনেমার যে সব ছবি দেখানো হচ্ছে তার অধিকাংশই আমাদের মন-মবনসিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অথচ এ সব অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ছবি আমাদের তরুণ-তরুণীদের অতি প্রিয় হয়ে গেছে। তাদের এ আচার-আচরণ যেমন কুরুচিপূর্ণ তেমনি আপসংস্কৃতির সহায়ক। আমাদের তরুণ সমাজ আজ এ অপসংস্কৃতির স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে।

সংস্কৃতি আসলে একটা দৃষ্টিভঙ্গীর ব্যাপার, একটি জীবনবোধ বিনির্মাণের কলাকৌশল। এটি মানুষের জীবনের একটি শৈল্পিক প্রকাশ, সমাজ জীবনের স্বচ্ছ দর্পণ। এ সংস্কৃতির দর্পণে তাকালে কোন সমাজের মানুষের জীবনাচার, জীবনবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। অন্য কথায়, সমাজ মানুষের জীবনাচার, দৃষ্টিভঙ্গী আর বোধ-বিবেচনা থেকেই সে সমাজের সংস্কৃতি জন্মলাভ করে। তবে সংস্কৃতি এমন কোন জিনিস নয় যে, এটি একবার ছাচে তৈরি হবে, তার কোন পরিবর্তন করা যাবে না। বরং সমাজ ও জীবনের পরিবর্তনর এবং সময়ের ধারায় এ সংস্কৃতি পরিআতিত হতে পারে। এমন কি অন্য কোন সংস্কৃতির সংস্পশে এসে পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে নতুন নতুন উপাদান সংগ্রহ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারে। এমন কি অন্য কোন সংস্কৃতির সংস্পশে এসে পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে নতুন নতুন উপাদান সংগ্রহ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারে। অন্যদিকে ভিনদেশী সংস্কৃতির তোড়ে নিজের সংস্কৃতির অস্তিত্ব হারিয়েও ফেলতে পারে। আর দুভাগা পরিণতি যে সমাজের হয় সে সমাজেই সাংস্কৃতিক বন্ধাত্বের জন্ম হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের সমাজে ঠিক তাই ঘটেছে। মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির তোড়ে নিজের সংস্কৃতির নামে স্যাটেলাইটের নগ্ন আর আস্তবাদী সংস্কৃতি আমাদের সমাজকে এমন আঘাত করেছে যে তোড়ে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির নাভীশ্বাস উঠেছে। সাংস্কৃতি আদান-প্রদানের মুক্তবাজারে আমরা মার খেয়ে বসেছি।পশ্চিমা চটকদার সংস্কৃতি আমাদের হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মূলে কুঠারাঘাত করেছে। ফলে আমরা আমাদের স্বকীয়তা হারিয়ে ক্রমেই সাংস্কৃতিক দৈন্যের দিকে ধাবিত হচ্ছি। মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির যে রঙীন জীবনবোধ তা আমাদের দেশীয় জীবনবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গিকেও প্রতিনিয়ত আঘাত করছে অপসংস্কৃতি রূপে স্যাটেলাইটে প্রতিনিয়ত আমাদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে বস্তুবাদিতা, ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা, আর নগ্নতার হাজারোপাঠ।এই সব অপসংস্কৃতির রঙ্গীন বিষয়বস্তু অনেক রঙ ঢঙ আর লালসার আবরণ লাগিয়ে পসরা সাজিয়ে ধরছে আমাদের সামনে। ফলে মনের অজান্তেই আমরা ছুটছি এই স্বপ্নিল ভুবনের দিকে। হারিয়ে ফেলছি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, নিজস্ব জীবনবোধ। আমাদের এই আত্মবিস্মৃতিই আমাদেরকে প্রিতিনিয়ত হতাশার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে এর প্রভাব পড়েছে সমাজে ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে।

আকাশ সংস্কৃতির নামে এই অপসংস্কৃতি আমাদের সমাজ কাঠামো ও সামগ্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গঠন ও প্রকৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিচ্ছে। বিশেষ করে আমাদের পরিবার কাঠামো পারিবারিক জীবনে সুমধুর বন্ধনকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। পশ্চিমা সামাজের বিবাহহীন আবাদ যৌনাচারের সংস্কৃৃতি ও পারিবারিক বন্ধনহীন বাউন্ডলের জীবনের বিকৃত ধারা আমাদের হাজার হাজার বছরের পুরানো পারিবারিক জীবনের ধারাকে প্রায় পরাস্ত করে ফেলেছে। সামাজিক রীতি-নীতি প্রায় বিলুপ্ত। বয়োজৈষ্ঠদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ এখন নেই বললেই চলে। তরুণরা আজ অনেক বেশি স্বাধীনতা চায়। কিন্তু তারা জানেনা যতটুকু স্বাধীনতা দরকার তার মাত্রা অতিক্রম করলে পথভ্রষ্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে এবং আমাদের সমাজে তাই হচ্ছে। ফলে তরুণ সমাজ আজ পথভ্রষ্ট।

সংস্কৃতি যেমন জীবনকে সুন্দরের পথ দেখায় আর অপসংস্কৃতি মানুষকে অসুন্দরের পথে নিয়ে যায়, অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। অপসংস্কৃতি জাতীয় মূল্যবোধকে গলাটিপ হত্যা করে, বিবেকের দরজায় কড়া লাগায়। অপসংস্কৃতি মানুষকে তাঁর মা, মাটি ও দেশের প্রতি ভালবাসা থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। মা, মাটি ও দেশকে স্বাধীনতা করতে শেখায়। এ অপসংস্কৃতির চকম মরীচিকার মত। এর চমক মানুষকে বিবেক বর্জিত পশুতে পরিণত করে।

খারাপ কোন কিছুকেই পরিকল্পনা করে সমাজ থেকে দূর করা যায় না। অপংস্কৃতির এই ভয়াল থাবা থেকে সমাজ ও জাতিকে বাঁচাতে হলে প্রথমেই সংস্কৃতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা, সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতির মাধ্যকার পার্থক্য সম্পর্কে জ্ঞান। সমাজকে করতে হবে দূর্নীতি মুক্ত। সমাজে দূর্নীতি থাকবে, অবাধ ভোগের উৎস থাকবে, রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় সন্ত্রাস থাকবে, ইন্টারনেট টিভি খুললে অশ্লীল দৃশ্য থাকবে অথচ অপসংস্কৃতি থাকবে না, এটি কল্পনা করাও মূর্খামি। শিতি শ্রেণীত সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। বিদেশী কোন কালচার গ্রহণ বা প্রচার করার পূর্বে ভেবে দেখতে হবে তা আমাদের জীবন গঠন ও উন্নয়নে কতটা সহায়ক। যদি তা আমাদের মূল্যবোধের সাথে গ্রহণযোগ্যতা না হয় তবে তা বর্জন করতে হবে। যুব সমাজের সামনে নৈতিক উৎকর্ষের দৃষ্টান্ত রাখতে হবে, যা ভাল তাতে পুরস্কৃত করতে হবে, মন্দকে শাস্তি প্রদান করতে হবে। অসুন্দর, অপ্রেম, অকল্যাণের বিপে দাঁড়ানোর জন্য সকলকে বিশেষ করে যুব সমাজকে উৎসাহিত করতে হবে।

চিত্ত বিনোদন মানুষের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি আজ এমন হুমকির মুখে দাড়িয়েছে যা সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। আধুনিকতা ও প্রগতির নামে অনেক অগ্রহনযোগ্য জিনিষ ঢুকে গেছে আমাদের সমাজ জীবনে। আমরা অভিভাবকরা দেখেও না দেখার ভান করছি। কারন আমরাও খুব একটা সুবিধার মানুষ নই। আমরা যদি এতই রক্ষনশীল আর ধর্মভীরু হতাম তাহলে আমাদের সন্তানরা কি করে এমন অসুস্থ্য ও অশালীন বিনোদনের চর্চ্চা করতে পারত। সমাজের যাবতীয় অন্যায় অসংগতি সবই আমাদের হাতের কামাই। আমরা এর দায় এড়াতে পারিনা। আমাদেরকে সমস্যার গভীরে যেতে হবে। তারপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। বিনোদনের এই বর্তমান নাজুক পরিস্থিতি একদিনে সৃষ্টি হয়নি। সময়ের বিবর্তনে দিন দিন আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের দেশের বিনোদনের এ বেহাল দশা। তারপরও আমরা সচেতন নই। আমরা মনে করি বিদেশী সংস্কৃতি মানেই আধুনিকতা ও প্রগতি। এটা একটা ভুল ধারনা। আজকালকার তরুন সমাজ বিদেশী সংস্কৃতির এমন আজ্ঞাবহ দাসে পরিনত হয়েছে যে তাদের সুস্থ বিনোদনের কোন ধারনাই নাই। যাই হোক এ অবস্থার পরিবর্তন জরুরী। এজন্য আমাদের অভিভাবকদেরই এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের বিনোদনের ক্ষেত্রে একটু ছাড় দিতে হবে। সন্তানকে নীতি-নৈতিকতা ও নুন্যতম ধর্মীয় শিক্ষার চর্চ্চা করাতে হবে।

বাংলাদেশের সাধারন সংস্কৃতির সম্পুর্ন বিপরীত চর্চা করা হচ্ছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যম্পাসে ও এর পরিসীমায়। এখানে কেমন যেন পশ্চিমা সংস্কৃতি ছাড়া নিজেকে আধুনিক বা অভিজাত হিসেবে প্রকাশ করা যায় না। এটা বলা যায় যে, এই সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের নামগুলোই যেন পশ্চিমা শিক্ষাঙ্গন থেকে ধারকরা। তাই এই প্রতিষ্ঠান সমুহের শিক্ষার্থীরা নিজেদের হাজার বছরের আতœপরিচয়কে ভুলে গিয়ে চোখ ধাঁধানো মরিচিকার পেছনে ছুটছে। তাদের প্রাত্যহিক ব্যাবহারিক জীবনের একটি মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে হলিউড, বলিউড কিংবা ডালিউডের সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া কোন ছবির নায়ক, নায়িকারা কি ধরনের পোষাক পরলো। এই ছবিগুলোর নামে যে পোষাকটি বাহির হবে তা কোন এক বন্ধু যদি আগে কিনে থাকে তাহলে অন্য বন্ধুদের প্রশংসা কুড়িয়ে নিতে সক্ষম হল। সমপ্রতি আমরা দেখতে পাই যে, তেরেনাম, রা-ওয়ান, জিলিক, টাপুর-টুপুর, ওয়াকা-ওয়াকা, বিন্ধু, দেবদাস এ দরনের বিভিন্ন ছবি, অভিনেতা- অভিনেত্রীর নামে যে পোষাকগুলো বের হয়েছে তা যুব সমাজের পছন্দ কুড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। এই পোষাকগুলো কোন প্রকার রুচিশীলতার পরিচয় বহন করে না। অন্যদিকে, আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি এইসব ওয়াকা-ওয়াকার উপর ভর করে তার বাস্তব স্বকিয়তা হারিয়ে পেলেছে। তাই, একজন ছাত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার আগে তাকে সঠিক পথে রাখার জন্য কিংবা মাদক থেকে দূরে রাখার জন্য যদি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন না করা হয়, তাহলে এ দেশের যুবসমাজের কাছে জাতির যে প্রত্যাশা তা ব্যার্থ হতে বাধ্য। একজন যুবকের ছাত্র জীবনে তার সৎ সংঘই কেবল মাত্র তাকে তার সুন্দর একটি ক্যারিয়ার গঠনে সহযোগী হতে পারে। পরিবারের যথাযথ তত্ত্বাবধানও এক্ষেত্রে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা ভুলে যাই Prevention is better than cure. অবক্ষয়ের এই ধারা প্রতিষেধক ব্যবস্থা ছাড়া প্রতিকার যোগ্য নয়।

আমরা টেলিভিশন, প্রত্রিকা, রাজনৈতিক মঞ্চ এবং সভা সেমিনারে যতই নান্দনিক এবং শ্রুতিমধুর ভুলি বর্ষন করিনা কেন, সুন্দর ও আলোকিত সমাজ, এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে আমাদের এ প্রজন্মের যুব সমাজের নৈতিক উন্নতির প্রতি। অভক্ষয় থেকে বাঁচতে হলে প্রতিষ্ঠা করতে হবে একটি মাদক মুক্ত, পশ্চিমা সংস্কৃতির নগ্ন ছোবল থেকে মুক্ত একটি আধুনিক সমাজ। যেখানে অপবিত্রতা ও অশ্লিলতার কোন স্থান নেই, বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা ও ছোটদের প্রতি ¯েœহ যেখানকার অনন্য বৈশিষ্ট্য।

বর্তমান সময়ে, রাস্তাঘাটে উঠতি বয়সের কিছু ছেলেকে দেখা যায় তাদের মাথার চুল উস্কুখুস্কু, শর্ট শার্ট পরা, জিন্সের প্যান্ট কোমরের নিচের দিকে পরা, হাত একটু উঁচু করলেই নজ্জাস্থানের কিয়দাংশ দেখা যায়। প্যান্টের নিচের অংশ পায়ের পাতার নিচে পরে থাকে অনেকটা ঝাড়–দারের কাজ করে।আর কিছু মেয়েরা ধর্ম, জাত-পাত সব ভুলে পোশাক ছোট করতে করতে এমন পর্যায়ে পেীছেছে যে, তারা ক’দিন পে চিড়িয়াখানার সদস্যদেও মত কিছু দাবি না করে বসে। আরব্য করীর একটি উক্তি মনে পড়ে যায়, তা হলো- ‘ইন্নাকা লা-তাজনি মিনাশ শাওকিল ইনাব’ তুমি কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ থেকে কখনো আঙ্গুর ফল পাবে না। সারা দেশ নয়, শুধু ঢাকা শহরেই লাখ লাখ মা-বাবা রয়েছেন যারা তাদেও ছেলে-মেয়েদেও নিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন।

বলা হয়ে থাকে, Education is the backbone of a nation অর্থ্যাৎ শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা মানুষকে মর্যাদাবোধ সম্পন্ন করে তুলে। শিক্ষার দরুণ মানুষ নিজ সম্পর্কে, নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়। নেপোলিয়নের ভাষায়: Give me an educated mother, I will give you an educated nation. মহাকবি জন মিল্টনের ভাষায়: Education is the harmonious development of body, mind and soul. কিন্তু এই দেহ, মন এবং আত্মার সামগ্রিক সমন্বয় হচ্ছে না, কারণ আমরা শিক্ষাকে মনে করি চাকুরি অর্জনের হাতিয়ার। ফলে সার্টিফিকেট সর্বস্ব একাডেমিক শিক্ষা নামক হজমি টেবলেট আমরা গলাধ:করন করছি ঠিকই, কিন্তু প্রকৃতভাবে শিক্ষিত হতে পারছি না।

বর্তমান বাস্তবতা বিবর্জিত শিক্ষা আমাদের বাস্তব জীবনেও বাস্তবতা বিবর্জিত শত অঘটনের জন্ম দেয়। তাই শিক্ষার লক্ষ্য কেবল স্কুল কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডির ভিতরে না রেখে একে ইউনিভার্সাল করতে হবে। সুনির্মল বসূর সে বিখ্যাত কবিতা: বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র, এ কথা মনে রাখতে হবে। প্রাচীন গ্রিসের দিকে তাকালে ঞ্জান চর্চার গুরুত্ব পূর্ণরুপে উপলব্দি করা যায়। কিভাবে সক্রেটিস, প্লেটো, জেনিফোন, এরিস্টটলদেও বিতর্ক সভা আর পাঠচক্রগুলো গ্রীসকে সভ্যতার কেন্দ্রে স্থাপন করেছিলো, সে রহস্য উন্মোচিত হবে।

মোট কথা শিক্ষার চর্চা ও বিস্তার ছাড়া কোন জাতি উন্নত হতে পারে না। তবে এ ক্ষেত্রে বিশেষ নজর এবং গুরুত্ব দিতে হবে নৈতিকতার সমন¦য়ের প্রতি। কারণ আমরা একটি প্রবাদ জানি- “দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য”। আর্থ্যাৎ man in career, without character, is more dangerous than a lion. তাই বড় বড় সার্টিফিকেট দিয়ে শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করে দিলেই হবেনা বরং তাকে একই সাথে নৈতিকতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে সে সমাজকে আলোকিত করার পরিবর্তে অন্ধকারাচ্ছন্ন করতে বেশি তৎপর থাকবে। একজন অন্ধ মানুষের হাতে যদি মশাল দিয়ে পথ দেখাতে বলা হয়, তাহলে তার দ্বারা পথ দেখানোর পরিবর্তে বাড়ি ঘরে আগুন লাগানোর সম্ভাবনাই বেশি থাকবে

ভারতীয় বিভিন্ন চ্যানেল গুলোর এখন এতই স্বাধীন করে দেয়া হয়েছে যে, শহরের পাশাপাশি মফস্বল এলাকাতেও এই চ্যানেল গুলো আমাদেও যুবক এবং তরুনীদেও কাছে খুবই জনপ্রিয়। বিশেষ করে স্টার প্লাস, স্টার জলসা আমাদের তরুন-তরুণীদের চাড়তেই যেন চায় না। অথচ এসব চ্যানেলগুলোতে যে নাটকগুলো দেখানো হচ্ছে এরমধ্যে পারিবারিক দ্বন্ধ, মুসলমানদের ধর্মীয় বিষয়ে হেয় করা ছাড়াও বিভিন্ন কুসংস্কারকে বাস্তব বলে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে করে তরুণ, তরুণীরা না বুঝেই এই সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। যার দরুণ আমরা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিকে ভুলে গিয়ে বিনদেশী সংস্কৃতিকে গ্রহণ করছি অকপটে।

যে কোন জাতির বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তার সাথে তার শিক্ষা ও সংস্কৃতি অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। তাই আমরা যদি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করে ভিনদেশী সংস্কৃতি নিয়ে দিনের পর দিন উৎসব ও মাতামাতি করি নিঃসন্দেহে একদিন আমাদের সার্বভৌমত্ব অস্তিত্বের মুখোমুখি হবে। বিখ্যাত দার্শনিক ডিকার্টে ’র একটি কথা বিশেষ ভাবে প্রণিধানযোগ্য-“মানুষের মন ও মনন আল্লাহর এক বিশেষ অবদান। এ শক্তি আল্লাহ তাআলা কেবল মানুষকেই দিয়েছেন। সৃষ্টির মাঝে এই গুন তিনি আর কাউকেই দেননি। তবে শিক্ষা ও প্রশিক্ষনের সাহায্যে তাকে অধিক তিক্ষœ ও শ্বানিত করে তোলা যেতে পারে, তাকে উত্তম পন্থায় প্রয়োগ ও ব্যবহার করা যেতে পারে”। কিন্তু বর্তমান সমাজের চিত্র কি প্রমানিত করছে? নিজস্ব সংস্কৃতির মাধ্যমে আমাদের বাংলাদেশকে সমগ্র বিশ্ব বাসীর সামনে সঠিক ভাবে তুলে ধরার পরিবর্তে মডার্নিজমের দোহাই দিয়ে সর্বক্ষেত্রে পশ্চিমা সংস্কৃতি ও ফেশনের চর্চা ও গোলামী করছে, জলাঞ্জলি দিচ্ছি লজ্জাবোধ-স্বাতন্ত্রবোধ-আতœমর্যাদা এবং স্বাধীনতার চেতনা। ১৯৭১ সালে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি আমরা লাল সবুজের পতাকা। কিন্তু দিন দিন আমাদের সংস্কৃতির যেভাবে তিলে তিলে ধুকে ধুকে বিলীন এবং বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তাতে করে মনের মধ্যে কেবল একটি প্রশ্নই বারে বারে উকি মারে, আগামী প্রজন্মের কাছে আমরা এই লাল সবুজের পতাকা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র অর্পন করে যেতে পারব কি?

উপরোক্ত আলোচনার সাথে যদি আমরা একমত পোষন করি তাহলে বর্তমানে আমাদের সমাজে সংস্কৃতির নামে যেসব অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, ডিজে পার্টি, থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপন, নারী পুরুষের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, অদ্ভুত ও রুচিহীন পোষাক ইত্যাদি কোন সুস্থ সংস্কৃতির ভিতরে পরে না। এর দ্বারা সত্য ও সুন্দরের চর্চার পরিবর্তে মানুষিক ও শারীরিক ব্যধির সংক্রমন বাড়ছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে আজ আমাদেরকে বসে বসে দর্শকের ভূমিকা পালন করলে হবে না। এর সমস্যা সমাধান করতে হবে এ আমাদেরকেই, এ প্রজন্মের সচেতন যুবসমাজকে। যারা আগামী দিনের প্রজন্মের কাছে একটি সুন্দর, সভ্য ও উন্নত এবং সর্বোপরি একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিয়ে যেতে পারবে।

বর্তমান সময়ে যে বিষয়টা সবচেয়ে বেশী দেখা যাচ্ছে সেটা হলো তরুনদের মাঝে নৈতিক অবক্ষয়ের বিস্তার। দিনকে দিন এটা বেড়েই চলছে। একটা দেশের এবং জাতির শক্তিশালী সম্পদ হচ্ছে তরুন জনশক্তি অথচ তাদের আজ করুন অবস্থা। এই অবস্থা একদিনে তৈরী হয়নি। এই নৈতিক অবক্ষয়ের মূল কারণ হচ্ছে আমাদের সমাজে নৈতিক শিক্ষার অভাব, পিতামাতা কর্তৃক প্রদত্ত সঠিক শিক্ষার অভাব, আকাশ সংস্কৃতির বিষাক্ত ছোবল, এবং আমাদের দেশের তথাকথিত কিছু সংস্কৃতিমনা নাট্যকার, চলচিত্রকার, সাহিত্যিক ইত্যাদি।

আমাদের শিক্ষা মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষার উপযুক্ত কোন ব্যবস্থা নেই। সবচেয়ে বড় কথা হলো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মাঝেও এসব ব্যাপারে কোন আগ্রহ নেই, যাদের আছে তাদের আবার তেমন প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিপত্তি নেই বিধায় তারা জোর করে কোন কথা বলতে পারেনা। প্রতিষ্ঠানের কিছু কিছু শিক্ষক আবার শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাদানের পরিবর্তে প্রেম ভালবাসার শিক্ষাদানকে প্রয়োজনীয় মনে করছে এবং আজকাল কলেজ, ভার্সিটিগুলোতে এটাই হচ্ছে।

তারপর আসা যাক আমাদের পিতামাতার কথায়।আমাদের পিতামাতা হচ্ছে সন্তানদের সবচেয়ে বড় শিক্ষক। ছোটকাল থেকে তারা সন্তানদের যে ধরণের শিক্ষা দেন সন্তানরা সেই শিক্ষায়ই বড় হয়ে ওঠে। সন্তানকে আদর্শ ও চরিত্রবান করতে গেলে মা-বাবাদের সেই ধরণের শিক্ষা দিতে হয়। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই একজন ছেলে/মেয়েকে নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ করতে পারেনা। এইজন্য পরিবারের বাবা-মায়ের ভূমিক ব্যাপক। কিন্তু বর্তমানে কিছু বাবা-মায়ের হয়ত ধারণা জন্মেছে সন্তান ভালো করে লেখাপড়া করলে, ভালো রেজাল্ট করলেই সে ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু এইধরণের ধারণা শুধু অমূলক নয় রিতিমত ভয়ংকরও বটে। সন্তানকে ভালো পড়াশুনার পাশাপাশি, সে কোথায় যায়, কোন বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করে এসব বিষয়ে আগ্রহ সহকারে খোজখবর নিতে হবে। পাশাপাশি বাসায় ধর্মীয় শিক্ষাদান করতে হবে কারণ মানুষের নৈতিক চরিত্র বিকাশের ক্ষেত্রে ধর্মীয় শিক্ষার বিকল্প নেই। ‘তুমি ভালো রেজাল্ট করলেই তার সাত খুন মাফ’ অথবা ‘আমার দরকার ভালো রেজাল্ট, তারপর তুমি যা খুশী তাই কর আমার কোন আপত্তি নেই’ সন্তানদের প্রতি এই ধরণের মনোভাব আজকাল পিতামাতার মধ্যে বেশী দেখা যাচ্ছে এই ধরনের মনমানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। কোনটা সঠিক পথ আর কোনটা ভুল পথ সেইটা স্পষ্ট করে সন্তানদের বোঝাতে হবে। বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কি কি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে সেসব বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে। মনে সবচেয়ে বড় কষ্ট পাই যখন দেখি, S.S.C এবং H.S.C তে A+ পাওয়া ছেলে পেলে গুলো যখন পাড়ার মোড়ে সিগারেট ফুঁকছে কিংবা গার্লস স্কুলের সামনে অসহায় ভাবে দাড়িয়ে থাকছে। এছাড়াও নানা রকম অসমাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে। তাই বাবা মাকে এইসব ব্যাপারে জরুরী ভূমিকা পালন করতে হবে।

এরপর আসা যাক আকাশসংস্কৃতির বিষাক্ত ছোবল এবং দেশের তথাকথিত সংস্কৃতিমনা নাট্যকার, চলচিত্রকার, সাহিত্যিকদের ব্যাপরে। আমাদের তরুন সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের পেছনে মূলত এদের ভুমিকা বা অবদান সবচেয়ে বেশী। আকাশ সংস্কৃতির কারণে আজকাল আমরা দেশীয় সংস্কৃতি ভুলে বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়ছি, যার প্রভাব পড়ছে আজকাল তরুনদের মনে। সালমান খানের ক্রেজ ধরে রাখতে গিয়ে তরুনরা সিগারেটের মত বিষাক্ত জিনিসের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। বিজাতীয় সংস্কৃতিতে মদ্যপানের ঘটনা অহরহ থাকে বিধায় আমাদের ভবিষ্যত নেতৃত্ব এইসব বাজে জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। মসজিদ, মন্দির, গীর্জা অথবা প্যাগোডায় গিয়ে প্রার্থনা করার থেকে DJ Party তে গিয়ে উদ্যাম নৃত্ব্য, মাতলামী, এবং বেহায়াপনায় তারা বেশী মনযোগী হয়ে পড়ছে। তাছাড়া আমাদের দেশীয় নাটকগুলোতেও আজকাল শিক্ষার কিছুই থাকেনা। নাট্যকার অথবা চলচিত্রকাররাও সমাজের অসংগতি পর্দার মাধ্যমে তুলে ধরে মানুষের মাঝে জনসচেতনতা তৈরীর করার চেয়ে কিভাবে তা মানুষের মাঝে তা অভ্যাসে পরিনত করা যায় সেই চেষ্টায় বেশী ব্যাস্ত। আজকাল টিভির নাটকগুলোর প্রধান বিষয়ই থাকে নারী পুরুষের অবাস্তব প্রেম ভালোবাসা মনে হয যেন এই ছাড়া পৃথিবীতে আর কোন ভালো বিষয় নেই। নাটক সিনেমাগুলোতে দেখা যায প্রেমের কারণে বাবা মাকে ও অপমান করতে সন্তান দ্বিধাবোধ করেনা। এই কারনে আজকাল তরুন প্রজন্ম দিনদিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে আর সিনেমার দৃশ্য অনুসরন করতে গিয়ে ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে যেটা সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি হচ্ছে। বাবা মাকে খুশী করার চেয়ে আজকাল তরুন তরুনীরা তাদের প্রিয়তম/প্রিয়তমার মন জোগাতে বেশী ব্যস্ত। ভালবাসার মানুষটির মন জোগানোর জন্য বাবার পকেট চুরি করা হচ্ছে নয়তো মায়ের টাকার পার্সে হানা দেয়া হচ্ছে।

তরুনরা আগামী দিনের ভবিষ্যত তারাই আগামী দিনের মন্ত্রী, এমপি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার। দেশ গঠনে তারাই রাখতে পারবে অগ্রনী ভুমিকা। তাই তাদের নৈতিক চরিত্র উন্নত করার জন্য বাবা মা, শিক্ষক, এবং সংস্কৃতি কর্মীদের প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে। বাবা মায়েদের উচিত সন্তানকে ভালো লেখা পড়ার পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়া। যারা নাট্যকার, চলচিত্রকার,সাহিত্যিক তারা তাদের উচিত নাটক, চলচিত্র এবং সাহিত্য নির্মানের প্রধান উপজিব্য বিষয়গুলোতে পরিবর্তন করা। নারী পুরুষের অবাধ প্রেম ভালবাসাটাকে হাইলাইটস না করে সমাজের যে নানা রকম অসংগতি গুলো আছে সেগুলোকে প্রধান উপজিব্য বিষয় হিসাবে নেয়া এবং কিভাবে বাবা মাকে সম্মান দিতে হয় সেইসব বিষয়ে তাদের শিল্পকর্মকে কাজে লাগানো।

তবে সবচেয়ে বড় ভুমিকা নিতে হবে দেশের সরকারের। কারণ তারা দেশের অভিভাবক। নৈতিকতা বিকাশের ক্ষেত্রে যে আইনগুলো তারা প্রনয়ন করবে জনগন তা মেনে নিতে বাধ্য থাকবে। কাজেই এই বিষয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ দরকার।

ফলাফল :- আকাস সংস্কৃতির প্রভাবে অপ্সংস্কৃতির প্রসার ঘটছে, যার ফলে ঘটছে

১। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ।

২। ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়

৩। মানুষ একজনের প্রতি আর একজন বিশ্বাস হারাচ্ছে ।

৪। বাড়ছে পারিবারিক কলহ , ঘটছে অনেক দাম্পত্য জীবনের অবসান ।

৫। সমাজের কোমোলমতি শিশুরা বেড়ে উঠছে এক অশ্লীল পরিবেশে যা তাদেরকে মানষিক ভাবে বিপর্যস্ত করছে ।

৬। বাড়ছে দোষীদের আত্মহত্যার হার ।তাদের অনেকে অবৈধ মেলামেশার পর প্রত্যাক্ষিত হয়ে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ ।

৭। এছাড়াও তারা বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্যের সাথে জড়িয়ে পড়ছে ।

৮। মারাত্বকভাবে বাড়ছে ইভটিজিং এর হার ।

৯। বেহায়া তরুন-তরুনিদের এসব অবৈধ, আশ্লীল ও অসামাজিক কর্মকান্ডের ফলে বেড়ে চলেছে সমাজ এ অবৈধ শিশুর হার ।তাদের অবৈধ মেলামেশার ফসল তারা ফেলে যায় বিভিন্ন জায়গায় । অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটি চরম সত্য ।

### আমরা বাঙ্গালিরা শুধু মাত্র যারা খারাপ কাজ ঘটা্য তাদেরকে এক তরফা ভাবে দোষী সাব্যস্ত করি এবং ছি ছি ছি করতে থাকি । বলতে থাকি , দেশটা রসাতলে গেল , সমাজটা নষ্ট হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেল ।

এইটা ঠিক না , এই ভাবে কখনো সমস্যার সঠিক সমাধান করা যায় না ।সমস্যার সঠিক সমাধান করতে হলে আমাদেরকে সমস্যার সঠিক কারনগুলো খুজে বের করতে হবে এবং সেগুলোর সমাধান বের করতে হবে । তবেই আমরা পারবো আমাদের দেশকে, সমাজকে , পরিবারকে এবং আমাদের প্রান-চঞ্চল তরুন-তরুনীদেরকে অবৈধ, আশ্লীল ও অসামাজিক কর্মকান্ড হতে মুক্ত করতে ।

সমস্যার কারন :- তরুন-তরুনিরা এসব বেহায়া, অবৈধ, আশ্লীল ও অসামাজিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন কারনে এবং মাধ্যমে । সেগুলো হল :-

১। ধর্মীয় আনুশাসন এর অবমাননা ।

২। আমাদের সংস্কৃতি বহি:ভূত বিভিন্ন আপ-সংস্কৃতির আশ্লীল ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার চ্যানেল ।

এই আশ্লীল ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার চ্যানেল গুলো সম্বন্ধে আমরা সবাই জানি যার দ্বারা আমাদের তরুন সমাজ ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত ।

৩। বাবা-মা এর অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা ।যার ভূমিকা অনেক বেশি ।

ছেলে-মেয়ে কোথায় যায় , স্কুল , কলেজ , ভার্সিটিতে ঠিক মত যাচ্ছে কি না , না কি ফাঁকি দিয়ে অন্য কথাও যাছে , মোবাইল ফোন এ কার সাথে কথা বলছে , মেয়েরা অশ্লীল পোষাক পরে বাইরে যাচ্ছে কি না , ছেলে-মেয়ের বিয়ে করা প্রয়জনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে কি না ইত্যাদি অনেক বাবা-মা খেয়াল রাখেন না ।

৪। মোবাইল ফোন এর সহজলোভ্যতা এবং অপ-ব্যবহার ।

মোবাইল ফোন সহজলোভ্য হওয়ায় এবং এটি ব্যবহারে কোন সুনির্দিষ্ট নিতিমালা না থাকায় তার অপ-ব্যবহার এই সমস্যার একটি আন্যতম কারন ।

৫। খারাপ বন্ধু-বান্ধবিদের কু-প্ররোচনা ও উৎসাহ ।

দোস্ত , আমগো যদু ওই কাজ (অশ্লীল কাজ) করছে , তুই ও পারবি , এইডা কর , ওইডা কর । এই ধরনের কু-প্ররোচনা ও উৎসাহ আমাদের তরুন-তরুনীদেরকে বেহায়া, অবৈধ, আশ্লীল ও অসামাজিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে ফেলছে ।

৬। সরকার ও সংশ্লীষ্ট প্রসাশনের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা ।

কোথায় কোথায় নির্লজ্জ তরুন-তরুনীরা অবৈধ মেলামেশা করছে সেসব জায়গা সম্বন্ধে সংশ্লীষ্ট প্রসাশনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানে ।কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয় না ।এ ব্যপারে সরকারেরও কোন মাথা ব্যাথা নেই ।

সমাধানের সঠিক উপায় :- সমস্যা সমাধানের কিছু কিছু উপায় ,

১। নিজেদের মাঝে ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে , তা মেনে চলতে হবে এবং আন্যকে তা মানতে উৎসাহিত করতে হবে ।

২। আমাদের সংস্কৃতি বহি:ভূত বিভিন্ন আপ-সংস্কৃতির আশ্লীল ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার চ্যানেল চিরস্থায়ি ভাবে বন্ধ করে দিতে হবে ।

৩। বাবা-মা কে ছেলে-মেয়েদের প্রতি সজাগ এবং দায়িত্বশীল হতে হবে ।

৪। মোবাইল ফোন ব্যাবহারে সু-নির্দিষ্ট নিতিমালা প্রনয়ন করতে হবে ।

৫। খারাপ বন্ধু-বান্ধবিদের কাছ থেকে সব সময় দূরে থাকতে হবে ।ভালো বন্ধু-বান্ধবিদের সাথে সময় কাটাতে হবে ।

৬। সরকার ও সংশ্লীষ্ট প্রসাশনের দায়িন্তপ্রাপ্তদেরকে সঠিক ভাবে দায়িত্বশীল হতে হবে ।

৭। নিজেকে সব সময় ভাল কাজের সাথে যুক্ত রাখতে হবে ।

৮। ভালোদেরকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে ।

৯। সমস্যা এবং এর সমাধানের উপায় নিয়ে লিখালিখি এবং আলোচনা করতে হবে ।

আবশেষে বলতে চাই সুখী, সুন্দর সমাজ গঠনে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে । অশ্লীলতা বিবর্জিত সমাজ আমাদের সকলের কাম্য । যদি আমরা আমাদের সমাজের এই ভয়ানক ব্যাধিকে দূর করতে না পারি , আগামী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না । সবার কাছে আমার প্রশ্ন আপনি কী আপনার সুন্দর , ফুটফুটে , নিস্পাপ বাচ্চাটির জন্য রেখে যেতে চান এক ভয়ানক ব্যাধিগ্রস্থ অশ্লীল সমাজ ?

বিষয়: বিবিধ

৭৫০২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File