রাষ্ট্র, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও ইসলাম । বাংলাদেশ প্রেক্ষিত [৩য় পর্ব]
লিখেছেন লিখেছেন এ বি এম মুহিউদ্দীন ০২ মে, ২০১৩, ১২:২০:১৭ রাত
ম্যাকিয়াভেলীবাদ এবং বাংলাদেশের পটভূমি
ম্যাকিয়াভেলীবাদে যে রাষ্ট্র আমরা পর্যবেক্ষণ করি, সে রাষ্ট্র বা শাসকের বৈশিষ্ট্য হুবহু অথবা কোন কোন ক্ষেত্রে তার চাইতে অধিক প্রয়োগশীল ‘ম্যাকিয়াভেলী রাষ্ট্র’ আমরা বর্তমান বাংলাদেশে খুঁজে পাই। ম্যাকিয়াভেলী রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে আজকের বাংলাদেশকে যদি তুলনা করা হয়, তাহলে একে কোন অংশেই পিছিয়ে রাখা যায় না। বরং আমরা প্রত্যক্ষ করি ম্যাকিয়াভেলী যে সব উপর্যুপুরি কারণের ভিত্তিতে রাষ্ট্র ও তার সরকারকে এমন দিক-দর্শন প্রদান করেছেন, সে সব কারণ বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় বিদ্যমান না থাকা সত্ত্বেও দেশের শাসকগোষ্ঠী তা হুবহু অনুসরণ করে চলছে।
ম্যাকিয়াভেলী যদিও বলেছেন, ধর্ম রাষ্ট্রকে উৎপাত না করলে এবং রাষ্ট্রের উন্নতি ও অগ্রগতিতে কোন বাধার সৃষ্টি না করলে রাষ্ট্র ধর্মকে সমীহ করে চলতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা এর বিপরীত চিত্রটাই দেখতে পাই।
ম্যাকিয়াভেলী যে রাষ্ট্রের [ইটালি] পটভূমি নিরিক্ষণ করে তার ব্যতিক্রমী রাষ্ট্রদর্শনের উদ্ভব ঘটিয়েছেন এবং শাসককে যে পথ ও পন্থা বাতলে দিয়েছেন, বাংলাদেশের পটভূমি মোটেও তার সাথে সাযুজ্যপূর্ণ নয়। ম্যাকিয়াভেলী তার রাষ্ট্রে পেয়েছেন বর্বর, সহিংস, পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুভাবাপন্ন মানবগোষ্ঠী। যে মানবগোষ্ঠী বহু নগর-মহানগরে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল এবং পোপরা তাতে খ্রিস্টান ধর্মের নামে নিজেরা আইন প্রণয়ন করে রাষ্ট্রকে নিজেদের মত ভোগ করে চলছিল। সমাজ হয়ে পড়েছিল ন্যায়-নীতিহীন এবং সীমাহীন অজ্ঞ ও লোভী মানুষে ভরপুর। ম্যাকিয়াভেলীর মূল লক্ষ্য ছিল, রাষ্ট্রকে এমন ক্ষয়িষ্ণু পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করা।
পথভ্রষ্ট খ্রিস্টান পোপদের হাত থেকে রাষ্ট্রকে উদ্ধার করার লক্ষ্যে ম্যাকিয়াভেলী রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা করার যে দিক-দর্শন পেশ করেছেন, তা বাংলাদেশের প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার সাথে মোটেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এখানে কোন ধর্মীয় পণ্ডিত বা গোষ্ঠী রাষ্ট্রকে কোনভাবেই অস্থির করে তুলছে না কিংবা ধর্মকে পুঁজি করে কেউ রাষ্ট্র ভোগ করছে না। অথবা রাষ্ট্রের উন্নতি ও অগ্রগতিতে ধর্ম কোন বাধা-বিপত্তিও তৈরী করছে না। বরং ধর্ম এখানে জনগণের মহাঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের উপলক্ষ্য হিসেবে সর্বদা কাজ করছে। সুতরাং ম্যাকিয়েভালীর রাষ্ট্রদর্শন বাংলাদেশে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
বাংলাদেশে ম্যাকিয়াভেলীবাদ প্রয়োগ ও তার কারণ
আগেই বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে এখনো সত্যিকার রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে ওঠে নি এবং ম্যাকিয়াভেলীবাদ প্রয়োগের মত কোন পরিস্থিতিও এখানে বিদ্যমান নেই। তথাপি বর্তমান শাসকগোষ্ঠী এ তত্ত্বকে বিশেষভাবে অনুসরণ করে চলছে। অর্থাৎ ম্যাকিয়াভেলী সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে যে দিক-দর্শন প্রদান করেছেন, বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী হুবহু তা অনুসরণ করে চলছে। ম্যাকিয়াভেলীবাদের উল্লেখযোগ্য কিছু নীতি যেমন, সাধারণ মানুষ অস্থিরমতি, ভীরু ও অর্থলোভী হয়। সুতরাং শ্রদ্ধা নয় বরং কঠোর শাসনের মাধ্যমে শাসক সম্পর্কে জনমনে ভীতি সঞ্চার করে শাসনকার্য পরিচালনা করতে হবে। শাসক যতই নিপিড়ক হোক না কেন সাফল্য তার সব দোষ মুছে দিবে। শক্তি যেখানে অক্ষম কৌশল সেখানে সাফল্য এনে দিবে -ইত্যাদির আলোকে রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী এদেশের জনগণকে ম্যাকিয়াভেলীয় দর্শনের ভিত্তিতে শাসন করার মূল কারণ হল, শাসকগোষ্ঠী এদেশের জনগণকে রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক হিসেবে কখনোই স্বীকার করে না। বরং শাসকগোষ্ঠী সর্বদা মনে করে, এদেশের জনগণ হল দাসতুল্য। যারা অত্যন্ত নিচু শ্রেণীর এবং তাদেরকে এভাবেই শাসন করতে হয়।
[চলবে]
বিষয়: বিবিধ
১৭০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন