কেউ যেন আর রক্ত না দেয়
লিখেছেন লিখেছেন এ বি এম মুহিউদ্দীন ০৯ মে, ২০১৩, ০২:১১:০৮ দুপুর
আওয়ামীলীগ এ মুহূর্তে বিশ্বের ‘নাম্বার ওয়ান জালিম সরকার’ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । তবে একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি সরকারের এমন মারাত্মক ফ্যাসিবাদী চরিত্র ধারণের অভিজ্ঞতা একবিংশ শতাব্দিতে এই প্রথম। জনগণের বুকে নির্দ্বিধায় গুলি করবার প্রবণতা সাধারণত সামরিক শাসকদের চরিত্রে লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি সরকারের এমন হায়েনা চরিত্র ধারণ বাংলাদেশে এখন সময়ের রূঢ় বাস্তবতা।
বর্তমান আওয়ামী সরকারের নৃশংস কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রায় সর্বমহল থেকেই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। কিন্তু সে প্রতিবাদ সরকারের চলমান নৃশংস কর্মকান্ডের বিরূদ্ধে সর্বব্যাপী নয়। তার মূলকারণ, বিভিন্ন মহলে সরকারের পরিচয় এক নয়। সকলেই তার নিজস্ব লাভ-ক্ষতির দৃষ্টিকোন বিবেচনায় সরকারকে মূল্যায়ন করবার চেষ্টা করছে। জাতীয়তাবাদী শক্তি ও তার অঙ্গ সংগঠনের কাছে বর্তমান সরকারের পরিচয় হল- ফ্যাসিবাদী সরকার। যে সরকার তার বিরোধী মতের ওপর দমন-পিড়ন চালাচ্ছে। কিন্তু জাতীয়তাবাদী শক্তি ইসলামপন্থীদের ওপর সরকারের দমন-পিড়নের বিষয়টি সেভাবে আমলে নেবার প্রয়োজনবোধ করছে না। অন্যদিকে ইসলামপন্থীদের কাছে সরকারের পরিচয় হল- প্রবল ইসলাম বিরোধী ও ইসলাম বিদ্বেষী সরকার। যে সরকার রাষ্ট্র থেকে ইসলামকে বিতাড়িত করতে চায় এবং ইসলাম বিদ্বেষীদেরকে বিশেষভাবে তোষণ করে যাচ্ছে। কিন্তু ইসলামপন্থীরা জাতীয়তাবাদী শক্তির মর্মবেদনাকে আবার সেভাবে অনুভব করছে না। তাই সরকার বিগত চার বছরে ধারাবাহিকভাবে উভয় গোত্রের কম-বেশী রক্ত ঝরালেও বর্তমান সরকারের পিলে চমকে দেবার মত সর্বাত্মক আন্দোলন বা চূড়ান্ত কর্মসূচী এখনো লক্ষ্য করা যায় নি।
সরকারের মূল্যায়ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর কাছে বিভিন্ন রকম হওয়ায় এবং একে অন্যের মর্মবেদনা অনুভব করতে সক্ষম না হওয়ায় বিরোধী গোষ্ঠীগুলো সরকার পতন আন্দোলনে একাত্ম হতে পারছে না। আর সে সুবিধাতেই সরকার এখনো টিকে আছে এবং সম্প্রতি রাতের আঁধারে হেফাজত কর্মীদের বিরুদ্ধে ইতিহাসের ভয়ানক হত্যাযজ্ঞ সফলভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য সরকার বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর দায়ও কম নয়।
গত ৬মে গভীর রাতে শাপলা চত্ত্বরে হেফাজতের বিরুদ্ধে পরিচালিত সরকারের নৃশংস হত্যাকান্ড বাংলাদেশের রাজনীতিকে একটি নতুন পথের দিশা দিল। এ বর্বর হত্যাকান্ডের পর সরকারের বিরুদ্ধে খন্ড খন্ড বা নানা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যে কোন বিচ্ছিন্ন কর্মসূচী সর্বাংশে গুরুত্ব হারালো। আর ভীষণভাবে প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল সর্বব্যাপী গণআন্দোলন বা গণঅভ্যুত্থানের।
এমুহূর্তে সরকারের বিরুদ্ধে খন্ড খন্ডভাবে মাঠে নামা হবে আত্মহত্যার শামিল। তাই সরকার পতন আন্দোলনে যতক্ষণ পর্যন্ত না জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে এবং চূড়ান্ত কর্মসূচী ঘোষিত হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে।
সরকার পতন আন্দোলেনে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ডাক ইসলামপন্থী অথবা জাতীয়তাবাদী শক্তি যে কারো পক্ষ থেকেই উত্থাপিত হতে পারে। সে জন্য উভয় পক্ষের হাতে প্রয়োজনীয় উপাদানও মজুদ রয়েছে। তবে এ জন্য সর্বপ্রথম সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, সরকারের সুনির্দিষ্ট চরিত্র নির্ণয় করা প্রয়োজন। যার ভিত্তিতে সর্বব্যাপী সরকার পতন আন্দোলন পরিচালিত হবে। অর্থাৱ- শ্লোগান হবে একটি।
সরকার পতন আন্দোলনে এমুহূর্তে জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই এবং চূড়ান্ত কর্মসূচী ব্যতীত কারোরই মাঠে নামা সমীচীন নয়। রক্ত দেবার দিন শেষ। এখন বদলা নেবার পালা।
বিষয়: বিবিধ
১০৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন