তোমারে লেগেছে এত যে ভালো
লিখেছেন লিখেছেন রক্তচোষা ১৩ জুন, ২০১৩, ১০:৫২:২১ সকাল
লেখিকা: কবিপত্নী সাবিনা মল্লিক (বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক)
সকালে রুটি বানাচ্ছি, জুম্মি এসে কাঁদ কাঁদ গলায় বলল, “আম্মু আব্বু আমাকে অপদার্থ বলেছে।”
তুই তো অপদার্থ। তোকে আবার কি বলবে। খুব নির্লিপ্ততার সাথে ওকে বললাম।
“শুধু আমাকে বলেছে? তোমাকেও তো। বলেছে তোর মাশুদ্ধ ঘরের সব কয়টা অপদার্থ।”
আমি ভীষণ রেগে শোবার ঘরে ঢুকলাম। কি ব্যাপার? দেখলাম, মানুষটা তোলপাড় করে কি যেন খুঁজছেন। আর গজগজ করছেন, ‘ঘরের একটা জিনিসও ঠিকমত থাকে না। ওয়ারড্রোবে রাজ্যের হাবিজাবি। কাপড়-চোপড় সব টেবিলে, চেয়ারে…..।’ ‘কি খুঁজছো?’ ওনার তৎপরতা বেড়ে গেল এবং আমাকে নয় ঘরের ছাদকে বললো, ‘একটা গেঞ্জীও খুঁজে পাচ্ছি না। আশ্চর্য সব হাওয়া হয়েযায় কি করে?’ আমিও আশ্চর্যহয়ে আলনায় তাকালাম। সদ্য ধোয়া সাদা গেঞ্জী একেবারে সবার ওপরে। চেঁচিয়ে বললাম, ‘ওটা কি?’ পরক্ষণে গলার স্বর খাদে নামালাম এবং বেশ শান্ত ভঙ্গিতে ওনাকে শুধলাম, ‘অপদার্থ কে? আমি.....?’
ওনার অবশ্য জবাব দেওয়ার সময় নেই। কারণ আবার শুরু হলো, ‘ঘড়ি? আমার ঘড়িটা কোথায় গেলো?’ (ঘড়ির তো হাত-পা আছে? ঘড়িতো এমনি এমনি কোথায় চলে যায়।)
এই তো এরকমই মানুষটা। ভুলোভোলা, খেয়ালী। তবে অভিযোগ করলে কিন্তু প্রতিবাদ করেন খুব। ডাবল অভিযোগ ফিরিয়ে দেন আমাকে। বলেন, ‘সাবিনার মতো অগোছালো মেয়ে দ্বিতীয়টি দেথিনি।’ একদিক দিয়ে ভালই যে, দু’জনের স্বভাবটা আমাদের কাছাকাছি। আমার আম্মার খুব দুশ্চিন্তা, ‘দু’জনে একরকম হলে কিভাবে সংসার চলবে?’ তবে চলছে তো! ভালই চলছে। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ আছে, কিন্তু তীব্রক্ষোভ নেই, আক্রোশ নেই।
উনাকে চিনি সেই ছোট্টবেলা থেকে। ফোর কিংবা ফাইভে পড়ি। চোখে দেখিনি। কিন্তু আমার মেজো ভাইয়া তার গল্প করতেন সারাক্ষণ। শুধু মল্লিক ভাই মল্লিক ভাই-মেজ ভাইয়ার মনে কেমন করে যে এতটা দখল নিয়েছিলেন? গল্প শুনে তাঁর চেহারা চরিত্র, আচার-আচরণ জানা হয়ে গিয়েছিল। মনে হত খুব অন্যরকম, অসাধারণ, হাতেম তাঈয়ের মতো একজন মানুষ।
এখনতো আর তিনি কল্পনায় নেই। বাস্তবের ভালো-মম্দয় মেশানো একজন মানুষ। সাধারণ, সাদসিধে, কিছু কিছু দিকে শিশুর মতোসরল আবার কিছু কিছু দিকে সাঙ্ঘাতিক জটিল। তবে কুটিল নয়। কুটিলতা, ষড়যন্ত্র আর মতিউর রহমান মল্লিক যোজন যোজন দূরে। সেটি হলো কৃপণতা। সে তো-আমার থেকে আপনারাই ভালো জানবেন। আমাকে খুশি করার জন্য মাঝে মধ্যে ঘরেএসে হিসেবী হিসেবী ভাব করেন। দু’টাকার বাদাম কিনে খাতায় লিখে দেখান (সে খাতার ভলিউম কিন্তু অনেক বড় এবং প্রায়ই হারায়বলে হিসেব রাখার খাতার পেছনের খরচটাও উল্লেখ করার মত)। মানুষকে দিতে পছন্দ করেন, খাওয়াতে পছন্দ করেন। সাধ অনেক, সাধ্যে হয়তো কুলোয় না।
তাঁর গোটা অন্তর জুড়ে রয়েছে রাসূলের (সা.) জন্য ভালোবাসা। চেষ্টা করেন কাজে কর্মে সুন্নতকে অনুসরণ করার। তবে, সবচেয়েবড় যে সুন্নত একামতে দীনের আন্দোলন সেই আন্দোলনে তিনি শরীক জ্ঞান হবার পর থেকে। এই আন্দোলন রাসূলের (সা.) অনুসরণের দিক থেকে সুন্নত যেমনি, তেমনি আইনগত মর্যাদার দিক থেকে ফরজ প্রতিটি মুসলমানের জন্য, এ বোধ তাঁর গভীরে। ফলে আন্দোলন থেকে বিচ্যুত হবার বিন্দুমাত্র চিন্তা কল্পনাও কখনো তাঁর নেই। যতটুকু করেন আন্তরিকভাবে আল্লাহ ও রাসূলের (সা.) মহব্বতের কারণেই করেন। আমার মনে হয়না কোন পার্থিব স্বার্থ, লোভ, ক্ষমতার মোহ কখনও তাকে লালায়িত করেছে। তবে আবেগী মানুষ। থার্মোমিটারের পারদের মত ওঠানামা করে তাঁর আবেগ। এই দিনরাত কেবল প্রোগ্রাম করছেন আর প্রোগ্রাম করছেন। আবার দেখি তেমন একটা যাচ্ছেন না। কিছু জিজ্ঞেস করলে একরাশ অভিমান ঝরিয়ে বলেন,‘আমাকে দিয়ে কিছু হবে না-আমি তুচ্ছ মানুষ, আমি এ কাজের যোগ্য না....। মানুষের সাথে সম্পর্কও তাঁর ওঠানামা করে।
কারো সাথে হয়তো এমন সম্পর্ক উষ্ঞতায় ভরপুর-পারলে নিজের কলজেটা কেটে দেয়। দু’দিন পর হয়তো দেখা যাবে তুচ্ছাতিতুচ্ছ কোন কারণে সম্পর্কটা শীতল হয়ে যাচ্ছে। সবার ক্ষেত্রেই যে ব্যাপারটা তা কিন্তু নয়। তবে প্রায়শএমন ঘটছে। আর চাকুরি তো রোজই ছাড়েন দু’বেলা করে। আবার অফিস ঘরে কাটিয়ে দেনদিনকে দিন, রাতকে রাত। যা বলছিলাম। আন্দোলনের জন্য তাকে অনেক কিছু ছাড়তে হয়েছে। বাড়িঘর, দাদাদের (তাঁর বড় ও মেজ ভাই) স্নেহ মমতা, পড়াশুনার ক্যারিয়ার, একটা স্বনির্ভর জীবন। কিন্তু এ নিয়ে কখনোই তাকেআফসোস করতে দেখিনি। কোন গর্বও করতে শুনিনি যে, এই করেছি সেই করেছি হেন করেছি তেন করেছি। তারঁ দু:সময়ের বেশীরভার গল্পই তো শুনেছি মেঝ ভাইয়ার কাছথেকে। দু’দিন তিনদিন না খেয়ে থেকে পথের ফেলে দেওয়া কাগজ কুড়িয়ে তাতে লেখা, ‘চল চল মুজাহিদ পথ যে এখনো বাকী....।’ চোখের পানি ফেলে ফেলে মেঝ ভাইয়া বলতেন এ কাহিনী। অবশ্য তার সময়ের কর্মীদের বেশিরভাগই ছিলেন ত্যাগী, তার আন্দোলনকে দিতেন। আন্দোলন থেকে কিছু পেতে চাইতেন না।
আল্লাহর উপর তার তাওয়াককুলটাও বেশ উঁচু ধরনের। অভাব-অনটন তো নিত্যসঙ্গী। কিন্তু তিনি কখনো ঘাবড়ে যান না। একটা সময় ছিল বিআইসিতে যখন ছিলেন বেতন তো সামান্য, এদিকে দু’টো বাচ্চা, আমার পড়াশুনা, মেহমান, আত্বীয়-স্বজন। বাসায়ও কেউ না কেউ পার্মানেন্ট থাকতোই। কিন্তু তাকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে সংসারে কি যুদ্ধটাই না চলছে। আমার ভাইরা বলত, ‘এ অবস্থায় মল্লিক ভাই এক ঘুমোয় কি করে? শোয়ার সাথে সাথে ঘুম?’ অবশ্য যুদ্ধটাতো আমার। বেতন আমার হাতে দিয়ে উনি নিশ্চিন্ত। তাছাড়া ওইযে বললাম তাওয়াককুল। আমি নিজের কানে শুনেছি। একবার আমাদের খুব দরকার তিনহাজার টাকা। তিনি মোনাজাতে বলছেন, ‘আল্লাহ্তুমি আমাকে এ তিনহাজার টাকা পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা কর।’ আমিতো হেসেবাঁচি না। এরকম মোনাজাতও কেউ করে? সত্যি! অবাক কান্ড। লন্ডন থেকে এক ভাইকিছ পাউন্ড পাঠালেন উপহার হিসেবে যা ভাঙ্গিয়ে তিন হাজার টাকাই হল। তিনি বললেন, ‘কাউকে বল না। লোকে আবার আমাকে পীরসাহেব মনে করা শুরু করবে। আসলে আল্লাহ্র কাছে কিছু চাইলে আল্লাহপাক ফেরান না।’
তার আর একটি গুন কৃতজ্ঞতা। কেউ তার জন্য কিছু করলে তিনি পার্থিব প্রতিদান অনেকসময় দিতে পারেন না। কিন্তু কৃতজ্ঞ হন ভীষণভাবে এবং দোয়া করেন তার জন্য। ৯৬-এ সেই ভয়ঙ্কর অসুস্থতার সময় বোঝা গিয়েছিল লোকেরা তাকে কি পরিমান ভালোবাসে। দেশ বিদেশে তার জন্য অনুষ্ঠিত হত দোয়া। ক্বাবা শরীফের গেলাফ ধরে মক্কার ভাইয়েরা তার জন্য দোয়া করেছেন। লন্ডনের ভাইয়েরা পাঠিয়েছেন অর্থসাহায্য। ইতালির, দুবাইয়ের ভাইয়েরা পত্রিকায় জানিয়েছেন সমবেদনা। তিনি সব সময় বলেন, ‘আল্লাহর সাহায্যেরপাশাপাশি ভাইদের দোয়ার কারণে আমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পেরেছি। নইলে এরোগ কখনো এত দ্রুত সারে?’ সে সময় তার জন্য কতজনে কত কিছু করেছেন তা ভোলার নয়।তার দু:সময়ের চিরসাথী ভাইদের নাম ধরে ধরে তিনি আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করেছেন, আমি শুনেছি। উপহার পেলে তিনি খুশি হন কিন্তু কোনটি আদরের আর কোনটি অনুগ্রহের তা বেশ টের পান এবং অনুগ্রহের জিনিস গ্রহন করতে তিনি একবারেই অনিচ্ছুক।
এবার আসি ঘরের কথায়। তার বিরুদ্ধে আমার সত্যিকারের নালিশ তো তিনি ঘরে সময় দেন না, ধরতে গেলে মোটেই নয়। তখনও না এখনও না। তখন ছিল এক রকম কষ্ট। এখন অন্যরকম। ছেলে মেয়েরা বড় হচ্ছে। আমি প্রাণপণ চাই ওরা আব্বুর আদর্শে মানুষ হোক। কিন্তু তার জন্য যে সাহচার্য দরকার ওরা সেটা পাচ্ছে না-আব্বুর সাথে বেড়ানো, ছুটি কাটানো, কেনাকাটা করা, একসাথে খাওয়া এসব থেকে ওরা বঞ্চিত। আমার ছেলেটার এ নিয়ে অনেক দু:খ। বিশেষ করে ওর বাপ প্লেনে করে সফরে গেলে ও কিছুতেই সহ্যকরতে পারে না। সেদিন দেখলাম গাল ফুলিয়ে বলছে, ‘কি সুন্দর আব্বু প্লেনে করে ঘুরে বেড়ায়। নিজের একটা মাত্র ছেলের কথা মনেও পড়েনা।’
প্লেনের প্রসঙ্গে মনে পড়লো। আমার বিয়ের পর। আমার এইচএসসি আর আর শাকিল(আমার পিঠোপিঠী ছোট ভাই) এসএসসি। ঊনি ফরিদপুরে গিয়ে ঘোষণা দিলেন, “তোমরা দু’জনেই যদি ফার্স্ট ডিভিশন পাও তবে তোমাদেরকে প্লেনে করে কক্সবাজার ঘুরিয়ে আনব।” আমার জন্য এটা তেমন ব্যাপার না হলে্ও শাকিলটা ইংরেজিতে কাঁচা ছিল বিধায় বেচারা ভাবনায় পড়ে গেল। তবু রাত জেগে লাস্ট ফ্লুড হ্যাজ ড্যামাজেড (Last flood has damaged) কে ও এভাবে উচ্চারণ (আব্বা এজন্য ওকেএত ক্ষেপাত বলার না) করতে করতে ফার্স্ট ডিভিশন পেয়ে গেল। এবার যাবার পালা। কিন্তু উনি বললেন, ‘এখন অফসিজন, সামনের বসন্তে।’ বসন্ত এলে বলেন, ‘এবার গুরুত্বপূর্ণ পোগ্রাম মাথায়। প্রোগ্রামটা কাটুক। আসল ব্যাপারতো সহজে বলেন না। নতুন নতুন পয়সার অভাবের কথা কি আর বলা যায়। শেষে দোনোমনো করে বলেই ফেললেন,‘কষ্ট মষ্ট করে ধার-টার করে তোমাকে হয়তো নিতে পারি। কিন্তু তিনজন যাব কি করে?’ বললাম, একা যাব না, শাকিলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে, বেচারার মন ভেঙ্গে যাবে, উনিও সায় দিলেন, ‘ঠিক কথা। ওকে নিয়েই যাব ইনশাল্লাহ,তবে কিছু পয়সা হোক।’ সেই যাওয়া আর হয়নি। সুযোগ পেলে স্মরণ করাই। উনি বলেন, ‘চলনা এখন চল।’ এখন কিআর যাওয়া হয়? আমার চাকরি, বাচ্চা-কাচ্চা, সময়-সুযোগ; সেই আনন্দ আর সেই মন কি ফিরে পাব? তাছাড়া শাকিলকে কোথায় পাব? প্রতিশ্রুতি যে ওর সাথেও? এমনি অনেক অনেক প্রতিশ্রুতি সাধ স্বপ্ন কোরবানি হয়ে গেছে সাধ্যের কাছে। এগুলো অবশ্য আমার কাছে কোনদিনেই গুরুত্বের হয়ে দেখা দেয়নি। ওনার কাছ সবচেয়ে বেশি যেটা পেয়েছি সেটা আমার পড়াশুনার প্রেরণা। অনেক অনেক ঝামেলার মধ্যেও উনি আমাকে ড্রপ করতে দেননি একটি বারের জন্যও। নাজমী আমার চিররুগ্না। ছোট্টবেলায় যেমন ভুগতো তেমন কাঁদত। সেই অবস্থায় একটার পর একটা পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছি। এ্যাসাইনমেন্ট তৈরী করছি। অনেক সময় এমন হতো পড়তে পারছি না, মেয়ের পরিচর্যায় ভীষণ ব্যস্ত। উনি আমাকে পড়ে শোনাতেন।
আম্মাকেও অনেক পড়া পড়ে শোনাতে হতো (পড়াশুনায় আমিএকটু অলস আর ফাঁকিবাজ টাইপের)। ওনার অনেক আশা ছিল আমি ডক্টরেট করি। কিন্তু আর ইচ্ছে করছেনা, চাকরিতে ঢুকে পড়েছি। একটুকু যে আসতে পেরেছি এজন্যই আমি কৃতজ্ঞ। আল্লাহর সাহায্যের পাশাপাশি ওনার অবদানকে আমি ভুলব না, যতদিন বেঁচে থাকি।
আদর্শের ব্যাপারে আপোষহীন। আদর্শের কারণেই অসংখ্য অসংখ্য মানুষকে বুকে টেনে নেন। মানুষের জন্য হৃদয়কে উজাড় করে দেন। কিন্তু বাড়িতে চান রেডিমেড কর্মী। এখানেও যে টার্গেট নিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে কর্মী করে নিতে হয় সেটা ভুলে যান। ধমক-ধামকটাকে প্রাধান্য দেন বেশি। তার বকা ঝকা থেকে শালা-শালিরাও বাদ যায়না। আমার আব্বা ইসলামী আন্দোলন করতেন না দেখে কত অভিযোগ। বলতেন, ‘আমি সফরে গেলে এলাকার লোকেরা বলে মল্লিক ভাইয়ের শ্বশুর কেন আন্দোলনে নেই? লজ্জায় আমার মাথা হেট হয়।’ আমি বলি বা-রে তুমি দাওয়াত দিলেই পারো!
“আব্বাকে দাওয়াত দিতে হবে কেন? নিজে বোঝেন না? মেঝভাই সংগঠন করছে, তুমি করছ এসব দেখেও নির্বিকার থাকেন কি করে? টুপী-পাগড়ীএত বোঝেন, আন্দোলন বোঝেন না?”
আব্বা কিন্তু শেষ পর্যন্ত আন্দোলনে এসেছিলেন। শাসনতান্ত্রিক আন্দোলনেএসেছিলেন। হয়তো কোন অভিমান কাজ করেছিল বলে সরাসরি একই কাতারে আসেননি। উনি বললেন, ‘শেষ পর্যন্ত আব্বা তো এলেন কিন্তু আমরা আব্বাকে পেলাম না। মুলাদীতে আব্বাকে দিয়ে সংগঠনের বিরাট কাজ হতো।’
আব্বাকে যে কত ভালোবাসতেন বোঝা যায় এখন,আব্বার মৃত্যুর পর। প্রসঙ্গ এলেই বলেন, ‘আব্বা ছিলেন ফেরেশতার মতো মানুষ, আমরা কাজে লাগাতে পারি নি।’ আব্বাও ভালোবাসতেন উনাকে। তার গানের ভক্ত ছিলেন আব্বা। তার পড়াশুনার খুব এপ্রিশিযেট করতেন। আসলেই, উনি কিন্তু অসাধারণ অধ্যবসায়ী। পরীক্ষাভীতি আছে বলে একাডেমিক দিক দিয়ে পিছিয়ে, তাই বলে জ্ঞান সাধনায় পিছিয়ে নেই মোটেও। রিক্সায়, বাসে-ট্রেনে-স্কুটারে-যে কোন পরিবেশ পরিস্থিতিতে তিনি দিব্যি পড়ে যেতে পারেন। মুখস্ত করতে পারেন পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। ফররুখ, নজরুল, রবীন্দ্রনাথের বিশাল বিশাল কবিতা তার ঠোঁটস্থ। হাফেজ না হয়েও কুরআনের বেশ কিছু অংশ তারমুখস্ত। কোন কিছু একবার ধারণ করলে সহজে ভোলেননা। দশবছর আগে মুখস্ত করা কোনকোটেশন তিনি ঠিকই গলগল করে বলে যেতে পারেন। আর বলতে পারেন কথা। একাধারে যাদুকরী ভাষায়। তার মত অধ্যবসায়ী আমি কমই দেখেছি। ছেলেমেয়েরা আব্বুর এদিকটি পায়নি। ওরা হয়েছে আমার মতো। পড়ালেখার ধার যত না ধেরে পারে।
বাইরে থেকে মানুষটাকে যত নরম দেখা যায় ভেতরে ভেতরেতিনি কিন্তু সাঙ্ঘাতিক বেপরোয়া। যেটা পছন্দ করেনা না তো করেনই না। কোন ভয়-ভীতি বা লোভ এ ক্ষেত্রে কার্যকর হয় না। এক প্রভাবশালী পীরের দরবারে গিয়ে একবার এমন এককান্ড ঘটালেন! দুর্দান্ত পীর সাহেবদের কাছে মুরীদানদের যেতে হয় দু’হাত জোড় করে খুব আদবের সাথে। পীর সাহেবকে কাছ থেকে দেখার জন্য উনিও লাইনে দাঁড়ালেন। কিন্তু হাত জোড় করলেন না। একজন সম্রাটের মত বুক ফুলিয়ে এগিয়ে গেলেন যেটা সেখানকার আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। শুধু এতটুকুই নয়। পীরের কাছটিতে এসে তার কিযে হল। পীরের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলেন লা হাওলা ওলা কুওয়াতা......এবং সঙ্গে সঙ্গে লাইন ভেঙ্গে সরে এলেন বাইরে। আমার মেঝভাইয়া সথে ছিল। ভাইয়া বলল, ‘আমি তো প্রতি মূহুর্তে আশঙ্কা করছিলাম এই বুঝি মুরীদানরা গণধোলাই শুরু করে। যে কোন একটা দুর্ঘটনা ঘটতেই পারত!’ ওখানকার রীতি-নীতি, আচার-আচরণ ওনার বরদাশ্ত হয়নি। এটা অন্যায়। মানুষকে খোদার আসনে বসানোর ধৃষ্টতা। ফলে, তিনি ভীত না হয়ে পীরকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বাইরে চলে আসতে পেরেছিলেন।
এ ধরনের মানুষই আমি চেয়েছিলাম। আল্লাহ্ আমাকে ঠিক রকমটিই দিয়েছেন।
পরিশেষে তার জন্য আমার অফুরন্ত দোয়া।
বিষয়: বিবিধ
২৪০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন