কে ধরিবে হাল ?
লিখেছেন লিখেছেন এ বি এম মুহিউদ্দীন ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৫:৫৬:৪১ বিকাল
পাশ্চাত্যের জীবন দর্শন বর্জনীয় -এই ঘোষণা অসংখ্য মুসলিম চিন্তাবীদদের পক্ষ্য থেকে এসেছে। এই সারিতে বিশেষভাবে আছেন সমকালীন প্রখ্যাত মুসলিম চিন্তাবীদ, কবি, দার্শনিক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ। উল্লেখযোগ্য নামগুলো স্মরণ করলে মিশরের ইমাম হাসানুল বান্না; ইরানে ইসলামী বিপ্লবের মহান নেতা ইমাম খোমেনী; পাকিস্তানের আল্লামা ইকবাল, আল্লামা মওদূদী; ভারতের সাইয়্যেদ আমীর আলী, মাওলানা আবুল কালাম আযাদ প্রমুখ এর কথা বলা যায়। এঁদের লিখনী এবং কর্মকাণ্ডের বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তাঁরা কেবল মুসলিম জাতি নয় বরং সমগ্র মানবজাতির উদ্দেশ্যে পাশ্চাত্যের জীবন দর্শন সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। এঁদের অনেকে এই একটিমাত্র চিন্তাকে ভর করে অত্যন্ত প্রবলভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। প্রখ্যাত এসব ব্যক্তিদের রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক আন্দোলনসমূহের মূলের দিকে যদি দৃষ্টিপাত করা হয়, তাহলে দেখা যায়- পাশ্চাত্যের রাহুগ্রাস থেকে মানুষকে বাঁচানোই ছিল এসব আন্দোলন গড়ে ওঠার প্রকৃত কারণ।
মিশরে ইমাম হাসানুল বান্না তাঁর শিষ্যদেরকে যেমন পাশ্চাত্য সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন তেমনি ইরানের ইমাম খোমেনিও তাঁর জনগণের সামনে পাশ্চাত্যকে 'প্রবল শয়তানী শক্তি' বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং ইরান জাতি এখনো তাদের এ মহান নেতার চিন্তা ধারাকে সযত্নে লালন করে চলেছে। একইভাবে প্রাচ্যেও এই চিন্তা একটি শক্ত ভীত লাভ করেছে পাকিস্তানের আল্লামা ইকবাল, মওদূদী এবং ভারতের প্রখ্যাত মাওলানাদের হাত ধরে। কিন্তু এখন এ চিন্তা-দর্শনের ভবিষ্যতটা কি?
মিশরে পাশ্চাত্য জীবন ধারার বিপরীতে ইমাম হাসানুল বান্না যে সাঁচ্চা জীবন ধারার পথ নির্দেশ করেছেন, তাতে অনুসারীদের আস্থা থাকলেও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে তা লক্ষ্য করা যায় না। সেখানে দেখা যায়- অনুসারীরা ইমাম হাসানুল বান্নার দর্শন থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং যার কারণ হিসেবে পরিবর্তিত বাস্তব পরিস্থিতির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, মিশরে পাশ্চাত্যের জীবন দর্শন সম্পর্কে একটি উদার মনোভাব তৈরী হয়েছে এবং ইমাম হাসানুল বান্নার চিন্তা-দর্শন সেখানে কেবল আধ্যাত্মিক গুরুত্বই লাভ করেছে।
ইরানে এই দৃশ্যপট কিছুটা ভিন্ন। ইরান জাতি পাশ্চাত্য সম্পর্কে ইমাম খোমেনির চিন্তা-দর্শনকে এখনো প্রবলভাবে আঁকড়ে ধরে আছে। আর একে ভিত্তি করেই ইরান জাতি আত্মপ্রতিষ্ঠা অর্জনের প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। অপরদিকে পাকিস্তান এবং ভারতে পাশ্চাত্য সম্পর্কে আল্লামা ইকবাল, মওদূদী এবং প্রখ্যাত মাওলানাদের যে চিন্তা-দর্শন, সে সম্পর্কে অনুসারীদের অবস্থান অনেকাংশেই মিশরের ইমাম হাসানুল বান্নার অনুসারীদের মতন। অনুসারীদের কাছে আল্লামা ইকবাল, আল্লামা মওদূদী ও সাইয়্যেদ আমীর আলীগণ এখন যুগের প্রশ্নে কেবল আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবেই বিবেচিত হন। এই সকল চিন্তা-দর্শনের পরিণতি অনেকটা পবিত্র ইসলাম ধর্মের মতই। ইসলামকে যেমন আধুনিক যুগে অচল বলে একে ব্যবহারিক জীবন থেকে নির্বাসন দেয়া হয় কিন্তু এর আধ্যাত্মিক প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা হয় না। প্রকৃত সমস্যা হল, এসব চিন্তা-দর্শনের সংস্কার কিংবা পরিপূরক নতুন কোন চিন্তা-দর্শনের উদ্ভব না হওয়া।
যে কোন চিন্তা-দর্শনকে যৌক্তিক এবং যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হয়। এজন্য যোগ্য নবীন সংস্কারকের প্রয়োজন। যিনি চিন্তাকে হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। যে কোন চিন্তা-দর্শনের উন্নয়নের অভাবে তা সময়ের আবর্তে বিলীন হয়ে যায়। আমরা বিভিন্ন মতবাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার প্রতি লক্ষ্য করলে তা সহযে বুঝতে পারি। পাশ্চাত্য সম্পর্কে ইমাম হাসানুল বান্না, ইকবাল, মওদূদীর যে চিন্তা-দর্শন তা বর্তমানে অনেকটা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীকে হাসানুল বান্নাবাদী, ইকবালবাদী কিংবা মওদূদীবাদী বলে যে আখ্যা দেয়া হয় ঐ সব দল বা গোষ্ঠী যে ইমাম হাসানুল বান্না বা এই জাতীয় চিন্তা-দর্শনের জনকদের তত্ত্ব থেকে কতখানি দূরে সরে এসেছে তা কেবল বোদ্ধারাই অনুধাবন করতে সক্ষম। সুতরাং বর্তমানে এই চিন্তা-দর্শনের নির্ভরযোগ্য উত্তরাধীকারী প্রয়োজন। নতুবা এই চিন্তা-দর্শন কালের আবর্তে হারিয়ে যাবে যেমন একটি শুকনো পাতা সমুদ্রের ঢেউয়ের তোড়ে হারিয়ে যায়।
বিষয়: বিবিধ
১৪৬৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ভবিষ্যতের ইতিহাস যে আমাদেরকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে- এতে আমার মনে কোন সন্দেহ নেই!!
ধন্যবাদ পড়ার জন্য এবং মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকবেন।
আন্দোলনের হাল ধরবে। আল্লামা মওদূদী এবং
ইমাম হাসানুল বান্না মুসলিম উম্মাকে একটা
প্লাট ফরমে দাড় করতে পেরেছে। আগামীতে
আন্দোলন আর গতিশীল হবে। ৪৮ দশকে মাএ ১৪ জন উর্দু ভাষী লোক ,ঢাকা শহরে দাওয়াতী কাজ করে গেছেন। তারই শাখা প্রশাখা ছড়িয়েছে, গ্রামে, গঞ্ছে।
আন্দোলনের হাল ধরবে।
তাই যেন হয়
মন্তব্য করতে লগইন করুন