মরণ ক্ষুদা
লিখেছেন লিখেছেন রক্তচোষা ১১ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:০৫:৪২ দুপুর
সকাল থেকেই বৃর্ষ্টি হচ্ছে।বৃর্ষ্টি থামার খবর নেই,এখন সন্ধ্যা ৭ টা।বৃর্ষ্টি একবার থামছে তো আবার শুরু হচ্ছে।মাঝে মধ্য ১০ কিংবা ২০ মিনিট বিরতি দিচ্ছে।
ভীষণ জ্বর।সকাল থেকেই কাথা মুড়ি দিয়ে আছি,আর মোবাইল দিয়ে নেট ব্রাউজ করছি।পাশেই পড়ে রয়েছে ল্যাপটপ টা।
খুব খারাপ লাগছে,এমন সময় আমার ফুফাতো ভাই হাসান আসলো।
আমার মা বাড়িতে নেই,আমার নানার বাড়িতে গেছে।
বৃর্ষ্টির কারণে আমাদের বাড়িতে আসতে পারছেনা।
আমার আম্মুকে আমার অসুখের কথা বললে উনি পাগলের মত হয়ে যাবে।
হাসানকে পেয়ে খুব খুশি হলাম।রাতে সে আমার সাথে থাকবে।
একি তার মুখ খানা ভার ভার লাগছে,নিশ্চয় বাড়ি থেকে ঝগড়া করে ছলে এসেছে।
হাসান সম্পর্কে বলিঃ
হাসান আমার আপন ফুফাতো ভাই,বাড়িঃনাঙ্গলকোট উপজেলার মোড়েশ্বর গ্রামে।হাসান একটা মেয়ের সাথে প্রেম করে।মেয়েটির বাড়ি তাদের গ্রামে।মেয়েটির পরিবারের সব সদস্য জেলে,তাদের কে ওই এলাকায় "জাইল্লা" বলে সবাই ছিনে।অপর দিকে হাসানের পরিবারকে সবাই মোল্লা বংশ বা পরিবার বলে গ্রামে নাম ডাক রয়েছে।
বংশের পার্থক্যের কারণে তাদের দুইজনের প্রেম কেউ মেনে নেয়নি।
হাসান মেয়েটিকে প্রকৃত পক্ষেই ভালোবাসে,বিপরিতে মেয়েটিও ।তাদের প্রেমের বাধা একমাত্র গোষ্টি মর্যাদা।
হাসান এবং তার প্রেমিকা দুইজনে কুরআন শপথ করেন যে,তার একে অপরকে ছাড়া বিয়ে করবেনা।"
আমি হাসানকে জিজ্ঞাস করলামঃচলে যাবি?
হাসানঃনা।
আমিঃকি হয়েছে তোর?বাড়িতে কি সমস্যা?
হাসানঃহুমম! (একটা দ্বীর্ঘশ্বাস)
তার পর আমার বিচানায় শুয়ে পড়লো।আমি হাসানকে ভাত খেতে বলি,কিন্তু ও খাচ্ছেনা।অনেক জোরাজোরি করি ও এক গ্লাস পানিও খাচ্ছেনা।
ব্যার্থ হয়ে আমি এক গ্লাস পানি খেয়েই ঘুমাতে যাই।
বিচানায় ওঠার সময় হাসানের হাত আমার হাতে লাগতেই আমি ভয় পেয়ে যাই।
একি তার হাত এত ঠান্ডা কেন?
যেন আইসক্রিম।
পরক্ষণে ভাবলামঃআমার জ্বরের কারণে এই রকম লাগছে।আর হাসান হয়তো বৃর্ষ্টিতে ভিজেছে।
আমি শুয়ে রইলাম।ইচ্ছা করেই হাসানের সাথে কথা বলছিনা।তার দিকে তাকিয়ে দেখি,সে কাদছে।
রাত ৮ টা।একটু নেট ব্রাউজ করছি,এমন সময় একটা চিত্কার শুনতে পেলাম।আমার জানালার পাশে।কিন্তু জানালা খুলে দেখি বৃর্ষ্টি ঝরছে,আর কিছু দেখা যাচ্ছেনা।
রাত ৮ঃ৩০ নেটওয়ার্ক এ প্রচুর সমস্যা তাই হাতের মোবাইল টা চার্জে দিলাম।
হাসান আর আমি শুয়ে রইলাম,ওর সাথে তো আগে অনেক দিন শুয়েছি।
কিন্তু,আজ কেন জানি ভাল লাগছেনা।
আমি ওকে জিজ্ঞাস করলাম কি হয়েছে বাড়িতে?
হাসান বলা শুর করলঃ
গ্রামের সবাই আমাদের প্রেমের ঘটনাটা জেনেছে,আমার আম্মা এবং আমার চাচা এই বিষয় নিয়ে আমাকে অনেকে বকেছে।
মেয়েটির ভাই আমাকে মেরেছে!
আমি আর মেয়েটি স্বিদ্ধান্ত নেই,আমরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলবো।
কিন্তু কুমিল্লা কাজী অফিসে যাওয়ার পূর্বেই মেয়েটির বাবা এবং ভাই আমাদের কে ধরে পেলে।কুমিল্লা থেকে আসার সময় মেয়েটি CNG থেকে লাফিয়ে পড়ে এবং তার হাত ভেঙ্গে যায়।
গ্রামে আসার পর গ্রাম্য শালিসে,আমাকে আর মেয়টিকে পিটায়।
এর পর মেয়েটি গলায় দড়ি দিয়ে মার যায়।
তার হাতে একটা চিরকুট দেখলামঃএতে লেখা"আমাকে ভুলনা,আমার কাছে আস হাসান"
এর ২ ঘন্টা পর আমি বিষ খাই।
এর পর আমাকে নাঙ্গলকোট সরকারী হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এই কথা বলে একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেললো হাসান।
হঠাত্ আমার নজর পড়ে হাসানের ছোখের দিকে,আমি ভয় পেয়ে গেলাম।অন্ধাকারে হাসানের ছোখগুলা জ্বলছে।
আমি তাকে জিজ্ঞাস করলামঃতুই কবে বিষ খেলি?কখন হাসপাতালে গেলি?
এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে হাসান শুধু বললোঃআমি আসছি।
আমি মনে মনে ভয় পেলাম।কিচুই বুঝে উঠতে পারছিনা।হাসান কখন বিষ খেল?কখন হাসপাতালে গেল?কিচুই শুনলাম না।আর হাসপাতালে গেলে সেখান থেকে আসে কিভাবে?
তার মা একবার হলেও ফোন দিত।
কিচুই ডুকছেনা মাথায়।
প্রকিতির ডাকে ঘর থেকে বের হলাম মোবাইলটা নিয় red key চাপ দিতেই অবাক হলাম।৬৩ টা মিসড কল!
কে দিল এত মিসড কল?
Mejo Pupo(63)
মেঝো ফুফু মানে হাসানের মা!
টয়লেটে ডুকেই কল ব্যাক করলাম,কিন্তু কেউ কল ধরছেনা।
টয়লেট থেকে বের হবো,এমন সময় কল রিসিভ হলো।
উচ্ছ স্বরে কাদার আওয়াজ আসছে।
আর কে যেন বলতেছে,রিয়াদ।হাসান বিষ খেয়েছে।এখন নাঙ্গলকোট সরকারী হাসপাতালে।
আমার মাথায় যেন বাজ পড়লো।
একি!আমি স্বপ্ন দেখছিনাতো?
মনে হয় কোথায় কোন সমস্যা হয়েছে।
আমি তাড়াতাড়ি করে ঘরে গেলাম।
ঘরে গিয়ে যা দেখলাম তা বলার মত না।
দেখি হাসার আর তার প্রেমিকা আমার বিছানায় শুয়ে রয়েছে।হাসান তার প্রেমিকাকে বলছেঃআমি ছলে এসেছি।
যখন তাদের দুইজনের নজর পড়লো আমার দিকে,তখনতো আমি ভয়ে বরফ হয়ে গিয়েছিলাম।
তাদের চেহারা দেখেই আমার মরে যাবার অবস্থা।
হাসানের প্রেমিকার জিহবা নেমে বুক পর্যন্তো ঝুলছে,ছোখ গুলো নেই,পেটটা অসম্ভব পোল(দশটা বাচ্চা থাকলে যে অবস্থা)।
আর হাসানের মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে,বুকের কাছে একটা চিদ্রু।
তার দুইজন আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করে ডাকতেছে।আমি যাচ্ছিনা।
হাসান আর তার প্রেমিকা আমার দিকে এগিয়ে আসছে।হাসান আমার হাতটা ধরল,এবার দেখি তার দাত গুলা যেন মাটি কাটার কোদাল,তার মুখে রক্ত লেগে আছে।
আল্লাহু আকবার,আল্লাহু আকবার
লা ইলাহা ইল্লাললাহ!
নিজেকে আবিষ্কার করলাম ঘরের বাইরে।আমার শার্টটা চেড়া।
মাথার বাম পাশে প্রচন্ড ব্যাথা করছে।
এমন সময় পকেটে মোবাইল বেজে ওঠলো।
মেজো ফুফুর ফোন।
মেজো ফুফুঃও আব্বারে, হাসানতো নাই.....(বিলাপ শুরু করে দিলেন)
আমি দৌড়ে আমার ঘরে যাই।
ঘরে গিয়ে দেখি আমার বিচানাটা উলট পালট করা।
তাড়াতাড়ি করে নাঙ্গলকোট সরকারী হাসপাতালে যাই বাইকটা নিয়ে।
গিয়ে দেখি হাসানের লাশ আনছে।
হাসানের লাশের দিকে তাকিয়ে আমি অবাক হয়ে যাই,তার হাতটা যেন শক্ত ভাবে মুষ্টি বদ্ধ।
হাসানের হাতটা অনেক কষ্টে খুলে দেখি,আমার শার্টের বোতাম।
বিষয়: বিবিধ
১৪৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন