¤¤ চটি: সমস্যা ও ভয়াবহতা ¤¤

লিখেছেন লিখেছেন তিতুমীর সাফকাত ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০১:১৮:৪০ দুপুর

দেখতে হুবহু এক

অথচ পায়ে গলিয়ে দেখি—

এ চটি আমার নয় ।

— লাইনগুলো সম্ভবত এরকম ছিল । হুম, এ চটি সে চটি নয় । এ চটি মানে জুতা ।

চটি হল এক প্রকার লোকসাহিত্য ।

কোন অভিসার, অনৈতিকতার মুখোশ উম্মোচন ও ইন্ধনাশ্রয়ী ঘটনাকে কাব্যের আকারে ছন্দে ছন্দে মিলিয়ে এগুলো রচিত হত বিভিন্ন বয়াতির দ্বারা । এবং সুর করে গাওয়া হত এ চটি । এই সুর করা সঙ্গীতকে আমরা জারিগান বলেই জানি । উদাহরণ দেই, মুনিরের ফাঁসীর জারি, সবুর তালুকদারের জারি, সালমানের অকালমৃত্যু ইত্যাদি ।

বুঝতেই পারছেন, এ চটিও সে চটি নয় । ঠিক আছে আসল চটির কথাই বলি । এ চটি কী তা আমরা সবাই জানি । নতুন করে ব্যাখ্যা করা নিষ্প্রয়োজন । চটির কোন ভালো দিক কি আদৌ আছে ?

আছে, একটু আছে । সেটা বিবাহিতদের জন্য, কিশোর যুবকদের জন্য নয় । শয্যাসঙ্গী বা সঙ্গিনী নিস্তেজ হয়ে গেলে চটি উদ্দীপকের কাজ করতে পারে । তবে সেটা যে খুবই আবশ্যক— তা নয় ।

উদ্দীপক হিসেবে চটি কাজ করুক ভালো কথা, কিন্তু এ উদ্দীপনা আসলে পাচ্ছে কারা ?

— অবিবাহিত যুবক আর উঠতি বয়সের ছোকরারাই । এ দিক দিয়ে টিপ্পনী স্বরূপ বলা যায়, মনকে আচ্ছন্ন করতে এবং ব্যক্তিকে আলোড়িত ও প্রভাবিত করতে যে বই সর্বাধিক সক্ষম— তা চটি ।

সে অর্থে চটি লেখকদের পুরস্কার দেওয়ার উদ্যোগও হয়ত কোন একদিন নেওয়া হয়েছে দেখব ।

যাইহোক, মূল বক্তব্যে আসি, চটি যে উদ্দীপনা জাগায় তা কেবলই বিবাহিতদের জন্য প্রযোজ্য, কিশোর- যুবকদের জন্য নয় । কিন্তু ঐ যে চিরন্তন প্রবচন, ব্যাধিই সংক্রামক, স্বাস্থ্য নয়— আমরা চিরদিন স্বাস্থ্য রেখে ব্যাধিটারই সংক্রমণে যাই ।

ব্যাধি নিয়ে এবার বলি, চটিতে যৌন উত্তেজনার কার্যকরী উপাদান থাকে । তা এই চটি পড়ছে কারা ? উত্তেজিত হচ্ছে কারা ?

— তের চৌদ্দ- বছরের বাচ্চা থেকে পঁচিশ- ছাব্বিশের অবিবাহিত যুবকরা ।

আর তারা উত্তেজিত হয়ে করছে কী ? হস্তমৈথুনেই ক্ষান্ত ??

— মোটেই না ।

চটিতে মেয়েদের যেভাবে উপস্থাপন করা হয়, মেয়েদের সম্পর্কে যে ধারণা পাঠককে দেওয়া হয়, তা চটির ভাষায় বলতে গেলে— "মেয়েরা সবাই সেক্স বম্ব", "তাদের যৌন পিপাসা সবসময়ই টনটনে, যেন একটু ছুঁয়ে দিতে পারলেই মেয়েরা রাজি হয়ে যাবে" (!!!) অত্যন্ত ভ্রান্ত ধারণা এটি ।

এই কিশোর যুবকগুলো এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে রুচি বিকৃতিতে আক্রান্ত হয়, কুপথে প্ররোচিত হয় । মেয়েদেরকে কেবলই যৌনবস্তু হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করে, নারীর প্রতি সম্মান হারিয়ে ফেলে, নারীর দিকে তাকাতে গেলে নারীর নাক- চোখ বা চুলজাতীয় সৌন্দর্য জ্ঞাপক অঙ্গের দিকে নয়, তাকায় তার বুকের দিকে, গলার খাঁজে, কামিজের ফারায়, নিতম্বে কিংবা ঠোঁটে । যাকে তাকে ছুঁয়ে দিতে গিয়ে ব্যাপক লাঞ্ছিত হয় বা লাঞ্ছিত করে, হাত বাড়ায় কাজের মেয়ে বা বান্ধবীদের দিকে, অতি সাহসী আর সচ্ছল দুয়েকজন পা বাড়ায় যৌন পল্লীর দিকে; আর সবচেয়ে মারাত্মক যে প্ররোরচনা— তা হল এসব বোধ থেকে ধীরে ধীরে ধর্ষণের মত পাশবিক চেতনাটি সংগঠিত হয় পাঠকদের মনে । মানুষগুলোকে নষ্ট করে দিচ্ছে এই চটি ।

ভয়াবহতা কতটুকু বুঝতে পারছেন ?

