হুজুর জুজু এবং ধর্মনিরপেক্ষতার ফাঁদ

লিখেছেন লিখেছেন এ বি এম মুহিউদ্দীন ২৬ মার্চ, ২০১৩, ১২:৩৬:২৯ দুপুর

ইসলাম সম্পর্কে বাংলাদেশের মুসলিমদের ধারণা খুব একটা উঁচু মানের নয়। এ কথাটা এখনো আমরা খুব শক্তভাবে বলি। ইসলামের সাথে এদেশের মুসলিমদের পরিচয়টা ঠিক উল্টো দিক থেকে ঘটে। প্রথমে মিলাদ-মাহফিল তারপর ওরশ শরীফ, হালকায়ে জিকির, তাসবিহ-তাহলীল, মাঝে মাঝে রোজা-নামাজ আর মৃত্যুর আগে মুখে কালেমা উচ্চরণের প্রানান্তকর প্রচেষ্টা। অথচ যে কালেমার প্রাকটিসটা হওয়া উচিত সবার আগে তা হয় ঠিক মরার আগ দিয়ে।

এদেশে যারা ইসলামের একটা কমপ্লিট সেন্স দেয়ার চেষ্টা করেন অর্থাৎ- ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার কথা বলেন, ইসলামী আইনের কথা বলেন, ইসলামী রাজনীতির কথা বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা বলেন, তাদেরকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা ব্যঙ্গ করে হুজুর বা মোল্লা বলে সম্বোধন করে। আর হুজুররা যখন বলেন, ধর্মরিপেক্ষতাবাদীরা মুসলিম নয়, তখনই বেঁধে যায় আসল গন্ডোগল। মোল্লাদের ঢুকানো হয় জেলে। দেয়া হয় মিথ্যা মামলা। মোল্লারা হয়ে যায় মানবতাবিরোধী।

হুজুরদের বিরুদ্ধে মুসলিম বাঙালীরা এভাবে ফুঁসে উঠে কেন? কেন শাহবাগ এভাবে চত্ত্বরিত হয়? কেনই বা আবার তা মাসের মাথায় নানা টাল-বাহানায় নেতিয়ে পড়ে? এ প্রশ্ন কারো মনে আসে না। আর এ নিয়ে ভাবার সময় এখন কারো নেইও।

হুজুররা ধর্মনিরপেক্ষতার বিরোধিতা করেন ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে। ধর্মীয় জ্ঞান তাদেরকে ধর্মনিরপেক্ষদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিতে বাধ্য করেছে। এটা ইসলাম সম্পর্কে যাদের ন্যুনতম ধারণা রয়েছে, তারাও স্বীকার করবে। তবুও এখানে বলে রাখি- ইসলামের কাছে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রস্তাব প্রথম আসে কাফেরদের পক্ষ্য থেকে, তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার শেষ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে। কিন্তু আল্লাহ তা সরাসরি খন্ডন করে দেন সূরা কাফিরুন নাজিল করে। অন্য কোন মতবাদের বিরুদ্ধে কুরআনে কোন পূর্ণাংঙ্গ সূরা অবতীর্ণ হয়েছে কি না আমরা জানি না, তবে কুরআনের এ সূরাটি অবতীর্ণ হয় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের বিরুদ্ধে । এখানে আরো একটি কথা বিশেষভাবে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ইসলামের সামনে তখন যারা ধর্মনিরপেক্ষতার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল কুরআনে আল্লাহ তাদেরকে সম্বোধন করেছেন, ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন বলে। অর্থাৎ- হে কাফেররা।

হুজুররা যখন কুরআনের এ সূরাকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা শুরু করলেন, বাংলাদেশে লেগে গেল আগুন। যে আগুনে ইতিমধ্যে পুড়ে গেছে অনেক প্রাণ। আরো কত পুড়বে কে জানে! তবে আজকের সহিংসতাকে ধর্মদ্রোহী ও ধর্মপ্রাণদের মধ্যকার সংঘর্ষ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।

এবার আসা যাক হুজুরদেরকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা জুজু ভাবছে কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে যাবার আগে আমাদেরকে এদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রয়োজনীয়তা কি তা একটু খুঁজে দেখতে হবে-

বাংলাদেশে এখনকার যে সমাজ ব্যবস্থা তাতে এমন অনেক কিছু প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, যেসব ইসলামের ন্যায়নীতি বা আইনের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। যে বিষয়গুলোকে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় পুরোপুরি অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন- সুদ, ঘুষ, ব্যভিচার, ক্লাবিং, নারী-পুরষের অবৈধ সম্পর্ক, মদ, জুয়া, নারীর অবাধ প্রদর্শন, অশ্লীল নাটক-সিনেমা, হত্যা-সন্ত্রাস, ম্যিথাচার, জবরদখল ইত্যাদি। আমরা যদি একটু লক্ষ্য করি, তাহলে দেখবো- বাংলাদেশের বর্তমান সমাজ এসব অন্যায়ের ভেতর কি দারুনভাবেই না ডুবে আছে।

একটি মুসলিম সমাজে এসব অন্যায় অনাচারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যে অস্ত্রটি সবচেয়ে মোক্ষম, তাহল ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে আইনিভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। যাতে যে কেউ যা ইচ্ছা করতে পারে। অন্যদিকে যদি ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করতে হয় এবং মুসলিমদের কন্ট্রোল করতে হয়, তাহলে সরাসরি অন্য ধর্ম দিয়ে তা করা যাবে না! তাই আমরা দেখছি এসব সেক্টরে যারা কাজ করছে, সুদ-ঘুষখোর সরকারী-বেসরকারী আমলারা, নারী লোভীরা , মদ-জুয়া ও নেশাখোররা, অশ্লীল নাটক-সিনেমার সাথে জড়িতরা, হত্যা-সন্ত্রাসকারীরা, মিথ্যাবাদীরা, জবরদখলকারী ইত্যাদি অনৈতিক শ্রেণী ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ইসলাম বিরোধীদের ছায়াতলে শামিল হয়েছে। যাদের ধর্মীয় কোন চেতনাবোধ নেই।

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, এরা মোটেও ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য লড়াই করছে না! এরা লড়াই করছে বাংলাদেশের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখবার জন্য। যাতে তারা তাদের কুপ্রবৃত্তির খায়েশ মিটতে পারে এবং তাদের কু-কর্মের একটা স্থায়ী নিরাপত্তা তৈরী হয়।

একজন মুসলিমের জন্য ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। না তার ব্যক্তি জীবনে, না সমাজিক জীবনে, না রাষ্ট্রীয় জীবনে। তাতে ইসলামের সক্ষমতা ভীষণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। অথচ ইসলামে রয়েছে বিধিবদ্ধ ব্যক্তি, সমাজ, রাজনীতি, অর্থ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা। সুতরাং যিনি ধর্মনিরপেক্ষতার ছায়াতলে আশ্রয় নিবেন, তিনি কোনভাবেই মুসলিম থাকতে পারেন না। কেননা তাতে কুরআনের অসংখ্য আয়াত অকেজো হয়ে পড়ে, যেগুলোতে আল্লাহ ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার দিকদর্শন পেশ করেছেন। তাই আমাদের নিবেদন, হুজুরদেরকে জুজু ভেবে ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে কেউ যেন ঈমান হারা না হন।

বিষয়: বিবিধ

১১৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File