যেভাবে বই পড়া যেতে পারে
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৩:২৩:৪৫ দুপুর
আমাদের জীবনের আয়ু তো সীমিত। বেঁচে থাকার সময়গুলো আল্লাহ আমাদেরকে দিয়েছিলেন যেন তার উত্তম ব্যবহারে সৎকর্ম করে আমাদেরকে জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচাতে পারি। কী করেছি আজ অবধি? কতখানি কী সংগ্রহ করেছি? নিয়্যাহ কি ঠিক ছিলো? এখনো কি আছে? সত্যিই কি আল্লাহর জন্য জীবন ধারণ করছি? এখন? এই মূহুর্তে? চোখটা বন্ধ করলে কি অনুভব করতে পারি যে আমি আমার সর্বস্ব নিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার দরবারে দাঁড়িয়ে আছি, আমার সবকিছুর হিসেব হবে? চিন্তা করতে গেলে আমার কাছে কেমন যেন মনে হয়, আমি পরীক্ষার হলে বসে আছি, অনেক্ষণ ধরে প্রশ্ন দেখেছি কিন্তু তেমন কিছুই লিখিনি -- সেই খাতা জমা দিতে হবে এখনই, আমি নিশ্চিত বুঝতে পারছি আমার তো পাশ করা হবেনা... বুক ধরফর করে ওঠে। নিশ্চয়ই আমরা ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত, আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন।
আমরা অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করি প্রায়ই। বইপত্র নিয়ে এলোমেলো পড়তে গিয়ে প্রচুর সময় নষ্ট হয়। দিনের কাজগুলোর একটা রুটিন থাকা দরকার। অযথা সময় নষ্টের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। পড়াশোনার ব্যাপারেও তাই যা-তা মুডে পড়লে হবেনা। ক'দিন আগে ওয়ার্কশপ করেছিলাম এই বিষয়ে, নিজে কিছু পড়াশোনা করেছিলাম। সব মিলিয়ে কিছু পয়েন্ট বের করেছিলাম --
# বইটি পড়ার আগে ভাবতে হবে আমি এই বইটি কেন পড়ব, বইটি থেকে কী চাই।
# প্লেজার রিডিং ভাবনাটা দূর করাই কল্যাণকর। লেপের নিচে শুয়ে আয়েশ করে বইয়ের পাতা উল্টালে তা চোখ ভেদ করে তা চিন্তায় যাবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাই, পড়াশোনার জন্য নিজের শরীরকেও সচল করতে হবে।
# পড়ার জন্য চারপাশের পরিবেশ : একটু ছিমছাম নিজের মতন। সম্ভব হলে একটা চেয়ার টেবিল। সামনে পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখা সারি করে বই, যা লাইব্রেরির অনুভূতি দিবে। হাতে একটা নোটবুক, আর কলম।
# সাধারণত ১ ঘন্টায় ২০ পৃষ্ঠা পড়াকে অনুপ্রাণিত করা হয়, এর বেশি নয়। যা পড়া হয়, তাকে আত্মস্থ করাও গুরুত্বপূর্ণ।
# বইতে নোট রাখা : পড়ার সময় আলাপ-আলোচনা মুডে থাকা যেতে পারে। শাইখ হামজা ইউসুফের লেকচারে শুনেছিলাম, তিনি বই পড়ার সময় বইতেই লেখালেখি করেন। কিছু ভালো লাগলে লিখে ফেলতেন, 'দারুণ বলেছেন'। আবার কোন বিষয়ে মতের অমিল হলে লিখতেন, 'আমি মানতে পারলাম না ব্যাপারটা কারণে হলো... ..."। ইমাম সুহাইব ওয়েব বলেছিলেন, আল-আজহারে তাদের শাইখরা ক্লাসে/দারসের সময়ে টুকে রাখা নোটস তারা বইতেই লিখে রাখতেন যেন পরে ওই প্রসঙ্গে পড়তে এলেই মনে পড়ে যায়। মোট কথা দাগাদাগি করে পড়াটাই বেশিরভাগ শিক্ষকরা পছন্দ করেন।
# বইতে নোট না করলে হাতের নোটবুক/ডায়েরিতে কিছু পয়েন্ট তুলে রাখা যায় যেন সেখানে দেখলে পরবর্তীতে নিজের মনে পড়ে যায় যে কী কী বিষয়ে বেশি শিখতে পেরেছি আর ভালো লেগেছে। শর্টনোট!
# বই পড়ার মূল উদ্দেশ্য থাকতে হবে আত্মিক উন্নয়ন। বইটি পড়ে উপলব্ধি করে তাকে নিজের জীবনে কাজে লাগানোর নিয়্যাহ হচ্ছে সবচাইতে বড় চিন্তা।
# নির্দিষ্ট কিছু পাতা পড়া শেষে সারমর্ম টাইপের উপলব্ধি ও শিক্ষা লিখে ফেলা যেতে পারে যা হয়ত নিজের এবং অন্যদের কাজে লাগতে পারে। সেই নির্দিষ্ট পাতা পড়ে শেষ করার আগে পড়া ছেড়ে লিখতে যাওয়া উচিত হবেনা। লেখাটি দাওয়াহ/পরোপকার হতে পারে, ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে।
# অন্যদেরকে কিছু শিখাতে গেলে সেই জ্ঞানটি ভালো করে পাঠকের মাঝে গেঁথে যায়। স্টাডি সার্কেল না হলেও ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, বন্ধু বান্ধবের মাঝে 'ডেমো' দিয়ে এই বিষয়টি কাজে লাগানো যেতে পারে।
# পড়া হলে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে অন্ততঃ দুই রাকা'আত সালাহ আদায় করে ফেলতে হবে।
রেফারেন্স:
How To Read Books : Shaykh Hamza Yusuf : প্রথম অংশ http://www.youtube.com/watch?v=hHIiqWqPOng
দ্বিতীয় অংশ http://www.youtube.com/watch?v=KorqQ25-h0k
বিষয়: বিবিধ
১৮৬৭ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
স্টিকি পোস্টে অভিনন্দন...
জাযাকুমুল্লাহ্ খায়ের।
তবে পুরোপুরি একমত নই। শুয়ে বা আরাম করে বই পড়লে পড়া হয়না বা তা আত্মস্থ হয়না এই কথাটি ঠিক নয়। আমি বেশিরভাগ সময়ই রাত্রে ঘুমানর আগে বই পড়ি। বিশেস কিছু নোট নেওয়ার থাকলে বইএর মধ্যে চিহ্ন দিয়ে রাখি।
স্টিকি পোস্টে অভিনন্দন লেখককে
স্টিকি পোস্টে অভিনন্দন!
পিলাচ অনেক ধন্যবাদ
তবে প্লেজার রিডিং এর বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত হতে পারলামনা। উপভোগ করতে না পারলে সে পড়াটা সহজে আত্মস্থ হয় না। ক্লাসের পড়া উপভোগ্য নয় বলে আত্মস্থ হতে সময় লাগে বিপরীতে গল্পের বই সহজে আত্মস্থ হয়।
পড়ার মতো পড়।
বুঝে শুনে পড়ে এবার,
জীবন টাকে গড়।
একদম খাঁটি কথা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন