আমেরিকার সিরিয়া আক্রমন ঃ আমেরিকা, রাশিয়া, সিরিয়া ও জাতিসংঘ কার কি ভুমিকা হতে পারে

লিখেছেন লিখেছেন তিতুমীর সাফকাত ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১১:১২:২১ সকাল

‘জাতিসংঘের অনুমোদন ছাড়া সিরিয়ায় হামলা নয়’

জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, একমাত্র নিরাপত্তা পরিষদ সিরিয়ায় হামলার অনুমোদন দিতে পারে। কথিত রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ এনে আমেরিকা যখন দামেস্কের বিরুদ্ধে হামলার পাঁয়তারা করছে তখন এ কথা বললেন বান কি মুন।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় মুন বলেন, আমি বারবার বলেছি, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রাথমিক দায়িত্ব রয়েছে নিরাপত্তা পরিষদের।

তিনি আরো বলেন, জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শুধু আত্মরক্ষার জন্য কিংবা নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন নিয়েই কেবল শক্তি প্রয়োগ আইনসঙ্গত হতে পারে।

জাতিসংঘ মহাসচিব সিরিয়া সংকটের সামরিকীকরণের বিরোধিতা করে রাজনৈতিকভাবে এ সংকট নিরসনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সিরিয়ায় সেনা অভিযান চালানো হলে তাতে এ আরব দেশটিতে গোলযোগ এবং রক্তক্ষয় আরো বাড়বে।

সিরিয়ায় হামলা মানবেনা রাশিয়া

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে বলেছেন, সিরিয়ার বিরুদ্ধে একতরফাভাবে আমেরিকা ও তার মিত্রদের হামলার বিপক্ষে তার দেশ। জাতিসংঘের অনুমোদন ছাড়া কোনো ধরনের সামরিক হামলা হলে তা হবে ‘আগ্রাসন’। বার্তা সংস্থা এপি ও রাশিয়ার ফার্স্ট চ্যানেলকে গত মঙ্গলবার দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন এ কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি ক্রেমলিন আজ বুধবার তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে।

পুতিন বলেছেন, সিরীয় সরকারের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলে রাশিয়া বল প্রয়োগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের বিরোধিতা করবে না । পুতিন বলেছেন, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের বাইরে ২১ আগস্ট যে রাসায়নিক হামলা হয়েছিল তা আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠন তা করতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেছেন, সিরিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার যে অস্ত্র চুক্তি আছে তা অব্যাহত থাকবে।

সিরিয়ায় হামলা হলে রাশিয়া কী করবে- এর উত্তরে পুতিন বলেন, জাতিসংঘের অনুমোদন ছাড়াই যদি আমেরিকা সিরিয়া হামলা চালায় তাহলে রাশিয়া কী পদক্ষেপ নেবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

পুতিনের এই সাক্ষাৎকারটি এমন এক দিনে প্রকাশ করা হলো যেদিনে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সিরিয়ায় হমলার জন্যে কংগ্রেসের সমর্থন আদায়ে ব্যাস্ত। তবে ইতোমধ্যে ওবামা হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের রিপাবলিকান দলীয় স্পিকার জন বোয়েনার এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের নেতা এরিক ক্যান্টর সর্মথন পেয়ে গেছেন। কংগ্রেসের সর্মথন আদায়ে ওবামা প্রশাসনের সমস্যা হবেনা বলে ও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন এক সংবাদ সম্মেলনে বলছেন সিরিয়ায় হামলা চালাতে হলে পুনাঙ্গ জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ এবং নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটির মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। কোন একক দেশ এ হামলা চালাতে পারবেনা। এছাড়া সিরিয়ায় হামলা হলে এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা বাড়বে বলেও তিনি সর্তক করেন। ফলে সিরিয়া হামলা যুক্তরাষ্ট্র কতদূর এগোবে তা দেখার বিষয়।

এদিকে নিজ দেশের জনগণের উপর রাসায়নিক অস্ত্রের হামলার অভিযোগে সিরীয় সরকারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সিরিয়ায় সামরিক অভিযান চালানোর বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার খসড়া প্রস্তাব সিনেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে সমর্থন পেয়েছে। ওই খসড়ায় বলা হয়েছে, সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের সময়সীমা হবে ৬০ দিন। অর্থাৎ ৬০ দিনের মধ্যেই সিরিয়া অভিযান সম্পন্ন করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। সময় বেঁধে দেয়ার পাশাপাশি স্থলপথে সেনাবাহিনী ব্যবহার না করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবটিতে। সূত্র: বিবিসি ও রয়টার্স।

সিরিয়ায় হামলার সমর্থন পেলেন ওবামা

: প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের পরিকল্পনার পক্ষে আমেরিকার দুজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদের সমর্থন পেয়েছেন। এরা হলেন- হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের রিপাবলিকান দলীয় স্পিকার জন বোয়েনার এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের নেতা এরিক ক্যান্টর।

ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামা মঙ্গলবার দেখা করেন হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের রিপাবলিকান পার্টির স্পিকার জন বোয়েনারসহ জাতীয় নিরাপত্তা কমিটিগুলোর চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের সঙ্গে।

সিরিয়ায় অভিযান প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে সমর্থন দেয়ার কথা জানান জন বোয়েনার এবং এরিক ক্যান্টর। তবে সংখ্যালঘু ডেমোক্রেট সদস্যদের নেতা ন্যান্সি পেলোসি প্রেসিডেন্টের পরামর্শকে সমর্থন দেয়ার কথা বললেও সিরিয়া প্রশ্নে আমেরিকার জনগণের সমর্থন আদায়ের প্রয়োজন আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

পেলোসি বলেন, প্রেসিডেন্ট আসাদের রাসায়নিক অস্ত্রের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে যুদ্ধ জাহাজ এবং সেনা বহর পাঠানো একটা বিলাসিতা যেটা এ মুহূর্তে আমেরিকার সামর্থ্যরে বাইরে।

ওবামার জন্য এখন সবচেয়ে কঠিন কাজটাই বাকি রয়ে গেছে আর সেটা হলো তাকে সিরিয়ায় হামলা চালানো প্রশ্নে আমেরিকার জনগণের সমর্থন আদায় করতে হবে। জাতীয় জনমত জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে, সিরিয়ায় সম্ভাব্য হামলার বিপক্ষে জনমত ক্রমেই বাড়ছে। প্রতি ১০ জন আমেরিকানের মধ্যে ৬ জন সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিপক্ষে, এমনকি আইন প্রণেতারাও এ প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে।

সিনেট প্যানেলের সম্মতি পেলেন ওবামা

যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের একটি প্রভাবশালী প্যানেল সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছে। প্যানেলের ভোটাভুটিতে সামরিক অভিযানের পক্ষে ১০টি ভোট ও বিপক্ষে ৭টি ভোট পড়ে। আগামী সপ্তাহে বিষয়টি ভোটাভুটির জন্য সিনেটে পেশ করা হবে। আরো দরকার হবে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের অনুমোদন।

এ প্যানেলের অনুমোদন সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক হামলার পথ খানিকটা প্রশস্ত করলো।

ওদিকে ওবামা সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের পরিকল্পনার পক্ষে আমেরিকার ২ জন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদের সমর্থন পেয়েছেন। তাদের একজন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার রিপাবলিকান দলের প্রভাবশালী নেতা জন বোয়েনার।

সিরিয়ার দামেস্কে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের যে অভিযোগ করা হচ্ছে তারই পাল্টা জবাব দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন সিনেটের ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে।

সিরিয়ায় গত ৩০ মাসের সংঘাতে বিভিন্ন সময় সরকারি বাহিনীর ওপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে বেসামরিক মানুষ হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

সর্বশেষ গত ২১ আগস্ট রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে রাসায়নিক হামলায় বহু মানুষ প্রাণ হারানোর অভিযোগে পশ্চিমা বিশ্ব সিরিয়ায় সামরিক অভিযান চালানোর ব্যাপারে তৎপর হয়ে ওঠে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও এর আগে বিভিন্নভাবে সামরিক অভিযানের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য তার এখনো দেশের সিনেটরদের মতামতের প্রয়োজন রয়েছে। পররাষ্ট্রবিষয়ক একটি কমিটি এ বিষয়টি আগামী সপ্তাহে সিনেটে পেশ করবে।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের অনুমোদনও অবশ্যই নিতে হবে। সিনেটের এ প্যানেলের অনুমোদন সিরিয়ায় মার্কিন হামলার পথ কিছুটা প্রশস্ত করলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টকে এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে।

সিরিয়ার ২০ লাখ নাগরিক উদ্বাস্তু

: যুদ্ধের আশংকায় সিরিয়ার লাখ লাখ নাগরিক দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। এপর্যন্ত ২০ লাখেরও বেশি নাগরিক উদ্বাস্তু হিসেবে পার্শ্ববর্তি কয়েকটি দেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী পর্যবেক্ষণ বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এ তথ্য জানিয়েছে। এর মধ্যে গত তিন মাসেই সিরিয়া ছেড়ে পালিয়েছে পাঁচ লাখ নাগরিক।

ইউএনএইচসিআর’র বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো মঙ্গলবার জানায়, কেবল লেবাননেই আশ্রয় নিয়েছে সাত লাখ শরণার্থী। এছাড়া বর্তমান বিশ্বে সিরিয়ার নাগরিকরাই অন্য যেকোনো দেশের নাগরিকদের চেয়ে বেশি উদ্বাস্তু বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শাখা সংস্থাটি।

উল্লেখ্য, রাসায়নিক অস্ত্র হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর কথা বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর কংগ্রেসে অনুমোদন পেলেই সিরিয়ায় হামলা করবে মার্কিন বাহিনী।

মার্কিন নৌবাহিনীর ওয়েবসাইট হ্যাক!

সিরিয়ার একটি হ্যাকার গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে। ওই হ্যাকার গ্রুপটি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সমর্থক বলে জানা গেছে।

এতে বিদ্রোহীদের মদদ না দিয়ে প্রেসিডেন্ট আসাদের পক্ষে লড়তেই মার্কিন বাহিনীকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

মার্কিন নৌবাহিনীর মুখপাত্র এরিক ফ্লানাগান জানান, সাইটটি ওপেন করলে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সমর্থক ইন্টারনেট কার্যক্রম পরিচালনা গ্রুপ ‘সিরিয়ান ইলেকট্রনিক আর্মি’র পক্ষ থেকে একটি অস্থায়ী নির্দেশ করেছে।

এরিক ফ্লানাগান বলেন, ফের হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি থাকায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। তবে প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত সাইটের পুনঃনিয়ন্ত্রণ নিয়েছে নৌবাহিনী।

এর আগে নিউইয়র্ক টাইমস, টুইটার ও সিরিয়ার বিদ্রোহীদের ‘পক্ষে সংবাদ প্রকাশ করা’ কিছু সংবাদ মাধ্যমের ওয়েবসাইট হ্যাক করার দায় স্বীকার করে গ্রুপটি।

বিষয়: বিবিধ

২৫১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File