হেফাজতে ইসলাম রাজনীতিতে আসতে বাধ্য

লিখেছেন লিখেছেন এ বি এম মুহিউদ্দীন ১৯ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:১৪:১৯ রাত



এর আগের একটি নিবন্ধে বলেছিলাম যে, ভবিষ্যতে হেফাজতে ইসলাম রাজনীতিতে আসবার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। আজ বলছি- হেফাজতে ইসলাম রাজনীতিতে আসতে বাধ্য; যদি দলটি সম্প্রতি উত্থাপিত দাবীগুলোর বাস্তবায়ন দেখতে চায়। কারণ, হেফাজত যে দাবীগুলো নিয়ে মাঠে নেমেছে সে দাবীগুলো বর্তমান সরকার দ্বারা পুরণ করা সম্ভব নয়। বরং বলা যায়, হেফাজতের দাবীগুলো পুরণ করবার সামর্থ সরকারের নেই। কেননা হেফাজতের দাবীগুলোর সাথে বর্তমান সরকারের নৈতিক ও আদর্শিক বিরোধ রয়েছে। আর বামদের সমন্বয়ে বেড়ে ওঠা বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের যে অঙ্গভঙ্গি তাতে হেফাজতের দাবীগুলো পুরণ করবার কোন ইঙ্গিত দৃশ্যমান নয়।

সরকারের কাছে উত্থাপিত হেফাজতে ইসলামের দাবীগুলোকে সরাসরি ইসলামী শাসনব্যবস্থার রূপরেখা বলা যায় না। তবে তাতে ইসলামী অনুশাসনের আহ্বান রয়েছে। যে আহ্বানগুলো ইসলামী আন্দোলন তথা বাংলাদেশসহ বিশ্বের যে কোন ইসলামপন্থী দলের দাবীর সাথে একাত্ম বললে ভুল হয় না। মূলত ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো এসব নীতির আলোকেই রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনীতি করে আসছে। কিন্তু ঘটনা চক্রে হেফাজত বাংলাদেশে সে দাবীগুলোই নতুনভাবে উত্থাপন করেছে মাত্র। হেফাজতের দাবীগুলো মধ্যযুগীয় [অচল] বলে এখন সমালোচনার যে তীর বর্ষিত হচ্ছে, এ তীর কেবল হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে নয় বরং বহুকাল ধরে সরাসরি ইসলাম এবং অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর বিরুদ্ধে বর্ষিত হয়ে আসছে। বলা যায়, হেফাজত কেবল সেসব পুরনো দাবী নিয়ে নতুনভাবে মাঠ কাঁপাচ্ছে।

হেফাজতে ইসলামের উত্থাপিত দাবীগুলো যে লক্ষ্যের প্রতি ইঙ্গিত করে, এদেশে জামায়াতে ইসলাম ও অন্যান্য ইসলামী দলসমূহের রাজনীতি সে অভিন্ন লক্ষ্যের প্রতি ইঙ্গিত করায় বামরা [দালাল] হেফাজতকে বারংবারই ‘জামায়াতের দোসর’ বলে গাল দিচ্ছে। অন্যদিকে জামায়াতের সাথে যেহেতু হেফাজতের মতাদর্শগত বিরোধ রয়েছে, তাই দেখা যাচ্ছে বামরা প্রাণপনে চেষ্টা করছে হেফাজতকে জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে এবং হেফাজতের মুখ থেকে জামায়াত বিরোধী বক্তব্য বের করে আনতে। কিন্তু বামদের সে চেষ্টা আপাত: ফলে আসছে না বলে তাদের হতাশা রয়েছে।

হেফাজতে ইসলামের দাবীগুলো পুরণ করবার জন্য দলটিকে একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে জনগণের সামনে আসতে হবে। হেফাজতকে সরকার নয় বরং এদেশের ষোলকোটি জনগণের ওপর নির্ভর করতে হবে। ইতিমধ্যে হেফাজত ঘোষণা করেছে, উত্থাপিত দাবীগুলো না মানলে সরকার পতন আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। ধরা যাক হেফাজত সরকার পতন আন্দোলনে সফল হোল, কিন্তু তৎপরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে হেফাজতকে অবশ্যই ভাবতে হবে। ভাবতে হবে দেশ এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে।

জনগণের অনুমোদন ব্যতীরেকে একটি সুনির্দিষ্ট দলের দাবী পুরণের নজির গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় কোন সরকারের নেই। তবে এ ধরণের কোন উদ্যোগ যদি সরকার এ মুহূর্তে গ্রহণ করে, তাহলে হেফাজতে ইসলাম এদেশে একটি ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ’ হিসেবে আখ্যায়িত হবে। যা হেফাজতের জন্য মোটেও সুখকর হবে না। সুতরাং হেফাজত যদি তার দাবীরগুলো বাস্তবায়নের জন্য সত্যিকারভাবে কাজ করতে চায় তাহলে দলটিকে জনগণের সর্থন আদায়ের প্রক্রিয়ায় শামিল হতে হবে। সেজন্য হেফজতের সামনে রাজনীতিতে প্রবেশ করা ব্যতীত বিকল্প পথ খোলা নেই। দলটি যতই বলুক যে, কোন রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে মাঠে নামে নি। কিন্তু আদতে হেফজতের সুনির্দিষ্ট দাবীগুলো আদায়ের অঙ্গীকার অরাজনৈতিক হেফাজতকে পক্ষান্তরে রাজনীতির ময়দানেই ঠেলে দিয়েছে। এ মুহূর্তে হেফজতে ইসলাম তার দাবীগুলো আদায়ের জন্য যে আন্দোলন-সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচলিত রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বাইরে –একথা বলার সুযোগ নেই।

বিষয়: বিবিধ

১৯৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File