কাজের লোকদের নির্যাতন সম্পর্কে

লিখেছেন লিখেছেন এ বি এম মুহিউদ্দীন ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০২:৪৫:১০ দুপুর



“কেউ ডাকলে তার কথা শুনবে, কারো দেয়া উপহার প্রত্যাখ্যান করবে না এবং কোন মুসলিমকে কষ্ট দিবে না।”

“হজরত আলী রা. বলেন, রাসূল সা. এর অন্তিম কথা ছিল- নামাজ…নামাজ…নামাজ। তোমাদের কাজের লোকদের সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করবে।”

“কানুদ বা আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে দান-খয়রাত করা থেকে নিজেকে বিরত রাখে, একাকীত্ব বরণ করে এবং কাজের লোকদেরকে প্রহার করে।”

“কেউ তার কাজের লোককে প্রহার করলে কিয়ামতের দিন তাকে অনুরূপ শাস্তি দেয়া হবে।”

“হজরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ বলেন, নবী করীম সা. কাজের লোকদের সাথে উত্তম আচরণ করার জন্য তাকিদ করতেন এবং বলতেন, তোমরা যা খাও তাদেরকে তাই খেতে দাও এবং তোমরা যা পরিধান কর তাদেরকে তাই পরিধান করাও এবং আল্লাহর সৃষ্টিকে কষ্ট দিবে না।”

“কাজের লোকদের অধিকার হল- তাদের খাবার, পোশাক এবং তাদের উপর সাধ্যাতিত [কঠিন] কাজের বোঝা না চাপানো।”

“তুমি তোমার নিজেকে যা খাওয়াও তা সাদকা, তুমি তোমার স্ত্রী-পুত্র এবং কাজের লোকদেরকে যা খাওয়াও তা সাদকা।”

“রাসূল সা. কাজের লোকদেরকে নিজেদের সাথে খেতে ডাকতে নির্দেশ করেছেন। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যদি একান্তই কাজের লোকদের সাথে খেতে অনিচ্ছুক হয়, তবে সে যেন তার হাতে এক লোকমা দিয়ে দেয়।”

“যখন তোমাদের কাজের লোক তোমাদের কাছে খাবার নিয়ে আসে, তখন তাকেও সাথে বসিয়ে নেওয়া উচিত। সে যদি তাতে সম্মত না হয়, তবে তাকে তা থেকে কিছু খাবার দিয়ে দেওয়া উচিত।”

“আল্লাহ এমন একটি জাতিকে ধ্বংস করেছিলেন, যারা তাদের কাজের লোকদের সাথে খারাপ আচরণ করতো।”

“তোমাদের কেউ যেন তাদের কাজের লোকদেরকে অন্যের সামনে ‘আমার কাজের লোক’ বলে সম্বোধন না করে। কেননা সকলেই আল্লাহর গোলাম। তারা যেন বলে ‘আমার মেয়ে বা আমার ছেলে’।”

কাজের লোকদের সম্পর্কে উপরোক্ত হাদীসসমূহ ইমাম বুখারী রহ. তাঁর বিখ্যাত হাদীসগ্রন্থ আল আদাবুল মুফরাদে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করেছেন।

কোন সুস্থ-সবল মুসলিমের ঘরে কাজের লোক রাখা বাঞ্ছনীয় নয়। তাতে তার গুনাহ বেড়ে যেতে পারে এবং নেকীর পাল্লা হালকা হয়ে যেতে পারে। কেননা নিজের কাজ অন্যের দ্বারা করালে তাতে পূর্ণ বরকত ও সাওয়াবের আশা করা বাস্তবসম্মত নয়। মানুষ সাধারণত তার অধিনস্ত বা তার চাইতে ক্ষুদ্র কারো সাথে মেজাজের চর্চা করে থাকে। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী নির্যাতন বা বঞ্চনার শিকার হয় কাজের লোকেরা। অথচ এটি অত্যন্ত রুচিহীন এবং অমানবিক কাজ যে, এ ব্যাপারে ইসলাম মানুষকে বিশেষভাবে সাবধান করে দিয়েছে।

ঘরে কাজের লোক না রাখাই উত্তম। সে জন্য আগ থেকে সবসময় নিজের কাজ নিজের হাতে করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নেহায়েৎ নিজের কাজ নিজে করতে না পারলে কাজের লোককে তার যথাযথ সম্মান এবং পারিশ্রমিক দিয়ে দিতে হবে। তাদের সাথে কোনরূপ অন্যায় আচরণ করা চলবে না। কোন কাজের লোক যদি ঠিকমত কাজ না করে তবে তাকে ভালভাবে বিদায় করে দিতে হবে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই কাজের লোকদেরকে বাধ্য করা যাবে না।

অলসতা হচ্ছে এ কাজের সবচেয়ে বড় শত্রু। নিজের জামা-কাপড় নিজে ধৌত করলে, খাবারের পর নিজের প্লেট নিজে ধুয়ে ফেললে, নিজের বিছানা-পত্র নিজে গুছিয়ে রাখলে কাজের লোকের কোন প্রয়োজন পড়ে কি? এজন্য কোন কোন আলেম বলেছেন, বিনা ওজরে [প্রতিবন্ধী না হলে] অন্যের হাতে পানি ঢেলে ওজু করাও মাকরূহ। বান্দাকে নিজ হাতে নিজের যত্ন নেয়ার বা কাজ করার সক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে প্রতিবন্ধিদের কথা ভিন্ন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ মানুষের উপর তার সাধ্যাতিত বোঝা চাপিয়ে দেন না।” –সূরা বাকারা : ২৮৬

আল্লাহ আমাদের সবাইকে কাজের লোকদের প্রহার করার মত জঘণ্য মন্দকাজ থেকে বিরত রাখুন।

বিষয়: বিবিধ

১৯৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File