অনেক কেইস স্টাডিই আমার কাছে আছে । এক পর্দা করা অত্যন্ত ধার্মিক মেয়েও এই চটি পড়ে প্ররোরচিত হয়ে সতীত্ব হারিয়ে শেষে অন্ধকারে মিশে গেছে । থাক সে কথা ।

এবার বলি চটির বর্ণনা প্রসঙ্গে, আমাদের সময়ে হয়ত কাটছাঁট ভদ্র সমাজে থাকার কারণে যে সেডাটিভ বই প্রথম আমার পড়া হয় তা অনেক মার্জিত । বিদেশি পাত্র পাত্রীর যৌন সম্পর্কের বিবরণ এবং কেবল যৌনতা নয় সেগুলো, মনে দাগ কাটার মত গল্প একেকটি । চকচকে মলাটের বই, ওপরে স্পষ্টাক্ষরে লেখা, শুধুমাত্র বিবাহিতদের জন্য ।

আর তার পরের যে চটি আমার দেখা হয়েছে (সর্বশেষ আট বছর আগে), তা অত্যন্ত অসভ্য । অপ্রকাশ মিত্র, রসময় গুপ্ত ইত্যাদি কতগুলো বাজে বর্ণনার লেখকের খিস্তিপূর্ণ সব লেখা । আরো বেদনাদায়ক, আরো ঘৃণার্হ এবং আপত্তিকর যে— এই গল্পগুলোতে মায়ের সঙ্গে ছেলের, বাবার সঙ্গে মেয়ের, ভাইয়ের সঙ্গে বোনের নিষিদ্ধ সব যৌন অভিসারের (Incest) বর্ণনা দিয়ে ইন্ধন যোগানো হয় । এই লেখকগুলোর বিবেক যে কী দিয়ে তৈরি— তা আমি ভেবে পাই না । যৌনগল্প লিখতে কি এই নিজের ঘরের মানুষগুলোকে কল্পনা করা খুবই জরুরি ??

এই ইনসেস্টের জঘন্য ধারাটির প্রবর্তক কোলকাতার চটি লেখকেরা । আসলে বাংলা চটির জন্মভূমিই কোলকাতা । বাংলাদেশী ছেলেরা চটি লিখতে শুরু করেছে অনেক পরে । এবং তারা ইনসেস্টের দিকে যায় না খুব একটা ।

এসব পাঠ করে ছেলেরা মায়ের দিকে তাকাতেও সঙ্কোচ করে । কেননা তাকাতে গেলেই চোখটা আগে যায় সেই বুকের দিকে । চেতনার এতই অধঃপতন ঘটে যে, বোনের হাত ধরতে গেলেও ভাইটি অপরাধবোধে শিউরে ওঠে !! গোপনে গোপনে যে কোথাও কোথাও ইনসেস্টও ঘটে যায় সে কথা আর বলে কাজ নেই । আফসোস ! বড় আফসোস এই বিবেকের ধ্বংসযজ্ঞের প্রতি ।

যাঁরা চটি লেখেন, আর যাঁরা চটি পাঠ করেন, তাঁরা কি এখনও ক্ষান্ত হবেন না এই অবক্ষয়ের পাঁয়তারা হতে ??

পুনশ্চ: →



দেশের ফুটপাতগুলোতে এখনও প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে সমাজের এই কাল ব্যাধি ! আমরা কি পারি না এই বিক্রয় বন্ধ করতে ??



অনলাইন চটি সম্পর্কেও ওপরের সবগুলো কথা প্রযোজ্য । যারা ব্লগে চটি লেখে আমি জানি না তারা কি পায় এ থেকে । এটি কি তাদের অর্থোপার্জনের উপায় ?

যারা ফেইসবুকে চটি পেইজ খোলে তাদের মানসিকতা দেখে বড় করুণা হয় । অর্ধোন্মুক্ত স্তনের ছবি দিয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়, "এক হাজার লাইক পেলে তবেই পুরোটা খুলে দেখাব" ! —ছিঃ !

কী হবে এই লাইক দিয়ে ?

যারা চটি লেখে তাদের কল্পনাশক্তি অত্যন্ত চৌকস । এই লেখকগুলো যদি ভালো কিছু লেখে তবে বিপুল পাঠকনন্দিত হবে বলে আমি মনে করি । নচেত্‍ কেবলই নিন্দিত পরিচয় ।

আর কেবল কয়েকটি লাইকের জন্যই কি এই অশ্লীলতা এরা প্রচার করছে ??

না । আমি এটা কখনই মনে করি না । এদের একটাই উদ্দেশ্য সমাজকে নষ্ট করা, বিপর্যস্ত করা । এরা পুরোপুরি নষ্ট, বিকৃত । এদের শাস্তি হওয়া উচিত্‍ ।

সম্পাদিত - - -

এদের বিরুদ্ধে লেখার পর আমার এই আইডি আর থাকে কিনা সন্দেহ আছে । হারিয়ে গেলে আবার খুজে নিয়েন । আপনাদের খুবই ভালোবাসি তাই হারাতে চাই না ।

বিষয়: বিবিধ

২১৪৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File