আশুগঞ্জে আ.লীগ নেতাকে ধর্ষণের মামলা থেকে বাদ দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন! আল্লাহর কাছে বিচার চাইলেন ধর্ষিতা
লিখেছেন লিখেছেন রক্তচোষা ১৯ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:৪৮:১৫ রাত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে এক বিধবা ধর্ষণের মামলার আসামিরা প্রভাবশালী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে তাদের নাম বাদ দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ধর্ষিতা এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আল্লাহর কাছে বিচার চেয়েছেন। তিনি পুলিশের প্রতিবেদনের বিরুদ্বে আদালতে লিখিত আপত্তি জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার আদালতে পুলিশের এই রিপোর্ট নিয়ে শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও বাদী পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
গত ৩০ জানুয়ারি রাতে ধর্ষিতা বাদী হয়ে উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সায়েদ লাল মিয়া এবং তার ভাতিজা আমির হোসেনকে আসামি করে আশুগঞ্জ থানায়ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। পুলিশ কোনো আসামি গ্রেফতার না করে উল্টো তদন্ত রিপোর্টে ধর্ষক আবু সায়েদ লাল মিয়া ও তার ভাতিজা আমিরহোসেনকে বাদ দিয়ে সামাজিক দ্বন্দ্ব বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দায়ের করেছে। এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
ধর্ষিতার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ধর্ষণ মামলা করার পর থেকে মামলা তুলে নিতে লাল মিয়ার পক্ষের লোকজন ও পুলিশ ধর্ষিতাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। এমন কি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মনিরুজ্জমান ধর্ষিতাকে খারাপ মহিলা বলে আখ্যায়িত করলে তার সঙ্গে মানবাধিকার কর্মীদের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।
এদিকে মামলার চূড়ান্ত রিপোর্টে ধর্ষক লাল মিয়াকে বাদ দেয়ায় ধর্ষিতার পরিবারটি এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে বলে জানা গেছে। অসহায় ও দরিদ্র এই পরিবারের সদস্যদের মাঝে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক।
ধর্ষিতা কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান,ধর্ষণের শিকার হয়ে মামলা করেছি। থানার কাছে ন্যায়বিচার পাইনি। মরণের পর যেন আল্লাহর কাছে বিচার পাই। তিনি আরও জানান, লাল মিয়া অনেক প্রভাবশালী। তার সঙ্গে পুলিশ আছে, নেতা আছে, সর্দার আছে, ভাই আমার সঙ্গে কেউ নেই।
এ বিষয়ে এলাকার একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, এ জঘন্য অপরাধ ঘটিয়েও লাল মিয়াকে কিভাবে পুলিশ তদন্ত রিপোর্টে বাদদিল তা বুঝতে পারছি না। তবে লাল মিয়াকে বাঁচাতে সরকারদলীয় লোকদের দায়ী করেন এলাকাবাসী। এলাকার লোকেরা ধর্ষক লাল মিয়ার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন।
থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম ফারুক যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি কিছু বলতে পারব না তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদন্তের ভিত্তিতেই আদালতে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মনিরুজ্জমানকে ধর্ষিতার অভিযোগ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি যা পেয়েছেন সে অনুযায়ী রিপোর্ট দিয়েছেন বলে দাবি করেন।
তবে একটি বিশেষ সূত্রে জানা যায়, মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে লাল মিয়া ও তার ভাতিজাকে বাদ দেয়ার জন্য মোটা অংকের অর্থের লেনদেন হয়েছে। এদিকে ভিকটিমকে আইনি সহায়তা দিতে এগিয়ে এসেছে ব্র্যাক। তারা ধর্ষিতার পাশে থেকে আইনি সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
গত ২১ জানুয়ারি শরীফপুর ইউনিয়ন সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগেরসভাপতি আবু সায়েদ লাল মিয়ার কাছে তার ভাতিজা আমির হোসেনের ধর্ষণেরশিকার হয়ে বিচার চাইতে গিয়ে ওই বিধবা ফের আবু সায়েদ লাল মিয়ার ধর্ষণের শিকার হন। পরে ধর্ষিতা নিজে বাদী হয়ে লাল মিয়া ও তার ভাতিজা আমির হোসেনের বিরুদ্ধে আশুগঞ্জ থানায় ধর্ষণ মামলা দায়েরকরেন।
বিষয়: বিবিধ
১০৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন