আমাদের মন্ত্রিরা
লিখেছেন লিখেছেন রক্তচোষা ২৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:০২:৫৯ দুপুর
পিওন এসে মন্ত্রী কে বললো
- স্যার, সাভারে তো রানা প্লাজা বিল্ডিং ধসে পরছে। অনেক মানুষ মড়েছে।
- হুম…শুনছি, বিল্ডিং তো ধসবেই। যেখানে বড় বড় পাহাড় ধসে সেখানে রানা প্লাজা তো কিছুই না।
- কিন্তু আপনি মন্ত্রী মানুষ। সেখানে না গেলে ব্যাপারটা কেমন দেখায় না??
- আজব তো!!! আমার মনে হয় অন্যান্য কাজ নাই? দেশের কাজ করতে করতে পরিবারের দিকে নজরই দিতে পারিনা। যাও। আমি আজ আমার ছেলেকে নিয়া ঘুরতে যাবো।
- কিন্তু স্যার সামনে নির্বাচন, এমনিতেই আপনাদের অবস্থা তেমন সুবিধার না। এখন একটু এসব ঝামেলায় গিয়ে দরদ না দেখালে জনগন আপনাকে ভোট কেন দিবে বলেন। রানা প্লাজার ঘটনাটা আমাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট। এই তো সুযোগ জনগনের কাছে পপুলার হওয়া।
- হুম…কথা তো মন্দ বলনি। চলো একটু ঘুরেই আসি।
এক ঘন্টা পর,
- পিওন??
- জ্বী স্যার বলেন।
- ধুর…এতো নোংরা পরিবেশে আমি থাকতে পারবো না। অদের বলে দাও যে মন্ত্রী সাহ্বে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
- জ্বী স্যার বলে দিচ্ছি।
কিছুক্ষন পর,
- স্যার, বলে দিছি। মিডিয়াকেও বলে দিলাম। ওরাও প্রচার করে দিবে।
- ও, অনেক ভালো করেছো।
- স্যার আরেকটা কাজ বাকি আছে।
- আবার কি কাজ?
- পাশের হাসপাতালে আহতদের ভর্তি করানো হয়েছে। আপনি সেখানে গিয়ে একটু সুশীল সাজবেন।
- হ্যা তাই তো, আসলেই তোমার মাথায় অনেক বুদ্ধি।
৩০ মিনিট পর,
- পিওন!!
- স্যার বলেন।
- এই হাসপাতাল খুব নোংরা। বেশিক্ষন থাকতে পারবো না। যা করার তারাতারি করো।
- ওকে স্যার!!
- এই এই এই…ওই নোংরা মেয়েটা আমার দিকে আসতেছে…আমার গায়ে নোংরা ভরবে। ইস্ত্রী করা কোট পরেছি। পিওন ওকে আটকাও।
- এই মেয়ে এই…দুর থেকেই কান্দো…এদিকে আসতে হবেনা। স্যার ওর স্বামী আহত হইছে।
- তো আমি কি করবো। সবার দায়িত্ব নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।
- বেশি কিছু করতে হবেনা। শুধু ডাক্তার দের মুখে বলে দেন সর্বোচ্চ সেবা দিতে।
- ও হ্যা…তুমি দুই একটা মিডিয়া কে এখানে নিয়ে আসো। ওদের সামনেই বলে দেই। পাবলিসিটি হবে।
- স্যার আপনার মাথাতেও জবর বুদ্ধি।
- হেহে…বুদ্ধি না থাকলে মন্ত্রী হলাম কেমনে?
২ ঘন্টা পর,
- বউ তোমার রান্না করা রোস্ট তা জবর টেস্ট হইছে। ইয়াম, ইয়াম, ইয়াম…
- কম করে খাও। তোমার আবার ডায়াবেটিস।
- ধুর, জীবনে খাওয়াই সব। দেখি টিভিটা ছাড়ো তো। খেতে খেতে ইন্ডিয়ান নায়িকাদের ডান্স দেখার মজাই আলাদা।
স্ত্রী টিভি ছাড়লে প্রথম চ্যানেলেই রানা প্লাজার খবর চোখে পরলো মন্ত্রীর।
মন্ত্রী - ধুর…এই এক খবর সব চ্যানেলে।
মন্ত্রী হঠাৎ করে খাওয়া বাদ দিলেন। দৌড়ে গিয়ে একযায়গায় ফোন দিলেন।
তার স্ত্রী বললেন,
- কি হলো? এমন তারাহুরা করে কাকে ফোন দিলা?
- আরে কোন কিছুর গ্যারান্টী আছে নাকি? রানা প্লাজা ধসেছে। আমাদের বাড়িটা ধসবেনা এমন গ্যারান্টী কে দিবে? ইন্জিনিয়ারকে ফোন দিলাম। এসে আমার বাড়িটা পরিক্ষা করে যাক। তাছারা মনে শান্তি পাচ্ছি না।
গভীর রাত,
ইন্জিনিয়ার এর কাছে নিশ্চিত হয়ে এখন মন্ত্রি সাহেব শান্তি মত ঘুমাচ্ছেন।হঠাৎ তার ঘুম ভেঙে গেলো। তার টয়লেট চেপেছে।
হঠাৎ পুরো বাড়ি কেপে উঠলো প্রবল ঝাকুনিতে। তিনি ঊঠে বসে দেখলেন পুরা বাড়ি কাপছে। সাজানো ঘর উলোট পালট হয়ে যাচ্ছে। ভুমিকম্প শুরু হয়ে গেছে। দেয়ালে ফাটল দেখা যাচ্ছে। উপরের ছাদে বিড়াট ফাটল সৃষ্টি হয়েছে।
হঠাৎ করে ছাদের ভাঙা এক বড় অংশ তার মাথায় এসে পরলো। তিনি প্রান পনে চিৎকার দিয়ে উঠলেন।
- এই কি হলো?? দুঃস্বপ্ন দেখছো নাকি?
মন্ত্রী সাহেব এবার ঘুম ভেঙে দেখলেন সব কিছু নিশ্চুপ। তিনি দুঃস্বপ্ন দেখছিলেন।
- অ্যা.…ও তাই হবে।
- আর এটা কি করেছো? পুরা বিছানা ভিজিয়ে ফেলেছো!!! যাও বাথরুমে যাও। আমি সব চেন্জ করছি।
মন্ত্রী সাহ্বে দেখলেন তিনি ঘুমের ভেতরেই প্রচন্ড ভয়ে হিসু করে ফেলেছেন। খুব লজ্জা পেলেন। তালমাতাল হয়ে হাটা দিলেন বাথরুমের দিকে।
(গল্পটা কাল্পনিক। কারো সাথে মিলানোর চেষ্টা করবেন না প্লিজ।)
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন