ইন্টারন্যাট! ইন্টারন্যাট!! ইন্টারন্যাট!!!
লিখেছেন লিখেছেন মীর ফরিদ ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৯:১৮:৫২ রাত
ইন্টারন্যাট! ইন্টারন্যাট!! ইন্টারন্যাট!!!
বিংশ শতাব্দীর অভিনব এক যুগান্তকারী আবিষ্কার এই ইন্টারন্যাট!
পৃথিবীতে ২৪ ঘন্টায় একটি দিন হয়। দিনের দুটি ভাগ। এক ভাগ দিবস অপর ভাগ রজনী। দিবস আলোকিত আর রজনী আঁধারে ঘেরা। প্রত্যেক জিনিষেরও দুটি দিক থাকে। ভাল ও মন্দ, আলো ও অন্ধকার। এমনকি প্রত্যেকটা আলোকিত নক্ষত্রের পাশেই নাকি আছে একটি করে অন্ধকার নক্ষত্র। বিজ্ঞানীরা যার নাম দিয়েছেন ব্ল্যাকহোল। দিন রাত্রির আবর্তনের মাঝে পৃথিবী যেমন আঁটকে আছে তেমনি এর বাসিন্দারাও আঁটকে গেছে ভাল ও মন্দ, সত্য ও মিথ্যার দ্বন্দে, আলো আর আঁধারের ঘেরাটোপে।
আল্লাহ মানুষকে শিক্ষা দিয়ে বলেন, “বল আমি আশ্রয় নিচ্ছি প্রভাতের পালনকর্তার, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে, অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে যখন তা সমাগত হয়, গ্রন্থিতে ফুঁ দিয়ে যাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।” [সূরা ফালাক ১১৩ ঃ ১-৫]
এখানে মহাগ্রন্থ আল কোরআনের এই সূরাটির অনুবাদ উধৃত করার উদ্দেশ্য এই যে, মহান আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন এই সূরাটিতে সবরকম অনিষ্ট/খারাবী থেকে তাঁর কাছে আশ্রয় চাওয়ার জন্য আমাদেরকে শিখিয়েছেন। এখানে ৩ নং “আয়াতে অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে যখন তা সমাগত হয়” বলা হয়েছে। আমরা সবাই জানি অন্ধকার রাত্রিতে অনিষ্ট বিদ্যমান। নিশাচর প্রাণী ছাড়া অন্য সবাই অন্ধকারকে ভয় পায়। কারণ অন্ধকারে অনিষ্ট আছে এটা সবাই জানি।
ইন্টারন্যাট নামক বস্তুটিরও দুটি দিক আছে। যেমন ভাল তেমনি মন্দ। যেমন আছে আলোকিত অধ্যায় তেমনি আছে অন্ধকারাচ্ছন্ন নোংরা গহ্বর। তবে আমার দৃষ্টিতে এর সিংহ ভাগ জুড়ে আছে অনিষ্ট। অশ্লীলতা, নগ্নতা, নির্লজ্জতা, নোংরামী আর ইতরামী। এসবে ছেয়ে গেছে এর ৯০ ভাগ অংশ। অশ্লীলতা আর নগ্নতা হয়ে দাঁড়িয়েছে যেন এর চালিকা শক্তি। আমাদের কোমলমতি যুবা তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদের মাথা খেয়ে একেবারে চর্বিতচর্বন করে ছেড়ে দিচ্ছে এই ইন্টারন্যাট। প্রমান, এবারের এইচ এইচ সি/আলীম এর জিপিএ-৫ এর ফলাফল। এমনকি শিশুরাও এর থেকে রেহাই পাচ্ছেনা। আবাল বৃদ্ধ বণিতা সবাই ছুটছে ঊর্ধশ্বাসে অন্ধকারের ধ্বংসাত্মক পথে। নিমজ্জিত হচ্ছে আঁধার কালো পাপ পঙ্কিলতায় ভরা অতল গহ্বরে। এ যেন এক প্রলয়ংকরী মহা দানব। যে পৃথিবীর সব সভ্যতা-ভব্যতা, সত্য-সুন্দর, ন্যায়-নিষ্ঠা ও ভালো আচার-আচরণ গুলোকে দলিত মথিত ও চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়ে মিথ্যা, অসভ্যতা ও অন্ধকারের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এখানে সত্য ও সুন্দরের পথিকদের বন্যায় ভেসে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে উঠেছে।
এই গড্ডালিকা প্রবাহ থেকে অনেক রথী মহারথী ধীমান ব্যক্তিরাও বাঁচতে পারছেন না। তাঁদের বিজ্ঞাপন গুলোর দিকে দৃষ্টি পড়লে হৃদয়ের গভীরে ব্যথা অনুভূত হয়, মনের মাঝে কিছু প্রচলিত কথা বেজে উঠে, “যুগের সাথে তাল মিলিয়ে না চললে পিছিয়ে পড়তে হবে”, “বাজারে খাবেনা” “কাস্টমার আসবেনা” “গ্রাহক থাকবেনা” ইত্যাদি ইত্যাদি।
ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য ঈমান আমল সভ্যতা ভব্যতা বিসর্জন দিতে হবে! মুমীনের মকছুদ তো আল্লাহ যে পেট দিয়েছেন তার জন্য কষ্ট করে উপার্জন করা। অনাহারে অর্ধাহারে হলেও এক আল্লাহর ইবাদাতের মাধ্যমে তাঁকে রাজী খুশি করা। সম্পদের পাহাড় গড়া তো মুমীনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নয়। নশ্বর পৃথিবীতে সর্বোচ্চ ৯০ বছরের জিন্দেগী। এই জীবন তো খেয়ে না খেয়ে কেটে যাবেই। কিন্তু আল্লাহ তো কাউকেও উপোষ রাখেন না। ভাল মন্দ কম বেশী সবাইকেই তিনি রিযিক দেন।
আমরা সবাই মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত বলে দাবী করি। তাঁর মহব্বতে একেবারে দিওয়ানা। কথায় কথায় তাঁর হাদীসের উধৃতি দিতে দেরী করিনা। কিন্তু তাঁর কয়টি সুন্নাত নিজ জীবনে বাস্তবায়ণ করেছি? প্রতিদিন হাদীস অধ্যয়ণ করেন এমন লোকের সংখ্যা এখন বাড়ছে। কিন্তু হাদীসের আলোকে নিজ জীবন গড়তে কয়জন পারছি? আমি যদি এখানে ক্রমিক নম্বর দিয়ে এক এক করে বলে যাই, তবে দেখা যাবে হাদীস অধ্যয়ণকারী ও হাদীসের উধৃতি দানকারীরা নানান অজুহাত খাড়া করে পাশ কেটে যাবেন। হয়তোবা বলবেন, “যুগের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে তো হাদীস মতে চলতে পারছিনা।”
সত্য ও সুন্দরের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়, কন্টকাকীর্ণ। সত্য ও সুন্দরের পথে চলা অত্যন্ত কঠিন। কঠিন বলেই এর বিনিময় বা পুরষ্কারও সুবিশাল ও সুমহান।
মিথ্যা ও অসুন্দরের পথ একদম সহজ। অনায়াসে সে পথের পথিক হওয়া যায়। একটুখানি প্রচেষ্টায় ধরণীর তাবৎ ঐশ্বর্য এসে ধরা দেয় হাতের মুঠোয়।
পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা বান্দার উপর ছেড়ে দিয়েছেন মহান আল্লাহ। দুধ আছে মদও আছে। দুধ খাবেন নাকি মদ খাবেন সেটা আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। সূতরাং ইন্টারন্যাটকে আমি কোন পথে ব্যবহার করব বা ইন্টারন্যাটের কোন পথে আমি চালিত হব সেটা একান্তই আমার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। অতএব আসুন, আমরা যারা তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাসী তারা একটু সচেতন হয়ে ইন্টারন্যাট ব্যবহার করি এবং ঈমান ও আমল নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদেরকে মৃত্যুকালে ঈমান নসীব করে জান্নাতের অধিবাসী হওয়ার তাওফীক দিন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১১৭৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
২৫ বার পঠিত হয়েছে অথচ কেউ কিছু লিখলেন না?
কার কেমন লাগলো বুঝতে পারলাম না।
তবুও যারা পড়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন