কমন সেন্স ইজ ভেরি আনকমন
লিখেছেন লিখেছেন এ বি এম মুহিউদ্দীন ২৭ মে, ২০১৩, ১০:১৪:০৫ রাত
ভারতের প্রতি আমাদের বিশেষ একটা অনুভূতি কাজ করে। যে অনুভূতি আমাদেরকে ভারতের সমাজ-সংস্কৃতির দিকে হেঁচকা টান মারে। আমাদের ভাষা, সংগীত, শিল্প, সাহিত্য, ফ্যাশন, খাবার-দাবার, ক্রিড়া-কৌতুক ইত্যাদির ওপর ভারতীয় সংস্কৃতির ছাপ অনেক বেশী। আমরা ভারতবর্ষ থেকে উদ্ভূত বলে একে হয়তো অস্বীকার করা যায় না কিন্তু আমাদের যে একটা বিশেষত্ব রয়েছে, তা আমরা ভুলে যাই কি করে?
ভারতের বাংলা আর আমাদের বাংলা এক নয়। আমাদের রয়েছে বিশেষ উচ্চারণ রীতি। ভারতীয় বাংলা সাহিত্যের সাথে আমাদের সাহিত্যেরও রয়েছে বিরাট তফাত। যে তফাতের মূলে রয়েছে বিশ্বাসগত পার্থক্য। ভারতীয়রা সে জন্য বাংলা সাহিত্যকে আলাদা চোখে দেখে এবং সবসময় আলাদাভাবেই মুল্যায়ন করে। কিন্তু আমরা এক্ষেত্রেও অনেক বেশী উদার।
ভারতের সাথে আমাদের নৃতাত্ত্বিক বন্ধন রয়েছে। আমাদের পরিচয় ভারতীয়দের চাইতে অনেক বেশী সমৃদ্ধ। ভারতীয়রা কখনো বাংলাদেশী বা পাকিস্তানী হওয়ার দাবী করতে পারে না। কিন্তু আমরাই কেবল দাবী করতে পারি, আমরা ভারতীয়, এরপর পাকিস্তানী আর এখন বাংলাদেশী।
ভারতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। তাতে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির দেউলিয়াত্ব প্রকাশ পায়। প্রশ্ন উঠে- তাহলে কি আমাদের নিজস্ব কোন ঐতিহ্য নেই। আমরা কি পরনির্ভর?
ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে আমাদের সংস্কৃতির বড় পার্থক্য বিশ্বাসগত। যেটি আমাদের জীবন যাপন এবং সমাজ-সংস্কৃতির ধরণকে বিশেষভাবে আলাদা করে দেয়। বাংলাদেশের কোন তরুণ ভারতীয়দের মত নিশ্চই পাঞ্জাবির সাথে ধুতি পরতে পারে না। আবার কোন তরুণী নিশ্চই শাড়ীর সাথে সিঁথি-সিঁদুর পরতে পারে না। এ জায়গাতেই আমাদের আলাদা হতে হয়। হতে হয় নিজ বিশ্বাসের বলে বলিয়ান।
ভারতীয় সংস্কৃতি হালে যে অস্থিরতায় ভুগছে তা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে ভারতীয়দের বিচ্যুতি ঘটছে। এটা সম্ভব তাদের বিশ্বাসহীনতার কারণে। পাশ্চাত্যক ধারণ করার যে প্রচেষ্টা ভারতীয়দের মাঝে প্রত্যক্ষ করা যায়, তাতে ভারত একসময় দেউলিয়া হয়ে পড়বে বলে ভবিষ্যতবাণী করা যায়।
আমাদের তরুণ-তরুণীদের এসব বিষয় বুঝতে হবে। ফ্যাশনের প্রতি অত্যধিক ঝুঁকতে গিয়ে আমরা যেন বিশ্বসহীনতায় না ভুগি এবং অন্যের অপছায়ায় বেড়ে না উঠি। এতে আমাদের আইডেন্টিটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমাদের সুখ বিপন্ন হবে। সমাজ অস্থির হয়ে পড়বে।
সম্প্রতি আমাদের দেশে মেয়েদের মাঝে ফিটিংস পরার যে ব্যাপক প্রচলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তা কোন ভাবেই সুবিবেচনায় আনা যায় না। যে ফিটিংস একসময় পায়জামার ভেতর পরা হতো, এখন সে ফিটিংস পরে পায়জামা ছাড়াই মেয়েরা বাইরে বেরিয়ে পড়ছে। এতে বিপরীত লিঙ্গ ভীষণভাবে উত্যক্ত হচ্ছে। মেয়েদের এসব বুঝতে হবে। অন্যকে উত্যক্ত করার দায় কেউই এড়াতে পারে না। বর্তমান পরিস্থিতি দেখে ভলটেয়ারে সে কথাটা ভীষণ মনে পড়ে- কমন সেন্স ইজ ভেরি আনকমন।
বিষয়: বিবিধ
১৮৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন