রাজনীতিতে আদর্শের লড়াই । রক্তাক্ত বাংলাদেশ
লিখেছেন লিখেছেন এ বি এম মুহিউদ্দীন ০১ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:০৭:৪১ রাত
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা বাংলাদেশের বুকে মরণকামড় বসিয়েছে। পুনর্বার ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে তারা বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারকে জনগণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামিয়ে দিয়েছে। গণতন্ত্র নস্যাৎ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত অথচ ফ্যাসিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠা করে এদেশের সাধারণ নাগরিকদের জীবন-জীবিকা এবং দেশের ভবিষ্যতকে ঠেলে দিয়েছে মারাত্মক হুমকির মুখে। রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরকে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বিশেষকরে দেশের সর্বোচ্চ বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের অনাস্থা তৈরী এবং দৃশ্যত বিচার বিভাগকে অবিচারের কেন্দ্রস্থলে পরিণত করেছে। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের নামে পুলিশ বাহিনীর যথেচ্ছা অপব্যবহার করে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সীমাহীন নির্যাতন-নিপিড়ন ও রক্তে রক্তাক্ত করে তুলেছে রাজপথ। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা সমসাময়িককালে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়ানক যে ক্ষতিটি করেছে তা হল, অত্যন্ত সুকৌশলে এদেশের সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্মকে স্পষ্টত: দুটি ভাগে বিভাজন করে দিয়েছে। যে বিভাজন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে দীর্ঘস্থায়ী একটা মানসিক লড়াইয়ে লিপ্ত রাখবে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের সংখ্যা যা-ই হোক না কেন, তারা বর্তমান সরকারের কাঁধে চড়ে আওয়ামীলীগকে যেমন মনেপ্রাণে ধর্মনিরপেক্ষ করে তুলতে সমর্থ হয়েছে, তেমনি ইসলামপন্থীদের দমন-পিড়নে বাংলাদেশের ইতিহাসে এ দলটিকে চিরস্মরণীয় করে তুলতে ভীষণভাবে সফল হয়েছে। অথচ এদেশে এ আওয়ামীলীগই সর্বপ্রথম ইসলাম প্রচার ও প্রসারে ইসলামী গবেষণা ও চর্চাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী বামরা আওয়ামীলীগের সে মন-মানসকে এতটাই প্রভাবিত করেছে যে, আজ মওলানা ভাড়া করে ইসলামপন্থীদের বিতর্কিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে আওয়ামীলীগ। তবে যে যাই বলুক, বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের রোজকার উনুনে আগুন-লাকড়ির মূল যোগানদাতা যে ধর্মনিরপেক্ষ বামরা তাতে সন্দেহ নেই।
ক্ষমতার রাজনীতি চর্চা এবং পুনর্বার ক্ষমতায় আসীন হওয়ার খায়েশে বর্তমান সরকার মূলত বাংলাদেশের রাজনীতিতে চূড়ান্ত একটা আদর্শিক লড়াইয়ের জন্ম দিয়েছে। যে লড়াইয়ে জাতি আজ স্পষ্টত: দুই ভাগে বিভক্ত।
ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির সহায়ক শক্তি হিসেবে আওয়ামীলীগকে এর আগে এতটা সক্রিয় দেখা যায় নি যতটা এখন দেখা যাচ্ছে। যদিও অনেকে বর্তমান আওয়ামীলীগকে পূর্বতন আওয়ামীলীগের অপভ্রংশ মনে করেন। সে যা হোক- বাস্তবতা হল, আজকের আওয়ামীলীগ বামদের সংস্পর্শে এসে ধর্মনিরপেক্ষতার পূর্ণদিক্ষায় দিক্ষিত হয়ে জনগণের সামনে ফ্যাসিস্ট চরিত্র নিয়ে হাজির হয়েছে। অন্যদিকে এদেশের রাজনীতির আরেকটি প্রধান শক্তি জাতীয়তাবাদী আদর্শের অনুসারীরা ইসলামপন্থীদের সংস্পর্শে এসে নৈতিকভাবে নমনীয় হয়ে পড়েছে বলে অনেকে মনে করেন। যদ্দরুণ ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের জ্বালাও-পোড়াও নীতির সামনে বর্তমান জাতীয়তাবাদী শক্তি তাদের সামর্থের যথাযথ প্রমাণ দিতে পারছে না। তাই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ইসলামপন্থীদের ‘গোলাম’ বলে গালি দিচ্ছে।
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের সাথে ইসলামের আদর্শিক দ্বন্দ্ব চিরন্তন। জন্ম থেকেই ইসলাম এর ঘোরতর বিরোধী। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা রাষ্ট্রে ইসলামের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় ইসলামকে সক্ষম মনে করে না। তাই ইসলামের সার্বজনীন পূর্ণাঙ্গরূপ প্রচারের আদর্শ নিয়ে যে সকল ইসলামপন্থী দল রাজনীতি করে, তাদের সাথে রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের সম্মুখ লড়াই অবধারিত। আজকের বাংলাদেশে সে লড়াইটাই ক্রমে তীব্র থেকে তীব্রতর হতে চলেছে।
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক শক্তিকে পাশ কাটিয়ে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী জোট সরকার ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর যে দমন ক্রিয়ায় লিপ্ত হয়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদি নির্যাতন-নিষ্পেষণ ও হত্যাকান্ডের পথ বেছে নিয়েছে, তা এদেশের আপামর জনসাধারণের মনোযোগ বিশেষভাবে আকর্ষণ করেছে। রাজনীতি থেকে নির্মূল করতে গিয়ে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর পাশাপাশি ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের সরাসরি যে বিদ্বেষ মনোভাব প্রকাশ হয়ে পড়ে, তা পুলিশের বুলেট উপেক্ষা করে জনগণকে রাস্তায় ঝাড়ু নিয়ে নেমে আসতে অনুপ্রাণিত করেছে। তাই এমুহূর্তে সরকারের হাতে ধর্মনিরপেক্ষ বামপন্থী গ্রুপ আর ক্ষমতা ছাড়া অন্য কিছুই অবশিষ্ট নেই। অন্যদিকে ইসলামপন্থীদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মাঝে যে বড় একটা সমর্থন তৈরী হয়েছে, মিডিয়া এখনো তা স্বভাববশত: আড়াল করে চলছে।
বাংলাদেশের ইসলামপন্থীরা এখনো বিশ্বাস করে না যে, উদ্ভূত অপশাসনের বিকল্পস্বরুপ জনমনে তাদেরকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দায়িত্ব অর্পনের ঐকান্তিক চিন্তা-ভাবনা গড়ে উঠতে পারে। এ ব্যাপারে ইসলামপন্থীদের ইতিবাচক চিন্তা-চেতনার অভাব রয়েছে বলে মনে হয়। হতে পারে ইসলামপন্থীরা রাষ্ট্রীয় শাসনভার গ্রহণের বিষয়টি এখনো ঠিক গুরুত্বের সাথে বিচেনা করছে না। কিন্তু আসল কথা হল, বর্তমানে বাংলাদেশে পরস্পর বিপরীতধর্মী যে দুটি আদর্শের রাজনৈতিক লড়াই চলছে, তাতে ইসলামপন্থীদের সাথে রয়েছে এদেশের সিংহভাগ খেটে খাওয়া মানুষের সমর্থন। তাই অদূর ভবিষ্যতে জনগণের অর্পিত দায়িত্ব পালনের সামগ্রিক প্রস্তুতি ইসলামপন্থীদের এখনই নেয়া উচিত।
১ এপ্রিল
ঢাকা
বিষয়: বিবিধ
১৪৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন