হেফাজতের সামনে নেতিয়ে পড়ছে শাহবাগীরা
লিখেছেন লিখেছেন এ বি এম মুহিউদ্দীন ১০ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:২৬:১৪ রাত
শাহবাগীদের মোকাবেলায় হেফাজতে ইসলামের মত একটি দল খুবই প্রয়োজন ছিল। অবশেষে উগ্র বামপন্থীদের ইসলাম বিদ্বেষের সূত্র ধরে গ্রাম-গঞ্জ থেকে বীরবিক্রমে উঠে এল ইসলামী উগ্রপন্থী হিসেবে কথিত বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলাম। হেফাজত যদিও এখনো ভোটের রাজনীতিতে সরাসরি আসছে না, তবে হেফাজতের অঙ্গভঙ্গি দেখে ধারণা করা যায় যে- দলটি হয়তো অদূর ভবিষ্যতে তার আদর্শিক প্রয়োজনে পেশাদার রাজনীতিতে আবির্ভূত হতে পারে। এমনটি ঘটলে বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতিতে নি:সন্দেহে আরেকটি নতুন পালক যোগ হবে।
গত ৬এপ্রিল ঢাকায় হেফাজতে ইসলাম জানান দিয়ে গেল তাদের নৈতিক শক্তির জোর কতটুকুন। জোটবদ্ধ বামপন্থীরা এবং সরকার সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও থামিয়ে দিতে পারেনি হেফাজতের ঢাকার উদ্দেশ্যে লংমার্চ। হেফাজতের ডাকে মতিঝিলে লক্ষ লক্ষ জনতার ঢল বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। যদিও বামরা বলছে যে, হেফাজতের সে গণজমায়েত তাদেরকে মোটেও বিচলিত করেনি। কিন্তু হেফাজতের সে নজিরবিহীন সমাবেশের পাল্টা সমাবেশ হিসেবে বামরা ইতিমধ্যে বাংলা নববর্ষের পহেলা বৈশাখের দিন আরেকটি সমাবেশের ডাক দিয়েছে। বামদের এ ডাক অনেকটা শুক্রবারে হরতাল ডাকার মতন আরেকটি হাস্যকর বাউন্ডুলে কর্মসূচী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তবে হেফাজত যে বামপন্থীদের টনক নড়িয়ে দিয়েছে তা বুঝতে কারো সমস্যা হবার কথা নয়। এমুহূর্তে বামদের সামনে হেফাজত ছাড়া অন্য কিছু নেই। হেফাজতের আন্দোলনকে বিতর্কিত করবার লক্ষ্যে বামরা ইতিমধ্যে ডিজিটাল মিশন পরিচালনা করছে। বামরা হেফাজত কর্তৃক নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালনা করবার নেপথ্যে সরাসরি তথ্য যাচাইয়ের বিষয়টি বেশ জোরেশোরে জনসম্মুখে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। তারা প্রমাণ করতে চাইছে, হেফাজতের কর্মীরা নাস্তিকদের কর্মকান্ড যাচাই-বাছাই করা ছাড়াই অনেকটা হুজুগে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। অন্যদিকে হেফাজত কর্তৃত উত্থাপিত দাবীগুলোর ইচ্ছামতন অপব্যাখ্যা প্রদান করবার মধ্য দিয়ে দলটিকে সমালোচিত করে তুলবার জোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে বামরা। সহজ কথায় বললে- মধ্যযুগীয় দাবির বর্বর যুগীয় ব্যাখ্যায় লিপ্ত হয়েছে বামরা। যদিও এ ধরণের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে হেফাজত তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, হেফাজতের দাবীগুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তথাকথিক টিভি ভাষ্যকারদের অস্থিরতা এবং সংবাদ বিশ্লেষণের নেপথ্যে ব্যক্তির আড়ালের লুকিয়ে থাকা চেতনা আরো প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। এ যেন থলের ভেতর লুকিয়ে থাকা কালো বিড়াল ক্রমশ গরজে বেরিয়ে পড়বার মতন অবস্থা। অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন, শাহবাগীরা ইতিমধ্যে হেফাজতকে আলোচনার টেবিলে বসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং হেফাজত চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সর্বমহলকে বিশেষভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে।
হেফাজতের আন্দোলন পরিচালিত হবার পর পর শাহবাগীরা প্রকাশ্যে ইসলাম বিদ্বেষের পথ থেকে নিজেদেরকে আড়াল করতে ভীষণভাবে সচেষ্ট হয়েছে। আর সে লক্ষ্যে তারা হেফাজতের বিরুদ্ধে তাদেরকে নাস্তিক আখ্যা দেয়ার বিষয়ে নৈতিক অধিকারের প্রশ্ন তুলছে। শাহবাগীদেরকে এখন বলতে শুনা যাচ্ছে যে, ইসলামে কে নাস্তিক আর কে আস্তিক তা তো কেবলমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন। অন্য কারো কি তা বলবার অধিকার আছে? এ যেন আত্মপক্ষ সমর্থন করবার একটা সম্মিলিত হিড়িক।
ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে বর্তমান সরকার এবং তার ঘাড়ে চড়ে বসা বামরা বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় যে অস্থিরতা এবং ভাঙ্গন ডেকে নিয়ে এসেছে, সে ভাঙ্গন থেকে কারোরই রক্ষা নেই। যদিও তা উপলব্দি করবার মতন সে সুস্থির চিত্ত এ মুহূর্তে সরকার এবং বামদের আছে বলে মনে হয় না। তাই আমরা দেখতে পাচ্ছি হেফাজতের নজিরবিহীন জনসমাবেশের পরও সরকার তার চিরাচরিত নির্যাতন-নিপিড়নের পথে ধাবিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের মুসলিম সত্ত্বাকে আধুনিকতার নামে যে শহুরে নষ্ট শ্রেণী বেহায়াপনা আর সীমাহীন নির্লজ্জতার দিকে ঠেলে দিয়েছে, এদেশের মুসলিমরা আপন গরজেই তা আবার পুনরুদ্ধার করবে –হেফাজত আপাতত: সে বার্তাই দিয়ে গেল। তবে রাষ্ট্রের ঘাড়ে সাওয়ার হয়ে যে অন্যায়-অনাচার আর বর্বরতার জঘণ্য ইতিহাস বামপন্থীরা গড়েছে, তার দায় থেকে সরকার এবং এর দিকপালরা কোনভাবেই ছাড় পেতে পারে না। জনগণের অধিকার এবং পুঁজি লুন্ঠন করে ক্রমাগত মিথ্যাচারের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উন্মেষের নামে ইতিহাসের যে ভয়াল হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তা থেকে কারোরই নিষ্কৃতি পাওয়া উচিত নয়। অন্যদিকে প্রগতির নামে বাংলাদেশে যে নির্লজ্জ ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, তা এদেশের মানুষ নিশ্চতভাবে রুখে দেবে। এজন্য অনেকে আশঙ্কা করছেন ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের উত্থানের। কিন্তু বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রপন্থী বলতে যাদেরকে এতদিন ইঙ্গিত করা হতো, সে হেফাজতে ইসলাম ইতিমধ্যে তাদের সহনশীল অবস্থান পরিস্কার করে দিয়েছে। সর্বত্র আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে দল হিসেবে রাষ্ট্র এবং গণতন্ত্রের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ। আর তাই হেফাজত সম্পর্কে শাহবাগীদের অপপ্রচার হালে আর পানি পাচ্ছে না।
বিষয়: বিবিধ
১২৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন